alt

জাতীয়

চট্টগ্রাম ওয়াসার অপরিকল্পিত পানি শোধনাগার, গ্রাহক ভোগান্তি চরমে

নিরুপম দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম ব্যুরো : মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫

চট্টগ্রাম ওয়াসার ৪টি পানি শোধনাগার থেকে পানি সরবরাহ করা হয় প্রায় ৪৬ কোটি লিটার। অথচ কাগজে কলমে ৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহের সক্ষমতা থাকলেও সিস্টেম লস, সঞ্চালন লাইনে ত্রুটিসহ বিভিন্ন কারণে এখনও সক্ষমতার পূর্ণ সুবিধা মিলছে না। এদিকে, অপরিকল্পিত পানি শোধনাগারের কারণে শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ততার সমস্যায় পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের। বিশেষ করে সিস্টেম লস, বিলিং ব্যবস্থা ডিজিটালাইজড না হওয়া, সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি, পানিতে লবণাক্ততার কারণে বিভিন্ন সময়ে উৎপাদন কম হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার তথ্যানুযায়ী, প্রতিদিন যে পরিমাণ পানি উৎপাদন করে, তার প্রায় ৩০ শতাংশ ‘সিস্টেম লস’ (কারিগরি অপচয়) হিসেবে দেখানো হয়। অর্থাৎ ওয়াসা প্রতিদিন ৫০ কোটি লিটার পানি পরিশোধন করলে এর প্রায় ১৫ কোটি লিটারই নষ্ট হচ্ছে। যার বিল আসে না ওয়াসার পকেটে। ফলে লোকসান সমন্বয় করতে গড় বিলের খড়গ নেমে আসে গ্রাহকদের ঘাড়ে। প্রায় প্রতিদিনই গড় বিলের অভিযোগ নিয়ে ওয়াসায় হাজির হন গ্রাহকরা।

চট্টগ্রাম ওয়াসার হিসেব অনুযায়ী, ৪টি পানি শোধনাগার থেকে চট্টগ্রামে পানি সরবরাহ করা হয় প্রায় ৪৬ কোটি লিটার। এর মধ্যে কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ ও ২ থেকে আসে ১৪ কোটি করে মোট ২৮ কোটি লিটার পানি। এর বাইরে মদুনাঘাট পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি লিটার ও মোহরা পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি লিটার পানি পাওয়া যায়। এছাড়া গভীর নলকূপ থেকে আসে প্রায় ৪ কোটি লিটার পানি। সব মিলিয়ে ওয়াসার দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ৫০ কোটি লিটার। ওয়াসার দাবি, তা মোট চাহিদার প্রায় ৯০

শতাংশ। যদিও সিস্টেম লসসহ বিভিন্ন কারণে সক্ষমতা পুরোটা গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারে না প্রতিষ্ঠানটি। ফলে নগরের বিভিন্ন এলাকায় পানি পান না গ্রাহকরা।

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হলে এবং কাপ্তাই হ্রদের পানি কম ছাড়লে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যায়। লবণাক্ততার কারণে শেখ রাসেল পানি সরবরাহ প্রকল্প ও মদুনাঘাট পানি শোধনাগার থেকে পানি উৎপাদনে সমস্যা হয়। তবে বৃষ্টি এলেই লবণাক্ততার পরিমাণ পুরোপুরি কমে আসে।

প্রধান প্রকৌশলী আরও জানান, ২০৩২ সালে চট্টগ্রামে পানির দৈনিক চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ৭৫ কোটি লিটার। ২০৪২ সালে চাহিদা হবে ১০০ কোটি লিটারের বেশি। লবণাক্ততার সমস্যা সমাধানে পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।

এ দিকে ওয়াসার পানি সরবরাহে সক্ষমতা বাড়লেও এখনও আধুনিকায়ন করা যায়নি বিলিং ব্যবস্থা। ফলে ব্যবহারের চেয়ে বেশি বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে গ্রাহকদের। ওয়াসার একাধিক গ্রাহকের অভিযোগ, চাহিদা অনুযায়ী পানি না পেলেও মাস শেষে মোটা অঙ্কের বিল পরিশোধ করতে হয় তাদের। অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে, ওয়াসার অসাধু মিটার পরিদর্শকদের যোগসাজশে অনেক গ্রাহক মিটার টেম্পারিং করে পানি বিল কমিয়ে আনেন। এতে লোকসানে পড়ছে ওয়াসাও।

