কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার বদলায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলা চালিয়েছে ভারত। পাল্টায় পাকিস্তানও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গোলবর্ষণ করেছে। পাল্টাপাল্টি হামলায় পাকিস্তানে অন্তত ২৬ জন এবং ভারতে ১৫ জন মারা গেছে। যদিও ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে অন্তত ৭০ জন ‘সন্ত্রাসীকে’ হত্যা করার দাবি করেছে ভারত।
জাতিসংঘ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ এর প্রধান মাসুদ আজহারের ১০ স্বজন নিহত
পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি স্থানে হামলা চালানোর কথা বলেছে ভারত
৬টি স্থানে হামলা হওয়ার কথা স্বীকার করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী
ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানের অন্তত ২৬ জন এবং ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তানের গোলায় ১৫ জন নিহত হয়েছেন
কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পর পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে চরম অবনতি ঘটে
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে কয়েক দশক ধরে চলা বিদ্রোহে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ গেছে
কাশ্মীরকে পুরোপুরি নিজেদের অংশ হিসেবে দাবি করে ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। তার বদলায় গতকাল মঙ্গলবার গভীররাতে পাকিস্তানে হামলা চালায় দিল্লি। ইসলামাবাদও গোলাবর্ষণসহ সামরিক জবাব দেয়।
পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতের হামলার কড়া নিন্দা জানিয়ে একে ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ অ্যাখ্যা দিয়েছে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সভার পর দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ভারতীয় সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে বেসামরিক নাগরিক, বিশেষ করে নিরীহ নারী ও শিশুদের লক্ষ্য করে যে হামলা চালিয়েছে তা একটি ঘৃণ্য ও লজ্জাজনক অপরাধ, এটি মানব আচরণের সমস্ত নীতিমালা এবং আন্তর্জাতিক আইনের বিধান লঙ্ঘন করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে বুধবার, (৭ মে ২০২৫) পাকিস্তানের নিরাপত্তাবিষয়ক এ শীর্ষ কমিটির বৈঠকে দেশটির জয়েন্ট চিফস অব স্টাফসের চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামসাদ মির্জা, গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মহাপরিচালক আসিম মুনির ও বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন।
বৈঠকে ভারতের হামলাকে ‘পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার নির্লজ্জ লঙ্ঘনও’ অভিহিত করা হয়েছে। পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও আজাদ কাশ্মীরে হামলা করে ভারত যেভাবে ‘আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে’ তার জন্য নয়াদিল্লিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বানও জানিয়েছে তারা। তাদের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এ বৈঠকে বলা হয়েছে, ‘আত্মরক্ষার্থে’ ভারতের হামলার জবাব দেয়ার অধিকার রাখে পাকিস্তান। সেটা কখন, কীভাবে হবে তা ইসলামাবাদই ঠিক করবে, ‘সমুচিত পদক্ষেপ’ নিতে সশস্ত্র বাহিনীকে অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। এদিকে পাকিস্তানের
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআরের মহাপরিচালক জেনারেল আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, বুধবার প্রথম প্রহরে পাকিস্তানে হামলা চালালেও ভারতের কোনো বিমানই পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ঢুকতে পারেনি, পাকিস্তানের কোনো বিমানও ভারতের ভূখণ্ডে যায়নি। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর ‘আগ্রাসনের সমুচিত জবাব’ দিয়েছে এবং বেশ কয়েকটি ভারতীয় তল্লাশি চৌকি গুঁড়িয়ে দিয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
জইশ প্রধান মাসুদ আজহারের ১০ স্বজন নিহত
কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার বদলায় ভারত যে অভিযানে নেমেছে, সেই অপারেশন সিঁদুরে জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারের ১০ আত্মীয় নিহত হয়েছে। একই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে তার চার সহযোগী। বিবিসি লিখেছে, পাঞ্জাবের বাহাওয়ালপুরে ‘সুবহান আল্লাহ’ মসজিদে এ ঘটনা ঘটে।
জাতিসংঘ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছে, নিহতদের মধ্যে আজহারের বড় বোন ও তার স্বামী, ভাগ্নে ও তার স্ত্রী, এক ভাতিজি এবং পরিবারের পাঁচ শিশুও রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, হামলায় আজহারের তিনজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং তাদের একজনের মা মারা গেছেন।
