সংবিধান সংশোধন করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে ‘মৌলিক অধিকার’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। এজন্য স্বাস্থ্য সার্ভিস চালু, মেডিকেল পুলিশ গঠন ও জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের সুপারিশ করেছে কমিশন।
জাতীয় অধ্যাপক একে আজাদ খানের নেতৃত্বে গঠিত ১১ জন কমিশনের সদস্যরা সোমবার,(৫ এপ্রিল ২০২৫) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। পরে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে তারা ৩২২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর
চিকিৎসকদের সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির সরাসরি সাক্ষাৎ নয়
‘স্বাস্থ্য সার্ভিস’ গঠনের সুপারিশ
লাইসেন্স ছাড়া চলছে হাজারের বেশি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান
লাইসেন্স পেতে হয়রানি
স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের ১৫ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, অতি দরিদ্র মানুষ সব ধরনের সেবা বিনামূল্যে পাবে। ১০ শতাংশ দরিদ্র রোগী বেসরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে সেবা পাবে। অত্যাবশ্যকীয় ঔষধ প্রাথমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে ও অন্য ক্ষেত্রে ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে এবং ওষুধের তালিকা প্রতি দুই বছর পর হালনাগাদ করতে হবে।
ক্যান্সার ও ডায়বেটিসের ওষুধের ভ্যাট ট্যাক্স মওকুফ করার সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরুরি ওষুধের সংখ্যা বাড়ানো ও দুই বছর পর পর সেই তালিকা হালনাগাদ করতে হবে।
চিকিৎসকদের সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির সরাসরি সাক্ষাৎ নয় :
কমিশন বলেছে, ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা চিকিৎসকের কাছে সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে তাদের পণ্যের প্রচার করতে পারবেন না। কেবল চিকিৎসকদের ই-মেইলে বা ডাকযোগে তাদের পণ্য সম্পর্কিত তথ্য পাঠাতে পারবেন।
কমিশনের সদস্য সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেন, ওষুধের নমুনা বা উপহার দিয়ে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
‘স্বাস্থ্য সার্ভিস’ গঠনের সুপারশি :
প্রতিবেদনে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ নামে একটি স্বতন্ত্র কাঠামো গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেজন্য আলাদা পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠন এবং জনবল কাঠামো পুনঃনির্ধারণের সুপারিশ করেছে কমিশন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যোগ্যতা, স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রেখে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও নিয়োগের সুপারিশ করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের সার্চ কমিটি গঠন করতে হবে।
বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস প্রধান ও উপ-প্রধান, মহাপরিচালক, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রো-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, বিএমডিসি ও বিএমআরসি চেয়ারম্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগ্যতা সম্পর্কে জাতীয় সংসদকে অবহিত করতে হবে।
লাইসেন্স ছাড়া চলছে হাজারের বেশি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান :
দেশে হাজারেরও বশি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স ছাড়াই কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ১৫ হাজার ২৩৩টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন করেছে মাত্র চার হাজার ১২৩টি। আর এক হাজার ২৭টি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। এটি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দুর্বল ও আইন লঙ্ঘনের মাত্রা অত্যন্ত উদ্বেগজনক, যা রোগীদের নিরাপত্তা ও পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিশ্বাস যোগ্যতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।
লাইসেন্স পেতে হয়রানি :
বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতের দুর্বলতার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসরকারিখাতের লাইসেন্সিং এবং চিকিৎসা অবহেলা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সিং প্রক্রিয়ায় চ্যালেঞ্জগুলো জটিল।
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন পেতে মালিক বা উদ্যোক্তাদের বারবার বিভিন্ন অফিসে যাতায়াত করতে হয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাইসেন্সের
ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর চাহিদা প্রসঙ্গে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিবেশ লাইসেন্স চায়, অথচ পরিবেশ অধিদপ্তর প্রথমে হাসপাতাল লাইসেন্স চায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফি বেড়ে যাওয়ায় ছোট ক্লিনিকগুলো লাইসেন্স করতে আগ্রহ হারাচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স পেতে বিলম্বের কারণ হিসেবে সংস্কার কমিশন বলেছে, অনেক সময় কাগজপত্র ঠিক থাকলেও ২-৩ বছর পর্যন্ত লাইসেন্স পেতে বিলম্ব হয় এবং অননুমোদিত অর্থের দাবি নিয়ে অভিযোগ রয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের ১৫ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব :
