ফেনীতে সাউথইস্ট ব্যাংকের একটি শাখা থেকে ‘কয়েক কোটি’ টাকা নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা লাপাত্তা হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। দাগনভূঞা উপজেলার সিলোনিয়া বাজার শাখার জুনিয়র কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
উৎকণ্ঠায় আছেন গ্রাহকরা।
ব্যবসায়ী এ কে আজাদ জানান, ব্যাংকে তার হিসাবে জমা থাকা ৩২ লাখ টাকার হদিস মিলছে না।
‘গ্রাহকদের আমানতের অর্থ ব্যাংক হিসাব থেকে লোপাটের বিষয়টি নিয়ে অডিট বিভাগের কর্মকর্তারা কাজ করছেন
‘গ্রাহকদের অর্থের দায়ভার ব্যাংকের নিজস্ব বিষয়। বিচলিত না হওয়ার আহ্বান
ওই শাখার ব্যবস্থাপক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘গ্রাহকদের আমানতের অর্থ ব্যাংক হিসাব থেকে লোপাটের বিষয়টি অবগত হয়ে ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে অডিট বিভাগের কর্মকর্তারা ব্যাংকের এই শাখায় এসে তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
‘কতজন গ্রাহকের হিসাব থেকে কী পরিমাণ অর্থ সরানো হয়েছে অডিট কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপাতত বিস্তারিত কিছু জানানো সম্ভব হচ্ছে না।’ বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে গা-ঢাকা দিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিয়াউল হক। তিনি জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠান নগর ইউনিয়নের পশ্চিম ফতেহনগর এলাকার সালমান হাজী বাড়ির আবদুল হকের ছেলে। তিনি সিলোনিয়া বাজার শাখায় সাত বছর ধরে রেমিট্যান্স ডেস্কে কাজ করছেন।
ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে শাখাটি উদ্বোধন হয়। শুরু থেকেই জিয়াউল সেখানে আছেন। ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়কের পাশে শাখাটি চালু হওয়ায় দ্রুত সময়ে গ্রাহকবান্ধব হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিন এই শাখায় কাজ করার মাধ্যমে গ্রাহকদের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে।
গ্রাহকদের বিভিন্ন মেয়াদের আমানতের অর্থ সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠলে একের পর এক আমানতকারীরা ব্যাংকে যোগাযোগ করতে শুরু করেন। তারা ব্যাংকে এসে হৈ-হুল্লোড়ও শুরু করেন। অনেকে নিজেদের হিসাবের স্থিতি জানতে আসেন।
ব্যাংকের গ্রাহক দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী ইমরান হোসেন বলেন, ‘৩০ এপ্রিল আমার হিসাব থেকে ৫০ লাখ টাকা সরানোর বিষয়টি নিশ্চিত হই। এ সময় ব্যাংকে যোগাযোগ করলে জিয়াউল হক ঘটনায় জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পারি। বিষয়টি জানতে পেরে ১ মে ব্যাংক ম্যানেজার কামরুজ্জামানকে মোবাইলে বিস্তারিত অবগত করেছি।’
দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী এ কে আজাদ বলেন, ব্যাংকে তার হিসাবে জমা থাকা ৩২ লাখ টাকার হদিস মিলছে না। বিভিন্ন সময় আরটিজিএসের মাধ্যমে লেনদেন করেছেন। জিয়াউল হক স্বাক্ষর জালিয়াতি করে টাকা সরিয়েছেন বলে তিনি ধারণা করছেন।
একইভাবে স্থানীয় এক ট্রাভেল ব্যবসায়ী তার ১০ লাখ টাকা তছরুপের অভিযোগ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আরটিজিএসের মাধ্যমে লেনদেন করিনি। চেকও হারানো যায়নি, তারপরও কীভাবে ব্যাংক হিসাব থেকে এ টাকা লোপাট হয়েছে জানি না। আমারও অভিযোগটি ব্যাংক ম্যানেজারকে অবগত করা হয়েছে।’ তাদের মতো আরও অনেক আমানতকারী অর্থ লোপাটের বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছেন।
ব্যাংকের গ্রাহক প্রবাসী শফি উল্লার স্ত্রী জোসনা বেগম জানান, ব্যাংকের এ শাখার মাধ্যমে ১৬ লাখ টাকা বিদেশ থেকে তার স্বামী রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ব্যাংকের কর্মকর্তা জিয়াউল পালিয়ে গেছেন শুনে টাকা ওঠাতে এসে ওঠাতে পারেননি। এ অবস্থায় মানসিক দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে ধৈর্য ধরতে বলেছে।
আমানতকারীদের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় গত রোববার ওই শাখায় তদন্তে আসেন ব্যাংকের অডিট টিমের প্রধান অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট রেজাউল কবিরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্য। তখন জিয়াউল ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মী জয়নাল আবেদীনকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন। গত রোববার থেকে তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে জিয়াউল হকের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তার অবস্থানের বিষয়ে ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তাও তথ্য জানাতে পারেননি। বিষয়টি সম্পর্কে সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে অডিট কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেলেই বিস্তারিত তথ্য জানানো যাবে।’ তবে তিনি গ্রাহকদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘গ্রাহকদের অর্থের দায়ভার ব্যাংকের নিজস্ব বিষয়। এ ঘটনায় গ্রাহকদের বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। দ্রুত বিষয়টির সমাধান করা হবে।’
মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫
ফেনীতে সাউথইস্ট ব্যাংকের একটি শাখা থেকে ‘কয়েক কোটি’ টাকা নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা লাপাত্তা হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। দাগনভূঞা উপজেলার সিলোনিয়া বাজার শাখার জুনিয়র কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
উৎকণ্ঠায় আছেন গ্রাহকরা।
ব্যবসায়ী এ কে আজাদ জানান, ব্যাংকে তার হিসাবে জমা থাকা ৩২ লাখ টাকার হদিস মিলছে না।
‘গ্রাহকদের আমানতের অর্থ ব্যাংক হিসাব থেকে লোপাটের বিষয়টি নিয়ে অডিট বিভাগের কর্মকর্তারা কাজ করছেন
‘গ্রাহকদের অর্থের দায়ভার ব্যাংকের নিজস্ব বিষয়। বিচলিত না হওয়ার আহ্বান
ওই শাখার ব্যবস্থাপক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘গ্রাহকদের আমানতের অর্থ ব্যাংক হিসাব থেকে লোপাটের বিষয়টি অবগত হয়ে ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে অডিট বিভাগের কর্মকর্তারা ব্যাংকের এই শাখায় এসে তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
‘কতজন গ্রাহকের হিসাব থেকে কী পরিমাণ অর্থ সরানো হয়েছে অডিট কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপাতত বিস্তারিত কিছু জানানো সম্ভব হচ্ছে না।’ বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে গা-ঢাকা দিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিয়াউল হক। তিনি জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠান নগর ইউনিয়নের পশ্চিম ফতেহনগর এলাকার সালমান হাজী বাড়ির আবদুল হকের ছেলে। তিনি সিলোনিয়া বাজার শাখায় সাত বছর ধরে রেমিট্যান্স ডেস্কে কাজ করছেন।
ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে শাখাটি উদ্বোধন হয়। শুরু থেকেই জিয়াউল সেখানে আছেন। ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়কের পাশে শাখাটি চালু হওয়ায় দ্রুত সময়ে গ্রাহকবান্ধব হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিন এই শাখায় কাজ করার মাধ্যমে গ্রাহকদের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে।
গ্রাহকদের বিভিন্ন মেয়াদের আমানতের অর্থ সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠলে একের পর এক আমানতকারীরা ব্যাংকে যোগাযোগ করতে শুরু করেন। তারা ব্যাংকে এসে হৈ-হুল্লোড়ও শুরু করেন। অনেকে নিজেদের হিসাবের স্থিতি জানতে আসেন।
ব্যাংকের গ্রাহক দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী ইমরান হোসেন বলেন, ‘৩০ এপ্রিল আমার হিসাব থেকে ৫০ লাখ টাকা সরানোর বিষয়টি নিশ্চিত হই। এ সময় ব্যাংকে যোগাযোগ করলে জিয়াউল হক ঘটনায় জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পারি। বিষয়টি জানতে পেরে ১ মে ব্যাংক ম্যানেজার কামরুজ্জামানকে মোবাইলে বিস্তারিত অবগত করেছি।’
দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী এ কে আজাদ বলেন, ব্যাংকে তার হিসাবে জমা থাকা ৩২ লাখ টাকার হদিস মিলছে না। বিভিন্ন সময় আরটিজিএসের মাধ্যমে লেনদেন করেছেন। জিয়াউল হক স্বাক্ষর জালিয়াতি করে টাকা সরিয়েছেন বলে তিনি ধারণা করছেন।
একইভাবে স্থানীয় এক ট্রাভেল ব্যবসায়ী তার ১০ লাখ টাকা তছরুপের অভিযোগ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আরটিজিএসের মাধ্যমে লেনদেন করিনি। চেকও হারানো যায়নি, তারপরও কীভাবে ব্যাংক হিসাব থেকে এ টাকা লোপাট হয়েছে জানি না। আমারও অভিযোগটি ব্যাংক ম্যানেজারকে অবগত করা হয়েছে।’ তাদের মতো আরও অনেক আমানতকারী অর্থ লোপাটের বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছেন।
ব্যাংকের গ্রাহক প্রবাসী শফি উল্লার স্ত্রী জোসনা বেগম জানান, ব্যাংকের এ শাখার মাধ্যমে ১৬ লাখ টাকা বিদেশ থেকে তার স্বামী রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ব্যাংকের কর্মকর্তা জিয়াউল পালিয়ে গেছেন শুনে টাকা ওঠাতে এসে ওঠাতে পারেননি। এ অবস্থায় মানসিক দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে ধৈর্য ধরতে বলেছে।
আমানতকারীদের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় গত রোববার ওই শাখায় তদন্তে আসেন ব্যাংকের অডিট টিমের প্রধান অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট রেজাউল কবিরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্য। তখন জিয়াউল ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মী জয়নাল আবেদীনকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন। গত রোববার থেকে তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে জিয়াউল হকের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তার অবস্থানের বিষয়ে ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তাও তথ্য জানাতে পারেননি। বিষয়টি সম্পর্কে সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে অডিট কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেলেই বিস্তারিত তথ্য জানানো যাবে।’ তবে তিনি গ্রাহকদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘গ্রাহকদের অর্থের দায়ভার ব্যাংকের নিজস্ব বিষয়। এ ঘটনায় গ্রাহকদের বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। দ্রুত বিষয়টির সমাধান করা হবে।’