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯৯৪ সালে মাসুদ আজহার ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ভারতীয় একটি বেসামরিক বিমান ছিনতাই করে তালেবানশাসিত আফগানিস্তানে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে ১৯৯৯ সালে। সেই সময় ক্রু ও যাত্রীদের জীবনের বিনিময়ে ভারত যে তিনজনকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল, মাসুদ আজহার তাদের একজন। ভারত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর মাসুদ আজহার সশস্ত্র গোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ প্রতিষ্ঠা করেন।
এনডিটিভি লিখেছে, ৫৬ বছর বয়সী মাসুদ আজহার ভারতের একাধিক সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে ২০০১ সালের পার্লামেন্ট হামলা, ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা এবং ২০১৬ সালের পাঠানকট হামলা। জইশ-ই-মুহাম্মদ ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতশাসিত কাশ্মীরে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালিয়ে ভারতের ৪০ জন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যকে হত্যা করে। সেই ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হয়।
মাসুদ আজহার পাকিস্তানে থাকেন বলে চাউর হলেও ইসলামাবাদ বরাবরই তার সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের ইতিহাস
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ভারত ও পাকিস্তান একাধিক যুদ্ধে জড়িয়েছে। এসব যুদ্ধের বেশিরভাগই সংঘটিত হয়েছে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার নানা সংঘর্ষ ও যুদ্ধের ইতিহাস বুধবার বিবিসিতে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রথম যুদ্ধটি দুই দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক মাস পরেই শুরু হয়। ১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শেষ হয় যুদ্ধ।
দ্বিতীয়বার ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের বাহিনী ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে প্রবেশ করলে আবার যুদ্ধে জড়ায় দুই দেশ। এর ফলে ভয়াবহ স্থল ও বিমান যুদ্ধ শুরু হয়।
তৃতীয়বারে দুই দেশ আবার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ১৯৭১ সালে।
১৯৯৯ সালের কার্গিলে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে পাকিস্তান ও ভারত। পাকিস্তানের সৈন্যরা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করলে যুদ্ধে জড়ায় দুই দেশ। এটি ছিল পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের মধ্যে প্রথম সংঘর্ষ, যা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের জন্ম দিয়েছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্য ২০১৬ সালে উরিতে সশস্ত্র হামলার পর উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। এর পরই ভারত ২০১৬ সালে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ শুরু করে এবং পুলাওয়ামা বোমা হামলার পর ২০১৯ সালে বালাকোটের কাছে বিমান হামলা চালায় ভারত। পাকিস্তানও তাদের নিজস্ব বিমান আক্রমণের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানায়, যা কার্গিলের পর থেকে সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি করে।
ভারত-পাকিস্তান: পারমাণবিক সক্ষমতা
ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই পারমাণবিক ক্ষমতার অধিকারী। তাই দেশ দুটির প্রতিরক্ষা কৌশলে এ সক্ষমতার ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার সূচক (জিএফপি) ২০২৫-এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০টি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে রয়েছে অগ্নি-থ্রি/ফাইভ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (পাল্লা ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার কিলোমিটার), মিরেজ ২ হাজার ও রাফায়েল এবং সামুদ্রিক প্রতিরক্ষায় আইএনএস আরিহান্ট।
পারমাণবিক অস্ত্র আগে ব্যবহার না করার (নো ফার্স্ট ইউজ/এনএফইউ) নীতির পক্ষে ভারত। তবে এ ধরনের হামলার শিকার হলে ব্যাপক আকারে প্রতিশোধমূলক হামলার পক্ষে দেশটি।
অন্যদিকে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ১৪০ থেকে ১৫০। এদিক থেকে পাকিস্তানের সক্ষমতা ভারতের চেয়ে বেশি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে আছে শাহিন-টু/থ্রি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাত্র, এফ-১৬ যুদ্ধবিমান, বাবর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র।
পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশটি ‘ফুল-স্পেকট্রাম ডেটারেন্স’ নীতি অনুসরণের পক্ষপাতী। এ নীতিতে যুদ্ধক্ষেত্রে দেশটি প্রয়োজনে আগেভাগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
