alt

জাতীয়

সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ২০০ কোটি টাকার খাসজমি দখল, দুদকের হানা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, কক্সবাজার : সোমবার, ০৫ মে ২০২৫

কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনের সুগন্ধা পয়েন্টে দখলকৃত দুইশ’ কোটি টাকার খাসজমি পরিদর্শন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক কক্সবাজার কার্যালয়ের একটি দল।

সুগন্ধা পয়েন্টের এই খাসজমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে ভূমিদস্যূরা। উচ্চ আদালতে রায়ের তথ্য গোপন এবং নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে এই নির্মাণকাজ। কয়েক দফায় প্রশাসন নির্মাণ বন্ধ করার নির্দেশ দিলেও রাতের আঁধারে তারা কাজ সেরে নিচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার,(৫ এপ্রিল ২০২৫) দুপুরে ঘটনাস্থলে যায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক কক্সবাজার কার্যালয়ের একটি দল। ওই সময় দখলদার পক্ষ গণমাধ্যমকর্মীদের সংবাদ সংগ্রহে বাধা দেয়।

ভূমি অফিসের রেকর্ডপত্র দেখে, সচ্চিদানন্দ সেনগুপ্ত নামে কোনো ব্যক্তির খতিয়ানের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি

আমাদের স্বাক্ষর জাল করে খতিয়ান তৈরি করে একটি চক্র সরকারি জায়গাটি দখল করেছে: কউক কর্তৃপক্ষ

জমির জাল নথিপত্র তৈরি এবং আদালতের আদেশের মিথ্যা তথ্য প্রচার করে এই জায়গা দখলের সত্যতা পেয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদক কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক অনিক বড়–য়া বাবু।

তিনি জানান, সরকারি জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। এ সময় দুদকের টিমের সঙ্গে সাংবাদিকরা যেতে চাইলে দখলদারের পক্ষে কিছু লোক বাধা দেয়। সেখানে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে বলা হয়, জমিতে আদালতের আদেশ রয়েছে। অথচ হাইকোর্টের আদেশটির বিরুদ্ধে সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে। যেখানে হাইকোর্টের আদেশটি বাতিল করে স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখার আদেশ রয়েছে। তাও গোপন করেছে দখলদাররা। আর জমির যে খতিয়ান তৈরি করা হয়েছে তা ভূমি অফিস থেকে জালিয়াতি করেছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

অনিক বড়ুয়া বাবু জানান, এই দখলের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ যে বা যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সব ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজার শহরের কলাতলীর প্রধান সড়ক থেকে সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে নামতেই সড়কের বাম পাশে বিশাল এলাকাজুড়ে উঁচু টিনের ঘেরা দিয়ে সাঁটানো আছে সাইনবোর্ড। সাইনবোর্ডে বড় হরফে লেখা নিষেধাজ্ঞার আদেশ। অপরটি ছোট হরফে লেখা সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি। নিষেধাজ্ঞার আদেশ সাইনবোর্ডটি দখলদারের আর সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি লেখা সাইনবোর্ডটি জেলা প্রশাসনের।

অভিযোগ উঠেছে, জাল কাগজ বানিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ৫ আগস্ট পরবর্তী প্রশাসনিক শিথিলতার সুযোগে হোটেল-মোটেল জোনের বাতিলকৃত প্লটের জমি দখল করে নিয়েছে। কয়েকদিন আগে বাউন্ডারির ভেতরে নির্মাণাধীন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের

(কউক) সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে উচ্চ আদালতের এক রায়ে কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোনের পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় (ইসিএ) ৪৯টি প্লট বাতিল করা হয়েছিল। এরপর থেকে প্লটগুলো জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেই বাতিলকৃত প্লটে ২ একর ৩০ শতক খাস জমি সচ্চিদানন্দ সেনগুপ্ত নামের এক ব্যক্তি মালিকানা দাবি করে জাল কাগজপত্র বানিয়ে রাতারাতি মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। চক্রটি গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর জাল কাগজ দাখিল করে হাইকোর্ট থেকে একটি নিষেধাজ্ঞার আদেশও নিয়ে আসেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন হাইকোর্টে আপিল করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত স্থিতাবস্থা জারি করেন। কিন্তু দখলদার চক্রটি রাতের আঁধারে মূল্যবান সরকারি জমিটিতে মাটি ভরাট করে বাউন্ডারির ভেতরে সেমি পাকা করে আট লাইন দোকান তৈরি করে। প্রতিটি লাইনে ১২টি করে দোকান বানানো হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ কক্সবাজার জেলা শাখার সহ-সভাপতি ওবাইদুল হোসেন নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে এ দখল চলছে। এই ওবাইদুলের চক্রে রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিভিন্ন পেশার প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও রয়েছেন। এই চক্রটি ২০২১ সালের নভেম্বর মাস থেকে এই জমির দখল নিয়ে সংঘাতে জড়িত।

