alt

জাতীয়

কুয়েটে এখনও ক্লাসে ফেরেননি শিক্ষকরা, বাড়ছে সেশনজট

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, খুলনা : মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়- কুয়েটে দীর্ঘ ৭৪ দিন পর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও ক্লাসে ফেরেননি শিক্ষকরা। একাডেমিক কার্যক্রম চালু হওয়ার তৃতীয় দিনেও শিক্ষকরা তাদের কর্মবিরতিতে অনড় রয়েছেন। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন।

শিক্ষকদের লাঞ্ছিতকারীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাস-পরীক্ষা নেবেন না

অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশে অনিচ্ছাকৃত যে কোনো ভুলের জন্য শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আমরা চাই পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হোক

দ্রুত সংকট নিরসন হয়ে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আশ্বাস: বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোদমে কবে নাগাদ ক্লাস শুরু হবে তা নিয়ে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা বাড়ছে। পাশাপাশি সেশনজট বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী। একই সঙ্গে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক এবং উন্নয়ন কার্যক্রম।

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হযরত আলী শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। তবে এখনও কোনো ফলপ্রসূ সমাধান আসেনি।

মঙ্গলবার,(৬ মে ২০২৫) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আনিসুর রহমান ভুঞা ও ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার জানান, আমরা চেষ্টা করছি যাতে দ্রুত সংকট নিরসন হয়ে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

কুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সংকট নিরসনের চেষ্টা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পাসে সুনসান নীরবতা। ক্লাসরুমগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। শিক্ষকরা ক্লাসে না যাওয়ায়, যাননি শিক্ষার্থীরাও। হলের শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান করছেন। কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থীকে হলের সামনে আড্ডা দিতে ও ক্যাম্পাসের সড়কগুলোতে চলাচল করতে দেখা গেছে। ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসেনি। প্রধান গেটে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

গতকাল সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে সাধারণ সভা করে শিক্ষক সমিতি। সভায় শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী শিক্ষার্থীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা।

মঙ্গলবার দুপুরে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের পর কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী কয়েকজন শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। তারা এর বিচার দাবি করলেও কুয়েট প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শিক্ষকদের লাঞ্ছিতকারীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাস-পরীক্ষা নেবেন না। ফারুক হোসেন আরও বলেন, সাত দিনের মধ্যে শাস্তি কার্যকর না হলে প্রশাসনিক কাজ থেকেও বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

এদিকে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় এরই মধ্যে দুই দফা ক্ষমা চেয়েছে শিক্ষার্থীরা। কুয়েটের

শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম, মো. ওবায়দুল্লাহ, শেখ মুজাহিদ, গালিব রাহাত, তৌফিক বলেন, শিক্ষকদের সঙ্গে আমরা কোনো বিদ্বেষমূলক আচরণে যেতে চাই না। আমরা ইতোমধ্যে অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশে অনিচ্ছাকৃত যে কোনো ভুলের জন্য জন্য শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আমরা চাই পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হোক।

শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরাও সব অন্যায়ের বিচার চাই। পাশাপাশি ক্লাসটাও চলুক। না হলে বড় ধরনের সেশনজটে পড়তে হবে। এমনিতে কুয়েটে এক বছরেরও বেশি সেশনজট ছিল। এরপর আরও আড়াই মাস আমরা পিছিয়ে গেছি।

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়; এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকা- বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়। রাতে খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।

এরপর আগের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আবাসিক হল খুলে দেয়ার দাবিতে ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। উপাচার্যের পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়া হয়। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা না আসায় ২১ এপ্রিল অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা।

এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার ১৮ এপ্রিল সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে আসেন। তবে দীর্ঘ সময় বুঝিয়েও তিনি অনশন ভাঙাতে পারেননি।

এরপর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়ার পাশাপাশি সব হল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ মে শুরু হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত আসে।

আমরণ অনশন কর্মসূচির তৃতীয় দিনে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন অনেক শিক্ষার্থী। উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন তারা।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গঠন করা কমিটির তিন সদস্যও কুয়েট ক্যাম্পাসে যায়।

