শপিং মলের টাকা নিতে বহিরাগতদের চেষ্টা
বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টারে অগ্নিকান্ডে পর সেখানে আটকে পড়া ব্যক্তিদের বের করে আনছেন দমকল বাহিনীর সদস্যরা -সংবাদ
রাজধানীর শান্তিনগরের বেইলি রোডে ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার নামে একটি শপিং মলে আগুন লেগেছে। সোমবার,(৫ এপ্রিল ২০২৫) সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে আগুন লাগার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের একে একে ৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে এক ঘণ্টার মাথায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ১৮তলা বিশিষ্ট ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোর ও ছাদে আটকা পড়া ১৮ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ভবনটির বেজমেন্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুন নিচের ফ্লোরগুলোতেই সীমাবদ্ধ ছিল। এরই মধ্যে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ১৮তলা বিশিষ্ট ভবনটির ওপরে আবাসিক বসবাস। নিচের ফ্লোরগুলোতে শপিং মল, কসমেটিকস, এক্সেসরিজের দোকানসহ বিভিন্ন আইটেমের দোকান রয়েছে। আগুনে নিচের শপিং মলের অনেক মালামাল পুড়ে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা প্রায় পৌনে ৭টার দিকে হঠাৎ করে বেইজমেন্টে শব্দ হয়। এরপর প্রথমে ধোঁয়া, পরক্ষণে আগুন দেখা যায়। ফলে নিচ তলার সবাই বাইরে বেরিয়ে যায়। ক্ষণিকের মধ্যে ধোঁয়া ওপরের ফ্লোরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। নিচতলা থেকেও আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে থাকেন লোকজন। তখন আবাসিক বাসিন্দাদের অনেকে নিচে নেমে আসেন। আবার কেউ কেউ ওপরের দিকে অর্থাৎ ছাদে চলে যান।
১২ তলার একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা নিলুফা বেগম জানান, আগুন লাগার পরপরই তিনি ও তার পরিবারের ছয়জন দ্রুত নিচে নেমে আসেন। পাশে তার ভাবীর ফ্ল্যাট। ওই পরিবারের চারজন নিচে না নেমে ছাদে চলে যায়। তাদের কোনো খোঁজ মিলছে না। কল দিলে ধরে আবার কেটে দেয়। নিলুফার মতো নিচে অনেক বাসিন্দা তাদের আটকা পড়া স্বজনদের নিয়ে আতঙ্কে থাকতে দেখা গেছে। তারা কান্নাকাটি করছেন। আবার কেউ কেউ কল করে আগুন নিভে গেছে, ভয়ের কোনো কারণ নেই এমন আশ্বস্ত করছেন।
তবে আগুন লাগার সূত্রপাত সম্পর্কে একেকজন একেক তথ্য দেন। ফায়ার সার্ভিসও তৎক্ষণাৎ সঠিক তথ্য জানাতে পারেনি। ইয়াহিয়া নামের এক বাসিন্দা জানান, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত। আবার কেউ কেউ বলছেন, বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। সুমন শেখ নামের আরেক বাসিন্দা জানান, বেইজমেন্টের জেনারেট বিকট শব্দে বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই সুমনের কথার সত্যতা আছে বলে জানিয়েছেন।
এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, এত বড় আবাসিক ভবনে শপিং মল করা হয়েছে। এসব শপিং মলের কারণে সিঁড়ি দিয়ে হাঁটা দায়। তাই অনেক বাসিন্দা নিচে না নেমে ওপরে ছাদে চলে যান দ্রুত।
ভবনটির বাসিন্দা ছাড়াও আশপাশের বাসিন্দা, শপিং মলে আসা ক্রেতা ও পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা গেছে। কেননা, গত বছর বেইলি রোডের একটি রেস্টুরেন্টে আগুনে ৪৬ জন প্রাণ হারান। না জানি এই ঘটনায়ও সেরকম হতাহতের ঘটনা ঘটে, সেই আতঙ্কে ছিলেন সবাই। তাই উৎসুক জনতা, স্থানীয়রা বিষয়টি দেখার জন্য ভবনের নিচে ভিড় জমান। তাদের সরিয়ে দিতে সেনাবাহিনী, থানা পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী টিমও কাজ করে। যৌথ প্রচেষ্টায় উৎসুক জনতাকে সেখান থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে দেন তারা। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ওই এলাকায় প্রবেশ করার সুযোগ করে দেন। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা মই দিয়ে ছাদ থেকে একে একে ১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করেন।