জানা গেছে, বিল ব্যবস্থা ডিজিটালাইজড করতে প্রায় দুই বছর আগে অটোমেটেড মিটার রিডিং ফিচারের স্মার্ট ওয়াটার মিটার প্রতিস্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রাথমিকভাবে তিন হাজার গ্রাহকের কাছে এ মিটার দেয়া হয়। যা এখনও চলমান রয়েছে। তবে প্রকল্পের মাঝপথে কাউকে কিছুই না জানিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যান এ প্রকল্পের পরিচালক। ফলে অনেকটাই স্থবির প্রকল্পটি।

অন্যদিকে বর্তমানে ওয়াসার আবাসিক সংযোগ রয়েছে ৯০ হাজার ৭২৩টি। এছাড়া ৭৭০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে ওয়াসা পানি সরবরাহ করে। তবে অধিকাংশ লাইনই পুরনো। বেশিরভাগ সঞ্চালন লাইন এখনও পুরোনো রয়ে যাওয়ায় পানি পরিশোধন সক্ষমতার পুরোটা সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। প্রায় সময়ই পানির তীব্র বেগের কারণে নগরের বিভিন্ন স্থানে পানির পাইপ ফেটে রাজপথ তলিয়ে যেতে দেখা যায়। বহু বছরের পুরোনো এসব সঞ্চালন লাইন প্রতিস্থাপন করা না গেলে পানির সংকট আরও তীব্র হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া শুষ্ক মৌসুম এলেই ওয়াসার পানিতে বাড়ে লবণাক্ততা। নগরবাসীর সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে ভূণ্ড ভূণ্ডগর্ভস্থ উৎস থেকে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করে ওয়াসা। যা গত কয়েক বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। ৩টি পানি শোধনাগার স্থাপন করা হয়, যার মধ্যে দু’টি হালদায় ও একটি কর্ণফুলী নদী নির্ভর। এর মধ্যে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার ১ ও ২ কর্ণফুলী নির্ভর এবং শেখ রাসেল পানি শোধনাগার ও মোহরা পানি শোধনাগার হালদা নির্ভর। শেখ রাসেল ও মোহরা পানি শোধনাগার থেকে নগরে চাহিদার ৫০ শতাংশ পানি উত্তোলন করা হয়। এছাড়া শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার ১ ও ২ এর মাধ্যমে ৩৮ শতাংশ এবং ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে বাকি ১২ শতাংশ পানির চাহিদা মেটানো হয়। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে কর্ণফুলী ও হালদার পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় পরিশোধন করার পরও লবণাক্ততা বাড়ছে। ফলে পানি সরবরাহ কমিয়ে দেয় ওয়াসা।

প্রতিষ্ঠানটির দাবি, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পানি কম নির্গমনের কারণে পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে। তবে প্রকল্প শুরুর আগে সমীক্ষা কার্যক্রম যথাযথ না হওয়ায় ৬-৭ বছরের মাথায় নগরবাসীকে এ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে মনে করেন পানি নিয়ে গবেষণা করা বিশেষজ্ঞরা।

হালদা নদী যেখানে কর্ণফুলীর সঙ্গে মিশেছে, তার আধা কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার মোহরা পানি শোধনাগার ফেইজ-১। এর জন্য দিনে ৯ কোটি লিটার পানি তোলা হয়। দুই নদীর সংযোগস্থলের ছয় কিলোমিটার উজানে মদুনাঘাট পানি শোধনাগারের জন্যও প্রতিদিন ৯ কোটি লিটার পানির প্রয়োজন পড়ে। চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে বৃষ্টির অভাবে কাপ্তাই হ্রদের উজানে পর্যাপ্ত পানি থাকে না। ফলে সেখান থেকে পানি ছাড়া হয় তুলনামূলক কম। সেই স্বল্প পানি বিপরীতমুখী সাগরের পানিকে জোরালো বাধা দিতে পারে না। ফলে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণ সাগরের নোনা পানি কর্ণফুলী হয়ে ঢুকে পড়ে হালদা নদীতে। এই তীব্র লবণাক্ততার কারণে জোয়ারের সময় নদী থেকে পানি নেয়া বন্ধ রাখতে হয় চট্টগ্রাম ওয়াসার দুই পানি পরিশোধন কেন্দ্রে। তাতে দৈনিক পানি পরিশোধন কমে যায় প্রায় ৫ কোটি লিটার। তখন চাহিদা অনুযায়ী পানি না পেয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় চট্টগ্রামবাসীকে।