রাতে উপাচার্য ও উপ উপাচার্যের অপসারণের বার্তা দিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান।

গত ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হযরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

সিলেটে আইনজীবী বাবাকে খুন: ছেলেসহ ৩ জনের ফাঁসি

রাজশাহীতে এনজিওর ‘ঋণের চাপে’ আত্মহত্যার চেষ্টা

চয়নিকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

আরও ৪ মামলায় চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ

আরও ৪ মামলায় চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ

‘মিথ্যাচার’ ও ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ নানা অভিযোগের ব্যাখ্যা দিলো আটাব

‘কোটি কোটি’ টাকা নিয়ে ‘লাপাত্তা’ সাউথইস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা, উৎকণ্ঠায় গ্রাহক

কোরবানির জন্য খামারিদের কাছে প্রস্তুত এক কোটি ২৪ লাখ গবাদিপশু

ছবি

নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ চূড়ান্ত অনুমোদন

মোরেলগঞ্জে ওয়ারেন্টি আসামি ধরতে গিয়ে একজন নিহত

ছবি

‘শিরক ও বিদআত’ আখ্যা দিয়ে শতবর্ষী বটগাছ কেটে ফেলা হলো মাদারীপুরে

দুই বক্তার ‘আপত্তিকর’ শব্দচয়ন: হেফাজতের দুঃখ প্রকাশ

চট্টগ্রাম ওয়াসার অপরিকল্পিত পানি শোধনাগার, গ্রাহক ভোগান্তি চরমে

অবমাননাকর প্রতিক্রিয়া আশা করি না: আইন উপদেষ্টা

রাষ্ট্র সংস্কারে নিজস্ব ‘রূপরেখা’ দিলো এনসিপি

ছবি

আইএমএফের ঋণ: বাজারভিত্তিক ডলারের দামের প্রশ্নে টানাপোড়েন

ভোটাধিকার ফেরাতে নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রতিষ্ঠানের সংস্কার জরুরি: ইউনূস

সাইবার সুরক্ষা আইন সংশোধন করে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ হচ্ছে

ছবি

দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া

ছবি

আরাকানের নতুন প্রশাসনে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব দেখতে চায় বাংলাদেশ : খলিলুর রহমান

ছবি

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো সহায়তা চাননি: তৌহিদ হোসেন

ছবি

তরুণদের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের

ছবি

নারী সংস্কার কমিশন নিয়ে বিদ্বেষমূলক প্রতিক্রিয়া জাতির প্রতি অবমাননাকর: আইন উপদেষ্টা

ছবি

বিতর্কিত আইন বাতিল করে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ অনুমোদন, ৯টি ধারা বাতিল

ছবি

ঈদুল আজহায় টানা ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা

ছবি

আরো ৪ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো চিন্ময় দাসকে

ছবি

অযত্নে বিকল হচ্ছে বিএমডিএ কার্যালয়ের অত্যাধুনিক কৃষিযন্ত্র

চিন্ময় দাসকে আলিফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ

সরকারি পরিসংখ্যান মারাত্মক ফ্যাসাদ তৈরি করছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

‘বিনা নোটিশে সাংবাদিককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুযোগ নেই’

ছবি

রোহিঙ্গাদের ডাটাবেজ ব্যবহারের সুযোগ চায় নির্বাচন কমিশন

ছবি

দেশ ও শ্রমিকের স্বার্থে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার দাবি বায়রার

এপ্রিলে রপ্তানি আয়ে সামান্য উন্নতি, মূল্যস্ফীতিও কমেছে

ছবি

পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ কেন ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চান না?