স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় আয়ের কমপক্ষে ৫ শতাংশ এবং জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।
তারা স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সেবা বিভাগ পৃথককরণ, জনবল নিয়োগ ও উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ, নতুন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের আগেই প্রয়োজনীয় ও দক্ষ জনবল নিয়োগ নিশ্চিত করা, বাজেট বরাদ্দ ও দালাল দমন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন ও রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ গঠন, ফিজিওথেরাপি বিভাগ ও পদ সৃষ্টি এবং গ্রাম পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে প্রতিবেদনে।
স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারে কিছু নতুন আইন করার সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আইনগুলো হলো স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ও রোগী নিরাপত্তা আইন; হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক এক্রেডিটেশন আইন; বাংলাদেশ সেইফ ফুড, ড্রাগ, আইভিডি ও মেডিকেল ডিভাইস আইন।
এছাড়া বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, মেডিকেল শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন আইন, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল আইন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন, পৌর ও সিটি কপোরেশন আইন সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে।
সংস্কার কমিশনের সদস্যরা এ পর্যন্ত ৫১টি বৈঠক করেছেন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কমিশন চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল এবং ঢাকায় ৩২টি পরামর্শ সভা করেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বিভাগের মাধ্যমে আট হাজার ২৫৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মতামত নেয়া হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এর প্রথম ধাপে ছয়টি কমিশন গঠন করা হয় সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত সংস্কার কমিশন।
দ্বিতীয় ধাপে গত বছরের ১৮ নভেম্বর আরও পাঁচটি কমিশন গঠিত হয়। এ ধাপের স্বাস্থ্য, শ্রম, নারী, স্থানীয় সরকার ও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনও প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে জমা পড়লো।
সোমবার, ০৫ মে ২০২৫
সংবিধান সংশোধন করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে ‘মৌলিক অধিকার’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। এজন্য স্বাস্থ্য সার্ভিস চালু, মেডিকেল পুলিশ গঠন ও জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের সুপারিশ করেছে কমিশন।
জাতীয় অধ্যাপক একে আজাদ খানের নেতৃত্বে গঠিত ১১ জন কমিশনের সদস্যরা সোমবার,(৫ এপ্রিল ২০২৫) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। পরে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে তারা ৩২২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর
চিকিৎসকদের সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির সরাসরি সাক্ষাৎ নয়
‘স্বাস্থ্য সার্ভিস’ গঠনের সুপারিশ
লাইসেন্স ছাড়া চলছে হাজারের বেশি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান
লাইসেন্স পেতে হয়রানি
স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের ১৫ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, অতি দরিদ্র মানুষ সব ধরনের সেবা বিনামূল্যে পাবে। ১০ শতাংশ দরিদ্র রোগী বেসরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে সেবা পাবে। অত্যাবশ্যকীয় ঔষধ প্রাথমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে ও অন্য ক্ষেত্রে ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে এবং ওষুধের তালিকা প্রতি দুই বছর পর হালনাগাদ করতে হবে।
ক্যান্সার ও ডায়বেটিসের ওষুধের ভ্যাট ট্যাক্স মওকুফ করার সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরুরি ওষুধের সংখ্যা বাড়ানো ও দুই বছর পর পর সেই তালিকা হালনাগাদ করতে হবে।
চিকিৎসকদের সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির সরাসরি সাক্ষাৎ নয় :
কমিশন বলেছে, ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা চিকিৎসকের কাছে সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে তাদের পণ্যের প্রচার করতে পারবেন না। কেবল চিকিৎসকদের ই-মেইলে বা ডাকযোগে তাদের পণ্য সম্পর্কিত তথ্য পাঠাতে পারবেন।
কমিশনের সদস্য সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেন, ওষুধের নমুনা বা উপহার দিয়ে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
‘স্বাস্থ্য সার্ভিস’ গঠনের সুপারশি :