নথিপত্রে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি ওই জমি ব্যবহারের জন্যে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) বরাবর আবেদন করেন সচ্চিদানন্দ সেনগুপ্ত। এরপর কউক ভূমি অফিসে জমির কাগজ যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে জাল-জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে।

গত বছরের ১২ জুন কউকের উপ-নগর পরিকল্পনাবিদ মো. তানভীর হাসান রেজাউল জেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসের কাছে এক চিঠিতে লেখেন, কক্সবাজার সদর ভূমি অফিসের দুটি সরকারি নথি জাল করে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের আবেদন করেছেন। এই চিঠিতে আরও দেখা যায়, সচ্চিদানন্দ সেনগুপ্তের দাখিলকৃত ৭৯০০ নং বিএস খতিয়ানটি জাল। তিনি পরপর দুইবার জাল কাগজ দাখিল করার অপরাধে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও বলা হয়।

এ বিষয়ে তানভীর হাসান রেজাউল বলেন, ‘যে কোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে কউক-এর ভূমি ব্যবহারের অনুমোদন নিতে হয়। সুগন্ধা পয়েন্টের ওই জমিতে কোনো অনুমোদন দেয়া হয়নি।’

জাল খতিয়ানে স্বাক্ষর রয়েছে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামীর। তুলনাকারক হিসেবে ভূমি অফিসের নাজির মোহাম্মদ আলমগীর ও নকলকারক হিসেবে কর্মচারী মোহাম্মদ আয়াছের স্বাক্ষর আছে। আরিফ উল্লাহ নিজামী বর্তমানে ভিন্ন উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কর্মরত। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাক্ষর জাল করে খতিয়ান সৃজন করে একটি চক্র সরকারি জায়গাটি দখল করেছে।’

কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানা জানান, জাল কাগজ বানিয়ে সরকারি খাস জমি দখলের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে আসার পর সচ্চিদানন্দ সেনগুপ্তসহ দুইজনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। এছাড়া ভূমি অফিসের রেকর্ডপত্র দেখে, সচ্চিদানন্দ সেনগুপ্ত নামে কোনো ব্যক্তির খতিয়ানের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সরকারি খাস জমি দখলের বিষয়টি নজরে আসার পর সব ধরনের স্থাপনা সরিয়ে নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শিগগিরই না সরালে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

ছবি

অযত্নে বিকল হচ্ছে বিএমডিএ কার্যালয়ের অত্যাধুনিক কৃষিযন্ত্র

চিন্ময় দাসকে আলিফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ

সরকারি পরিসংখ্যান মারাত্মক ফ্যাসাদ তৈরি করছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

‘বিনা নোটিশে সাংবাদিককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুযোগ নেই’

ছবি

রোহিঙ্গাদের ডাটাবেজ ব্যবহারের সুযোগ চায় নির্বাচন কমিশন

ছবি

দেশ ও শ্রমিকের স্বার্থে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার দাবি বায়রার

এপ্রিলে রপ্তানি আয়ে সামান্য উন্নতি, মূল্যস্ফীতিও কমেছে

ছবি

পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ কেন ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চান না?

পাকিস্তানের আরও একটি ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ

ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু ২১ মে, বিশেষ ট্রেন চলবে ৫ জোড়া

লোকজন নিয়ে রাতে বাসায় ঢুকে ‘ভাঙচুর ও অর্থ আদায়’ পুলিশের

বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে সংস্কারগুলো সম্পন্ন করা প্রয়োজন: ইইউ রাষ্ট্রদূত

ছবি

‘প্রস্তুত ফিরোজা’ মঙ্গলবার ফিরছেন খালেদা জিয়া

ছবি

বেইলি রোডে আবারও আগুন ১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার

দরিদ্রদের বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার সুপারিশ কমিশনের

ছবি

গণমাধ্যমের রাজনীতিকরণই সাংবাদিকদের অধিকারহীনতার মূল উৎস: তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম

