মৌলভীবাজার কমলগঞ্জে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান -সংবাদ
লাউয়াছড়া বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় উদ্যান এবং চিরহরিৎ বনাঞ্চলের একটি নমুনা। এটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বাংলাদেশের ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যানের অন্যতম। মৌলভীবাজার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ১২৫০ হেক্টর আয়তনের এ বন জীববৈচিত্রে ভরপুর।
বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে এই বনকে ‘জাতীয় উদ্যান’ হিসেবে ঘোষণা করে। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। উল্লুক ছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ এবং উদ্ভিদ। এটিকে সবচেয়ে অতিবৃষ্টি অরণ্য এলাকা হিসেবে চিহ্নিত।
শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার মৌলভীবাজার ফরেস্ট রেঞ্জের আওতাধীন ২,৭৪০ হেক্টর আয়তনের পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন ছিল এলাকাটি। সেই সুবাদে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পূর্ববতী নাম ছিল পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন। বনের অস্তিত্ব ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি প্রকৃতি ভ্রমণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পশ্চিম ভানুগাছ বনের ১,২৫০ হেক্টর এলাকাকে ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) (সংশোধন) আইন অনুযায়ী ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ‘জাতীয় উদ্যান’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
চিরহরিৎ এ বনে নিরক্ষীয় অঞ্চলের বর্ষাবন বা রেইনফরেষ্টের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। এক সময় বৃহত্তর সিলেটের সর্বত্রই এ ধরনের বন ছিল। তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা বাগান সৃষ্টি, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ এবং নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে ক্রমে সংকুচিত হতে হতে মাত্র কয়েকটি স্থানে চিরহরিৎ এ বর্ষাবনের অস্তিত্ব টিকে রয়েছে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভূ-প্রকৃতি পাহাড়ি মৃত্তিকা গঠিত। উঁচু-নিচু টিলা জুড়ে এ বন বিস্তৃত। বনের মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি এবং প্রচুর পাথর দেখা যায়। বনের মাটিতে পাতা জমে জমে পুরু স্পঞ্জের মতো হয়ে থাকে। জায়গায় জায়গার মাটিই দেখা যায় না। এসব স্থানে জোঁকের উপদ্রপ খুব বেশি। বনের ভেতর দিয়ে অনেকগুলো পাহাড়ি ছড়া বয়ে চলেছে। এসব ছড়ার কয়েকটি ছাড়া বাকিগুলোতে শুধু বর্ষার সময়ই পানি থাকে। ছড়ার পানি পরিষ্কার টলটলে এবং ঠান্ডা। যেসব ছড়াতে শুষ্ক মৌসুমেও পানি থাকে সেসব ছড়ার কাছে বন্যপ্রাণীর আনাগোনা দেখা যায়।
লাউয়াছড়ার বনে বাঁশ ঝাড় ও বেতের ঝোঁপ জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের সমৃদ্ধতম বনগুলোর একটি। আয়তনে ছোট হলেও এ বন দুর্লভ উদ্ভিদ এবং প্রাণীর এক জীবন্ত সংগ্রহশালা। বনে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই নানা ধরনের বন্যপ্রাণী, পাখি এবং কীটপতঙ্গের শব্দ শোনা যায়। বনের মধ্যে প্রায় সারাক্ষণই সাইরেনের মতো শব্দ হতে থাকে; প্রকৃতপক্ষে এটি এক ধরনের ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ।
লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখা যায়।
