সরকারি চাকরির বিধি লঙ্ঘন করে সিন্ডিকেট গঠন, বদলি, দায়িত্ব বণ্টন এবং পছন্দমতো কোম্পানি থেকে তেল কেনাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এক পুলিশ সুপারকে (এসপি) বেতন গ্রেড কমিয়ে দিয়েছে সরকার।
গত ৩০ এপ্রিল এক প্রজ্ঞাপনে এসপি মোহাম্মদ নজরুল হোসেনকে প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকা জরিমানা ও বেতন গ্রেডের ‘নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ’ দণ্ড দেওয়া হয়। সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, তার এসব কর্মকাণ্ড ‘অসদাচরণ’ হিসেবে গণ্য হয়েছে।
বর্তমানে তিনি সিআইডি সদর দপ্তরে কর্মরত। এর আগে এপিবিএন-এর ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা ব্যাটালিয়নের কমান্ড্যান্ট থাকাকালীন এসব অনিয়মে জড়িত ছিলেন বলে তদন্তে প্রমাণ মিলেছে। গত ১৯ জানুয়ারি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত নেয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণির সই করা এ আদেশ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ৫ মে (রোববার) প্রকাশ করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নজরুল হোসেনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘দুর্নীতির’ কোনো প্রমাণ না পাওয়া গেলেও ‘অসদাচরণের’ প্রমাণ মিলেছে।
তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে সিন্ডিকেট গঠন করে চিরকুট/টোকেনের মাধ্যমে পদায়নপ্রত্যাশী সদস্যদের নাম সংগ্রহ, তাদের স্বাক্ষর নিয়ে বদলি/পদায়নের ব্যবস্থা করতেন।
একই ব্যক্তিকে বারবার বিভাগীয় ভান্ডারে পদায়ন করে মালামাল বিলি-বণ্টনে অনিয়ম, কার্যাদেশ উপেক্ষা করে উচ্চমূল্যে জেনারেটর কেনা, এবং দরপত্রে সর্বনিম্ন দরদাতা বাদ দিয়ে পরবর্তী দরদাতাদের কার্যাদেশ দেওয়ার মতো অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
এসব অনিয়মের মাধ্যমে সরকার ৮ লাখ ৫৩ হাজার ৬৭০ টাকার আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে। এই অর্থ তাকে জরিমানা হিসেবে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। এছাড়া তাকে আগামী তিন বছরের জন্য বেতন গ্রেডে নিম্নধাপে অবনমিত করা হয়েছে।
মুক্তাগাছায় কমান্ড্যান্ট থাকাকালে ক্যান্টিন বরাদ্দে অনিয়ম, নিম্নমানের খাবার পরিবেশন, যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নিয়োগ এবং ডি-স্টোরের মালামাল লুটের সুযোগ তৈরি করাসহ আরও নানা অভিযোগ তদন্ত করা হয়।
বদলির আদেশ থাকার পরও কিছু সদস্যকে দায়িত্বে বহাল রাখা, সিন্ডিকেটকে সন্তুষ্ট করে ঠিকাদার নিয়োগ, ভুয়া ভাউচার দিয়ে বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ এবং তার স্ত্রী ও স্ত্রীর বড় বোনের নামে অনুমতি ছাড়া টাঙ্গাইলে জমি লিজ নেওয়া ও ফ্ল্যাট কেনার বিষয়েও অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া, তার বিরুদ্ধে ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে ‘ধীরে বহে মুক্তাগাছা’ নামে পার্ক প্রতিষ্ঠা করে টিকিটের বিনিময়ে জনসাধারণের প্রবেশের সুযোগ দেওয়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে পরিবেশ নষ্ট, নিয়মবহির্ভূতভাবে দরপত্র প্রস্তুত এবং অতিরিক্ত দামে জেনারেটর কেনাসহ আরও নানা অভিযোগ উঠেছে।
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে তার ব্যক্তিগত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। অভিযোগগুলোর ভিত্তিতে গুরুদণ্ডের সম্ভাবনা থাকায় তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় এসবির ডিআইজি জি এম আজিজুর রহমানকে।
তদন্তে ‘অসদাচরণ’ প্রমাণিত হওয়ায় শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে এসপি নজরুল বলেন, “আমি অন্যায় ও জুলুমের শিকার হয়েছি। ফ্যাসিস্ট শাসনামলের আইজিপি বেনজীরের আক্রোশের শিকার হয়েছি। সে সময়ে ১১ বার পদোন্নতি আটকে দেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালে সুনামগঞ্জের এসপি থাকাকালীন আমিই একমাত্র এসপি যাকে ওএসডি করা হয়েছিল।”
তিনি আরও বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো স্থানীয় প্রতিনিধিদের দিয়ে যাচাই করুন। যদি একভাগও সত্য প্রমাণ হয়, আমি স্বেচ্ছায় রিজাইন দিয়ে চলে যাব।”
তিনি জানান, এই শাস্তির বিরুদ্ধে তিনি আপিল করবেন। “৩০ দিনের মধ্যে আপিল করা যায়, আমি একটা আপিল করব। যদি ন্যয়বিচার না পাই, স্বেচ্ছায় চলে যাব।”