গত কয়েক বছর ধরেই এই সংকট চলছে। শুষ্ক মৌসুমে নগরীর হালিশহর, উত্তর কাট্টলী, পতেঙ্গা, বাকলিয়া, লালখান বাজার, শুলকবহর, আমানবাজার, আমবাগান, শেরশাহ, কালুরঘাট শিল্প এলাকা, চন্দনপুরাসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। চলমান এই সংকটের সঙ্গে আছে পানির বর্ধিত চাহিদা।

সিলেটে আইনজীবী বাবাকে খুন: ছেলেসহ ৩ জনের ফাঁসি

রাজশাহীতে এনজিওর ‘ঋণের চাপে’ আত্মহত্যার চেষ্টা

চয়নিকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

আরও ৪ মামলায় চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ

আরও ৪ মামলায় চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ

‘মিথ্যাচার’ ও ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ নানা অভিযোগের ব্যাখ্যা দিলো আটাব

‘কোটি কোটি’ টাকা নিয়ে ‘লাপাত্তা’ সাউথইস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা, উৎকণ্ঠায় গ্রাহক

কোরবানির জন্য খামারিদের কাছে প্রস্তুত এক কোটি ২৪ লাখ গবাদিপশু

কুয়েটে এখনও ক্লাসে ফেরেননি শিক্ষকরা, বাড়ছে সেশনজট

ছবি

নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ চূড়ান্ত অনুমোদন

মোরেলগঞ্জে ওয়ারেন্টি আসামি ধরতে গিয়ে একজন নিহত

ছবি

‘শিরক ও বিদআত’ আখ্যা দিয়ে শতবর্ষী বটগাছ কেটে ফেলা হলো মাদারীপুরে

দুই বক্তার ‘আপত্তিকর’ শব্দচয়ন: হেফাজতের দুঃখ প্রকাশ

অবমাননাকর প্রতিক্রিয়া আশা করি না: আইন উপদেষ্টা

রাষ্ট্র সংস্কারে নিজস্ব ‘রূপরেখা’ দিলো এনসিপি

ছবি

আইএমএফের ঋণ: বাজারভিত্তিক ডলারের দামের প্রশ্নে টানাপোড়েন

ভোটাধিকার ফেরাতে নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রতিষ্ঠানের সংস্কার জরুরি: ইউনূস

সাইবার সুরক্ষা আইন সংশোধন করে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ হচ্ছে

ছবি

দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া

ছবি

আরাকানের নতুন প্রশাসনে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব দেখতে চায় বাংলাদেশ : খলিলুর রহমান

ছবি

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো সহায়তা চাননি: তৌহিদ হোসেন

ছবি

তরুণদের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের

ছবি

নারী সংস্কার কমিশন নিয়ে বিদ্বেষমূলক প্রতিক্রিয়া জাতির প্রতি অবমাননাকর: আইন উপদেষ্টা

ছবি

বিতর্কিত আইন বাতিল করে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ অনুমোদন, ৯টি ধারা বাতিল

ছবি

ঈদুল আজহায় টানা ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা

ছবি

আরো ৪ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো চিন্ময় দাসকে

ছবি

অযত্নে বিকল হচ্ছে বিএমডিএ কার্যালয়ের অত্যাধুনিক কৃষিযন্ত্র

চিন্ময় দাসকে আলিফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ

সরকারি পরিসংখ্যান মারাত্মক ফ্যাসাদ তৈরি করছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

‘বিনা নোটিশে সাংবাদিককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুযোগ নেই’

ছবি

রোহিঙ্গাদের ডাটাবেজ ব্যবহারের সুযোগ চায় নির্বাচন কমিশন

ছবি

দেশ ও শ্রমিকের স্বার্থে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার দাবি বায়রার

এপ্রিলে রপ্তানি আয়ে সামান্য উন্নতি, মূল্যস্ফীতিও কমেছে

ছবি

পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ কেন ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চান না?

