মাদারীপুরে কেটে ফেলা শতবর্ষী বটগাছ
‘শিরক ও বিদআত’ এর কথা বলে মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের আলম মীরের কান্দি গ্রামের কুমার নদের খেয়াঘাটের শতবর্ষী একটি বটগাছ কেটে ফেলেছেন স্থানীয় কিছু মুসুল্লী।
গতকাল সোমবার সকাল ৯টার দিকে তারা সেখানে গিয়ে গাছটি কাটা শুরু করেন। এরপর একে একে ডালপালা থেকে শুরু করে মূল পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়।
স্থানীয়দের কেউ কেউ বিশ্বাস করতেন, বটগাছটির অলৌকিক ক্ষমতা ছিল। গাছটি কাটার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানীয় বাসিন্দা বিষয়টি নিয়ে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সরেজমিন ও স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিরখাড়া ইউনিয়নের কুমার নদের আলম মীরের কান্দি গ্রামের খেয়াঘাটে প্রকৃতির নিয়মে জন্ম নেয়া বটবৃক্ষটি ‘অলৌকিক ক্ষমতার’ রয়েছে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। সেই বিশ্বাস থেকেই গাছটির গায়ে লাল শাড়ি ও কাপড় বাধা হতো। মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে অনেকেই মানত করতেন। এই ‘মানত’ করা ধর্মীয় দৃষ্টিতে ‘শিরক ও বিদআত’ বলে আখ্যা দিয়ে এই গ্রামের কিছু মুসুল্লী গত ৫ মে সকালে করাত ব্যবহার করে পুরো গাছটি কেটে ফেলেন। পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, গাছটি থেকে এলাকার প্রচুর মানুষ অক্সিজেন পেতো। এর ফল খেয়ে অনেক পাখি বাঁচতো। কর্তনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও করেন।
শিরখাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য বাবুল হোসেন বলেন, স্থানীয় কিছু মুসুল্লীরা বটগাছটি কাটার বিষয়ে আমাদের কিছু জানায়নি।
তবে লোকমুখে শুনেছি, গাছ কাটতে আসারা ব্যক্তিরা দাবি করে এই বটগাছটিতে এসে মানুষ পূজা করে। মানত করে। অনেকে মনে করে গাছটির অলৌকিক ক্ষমতা আছে। এসব বেদআত, শিরিক- এই অভিযোগ নিয়ে তারা গাছটি কেটে ফেলেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল আহমেদ বলেন, এই গাছটি তো মানুষের কোনো ক্ষতি করেনি। এখানে কিছু মানুষ মানত করে, সেজন্য পুরো গাছটিকেই হত্যা করলো। যা অত্যন্ত খারাপ একটি উদাহরণ হয়ে রইল। এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার, বলেন তিনি।
গাছ কাটা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলে মঙ্গলবার,(৬ মে ২০২৫) সকালে মাদারীপুর সদর উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে যান।
এই বিষয়ে মাদারীপুরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি সকালেই আলম মীরের কান্দি গিয়ে বট গাছটিকে দেখে এসেছি। গাছটির ৯০ শতাংশই কেটে ফেলা হয়েছে। মাটির সঙ্গে দশ ফুট উচ্চতার দুটো মূলকাণ্ড তার ডালাপালা বিহীন দাঁড়িয়ে আছে। বাকি সব মূলকা- ও ডালাপাল কেটে ফেলা হয়েছে। আমি গাছটির মালিক
হান্নান হাওলাদারের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি বলেছেন মাত্র ১৫শ’ টাকায় গাছটি বিক্রি করেছেন। অথচ গাছটির আর্থিক মূল্য এর চেয়ে অনেক বেশি হওয়ার কথা। আমরা তদন্ত করছি, তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করব। পরে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘এই বটগাছটি তো কারো কোনো ক্ষতি করেনি। এই গাছ আমাদের বেঁচে থাকার অক্সিজেন দেয়। গাছে পাখিরা বাসা বেঁধে থাকে। ফল খেয়ে থাকে। কিন্তু এই পুরনো বটগাছটির কাছে বিভিন্ন ধরনের মানুষ নানা রকমের মানত করে- এটা কিছু লোকজন ভালো চোখে দেখে না। তাই তারা পুরো গাছটিই কেটে ফেলে নির্মমভাবে হত্যা করলো। গাছের ওপরের ডালপালাসহ নিজের গোড়ার অংশগুলোও কেটে ফেলা হয়েছে। এই ঘটনা সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করছি।’
এই বিষয়ে মাদারীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, ‘শিরখাড়ায় যে বটগাছটি স্থানীয়রা কেটে ফেলেছে। আমরা সেখানে প্রশাসনের লোক পাঠিয়েছি। যারা অভিযুক্ত তারা এখন গা ঢাকা দিয়েছে। আমরা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
মাদারীপুরে কেটে ফেলা শতবর্ষী বটগাছ
মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫
‘শিরক ও বিদআত’ এর কথা বলে মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের আলম মীরের কান্দি গ্রামের কুমার নদের খেয়াঘাটের শতবর্ষী একটি বটগাছ কেটে ফেলেছেন স্থানীয় কিছু মুসুল্লী।
গতকাল সোমবার সকাল ৯টার দিকে তারা সেখানে গিয়ে গাছটি কাটা শুরু করেন। এরপর একে একে ডালপালা থেকে শুরু করে মূল পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়।
স্থানীয়দের কেউ কেউ বিশ্বাস করতেন, বটগাছটির অলৌকিক ক্ষমতা ছিল। গাছটি কাটার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানীয় বাসিন্দা বিষয়টি নিয়ে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সরেজমিন ও স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিরখাড়া ইউনিয়নের কুমার নদের আলম মীরের কান্দি গ্রামের খেয়াঘাটে প্রকৃতির নিয়মে জন্ম নেয়া বটবৃক্ষটি ‘অলৌকিক ক্ষমতার’ রয়েছে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। সেই বিশ্বাস থেকেই গাছটির গায়ে লাল শাড়ি ও কাপড় বাধা হতো। মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে অনেকেই মানত করতেন। এই ‘মানত’ করা ধর্মীয় দৃষ্টিতে ‘শিরক ও বিদআত’ বলে আখ্যা দিয়ে এই গ্রামের কিছু মুসুল্লী গত ৫ মে সকালে করাত ব্যবহার করে পুরো গাছটি কেটে ফেলেন। পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, গাছটি থেকে এলাকার প্রচুর মানুষ অক্সিজেন পেতো। এর ফল খেয়ে অনেক পাখি বাঁচতো। কর্তনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও করেন।
শিরখাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য বাবুল হোসেন বলেন, স্থানীয় কিছু মুসুল্লীরা বটগাছটি কাটার বিষয়ে আমাদের কিছু জানায়নি।
তবে লোকমুখে শুনেছি, গাছ কাটতে আসারা ব্যক্তিরা দাবি করে এই বটগাছটিতে এসে মানুষ পূজা করে। মানত করে। অনেকে মনে করে গাছটির অলৌকিক ক্ষমতা আছে। এসব বেদআত, শিরিক- এই অভিযোগ নিয়ে তারা গাছটি কেটে ফেলেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল আহমেদ বলেন, এই গাছটি তো মানুষের কোনো ক্ষতি করেনি। এখানে কিছু মানুষ মানত করে, সেজন্য পুরো গাছটিকেই হত্যা করলো। যা অত্যন্ত খারাপ একটি উদাহরণ হয়ে রইল। এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার, বলেন তিনি।
গাছ কাটা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলে মঙ্গলবার,(৬ মে ২০২৫) সকালে মাদারীপুর সদর উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে যান।
এই বিষয়ে মাদারীপুরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি সকালেই আলম মীরের কান্দি গিয়ে বট গাছটিকে দেখে এসেছি। গাছটির ৯০ শতাংশই কেটে ফেলা হয়েছে। মাটির সঙ্গে দশ ফুট উচ্চতার দুটো মূলকাণ্ড তার ডালাপালা বিহীন দাঁড়িয়ে আছে। বাকি সব মূলকা- ও ডালাপাল কেটে ফেলা হয়েছে। আমি গাছটির মালিক
হান্নান হাওলাদারের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি বলেছেন মাত্র ১৫শ’ টাকায় গাছটি বিক্রি করেছেন। অথচ গাছটির আর্থিক মূল্য এর চেয়ে অনেক বেশি হওয়ার কথা। আমরা তদন্ত করছি, তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করব। পরে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘এই বটগাছটি তো কারো কোনো ক্ষতি করেনি। এই গাছ আমাদের বেঁচে থাকার অক্সিজেন দেয়। গাছে পাখিরা বাসা বেঁধে থাকে। ফল খেয়ে থাকে। কিন্তু এই পুরনো বটগাছটির কাছে বিভিন্ন ধরনের মানুষ নানা রকমের মানত করে- এটা কিছু লোকজন ভালো চোখে দেখে না। তাই তারা পুরো গাছটিই কেটে ফেলে নির্মমভাবে হত্যা করলো। গাছের ওপরের ডালপালাসহ নিজের গোড়ার অংশগুলোও কেটে ফেলা হয়েছে। এই ঘটনা সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করছি।’
এই বিষয়ে মাদারীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, ‘শিরখাড়ায় যে বটগাছটি স্থানীয়রা কেটে ফেলেছে। আমরা সেখানে প্রশাসনের লোক পাঠিয়েছি। যারা অভিযুক্ত তারা এখন গা ঢাকা দিয়েছে। আমরা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’