ইন্টারনেট মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে; সাইবার স্পেসে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌন হয়রানি শাস্তিযোগ্য অপরাধ : অনলাইন জুয়াকে নিষিদ্ধ
সাইবার সুরক্ষা আইন সংশোধন করে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ নামে নতুন আইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রস্তাবিত এই অধ্যাদেশে ইন্টারনেটকে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা, অনলাইন জুয়াকে নিষিদ্ধ করা এবং প্রথমবারের মতো সাইবার স্পেসে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌন হয়রানিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার,(৬ মে ২০২৫) প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তার তেজগাঁও কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এ সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
প্রস্তাবিত সাইবার অধ্যাদেশে আগের আইনের ৯টি ধারা বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, এই ৯টি ধারা ছিল ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের কুখ্যাত ধারা, এসব ধারাতেই ৯৫ শতাংশ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মামলাগুলোও এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া উপস্থাপন করা হয় উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, কিছু সংশোধন শেষে এই সপ্তাহে গেজেট আকারে প্রকাশ হতে পারে।
কিছু কিছু ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, মত প্রকাশের ক্ষেত্রে দুটি অপরাধ রাখা হয়েছে, একটি হচ্ছে নারী ও শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতনমূলক কন্টেন্ট প্রকাশ, হুমকি দেয়া। আরেকটি হচ্ছে ধর্মীয় ঘৃণা ছড়ানো, যেই ঘৃণা ছড়ানোর মধ্য দিয়ে সহিংসতা উসকে দেয়া হয়। ধর্মীয় ঘৃণাকে ‘কঠোরভাবে’ সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যাতে ভুল বোঝাবুঝি না হয়, কেউ কাউকে হয়রানি করতে না পারে।
এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় ‘প্রথমবারের’ মতো এখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) ব্যবহার করে যদি কোনো সাইবার অপরাধ করা হয়, সেটাকে শাস্তিযোগ্য করা হয়েছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, মত প্রকাশের ক্ষেত্রে ওই দুটি ক্ষেত্রে কারও বিরুদ্ধে মামলা হলে এটা আমলি আদালতে যাবে, যাওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট যদি দেখেন এই মামলার কোনো যৌক্তিকতা নেই, তাহলে ‘প্রি ট্রায়াল স্টেজে’ তিনি মামলা বাতিল করে দিতে পারবেন। অর্থাৎ চার্জশিটের জন্য অপেক্ষা করা লাগবে না। যদি দেখেন সম্পূর্ণ ভুয়া মামলা, এই মামলার কোনো ভিত্তি নেই, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই মামলা বাতিল করে দিতে পারবেন বলেও জানান উপদেষ্টা।
কয়েকটি বিধান বিলুপ্তি করার ব্যাখ্যা দিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, বিলুপ্ত করা বিধানগুলোর মধ্যে আছে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় শহীদ বা জাতীয় পতাকা সম্পর্কিত বিদ্বেষ বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণার যে দণ্ড দেয়ার বিধান সেটা বিলুপ্ত করা হয়েছে।
এসব বিধানে প্রচুর হয়রানিমূলক মামলা হতো জানিয়ে তিনি বলেন, মানহানিকর তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে বিধান যেটা এতে প্রচুর মামলা হতো, অনেক সাংবাদিক এই মামলার ভুক্তভোগী হয়েছেন, এই ধারা সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে। আরেকটা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে এই ধরনের কোনো
কনটেন্ট বা কথাবার্তা বলায় প্রচুর মামলা হতো, এটাও সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে। আক্রমণাত্মক বা ভীতিকর তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ এটাও সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা।
সাইবার নিরাপত্তা কাউন্সিলে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের রাখার বিধান রয়েছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, কনটেন্ট অপসারণের পর আদালতের অনুমতি নিতে হবে। আদালত যদি বলেন এই কনটেন্ট অপসারণ করা যাবে না, তাহলে তা পুনর্বহাল করতে হবে। যে কনটেন্ট অপসারণ করা হবে, সেটি সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে।
অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করতে বিভিন্ন পর্যায়ে লোকজনের পরামর্শ করা হয়েছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ২৫ বার খসড়া পরিবর্তন করা হয়েছে। সবশেষে বড় সমালোচক সুশীল সমাজের সঙ্গে তিন ঘণ্টা বসে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ইন্টারনেট মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে; সাইবার স্পেসে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌন হয়রানি শাস্তিযোগ্য অপরাধ : অনলাইন জুয়াকে নিষিদ্ধ
মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫
সাইবার সুরক্ষা আইন সংশোধন করে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ নামে নতুন আইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রস্তাবিত এই অধ্যাদেশে ইন্টারনেটকে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা, অনলাইন জুয়াকে নিষিদ্ধ করা এবং প্রথমবারের মতো সাইবার স্পেসে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌন হয়রানিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার,(৬ মে ২০২৫) প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তার তেজগাঁও কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এ সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
প্রস্তাবিত সাইবার অধ্যাদেশে আগের আইনের ৯টি ধারা বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, এই ৯টি ধারা ছিল ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের কুখ্যাত ধারা, এসব ধারাতেই ৯৫ শতাংশ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মামলাগুলোও এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া উপস্থাপন করা হয় উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, কিছু সংশোধন শেষে এই সপ্তাহে গেজেট আকারে প্রকাশ হতে পারে।
কিছু কিছু ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, মত প্রকাশের ক্ষেত্রে দুটি অপরাধ রাখা হয়েছে, একটি হচ্ছে নারী ও শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতনমূলক কন্টেন্ট প্রকাশ, হুমকি দেয়া। আরেকটি হচ্ছে ধর্মীয় ঘৃণা ছড়ানো, যেই ঘৃণা ছড়ানোর মধ্য দিয়ে সহিংসতা উসকে দেয়া হয়। ধর্মীয় ঘৃণাকে ‘কঠোরভাবে’ সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যাতে ভুল বোঝাবুঝি না হয়, কেউ কাউকে হয়রানি করতে না পারে।
এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় ‘প্রথমবারের’ মতো এখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) ব্যবহার করে যদি কোনো সাইবার অপরাধ করা হয়, সেটাকে শাস্তিযোগ্য করা হয়েছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, মত প্রকাশের ক্ষেত্রে ওই দুটি ক্ষেত্রে কারও বিরুদ্ধে মামলা হলে এটা আমলি আদালতে যাবে, যাওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট যদি দেখেন এই মামলার কোনো যৌক্তিকতা নেই, তাহলে ‘প্রি ট্রায়াল স্টেজে’ তিনি মামলা বাতিল করে দিতে পারবেন। অর্থাৎ চার্জশিটের জন্য অপেক্ষা করা লাগবে না। যদি দেখেন সম্পূর্ণ ভুয়া মামলা, এই মামলার কোনো ভিত্তি নেই, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই মামলা বাতিল করে দিতে পারবেন বলেও জানান উপদেষ্টা।
কয়েকটি বিধান বিলুপ্তি করার ব্যাখ্যা দিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, বিলুপ্ত করা বিধানগুলোর মধ্যে আছে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় শহীদ বা জাতীয় পতাকা সম্পর্কিত বিদ্বেষ বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণার যে দণ্ড দেয়ার বিধান সেটা বিলুপ্ত করা হয়েছে।
এসব বিধানে প্রচুর হয়রানিমূলক মামলা হতো জানিয়ে তিনি বলেন, মানহানিকর তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে বিধান যেটা এতে প্রচুর মামলা হতো, অনেক সাংবাদিক এই মামলার ভুক্তভোগী হয়েছেন, এই ধারা সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে। আরেকটা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে এই ধরনের কোনো
কনটেন্ট বা কথাবার্তা বলায় প্রচুর মামলা হতো, এটাও সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে। আক্রমণাত্মক বা ভীতিকর তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ এটাও সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা।
সাইবার নিরাপত্তা কাউন্সিলে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের রাখার বিধান রয়েছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, কনটেন্ট অপসারণের পর আদালতের অনুমতি নিতে হবে। আদালত যদি বলেন এই কনটেন্ট অপসারণ করা যাবে না, তাহলে তা পুনর্বহাল করতে হবে। যে কনটেন্ট অপসারণ করা হবে, সেটি সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে।
অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করতে বিভিন্ন পর্যায়ে লোকজনের পরামর্শ করা হয়েছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ২৫ বার খসড়া পরিবর্তন করা হয়েছে। সবশেষে বড় সমালোচক সুশীল সমাজের সঙ্গে তিন ঘণ্টা বসে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।