অগ্নিকা-ের খবর শোনার পরপরই সাইরেন বাজিয়ে ফায়ার সার্ভিসের একে একে ৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। আগুন নির্বাপণের যন্ত্র ঠিক করে দ্রুত আগুন নেভাতে ব্যস্ত হয়ে যান ফায়ার কর্মীরা। সন্ধ্যা পৌনে ৮টার দিকে যখন ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেন, তখন অনেকটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন নিচে কান্নাকাটি করতে থাকা লোকজন। অন্তত আগুন আর বাড়তে পারবে না। কিন্তু তখন দেখা দেয় আরেক বিপত্তি।
ভবনটিতে নামিদামি শপিং মল থাকায় সেখানে দামি জিনিসপত্র বিক্রি করা হয়। আগুন আতঙ্কে দোকানিরা টাকা-পয়সা রেখে জীবন বাজি রেখে বাইরে চলে আসেন। কিন্তু একদল লোক আগুন নেভানোর নামে দোকানের টাকা লুট করার পাঁয়তারা করতে থাকে। তাই দোকানিদের অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বিষয়টি তারা পুলিশকে অবহিত করলে সেখান থেকে উৎসুক জনতাকে আরও ত্বরিৎগতিতে সরিয়ে দেয়া হয়।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা শাজাহান শিকদার বলেন, ভবনটির বেইজমেন্টে আগুনের সূত্রপাত। তবে কীভাবে আগুন লেগেছে তা তৎক্ষণাৎ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি তদন্ত সাপেক্ষে। তিনি জানান, ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ভবনটির ছাদে আটকা পড়া ১৮ জনকে উদ্ধার করেছেন। এদের মধ্যে ৭ জন পুরুষ, ৯ মহিলা ও ২ জন শিশু।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকার সড়ক ও আশপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় পল্টন, মৌচাক, ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সের রোড দিয়ে ব্যক্তিগত ও যাত্রীবাহী কোনো গাড়ি ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। ফলে মৎস্য ভবন সিগন্যাল, শাহবাগ, গুলিস্তানে যানজটের সৃষ্টি হয়। রাত সাড়ে ৮টার পর পুলিশ এক পাশের যান চলাচল স্বাভাবিক করে। এতে বেইলি রোড, শান্তিনগরসহ আশপাশের এলাকার যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শপিং মলের টাকা নিতে বহিরাগতদের চেষ্টা
বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টারে অগ্নিকান্ডে পর সেখানে আটকে পড়া ব্যক্তিদের বের করে আনছেন দমকল বাহিনীর সদস্যরা -সংবাদ
সোমবার, ০৫ মে ২০২৫
রাজধানীর শান্তিনগরের বেইলি রোডে ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার নামে একটি শপিং মলে আগুন লেগেছে। সোমবার,(৫ এপ্রিল ২০২৫) সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে আগুন লাগার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের একে একে ৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে এক ঘণ্টার মাথায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ১৮তলা বিশিষ্ট ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোর ও ছাদে আটকা পড়া ১৮ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ভবনটির বেজমেন্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুন নিচের ফ্লোরগুলোতেই সীমাবদ্ধ ছিল। এরই মধ্যে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ১৮তলা বিশিষ্ট ভবনটির ওপরে আবাসিক বসবাস। নিচের ফ্লোরগুলোতে শপিং মল, কসমেটিকস, এক্সেসরিজের দোকানসহ বিভিন্ন আইটেমের দোকান রয়েছে। আগুনে নিচের শপিং মলের অনেক মালামাল পুড়ে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা প্রায় পৌনে ৭টার দিকে হঠাৎ করে বেইজমেন্টে শব্দ হয়। এরপর প্রথমে ধোঁয়া, পরক্ষণে আগুন দেখা যায়। ফলে নিচ তলার সবাই বাইরে বেরিয়ে যায়। ক্ষণিকের মধ্যে ধোঁয়া ওপরের ফ্লোরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। নিচতলা থেকেও আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে থাকেন লোকজন। তখন আবাসিক বাসিন্দাদের অনেকে নিচে নেমে আসেন। আবার কেউ কেউ ওপরের দিকে অর্থাৎ ছাদে চলে যান।