বুধবার, ০৭ মে ২০২৫
কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার বদলায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলা চালিয়েছে ভারত। পাল্টায় পাকিস্তানও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গোলবর্ষণ করেছে। পাল্টাপাল্টি হামলায় পাকিস্তানে অন্তত ২৬ জন এবং ভারতে ১৫ জন মারা গেছে। যদিও ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে অন্তত ৭০ জন ‘সন্ত্রাসীকে’ হত্যা করার দাবি করেছে ভারত।
জাতিসংঘ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ এর প্রধান মাসুদ আজহারের ১০ স্বজন নিহত
পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি স্থানে হামলা চালানোর কথা বলেছে ভারত
৬টি স্থানে হামলা হওয়ার কথা স্বীকার করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী
ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানের অন্তত ২৬ জন এবং ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তানের গোলায় ১৫ জন নিহত হয়েছেন
কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পর পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে চরম অবনতি ঘটে
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে কয়েক দশক ধরে চলা বিদ্রোহে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ গেছে
কাশ্মীরকে পুরোপুরি নিজেদের অংশ হিসেবে দাবি করে ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। তার বদলায় গতকাল মঙ্গলবার গভীররাতে পাকিস্তানে হামলা চালায় দিল্লি। ইসলামাবাদও গোলাবর্ষণসহ সামরিক জবাব দেয়।
পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতের হামলার কড়া নিন্দা জানিয়ে একে ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ অ্যাখ্যা দিয়েছে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সভার পর দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ভারতীয় সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে বেসামরিক নাগরিক, বিশেষ করে নিরীহ নারী ও শিশুদের লক্ষ্য করে যে হামলা চালিয়েছে তা একটি ঘৃণ্য ও লজ্জাজনক অপরাধ, এটি মানব আচরণের সমস্ত নীতিমালা এবং আন্তর্জাতিক আইনের বিধান লঙ্ঘন করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে বুধবার, (৭ মে ২০২৫) পাকিস্তানের নিরাপত্তাবিষয়ক এ শীর্ষ কমিটির বৈঠকে দেশটির জয়েন্ট চিফস অব স্টাফসের চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামসাদ মির্জা, গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মহাপরিচালক আসিম মুনির ও বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন।
বৈঠকে ভারতের হামলাকে ‘পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার নির্লজ্জ লঙ্ঘনও’ অভিহিত করা হয়েছে। পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও আজাদ কাশ্মীরে হামলা করে ভারত যেভাবে ‘আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে’ তার জন্য নয়াদিল্লিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বানও জানিয়েছে তারা। তাদের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এ বৈঠকে বলা হয়েছে, ‘আত্মরক্ষার্থে’ ভারতের হামলার জবাব দেয়ার অধিকার রাখে পাকিস্তান। সেটা কখন, কীভাবে হবে তা ইসলামাবাদই ঠিক করবে, ‘সমুচিত পদক্ষেপ’ নিতে সশস্ত্র বাহিনীকে অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। এদিকে পাকিস্তানের
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআরের মহাপরিচালক জেনারেল আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, বুধবার প্রথম প্রহরে পাকিস্তানে হামলা চালালেও ভারতের কোনো বিমানই পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ঢুকতে পারেনি, পাকিস্তানের কোনো বিমানও ভারতের ভূখণ্ডে যায়নি। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর ‘আগ্রাসনের সমুচিত জবাব’ দিয়েছে এবং বেশ কয়েকটি ভারতীয় তল্লাশি চৌকি গুঁড়িয়ে দিয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
জইশ প্রধান মাসুদ আজহারের ১০ স্বজন নিহত
কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার বদলায় ভারত যে অভিযানে নেমেছে, সেই অপারেশন সিঁদুরে জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারের ১০ আত্মীয় নিহত হয়েছে। একই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে তার চার সহযোগী। বিবিসি লিখেছে, পাঞ্জাবের বাহাওয়ালপুরে ‘সুবহান আল্লাহ’ মসজিদে এ ঘটনা ঘটে।
জাতিসংঘ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছে, নিহতদের মধ্যে আজহারের বড় বোন ও তার স্বামী, ভাগ্নে ও তার স্ত্রী, এক ভাতিজি এবং পরিবারের পাঁচ শিশুও রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, হামলায় আজহারের তিনজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং তাদের একজনের মা মারা গেছেন।
