‘গণতান্ত্রিক পথরেখো তৈরিতে এই রূপরেখা ‘সহায়ক’ হবে: আলী রীয়াজ
রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে নিজস্ব একটি ‘রূপরেখা’ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। মঙ্গলবার,(৬ মে ২০২৫) দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে এ সংস্কার প্রস্তাব (রূপরেখা) কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজের কাছে হস্তান্তর করেন।
সংলাপের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে আলী রীয়াজ বলেন, ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার পথরেখা তৈরিতে জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতাদের রাজনৈতিক দল এনসিপির দেয়া মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা ‘সহায়তা করবে’।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আরও বলেন, ‘আজকের আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্যের পক্ষ থেকে প্রস্তাবের পাশাপাশি, জাতীয় নাগরিক পার্টি থেকে যে সমস্ত মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা এসেছে আমরা গ্রহণ করলাম। এটি পর্যালোচনা মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় এর একটি প্রতিফলন থাকবে বলে আমরা মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সনদ তৈরির পথরেখা দ্রুতই দেয়া হবে।’
এ সময় চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্যায় সংলাপ শেষ করার আশা প্রকাশ করেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিকভাবে অগ্রসর হচ্ছি। তার মধ্য দিয়ে আমরা চেষ্টা করছি, একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে। যার লক্ষ্য হচ্ছে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথরেখা তৈরি করা। সেই প্রক্রিয়া আপনাদের মৌলিক সংস্কারের রূপরেখাগুলো অবশ্যই সহায়তা করবে।’
আলী রীয়াজ জানান, তিনি প্রত্যাশা করছেন এদিনের আলোচনার মধ্য দিয়ে আরও অনেকটা পথ অগ্রসর হওয়া যাবে। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক আলোচনা ধরে দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচনা প্রবেশ করতে পারবো। সেটা ১৫ মে এর পরে দ্রুততার সঙ্গে শুরু করতে পারব।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির এই সংলাপ শুরু হয়েছিল ১৯ এপ্রিল। সেদিনের আলোচনার পর সংলাপ মুলতবি হয়। মঙ্গলবার, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার, জাভেদ রাসিন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম সংলাপে অংশ নেন।
বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে সারোয়ার তুষার বলেন, সংস্কার প্রশ্নে দ্বিতীয় দফার চলমান বৈঠকে নাগরিক পার্টির সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হলো তা হলো- সংসদে স্থায়ী কমিটির প্রধান বিরোধীদল থেকে হতে হবে। এছাড়াও দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন সংসদ সদস্যরা। সংবিধান সংশোধনীতে এখনও ৭০ অনুচ্ছেদের বিলুপ্তি চান তারা।
*ফরিদপুর ও কুমিল্লা বিভাগ*
আলোচনায় এনসিপির পক্ষ থেকে উপস্থাপিত প্রস্তাবগুলো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জবাবদিহিতা, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের ক্ষেত্রে অবশ্যই গণভোটে যেতে হবে, তবে খুবই মাইনর হলে সেটা এভাবেই করা যাবে। প্রধান বিচারপতি হতে হবে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হতে হবে ইলেক্ট্রোরাল পদ্ধতিতে, নারী আসন-উচ্চ কক্ষে ১০০ আসনের মধ্যে ২৫ শতাংশ নারী থাকতে হবে। ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে বিভাগ করার ক্ষেত্রে একমত ও জেলা পরিষদ থাকা দরকার, স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকা যাবে না।’
*এনসিপির ‘মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা’*
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘মৌলিক সংস্কার বলতে নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার নয় বা দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কারের মতো বিষয়গুলোকে মনে করি না। বরং ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহিতা ও বিকেন্দ্রীকরণ এ তিন বিষয়কে অর্জন হচ্ছে মৌলিক সংস্কারের মূল ভিত্তি।’
তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদের উত্থান রুখতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করাই মৌলিক সংস্কারের অন্তর্ভুক্ত।’ তিনি আরও বলেন, স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী উপাদান থেকে মুক্ত হতে এসব সংস্কার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান এবং মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।