এ বনে স্তন্যপায়ী আছে নানা প্রজাতির। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। বনের মধ্যে কিছু সময় কাটালেই উল্লুকের ডাকাডাকি কানে আসবে। উল্লুক ছাড়াও এখানে রয়েছে চশমাপরা হনুমান, লজ্জাবতী বানর, মুখপোড়া হনুমান, বানর, শিয়াল, মেছোবাঘ, রামকুত্তা, এশীয় কালো ভাল্লুক, মায়া হরিণসহ নানা প্রজাতির জীবজন্তু। মায়া হরিণ সাধারণত উচ্চতায় ২০?-২২ ইঞ্চি। এদের বাদামী রঙের দেহ যা’ পিঠের দিকে ঘিয়ে গাঢ় রং ধারণ করে।
এ বনে সরীসৃপ আছে নানা প্রজাতির। তার ভেতর অজগর হচ্ছে অন্য। এখানে পাওয়া যায় হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ।
উদ্যানের বন্য পাখির মধ্যে সবুজ
ঘুঘু, লাল বনমোরগ, তুর্কি বাজ, সাদামাথা সাতভায়লা, ঈগল, হরিয়াল, কালোমাথা টিয়া, কালো-পিঠ চেরালেজি, ধূসরাভ সাত সহেলি, প্যাঁচা, কালো ফিঙে, বাসন্তী লটকনটিয়া, কালো বাজ, লালমাথা টিয়া, কালো-মাথা বুলবুল, পরঘুমা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সাধারণ দর্শনীয় পাখির মধ্যে সবুজ টিয়া, ছোট হরিয়াল, সবুজ বাঁশপাতি, তোতা, পান্না কোকিল, পাঙ্গা, কেশরাজ প্রভৃতির দেখা মিলে।
২০০৯ সালে শ্রীমঙ্গল শহরের রামকৃষ্ণ মিশন রোডের শ্রী সিতেশ রঞ্জন দেব তার চিড়িয়াখানা থেকে দুটি লক্ষ্মীপেঁচা ও একটি বন বিড়ালও অবমুক্ত করেন এ বনে। তারই হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে যাবত প্রায় দেড় দশকে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার লোকালয় থেকে অজগর সাপ, বানর, লজ্জাবতী বানর, মেছো বিড়াল, চিতা বিড়াল, বনবিড়াল, বিভিন্ন ধরনের প্যাঁচা, মদনটাক, মুনিয়া পাখি, শকুন, তক্ষক, শঙ্খিনী সাপ, গন্ধগোকুল, রেড আইক্যাট স্নেক, ধূসর ফণীমনসা ও বিভিন্ন রকমের বিরল প্রজাতির প্রাণীসহ প্রায় ৭০০টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে বনাঞ্চলে অবমুক্ত করা হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক স্বপন কুমার দেব সজল স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন।
লাউয়াছড়ার বনেই রয়েছে বিপন্ন প্রজাতির উল্লুক। বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে এ উল্লুক বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। লাউয়াছড়ার বনেও এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। দুই দশক আগে এই বনে কয়েক হাজার উল্লুক দেখা যেতো। কিন্তু বর্তমানে সে সংখ্যা কমতে কমতে একশোরও নিচে এসে ঠেকেছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে একসময় হয়তো এই বন থেকে উল্লুক চিরতরে হারিয়ে যাবে। নির্বিচারে বন ধ্বংসের ফলে উল্লুকের বাসস্থান ও খাদ্যসংকট সৃষ্টিই এদের সংখ্যা হ্রাসের প্রধানতম কারণ। লাউয়াছড়ার বনে বর্তমানে মাত্র ৪৯টি উল্লুক অবশিষ্ট আছে। নিকটবর্তী ছাউতলি ও কালাছড়ার বন মিলিয়ে এ সংখ্যা ৬০- এর মতো। লাউয়াছড়া ও এর আশপাশের বনে মোট ১৬টি উল্লুক পরিবার রয়েছে। ভোরবেলা লাউয়াছড়ার বনে গেলে অনেক সময় উল্লুকের দেখা পাওয়া যায়। এই বনে উল্লুকের প্রিয় খাদ্য চামকাঁঠাল বা চাপালিশ ফল।
বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর সংগ্রহ তালিকায় যুক্ত হয়েছে একটি হনুমানের বাচ্চা। বাচ্চা হনুমানটি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বিশামনি গ্রামে মাছের খামারে ঘেরাজালে আটকা পড়া হনুমানটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী ট্রাস্টের নির্বাহী প্রধান জনাব আনোয়ারুল ইসলাম শনাক্ত করেন যে, এটি অতি বিপন্ন প্রজাতির ‘ফ্যায়র্স লাঙ্গুর’। হনুমানটি প্রথমে সিতেশ রঞ্জন দেবের চিড়িয়াখানায় রাখা হয়। পরে এটিকে সিলেট বন বিভাগের হেফাজতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জানকীছড়ায় রাখা হয়। ধরা পড়াকালীন সময় এর বয়স ছিল মাত্র তিন মাস।
শকুনের নিরাপদ এলাকা-১ তফসিল অনুসারে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান শকুনের জন্য নিরাপদ বলে ঘোষিত।