রোববার, ০৪ মে ২০২৫
সরকারি চাকরির বিধি লঙ্ঘন করে সিন্ডিকেট গঠন, বদলি, দায়িত্ব বণ্টন এবং পছন্দমতো কোম্পানি থেকে তেল কেনাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এক পুলিশ সুপারকে (এসপি) বেতন গ্রেড কমিয়ে দিয়েছে সরকার।
গত ৩০ এপ্রিল এক প্রজ্ঞাপনে এসপি মোহাম্মদ নজরুল হোসেনকে প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকা জরিমানা ও বেতন গ্রেডের ‘নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ’ দণ্ড দেওয়া হয়। সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, তার এসব কর্মকাণ্ড ‘অসদাচরণ’ হিসেবে গণ্য হয়েছে।
বর্তমানে তিনি সিআইডি সদর দপ্তরে কর্মরত। এর আগে এপিবিএন-এর ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা ব্যাটালিয়নের কমান্ড্যান্ট থাকাকালীন এসব অনিয়মে জড়িত ছিলেন বলে তদন্তে প্রমাণ মিলেছে। গত ১৯ জানুয়ারি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত নেয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণির সই করা এ আদেশ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ৫ মে (রোববার) প্রকাশ করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নজরুল হোসেনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘দুর্নীতির’ কোনো প্রমাণ না পাওয়া গেলেও ‘অসদাচরণের’ প্রমাণ মিলেছে।
তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে সিন্ডিকেট গঠন করে চিরকুট/টোকেনের মাধ্যমে পদায়নপ্রত্যাশী সদস্যদের নাম সংগ্রহ, তাদের স্বাক্ষর নিয়ে বদলি/পদায়নের ব্যবস্থা করতেন।
একই ব্যক্তিকে বারবার বিভাগীয় ভান্ডারে পদায়ন করে মালামাল বিলি-বণ্টনে অনিয়ম, কার্যাদেশ উপেক্ষা করে উচ্চমূল্যে জেনারেটর কেনা, এবং দরপত্রে সর্বনিম্ন দরদাতা বাদ দিয়ে পরবর্তী দরদাতাদের কার্যাদেশ দেওয়ার মতো অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
এসব অনিয়মের মাধ্যমে সরকার ৮ লাখ ৫৩ হাজার ৬৭০ টাকার আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে। এই অর্থ তাকে জরিমানা হিসেবে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। এছাড়া তাকে আগামী তিন বছরের জন্য বেতন গ্রেডে নিম্নধাপে অবনমিত করা হয়েছে।
মুক্তাগাছায় কমান্ড্যান্ট থাকাকালে ক্যান্টিন বরাদ্দে অনিয়ম, নিম্নমানের খাবার পরিবেশন, যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নিয়োগ এবং ডি-স্টোরের মালামাল লুটের সুযোগ তৈরি করাসহ আরও নানা অভিযোগ তদন্ত করা হয়।
বদলির আদেশ থাকার পরও কিছু সদস্যকে দায়িত্বে বহাল রাখা, সিন্ডিকেটকে সন্তুষ্ট করে ঠিকাদার নিয়োগ, ভুয়া ভাউচার দিয়ে বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ এবং তার স্ত্রী ও স্ত্রীর বড় বোনের নামে অনুমতি ছাড়া টাঙ্গাইলে জমি লিজ নেওয়া ও ফ্ল্যাট কেনার বিষয়েও অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া, তার বিরুদ্ধে ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে ‘ধীরে বহে মুক্তাগাছা’ নামে পার্ক প্রতিষ্ঠা করে টিকিটের বিনিময়ে জনসাধারণের প্রবেশের সুযোগ দেওয়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে পরিবেশ নষ্ট, নিয়মবহির্ভূতভাবে দরপত্র প্রস্তুত এবং অতিরিক্ত দামে জেনারেটর কেনাসহ আরও নানা অভিযোগ উঠেছে।
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে তার ব্যক্তিগত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। অভিযোগগুলোর ভিত্তিতে গুরুদণ্ডের সম্ভাবনা থাকায় তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় এসবির ডিআইজি জি এম আজিজুর রহমানকে।
তদন্তে ‘অসদাচরণ’ প্রমাণিত হওয়ায় শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে এসপি নজরুল বলেন, “আমি অন্যায় ও জুলুমের শিকার হয়েছি। ফ্যাসিস্ট শাসনামলের আইজিপি বেনজীরের আক্রোশের শিকার হয়েছি। সে সময়ে ১১ বার পদোন্নতি আটকে দেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালে সুনামগঞ্জের এসপি থাকাকালীন আমিই একমাত্র এসপি যাকে ওএসডি করা হয়েছিল।”
তিনি আরও বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো স্থানীয় প্রতিনিধিদের দিয়ে যাচাই করুন। যদি একভাগও সত্য প্রমাণ হয়, আমি স্বেচ্ছায় রিজাইন দিয়ে চলে যাব।”
তিনি জানান, এই শাস্তির বিরুদ্ধে তিনি আপিল করবেন। “৩০ দিনের মধ্যে আপিল করা যায়, আমি একটা আপিল করব। যদি ন্যয়বিচার না পাই, স্বেচ্ছায় চলে যাব।”