‘গণতান্ত্রিক পথরেখো তৈরিতে এই রূপরেখা ‘সহায়ক’ হবে: আলী রীয়াজ
মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫
রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে নিজস্ব একটি ‘রূপরেখা’ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। মঙ্গলবার,(৬ মে ২০২৫) দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে এ সংস্কার প্রস্তাব (রূপরেখা) কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজের কাছে হস্তান্তর করেন।
সংলাপের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে আলী রীয়াজ বলেন, ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার পথরেখা তৈরিতে জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতাদের রাজনৈতিক দল এনসিপির দেয়া মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা ‘সহায়তা করবে’।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আরও বলেন, ‘আজকের আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্যের পক্ষ থেকে প্রস্তাবের পাশাপাশি, জাতীয় নাগরিক পার্টি থেকে যে সমস্ত মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা এসেছে আমরা গ্রহণ করলাম। এটি পর্যালোচনা মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় এর একটি প্রতিফলন থাকবে বলে আমরা মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সনদ তৈরির পথরেখা দ্রুতই দেয়া হবে।’
এ সময় চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্যায় সংলাপ শেষ করার আশা প্রকাশ করেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিকভাবে অগ্রসর হচ্ছি। তার মধ্য দিয়ে আমরা চেষ্টা করছি, একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে। যার লক্ষ্য হচ্ছে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথরেখা তৈরি করা। সেই প্রক্রিয়া আপনাদের মৌলিক সংস্কারের রূপরেখাগুলো অবশ্যই সহায়তা করবে।’
আলী রীয়াজ জানান, তিনি প্রত্যাশা করছেন এদিনের আলোচনার মধ্য দিয়ে আরও অনেকটা পথ অগ্রসর হওয়া যাবে। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক আলোচনা ধরে দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচনা প্রবেশ করতে পারবো। সেটা ১৫ মে এর পরে দ্রুততার সঙ্গে শুরু করতে পারব।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির এই সংলাপ শুরু হয়েছিল ১৯ এপ্রিল। সেদিনের আলোচনার পর সংলাপ মুলতবি হয়। মঙ্গলবার, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার, জাভেদ রাসিন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম সংলাপে অংশ নেন।
বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে সারোয়ার তুষার বলেন, সংস্কার প্রশ্নে দ্বিতীয় দফার চলমান বৈঠকে নাগরিক পার্টির সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হলো তা হলো- সংসদে স্থায়ী কমিটির প্রধান বিরোধীদল থেকে হতে হবে। এছাড়াও দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন সংসদ সদস্যরা। সংবিধান সংশোধনীতে এখনও ৭০ অনুচ্ছেদের বিলুপ্তি চান তারা।
*ফরিদপুর ও কুমিল্লা বিভাগ*
আলোচনায় এনসিপির পক্ষ থেকে উপস্থাপিত প্রস্তাবগুলো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জবাবদিহিতা, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের ক্ষেত্রে অবশ্যই গণভোটে যেতে হবে, তবে খুবই মাইনর হলে সেটা এভাবেই করা যাবে। প্রধান বিচারপতি হতে হবে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হতে হবে ইলেক্ট্রোরাল পদ্ধতিতে, নারী আসন-উচ্চ কক্ষে ১০০ আসনের মধ্যে ২৫ শতাংশ নারী থাকতে হবে। ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে বিভাগ করার ক্ষেত্রে একমত ও জেলা পরিষদ থাকা দরকার, স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকা যাবে না।’
*এনসিপির ‘মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা’*
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘মৌলিক সংস্কার বলতে নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার নয় বা দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কারের মতো বিষয়গুলোকে মনে করি না। বরং ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহিতা ও বিকেন্দ্রীকরণ এ তিন বিষয়কে অর্জন হচ্ছে মৌলিক সংস্কারের মূল ভিত্তি।’
তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদের উত্থান রুখতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করাই মৌলিক সংস্কারের অন্তর্ভুক্ত।’ তিনি আরও বলেন, স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী উপাদান থেকে মুক্ত হতে এসব সংস্কার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান এবং মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।