মৌলভীবাজার কমলগঞ্জে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান -সংবাদ
রোববার, ০৪ মে ২০২৫
লাউয়াছড়া বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় উদ্যান এবং চিরহরিৎ বনাঞ্চলের একটি নমুনা। এটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বাংলাদেশের ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যানের অন্যতম। মৌলভীবাজার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ১২৫০ হেক্টর আয়তনের এ বন জীববৈচিত্রে ভরপুর।
বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে এই বনকে ‘জাতীয় উদ্যান’ হিসেবে ঘোষণা করে। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। উল্লুক ছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ এবং উদ্ভিদ। এটিকে সবচেয়ে অতিবৃষ্টি অরণ্য এলাকা হিসেবে চিহ্নিত।
শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার মৌলভীবাজার ফরেস্ট রেঞ্জের আওতাধীন ২,৭৪০ হেক্টর আয়তনের পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন ছিল এলাকাটি। সেই সুবাদে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পূর্ববতী নাম ছিল পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন। বনের অস্তিত্ব ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি প্রকৃতি ভ্রমণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পশ্চিম ভানুগাছ বনের ১,২৫০ হেক্টর এলাকাকে ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) (সংশোধন) আইন অনুযায়ী ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ‘জাতীয় উদ্যান’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
চিরহরিৎ এ বনে নিরক্ষীয় অঞ্চলের বর্ষাবন বা রেইনফরেষ্টের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। এক সময় বৃহত্তর সিলেটের সর্বত্রই এ ধরনের বন ছিল। তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা বাগান সৃষ্টি, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ এবং নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে ক্রমে সংকুচিত হতে হতে মাত্র কয়েকটি স্থানে চিরহরিৎ এ বর্ষাবনের অস্তিত্ব টিকে রয়েছে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভূ-প্রকৃতি পাহাড়ি মৃত্তিকা গঠিত। উঁচু-নিচু টিলা জুড়ে এ বন বিস্তৃত। বনের মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি এবং প্রচুর পাথর দেখা যায়। বনের মাটিতে পাতা জমে জমে পুরু স্পঞ্জের মতো হয়ে থাকে। জায়গায় জায়গার মাটিই দেখা যায় না। এসব স্থানে জোঁকের উপদ্রপ খুব বেশি। বনের ভেতর দিয়ে অনেকগুলো পাহাড়ি ছড়া বয়ে চলেছে। এসব ছড়ার কয়েকটি ছাড়া বাকিগুলোতে শুধু বর্ষার সময়ই পানি থাকে। ছড়ার পানি পরিষ্কার টলটলে এবং ঠান্ডা। যেসব ছড়াতে শুষ্ক মৌসুমেও পানি থাকে সেসব ছড়ার কাছে বন্যপ্রাণীর আনাগোনা দেখা যায়।
লাউয়াছড়ার বনে বাঁশ ঝাড় ও বেতের ঝোঁপ জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের সমৃদ্ধতম বনগুলোর একটি। আয়তনে ছোট হলেও এ বন দুর্লভ উদ্ভিদ এবং প্রাণীর এক জীবন্ত সংগ্রহশালা। বনে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই নানা ধরনের বন্যপ্রাণী, পাখি এবং কীটপতঙ্গের শব্দ শোনা যায়। বনের মধ্যে প্রায় সারাক্ষণই সাইরেনের মতো শব্দ হতে থাকে; প্রকৃতপক্ষে এটি এক ধরনের ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ।
লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখা যায়।