১২ তলার একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা নিলুফা বেগম জানান, আগুন লাগার পরপরই তিনি ও তার পরিবারের ছয়জন দ্রুত নিচে নেমে আসেন। পাশে তার ভাবীর ফ্ল্যাট। ওই পরিবারের চারজন নিচে না নেমে ছাদে চলে যায়। তাদের কোনো খোঁজ মিলছে না। কল দিলে ধরে আবার কেটে দেয়। নিলুফার মতো নিচে অনেক বাসিন্দা তাদের আটকা পড়া স্বজনদের নিয়ে আতঙ্কে থাকতে দেখা গেছে। তারা কান্নাকাটি করছেন। আবার কেউ কেউ কল করে আগুন নিভে গেছে, ভয়ের কোনো কারণ নেই এমন আশ্বস্ত করছেন।
তবে আগুন লাগার সূত্রপাত সম্পর্কে একেকজন একেক তথ্য দেন। ফায়ার সার্ভিসও তৎক্ষণাৎ সঠিক তথ্য জানাতে পারেনি। ইয়াহিয়া নামের এক বাসিন্দা জানান, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত। আবার কেউ কেউ বলছেন, বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। সুমন শেখ নামের আরেক বাসিন্দা জানান, বেইজমেন্টের জেনারেট বিকট শব্দে বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই সুমনের কথার সত্যতা আছে বলে জানিয়েছেন।
এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, এত বড় আবাসিক ভবনে শপিং মল করা হয়েছে। এসব শপিং মলের কারণে সিঁড়ি দিয়ে হাঁটা দায়। তাই অনেক বাসিন্দা নিচে না নেমে ওপরে ছাদে চলে যান দ্রুত।
ভবনটির বাসিন্দা ছাড়াও আশপাশের বাসিন্দা, শপিং মলে আসা ক্রেতা ও পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা গেছে। কেননা, গত বছর বেইলি রোডের একটি রেস্টুরেন্টে আগুনে ৪৬ জন প্রাণ হারান। না জানি এই ঘটনায়ও সেরকম হতাহতের ঘটনা ঘটে, সেই আতঙ্কে ছিলেন সবাই। তাই উৎসুক জনতা, স্থানীয়রা বিষয়টি দেখার জন্য ভবনের নিচে ভিড় জমান। তাদের সরিয়ে দিতে সেনাবাহিনী, থানা পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী টিমও কাজ করে। যৌথ প্রচেষ্টায় উৎসুক জনতাকে সেখান থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে দেন তারা। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ওই এলাকায় প্রবেশ করার সুযোগ করে দেন। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা মই দিয়ে ছাদ থেকে একে একে ১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করেন।
অগ্নিকা-ের খবর শোনার পরপরই সাইরেন বাজিয়ে ফায়ার সার্ভিসের একে একে ৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। আগুন নির্বাপণের যন্ত্র ঠিক করে দ্রুত আগুন নেভাতে ব্যস্ত হয়ে যান ফায়ার কর্মীরা। সন্ধ্যা পৌনে ৮টার দিকে যখন ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেন, তখন অনেকটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন নিচে কান্নাকাটি করতে থাকা লোকজন। অন্তত আগুন আর বাড়তে পারবে না। কিন্তু তখন দেখা দেয় আরেক বিপত্তি।
ভবনটিতে নামিদামি শপিং মল থাকায় সেখানে দামি জিনিসপত্র বিক্রি করা হয়। আগুন আতঙ্কে দোকানিরা টাকা-পয়সা রেখে জীবন বাজি রেখে বাইরে চলে আসেন। কিন্তু একদল লোক আগুন নেভানোর নামে দোকানের টাকা লুট করার পাঁয়তারা করতে থাকে। তাই দোকানিদের অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বিষয়টি তারা পুলিশকে অবহিত করলে সেখান থেকে উৎসুক জনতাকে আরও ত্বরিৎগতিতে সরিয়ে দেয়া হয়।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা শাজাহান শিকদার বলেন, ভবনটির বেইজমেন্টে আগুনের সূত্রপাত। তবে কীভাবে আগুন লেগেছে তা তৎক্ষণাৎ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি তদন্ত সাপেক্ষে। তিনি জানান, ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ভবনটির ছাদে আটকা পড়া ১৮ জনকে উদ্ধার করেছেন। এদের মধ্যে ৭ জন পুরুষ, ৯ মহিলা ও ২ জন শিশু।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকার সড়ক ও আশপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় পল্টন, মৌচাক, ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সের রোড দিয়ে ব্যক্তিগত ও যাত্রীবাহী কোনো গাড়ি ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। ফলে মৎস্য ভবন সিগন্যাল, শাহবাগ, গুলিস্তানে যানজটের সৃষ্টি হয়। রাত সাড়ে ৮টার পর পুলিশ এক পাশের যান চলাচল স্বাভাবিক করে। এতে বেইলি রোড, শান্তিনগরসহ আশপাশের এলাকার যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।