ছবি

ইইউর নির্বাচন নিয়ে চাপ নেই, সংস্কারে সময় চায় মিলার

ছবি

নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কোনো চাপ নেই: রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার

ছবি

স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা

ছবি

হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে হামলার ঘটনায় আটক ৫৪

ছবি

ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে সুপ্রিম কোর্টে আধা বেলা বিচারকাজ বন্ধ

ছবি

আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো চিন্ময় দাসকে

ছবি

গাজীপুরে এনসিপি নেতা হাসনাতের গাড়িতে হামলা, আটক ২

গুজব শুধু ভারত থেকে আসে, এ রকম নয়: তথ্য উপদেষ্টা

ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা

এনায়েত উল্লাহর ১৯০ গাড়ি জব্দের আদেশ

ছবি

হুমকির মুখে লাউয়াছড়া বনাঞ্চলের পরিবেশ ও প্রতিবেশ

পিএপি’র একচেটিয়া শাসনের মেয়াদ বাড়লো

বাংলাদেশিদের জন্য চিকিৎসা ভিসায় চীনের গ্রিন চ্যানেল চালু

ছবি

স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়ায় ১৬ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ

তোফাজ্জল হত্যা: প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পেছালো

ছবি

২১ আগস্ট মামলা: রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানি পিছিয়ে মঙ্গলবার

ছবি

অসদাচরণের প্রমাণে এসপির বেতন গ্রেড কমিয়ে জরিমানা

শিশু আছিয়া হত্যার রায় হতে পারে আগামী সপ্তাহে

ছবি

টিএসসিতে নারী প্রতিকৃতিতে জুতাপেটার ভিডিও ভাইরাল, নেপথ্যে কী

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেইসবুক বেহাত, বার্তা বিশ্বাস না করার অনুরোধ

tab

জাতীয়

সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ২০০ কোটি টাকার খাসজমি দখল, দুদকের হানা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, কক্সবাজার

সোমবার, ০৫ মে ২০২৫

কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনের সুগন্ধা পয়েন্টে দখলকৃত দুইশ’ কোটি টাকার খাসজমি পরিদর্শন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক কক্সবাজার কার্যালয়ের একটি দল।

সুগন্ধা পয়েন্টের এই খাসজমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে ভূমিদস্যূরা। উচ্চ আদালতে রায়ের তথ্য গোপন এবং নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে এই নির্মাণকাজ। কয়েক দফায় প্রশাসন নির্মাণ বন্ধ করার নির্দেশ দিলেও রাতের আঁধারে তারা কাজ সেরে নিচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার,(৫ এপ্রিল ২০২৫) দুপুরে ঘটনাস্থলে যায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক কক্সবাজার কার্যালয়ের একটি দল। ওই সময় দখলদার পক্ষ গণমাধ্যমকর্মীদের সংবাদ সংগ্রহে বাধা দেয়।

ভূমি অফিসের রেকর্ডপত্র দেখে, সচ্চিদানন্দ সেনগুপ্ত নামে কোনো ব্যক্তির খতিয়ানের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি

আমাদের স্বাক্ষর জাল করে খতিয়ান তৈরি করে একটি চক্র সরকারি জায়গাটি দখল করেছে: কউক কর্তৃপক্ষ

জমির জাল নথিপত্র তৈরি এবং আদালতের আদেশের মিথ্যা তথ্য প্রচার করে এই জায়গা দখলের সত্যতা পেয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদক কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক অনিক বড়–য়া বাবু।

তিনি জানান, সরকারি জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। এ সময় দুদকের টিমের সঙ্গে সাংবাদিকরা যেতে চাইলে দখলদারের পক্ষে কিছু লোক বাধা দেয়। সেখানে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে বলা হয়, জমিতে আদালতের আদেশ রয়েছে। অথচ হাইকোর্টের আদেশটির বিরুদ্ধে সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে। যেখানে হাইকোর্টের আদেশটি বাতিল করে স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখার আদেশ রয়েছে। তাও গোপন করেছে দখলদাররা। আর জমির যে খতিয়ান তৈরি করা হয়েছে তা ভূমি অফিস থেকে জালিয়াতি করেছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

অনিক বড়ুয়া বাবু জানান, এই দখলের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ যে বা যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সব ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজার শহরের কলাতলীর প্রধান সড়ক থেকে সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে নামতেই সড়কের বাম পাশে বিশাল এলাকাজুড়ে উঁচু টিনের ঘেরা দিয়ে সাঁটানো আছে সাইনবোর্ড। সাইনবোর্ডে বড় হরফে লেখা নিষেধাজ্ঞার আদেশ। অপরটি ছোট হরফে লেখা সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি। নিষেধাজ্ঞার আদেশ সাইনবোর্ডটি দখলদারের আর সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি লেখা সাইনবোর্ডটি জেলা প্রশাসনের।