প্রতিবেদনে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ নামে একটি স্বতন্ত্র কাঠামো গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেজন্য আলাদা পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠন এবং জনবল কাঠামো পুনঃনির্ধারণের সুপারিশ করেছে কমিশন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যোগ্যতা, স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রেখে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও নিয়োগের সুপারিশ করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের সার্চ কমিটি গঠন করতে হবে।
বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস প্রধান ও উপ-প্রধান, মহাপরিচালক, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রো-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, বিএমডিসি ও বিএমআরসি চেয়ারম্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগ্যতা সম্পর্কে জাতীয় সংসদকে অবহিত করতে হবে।
লাইসেন্স ছাড়া চলছে হাজারের বেশি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান :
দেশে হাজারেরও বশি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স ছাড়াই কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ১৫ হাজার ২৩৩টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন করেছে মাত্র চার হাজার ১২৩টি। আর এক হাজার ২৭টি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। এটি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দুর্বল ও আইন লঙ্ঘনের মাত্রা অত্যন্ত উদ্বেগজনক, যা রোগীদের নিরাপত্তা ও পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিশ্বাস যোগ্যতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।
লাইসেন্স পেতে হয়রানি :
বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতের দুর্বলতার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসরকারিখাতের লাইসেন্সিং এবং চিকিৎসা অবহেলা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সিং প্রক্রিয়ায় চ্যালেঞ্জগুলো জটিল।
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন পেতে মালিক বা উদ্যোক্তাদের বারবার বিভিন্ন অফিসে যাতায়াত করতে হয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাইসেন্সের
ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর চাহিদা প্রসঙ্গে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিবেশ লাইসেন্স চায়, অথচ পরিবেশ অধিদপ্তর প্রথমে হাসপাতাল লাইসেন্স চায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফি বেড়ে যাওয়ায় ছোট ক্লিনিকগুলো লাইসেন্স করতে আগ্রহ হারাচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স পেতে বিলম্বের কারণ হিসেবে সংস্কার কমিশন বলেছে, অনেক সময় কাগজপত্র ঠিক থাকলেও ২-৩ বছর পর্যন্ত লাইসেন্স পেতে বিলম্ব হয় এবং অননুমোদিত অর্থের দাবি নিয়ে অভিযোগ রয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের ১৫ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব :
স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় আয়ের কমপক্ষে ৫ শতাংশ এবং জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।
তারা স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সেবা বিভাগ পৃথককরণ, জনবল নিয়োগ ও উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ, নতুন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের আগেই প্রয়োজনীয় ও দক্ষ জনবল নিয়োগ নিশ্চিত করা, বাজেট বরাদ্দ ও দালাল দমন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন ও রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ গঠন, ফিজিওথেরাপি বিভাগ ও পদ সৃষ্টি এবং গ্রাম পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে প্রতিবেদনে।
স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারে কিছু নতুন আইন করার সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আইনগুলো হলো স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ও রোগী নিরাপত্তা আইন; হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক এক্রেডিটেশন আইন; বাংলাদেশ সেইফ ফুড, ড্রাগ, আইভিডি ও মেডিকেল ডিভাইস আইন।
এছাড়া বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, মেডিকেল শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন আইন, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল আইন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন, পৌর ও সিটি কপোরেশন আইন সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে।
সংস্কার কমিশনের সদস্যরা এ পর্যন্ত ৫১টি বৈঠক করেছেন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কমিশন চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল এবং ঢাকায় ৩২টি পরামর্শ সভা করেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বিভাগের মাধ্যমে আট হাজার ২৫৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মতামত নেয়া হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এর প্রথম ধাপে ছয়টি কমিশন গঠন করা হয় সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত সংস্কার কমিশন।
দ্বিতীয় ধাপে গত বছরের ১৮ নভেম্বর আরও পাঁচটি কমিশন গঠিত হয়। এ ধাপের স্বাস্থ্য, শ্রম, নারী, স্থানীয় সরকার ও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনও প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে জমা পড়লো।