পাকিস্তানের আরও একটি ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ

ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু ২১ মে, বিশেষ ট্রেন চলবে ৫ জোড়া

tab

জাতীয়

কুয়েটে এখনও ক্লাসে ফেরেননি শিক্ষকরা, বাড়ছে সেশনজট

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, খুলনা

মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়- কুয়েটে দীর্ঘ ৭৪ দিন পর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও ক্লাসে ফেরেননি শিক্ষকরা। একাডেমিক কার্যক্রম চালু হওয়ার তৃতীয় দিনেও শিক্ষকরা তাদের কর্মবিরতিতে অনড় রয়েছেন। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন।

শিক্ষকদের লাঞ্ছিতকারীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাস-পরীক্ষা নেবেন না

অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশে অনিচ্ছাকৃত যে কোনো ভুলের জন্য শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আমরা চাই পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হোক

দ্রুত সংকট নিরসন হয়ে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আশ্বাস: বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোদমে কবে নাগাদ ক্লাস শুরু হবে তা নিয়ে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা বাড়ছে। পাশাপাশি সেশনজট বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী। একই সঙ্গে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক এবং উন্নয়ন কার্যক্রম।

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হযরত আলী শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। তবে এখনও কোনো ফলপ্রসূ সমাধান আসেনি।

মঙ্গলবার,(৬ মে ২০২৫) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আনিসুর রহমান ভুঞা ও ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার জানান, আমরা চেষ্টা করছি যাতে দ্রুত সংকট নিরসন হয়ে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

কুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সংকট নিরসনের চেষ্টা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পাসে সুনসান নীরবতা। ক্লাসরুমগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। শিক্ষকরা ক্লাসে না যাওয়ায়, যাননি শিক্ষার্থীরাও। হলের শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান করছেন। কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থীকে হলের সামনে আড্ডা দিতে ও ক্যাম্পাসের সড়কগুলোতে চলাচল করতে দেখা গেছে। ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসেনি। প্রধান গেটে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

গতকাল সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে সাধারণ সভা করে শিক্ষক সমিতি। সভায় শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী শিক্ষার্থীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা।

মঙ্গলবার দুপুরে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের পর কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী কয়েকজন শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। তারা এর বিচার দাবি করলেও কুয়েট প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শিক্ষকদের লাঞ্ছিতকারীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাস-পরীক্ষা নেবেন না। ফারুক হোসেন আরও বলেন, সাত দিনের মধ্যে শাস্তি কার্যকর না হলে প্রশাসনিক কাজ থেকেও বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

এদিকে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় এরই মধ্যে দুই দফা ক্ষমা চেয়েছে শিক্ষার্থীরা। কুয়েটের

শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম, মো. ওবায়দুল্লাহ, শেখ মুজাহিদ, গালিব রাহাত, তৌফিক বলেন, শিক্ষকদের সঙ্গে আমরা কোনো বিদ্বেষমূলক আচরণে যেতে চাই না। আমরা ইতোমধ্যে অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশে অনিচ্ছাকৃত যে কোনো ভুলের জন্য জন্য শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আমরা চাই পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হোক।

শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরাও সব অন্যায়ের বিচার চাই। পাশাপাশি ক্লাসটাও চলুক। না হলে বড় ধরনের সেশনজটে পড়তে হবে। এমনিতে কুয়েটে এক বছরেরও বেশি সেশনজট ছিল। এরপর আরও আড়াই মাস আমরা পিছিয়ে গেছি।

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়; এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকা- বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়। রাতে খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।

এরপর আগের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আবাসিক হল খুলে দেয়ার দাবিতে ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। উপাচার্যের পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়া হয়। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা না আসায় ২১ এপ্রিল অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা।

এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার ১৮ এপ্রিল সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে আসেন। তবে দীর্ঘ সময় বুঝিয়েও তিনি অনশন ভাঙাতে পারেননি।

এরপর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়ার পাশাপাশি সব হল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ মে শুরু হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত আসে।

আমরণ অনশন কর্মসূচির তৃতীয় দিনে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন অনেক শিক্ষার্থী। উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন তারা।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গঠন করা কমিটির তিন সদস্যও কুয়েট ক্যাম্পাসে যায়।

রাতে উপাচার্য ও উপ উপাচার্যের অপসারণের বার্তা দিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান।

গত ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হযরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

back to top