এ বনে স্তন্যপায়ী আছে নানা প্রজাতির। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। বনের মধ্যে কিছু সময় কাটালেই উল্লুকের ডাকাডাকি কানে আসবে। উল্লুক ছাড়াও এখানে রয়েছে চশমাপরা হনুমান, লজ্জাবতী বানর, মুখপোড়া হনুমান, বানর, শিয়াল, মেছোবাঘ, রামকুত্তা, এশীয় কালো ভাল্লুক, মায়া হরিণসহ নানা প্রজাতির জীবজন্তু। মায়া হরিণ সাধারণত উচ্চতায় ২০?-২২ ইঞ্চি। এদের বাদামী রঙের দেহ যা’ পিঠের দিকে ঘিয়ে গাঢ় রং ধারণ করে।
এ বনে সরীসৃপ আছে নানা প্রজাতির। তার ভেতর অজগর হচ্ছে অন্য। এখানে পাওয়া যায় হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ।
উদ্যানের বন্য পাখির মধ্যে সবুজ
ঘুঘু, লাল বনমোরগ, তুর্কি বাজ, সাদামাথা সাতভায়লা, ঈগল, হরিয়াল, কালোমাথা টিয়া, কালো-পিঠ চেরালেজি, ধূসরাভ সাত সহেলি, প্যাঁচা, কালো ফিঙে, বাসন্তী লটকনটিয়া, কালো বাজ, লালমাথা টিয়া, কালো-মাথা বুলবুল, পরঘুমা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সাধারণ দর্শনীয় পাখির মধ্যে সবুজ টিয়া, ছোট হরিয়াল, সবুজ বাঁশপাতি, তোতা, পান্না কোকিল, পাঙ্গা, কেশরাজ প্রভৃতির দেখা মিলে।
২০০৯ সালে শ্রীমঙ্গল শহরের রামকৃষ্ণ মিশন রোডের শ্রী সিতেশ রঞ্জন দেব তার চিড়িয়াখানা থেকে দুটি লক্ষ্মীপেঁচা ও একটি বন বিড়ালও অবমুক্ত করেন এ বনে। তারই হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে যাবত প্রায় দেড় দশকে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার লোকালয় থেকে অজগর সাপ, বানর, লজ্জাবতী বানর, মেছো বিড়াল, চিতা বিড়াল, বনবিড়াল, বিভিন্ন ধরনের প্যাঁচা, মদনটাক, মুনিয়া পাখি, শকুন, তক্ষক, শঙ্খিনী সাপ, গন্ধগোকুল, রেড আইক্যাট স্নেক, ধূসর ফণীমনসা ও বিভিন্ন রকমের বিরল প্রজাতির প্রাণীসহ প্রায় ৭০০টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে বনাঞ্চলে অবমুক্ত করা হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক স্বপন কুমার দেব সজল স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন।
লাউয়াছড়ার বনেই রয়েছে বিপন্ন প্রজাতির উল্লুক। বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে এ উল্লুক বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। লাউয়াছড়ার বনেও এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। দুই দশক আগে এই বনে কয়েক হাজার উল্লুক দেখা যেতো। কিন্তু বর্তমানে সে সংখ্যা কমতে কমতে একশোরও নিচে এসে ঠেকেছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে একসময় হয়তো এই বন থেকে উল্লুক চিরতরে হারিয়ে যাবে। নির্বিচারে বন ধ্বংসের ফলে উল্লুকের বাসস্থান ও খাদ্যসংকট সৃষ্টিই এদের সংখ্যা হ্রাসের প্রধানতম কারণ। লাউয়াছড়ার বনে বর্তমানে মাত্র ৪৯টি উল্লুক অবশিষ্ট আছে। নিকটবর্তী ছাউতলি ও কালাছড়ার বন মিলিয়ে এ সংখ্যা ৬০- এর মতো। লাউয়াছড়া ও এর আশপাশের বনে মোট ১৬টি উল্লুক পরিবার রয়েছে। ভোরবেলা লাউয়াছড়ার বনে গেলে অনেক সময় উল্লুকের দেখা পাওয়া যায়। এই বনে উল্লুকের প্রিয় খাদ্য চামকাঁঠাল বা চাপালিশ ফল।
বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর সংগ্রহ তালিকায় যুক্ত হয়েছে একটি হনুমানের বাচ্চা। বাচ্চা হনুমানটি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বিশামনি গ্রামে মাছের খামারে ঘেরাজালে আটকা পড়া হনুমানটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী ট্রাস্টের নির্বাহী প্রধান জনাব আনোয়ারুল ইসলাম শনাক্ত করেন যে, এটি অতি বিপন্ন প্রজাতির ‘ফ্যায়র্স লাঙ্গুর’। হনুমানটি প্রথমে সিতেশ রঞ্জন দেবের চিড়িয়াখানায় রাখা হয়। পরে এটিকে সিলেট বন বিভাগের হেফাজতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জানকীছড়ায় রাখা হয়। ধরা পড়াকালীন সময় এর বয়স ছিল মাত্র তিন মাস।
শকুনের নিরাপদ এলাকা-১ তফসিল অনুসারে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান শকুনের জন্য নিরাপদ বলে ঘোষিত।