অভিযোগ উঠেছে, জাল কাগজ বানিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ৫ আগস্ট পরবর্তী প্রশাসনিক শিথিলতার সুযোগে হোটেল-মোটেল জোনের বাতিলকৃত প্লটের জমি দখল করে নিয়েছে। কয়েকদিন আগে বাউন্ডারির ভেতরে নির্মাণাধীন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের

(কউক) সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে উচ্চ আদালতের এক রায়ে কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোনের পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় (ইসিএ) ৪৯টি প্লট বাতিল করা হয়েছিল। এরপর থেকে প্লটগুলো জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেই বাতিলকৃত প্লটে ২ একর ৩০ শতক খাস জমি সচ্চিদানন্দ সেনগুপ্ত নামের এক ব্যক্তি মালিকানা দাবি করে জাল কাগজপত্র বানিয়ে রাতারাতি মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। চক্রটি গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর জাল কাগজ দাখিল করে হাইকোর্ট থেকে একটি নিষেধাজ্ঞার আদেশও নিয়ে আসেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন হাইকোর্টে আপিল করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত স্থিতাবস্থা জারি করেন। কিন্তু দখলদার চক্রটি রাতের আঁধারে মূল্যবান সরকারি জমিটিতে মাটি ভরাট করে বাউন্ডারির ভেতরে সেমি পাকা করে আট লাইন দোকান তৈরি করে। প্রতিটি লাইনে ১২টি করে দোকান বানানো হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ কক্সবাজার জেলা শাখার সহ-সভাপতি ওবাইদুল হোসেন নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে এ দখল চলছে। এই ওবাইদুলের চক্রে রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিভিন্ন পেশার প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও রয়েছেন। এই চক্রটি ২০২১ সালের নভেম্বর মাস থেকে এই জমির দখল নিয়ে সংঘাতে জড়িত।

নথিপত্রে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি ওই জমি ব্যবহারের জন্যে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) বরাবর আবেদন করেন সচ্চিদানন্দ সেনগুপ্ত। এরপর কউক ভূমি অফিসে জমির কাগজ যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে জাল-জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে।

গত বছরের ১২ জুন কউকের উপ-নগর পরিকল্পনাবিদ মো. তানভীর হাসান রেজাউল জেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসের কাছে এক চিঠিতে লেখেন, কক্সবাজার সদর ভূমি অফিসের দুটি সরকারি নথি জাল করে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের আবেদন করেছেন। এই চিঠিতে আরও দেখা যায়, সচ্চিদানন্দ সেনগুপ্তের দাখিলকৃত ৭৯০০ নং বিএস খতিয়ানটি জাল। তিনি পরপর দুইবার জাল কাগজ দাখিল করার অপরাধে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও বলা হয়।

এ বিষয়ে তানভীর হাসান রেজাউল বলেন, ‘যে কোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে কউক-এর ভূমি ব্যবহারের অনুমোদন নিতে হয়। সুগন্ধা পয়েন্টের ওই জমিতে কোনো অনুমোদন দেয়া হয়নি।’

জাল খতিয়ানে স্বাক্ষর রয়েছে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামীর। তুলনাকারক হিসেবে ভূমি অফিসের নাজির মোহাম্মদ আলমগীর ও নকলকারক হিসেবে কর্মচারী মোহাম্মদ আয়াছের স্বাক্ষর আছে। আরিফ উল্লাহ নিজামী বর্তমানে ভিন্ন উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কর্মরত। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাক্ষর জাল করে খতিয়ান সৃজন করে একটি চক্র সরকারি জায়গাটি দখল করেছে।’

কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানা জানান, জাল কাগজ বানিয়ে সরকারি খাস জমি দখলের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে আসার পর সচ্চিদানন্দ সেনগুপ্তসহ দুইজনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। এছাড়া ভূমি অফিসের রেকর্ডপত্র দেখে, সচ্চিদানন্দ সেনগুপ্ত নামে কোনো ব্যক্তির খতিয়ানের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সরকারি খাস জমি দখলের বিষয়টি নজরে আসার পর সব ধরনের স্থাপনা সরিয়ে নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শিগগিরই না সরালে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

back to top