পাকিস্তানের আরও একটি ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ

ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু ২১ মে, বিশেষ ট্রেন চলবে ৫ জোড়া

tab

জাতীয়

চট্টগ্রাম ওয়াসার অপরিকল্পিত পানি শোধনাগার, গ্রাহক ভোগান্তি চরমে

নিরুপম দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম ব্যুরো

মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫

চট্টগ্রাম ওয়াসার ৪টি পানি শোধনাগার থেকে পানি সরবরাহ করা হয় প্রায় ৪৬ কোটি লিটার। অথচ কাগজে কলমে ৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহের সক্ষমতা থাকলেও সিস্টেম লস, সঞ্চালন লাইনে ত্রুটিসহ বিভিন্ন কারণে এখনও সক্ষমতার পূর্ণ সুবিধা মিলছে না। এদিকে, অপরিকল্পিত পানি শোধনাগারের কারণে শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ততার সমস্যায় পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের। বিশেষ করে সিস্টেম লস, বিলিং ব্যবস্থা ডিজিটালাইজড না হওয়া, সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি, পানিতে লবণাক্ততার কারণে বিভিন্ন সময়ে উৎপাদন কম হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার তথ্যানুযায়ী, প্রতিদিন যে পরিমাণ পানি উৎপাদন করে, তার প্রায় ৩০ শতাংশ ‘সিস্টেম লস’ (কারিগরি অপচয়) হিসেবে দেখানো হয়। অর্থাৎ ওয়াসা প্রতিদিন ৫০ কোটি লিটার পানি পরিশোধন করলে এর প্রায় ১৫ কোটি লিটারই নষ্ট হচ্ছে। যার বিল আসে না ওয়াসার পকেটে। ফলে লোকসান সমন্বয় করতে গড় বিলের খড়গ নেমে আসে গ্রাহকদের ঘাড়ে। প্রায় প্রতিদিনই গড় বিলের অভিযোগ নিয়ে ওয়াসায় হাজির হন গ্রাহকরা।

চট্টগ্রাম ওয়াসার হিসেব অনুযায়ী, ৪টি পানি শোধনাগার থেকে চট্টগ্রামে পানি সরবরাহ করা হয় প্রায় ৪৬ কোটি লিটার। এর মধ্যে কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ ও ২ থেকে আসে ১৪ কোটি করে মোট ২৮ কোটি লিটার পানি। এর বাইরে মদুনাঘাট পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি লিটার ও মোহরা পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি লিটার পানি পাওয়া যায়। এছাড়া গভীর নলকূপ থেকে আসে প্রায় ৪ কোটি লিটার পানি। সব মিলিয়ে ওয়াসার দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ৫০ কোটি লিটার। ওয়াসার দাবি, তা মোট চাহিদার প্রায় ৯০

শতাংশ। যদিও সিস্টেম লসসহ বিভিন্ন কারণে সক্ষমতা পুরোটা গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারে না প্রতিষ্ঠানটি। ফলে নগরের বিভিন্ন এলাকায় পানি পান না গ্রাহকরা।

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হলে এবং কাপ্তাই হ্রদের পানি কম ছাড়লে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যায়। লবণাক্ততার কারণে শেখ রাসেল পানি সরবরাহ প্রকল্প ও মদুনাঘাট পানি শোধনাগার থেকে পানি উৎপাদনে সমস্যা হয়। তবে বৃষ্টি এলেই লবণাক্ততার পরিমাণ পুরোপুরি কমে আসে।

প্রধান প্রকৌশলী আরও জানান, ২০৩২ সালে চট্টগ্রামে পানির দৈনিক চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ৭৫ কোটি লিটার। ২০৪২ সালে চাহিদা হবে ১০০ কোটি লিটারের বেশি। লবণাক্ততার সমস্যা সমাধানে পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।

এ দিকে ওয়াসার পানি সরবরাহে সক্ষমতা বাড়লেও এখনও আধুনিকায়ন করা যায়নি বিলিং ব্যবস্থা। ফলে ব্যবহারের চেয়ে বেশি বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে গ্রাহকদের। ওয়াসার একাধিক গ্রাহকের অভিযোগ, চাহিদা অনুযায়ী পানি না পেলেও মাস শেষে মোটা অঙ্কের বিল পরিশোধ করতে হয় তাদের। অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে, ওয়াসার অসাধু মিটার পরিদর্শকদের যোগসাজশে অনেক গ্রাহক মিটার টেম্পারিং করে পানি বিল কমিয়ে আনেন। এতে লোকসানে পড়ছে ওয়াসাও।

জানা গেছে, বিল ব্যবস্থা ডিজিটালাইজড করতে প্রায় দুই বছর আগে অটোমেটেড মিটার রিডিং ফিচারের স্মার্ট ওয়াটার মিটার প্রতিস্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রাথমিকভাবে তিন হাজার গ্রাহকের কাছে এ মিটার দেয়া হয়। যা এখনও চলমান রয়েছে। তবে প্রকল্পের মাঝপথে কাউকে কিছুই না জানিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যান এ প্রকল্পের পরিচালক। ফলে অনেকটাই স্থবির প্রকল্পটি।