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯৯৪ সালে মাসুদ আজহার ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ভারতীয় একটি বেসামরিক বিমান ছিনতাই করে তালেবানশাসিত আফগানিস্তানে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে ১৯৯৯ সালে। সেই সময় ক্রু ও যাত্রীদের জীবনের বিনিময়ে ভারত যে তিনজনকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল, মাসুদ আজহার তাদের একজন। ভারত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর মাসুদ আজহার সশস্ত্র গোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ প্রতিষ্ঠা করেন।
এনডিটিভি লিখেছে, ৫৬ বছর বয়সী মাসুদ আজহার ভারতের একাধিক সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে ২০০১ সালের পার্লামেন্ট হামলা, ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা এবং ২০১৬ সালের পাঠানকট হামলা। জইশ-ই-মুহাম্মদ ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতশাসিত কাশ্মীরে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালিয়ে ভারতের ৪০ জন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যকে হত্যা করে। সেই ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হয়।
মাসুদ আজহার পাকিস্তানে থাকেন বলে চাউর হলেও ইসলামাবাদ বরাবরই তার সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের ইতিহাস
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ভারত ও পাকিস্তান একাধিক যুদ্ধে জড়িয়েছে। এসব যুদ্ধের বেশিরভাগই সংঘটিত হয়েছে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার নানা সংঘর্ষ ও যুদ্ধের ইতিহাস বুধবার বিবিসিতে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রথম যুদ্ধটি দুই দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক মাস পরেই শুরু হয়। ১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শেষ হয় যুদ্ধ।
দ্বিতীয়বার ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের বাহিনী ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে প্রবেশ করলে আবার যুদ্ধে জড়ায় দুই দেশ। এর ফলে ভয়াবহ স্থল ও বিমান যুদ্ধ শুরু হয়।
তৃতীয়বারে দুই দেশ আবার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ১৯৭১ সালে।
১৯৯৯ সালের কার্গিলে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে পাকিস্তান ও ভারত। পাকিস্তানের সৈন্যরা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করলে যুদ্ধে জড়ায় দুই দেশ। এটি ছিল পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের মধ্যে প্রথম সংঘর্ষ, যা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের জন্ম দিয়েছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্য ২০১৬ সালে উরিতে সশস্ত্র হামলার পর উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। এর পরই ভারত ২০১৬ সালে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ শুরু করে এবং পুলাওয়ামা বোমা হামলার পর ২০১৯ সালে বালাকোটের কাছে বিমান হামলা চালায় ভারত। পাকিস্তানও তাদের নিজস্ব বিমান আক্রমণের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানায়, যা কার্গিলের পর থেকে সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি করে।
ভারত-পাকিস্তান: পারমাণবিক সক্ষমতা
ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই পারমাণবিক ক্ষমতার অধিকারী। তাই দেশ দুটির প্রতিরক্ষা কৌশলে এ সক্ষমতার ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার সূচক (জিএফপি) ২০২৫-এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০টি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে রয়েছে অগ্নি-থ্রি/ফাইভ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (পাল্লা ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার কিলোমিটার), মিরেজ ২ হাজার ও রাফায়েল এবং সামুদ্রিক প্রতিরক্ষায় আইএনএস আরিহান্ট।
পারমাণবিক অস্ত্র আগে ব্যবহার না করার (নো ফার্স্ট ইউজ/এনএফইউ) নীতির পক্ষে ভারত। তবে এ ধরনের হামলার শিকার হলে ব্যাপক আকারে প্রতিশোধমূলক হামলার পক্ষে দেশটি।
অন্যদিকে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ১৪০ থেকে ১৫০। এদিক থেকে পাকিস্তানের সক্ষমতা ভারতের চেয়ে বেশি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে আছে শাহিন-টু/থ্রি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাত্র, এফ-১৬ যুদ্ধবিমান, বাবর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র।
পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশটি ‘ফুল-স্পেকট্রাম ডেটারেন্স’ নীতি অনুসরণের পক্ষপাতী। এ নীতিতে যুদ্ধক্ষেত্রে দেশটি প্রয়োজনে আগেভাগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।