অন্যদিকে বর্তমানে ওয়াসার আবাসিক সংযোগ রয়েছে ৯০ হাজার ৭২৩টি। এছাড়া ৭৭০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে ওয়াসা পানি সরবরাহ করে। তবে অধিকাংশ লাইনই পুরনো। বেশিরভাগ সঞ্চালন লাইন এখনও পুরোনো রয়ে যাওয়ায় পানি পরিশোধন সক্ষমতার পুরোটা সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। প্রায় সময়ই পানির তীব্র বেগের কারণে নগরের বিভিন্ন স্থানে পানির পাইপ ফেটে রাজপথ তলিয়ে যেতে দেখা যায়। বহু বছরের পুরোনো এসব সঞ্চালন লাইন প্রতিস্থাপন করা না গেলে পানির সংকট আরও তীব্র হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া শুষ্ক মৌসুম এলেই ওয়াসার পানিতে বাড়ে লবণাক্ততা। নগরবাসীর সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে ভূণ্ড ভূণ্ডগর্ভস্থ উৎস থেকে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করে ওয়াসা। যা গত কয়েক বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। ৩টি পানি শোধনাগার স্থাপন করা হয়, যার মধ্যে দু’টি হালদায় ও একটি কর্ণফুলী নদী নির্ভর। এর মধ্যে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার ১ ও ২ কর্ণফুলী নির্ভর এবং শেখ রাসেল পানি শোধনাগার ও মোহরা পানি শোধনাগার হালদা নির্ভর। শেখ রাসেল ও মোহরা পানি শোধনাগার থেকে নগরে চাহিদার ৫০ শতাংশ পানি উত্তোলন করা হয়। এছাড়া শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার ১ ও ২ এর মাধ্যমে ৩৮ শতাংশ এবং ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে বাকি ১২ শতাংশ পানির চাহিদা মেটানো হয়। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে কর্ণফুলী ও হালদার পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় পরিশোধন করার পরও লবণাক্ততা বাড়ছে। ফলে পানি সরবরাহ কমিয়ে দেয় ওয়াসা।

প্রতিষ্ঠানটির দাবি, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পানি কম নির্গমনের কারণে পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে। তবে প্রকল্প শুরুর আগে সমীক্ষা কার্যক্রম যথাযথ না হওয়ায় ৬-৭ বছরের মাথায় নগরবাসীকে এ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে মনে করেন পানি নিয়ে গবেষণা করা বিশেষজ্ঞরা।

হালদা নদী যেখানে কর্ণফুলীর সঙ্গে মিশেছে, তার আধা কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার মোহরা পানি শোধনাগার ফেইজ-১। এর জন্য দিনে ৯ কোটি লিটার পানি তোলা হয়। দুই নদীর সংযোগস্থলের ছয় কিলোমিটার উজানে মদুনাঘাট পানি শোধনাগারের জন্যও প্রতিদিন ৯ কোটি লিটার পানির প্রয়োজন পড়ে। চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে বৃষ্টির অভাবে কাপ্তাই হ্রদের উজানে পর্যাপ্ত পানি থাকে না। ফলে সেখান থেকে পানি ছাড়া হয় তুলনামূলক কম। সেই স্বল্প পানি বিপরীতমুখী সাগরের পানিকে জোরালো বাধা দিতে পারে না। ফলে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণ সাগরের নোনা পানি কর্ণফুলী হয়ে ঢুকে পড়ে হালদা নদীতে। এই তীব্র লবণাক্ততার কারণে জোয়ারের সময় নদী থেকে পানি নেয়া বন্ধ রাখতে হয় চট্টগ্রাম ওয়াসার দুই পানি পরিশোধন কেন্দ্রে। তাতে দৈনিক পানি পরিশোধন কমে যায় প্রায় ৫ কোটি লিটার। তখন চাহিদা অনুযায়ী পানি না পেয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় চট্টগ্রামবাসীকে।

গত কয়েক বছর ধরেই এই সংকট চলছে। শুষ্ক মৌসুমে নগরীর হালিশহর, উত্তর কাট্টলী, পতেঙ্গা, বাকলিয়া, লালখান বাজার, শুলকবহর, আমানবাজার, আমবাগান, শেরশাহ, কালুরঘাট শিল্প এলাকা, চন্দনপুরাসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। চলমান এই সংকটের সঙ্গে আছে পানির বর্ধিত চাহিদা।

back to top