ছয় ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত পোশাক শ্রমিক মিনারুল হত্যা মামলায় তাকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।
শুক্রবার, (০৯ মে ২০২৫) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালত পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় শহরের দেওভোগ এলাকায় সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করতে তার পৈতৃক বাড়ি ‘চুনকা কুটিরে’ অভিযান চালায় পুলিশ। খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকা ও নগরবাসী চুনকা কুটিরের সামনে জড়ো হয় কয়েকশ’ নারী-পুরুষ। এ সময় তারা ‘নির্দোষ আইভীকে নিয়ে যেতে দেবে না’ বলে স্লোগান দিতে থাকে।
অন্যদিকে পুলিশ চুনকা কুটিরে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের বাধা দেয় বিক্ষুদ্ধ জনগণ। এ সময় দফায় দফায় আলোচনার পর চুনকা কুটিরে প্রবেশ করলে আইভী জানান, রাতের আঁধারে তিনি কোথাও যাবেন না। কোথাও যেতে হলে সকালে যাবেন। ফলে সারারাত সেখানেই অবস্থান করেন পুলিশ সদস্যরা।
শুক্রবার সকাল পৌনে ৬টায় তিনি স্বেচ্ছায় পুলিশের গাড়িতে ওঠেন। তাকে পুলিশের গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময় হাজারো নারী-পুরুষ সড়কে তার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন ও মিছিল করেন।
পুলিশের গাড়িতে ওঠার আগে সাংবাদিকদের আইভী বলেন, ‘আমি কি জুলুমবাজ? আমি কি হত্যা করেছি, চাঁদাবাজি করেছি? নারায়ণগঞ্জ শহরে কখনও কোনো বিরোধীদলকে আঘাত করেছি, এমন রেকর্ড কি আমার আছে? তাহলে কীসের জন্যে, কার স্বার্থে আমাকে অ্যারেস্ট করা হলো? বর্তমানের যারা সরকারে আছেন তারা সাম্যের কথা বলেছেন। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আপনারা আন্দোলন করেছেন। সরকার হটিয়ে নতুন সরকার এনেছেন। তারপরও কেন এই বৈষম্য? তাহলে অনেস্ট রাজনীতি আর সততার কীসের মূল্যায়ন?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আমি ঠিক জানি না। যেহেতু আমার এখানে (বাড়ি) প্রশাসন এসেছে এবং ওনারা বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে। যদিও ওয়ারেন্টের কাগজ তারা দেখাতে পারেন নাই। কিন্তু আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আমি তাদের সঙ্গে যাচ্ছি’
‘আমি তো বাড়িতেই ছিলাম, আমি তো পালাইনি। তাহলে আমাকে কেন অ্যারেস্ট করা হলো, এই জবাব জনগণের কাছে চাই, জনগণই দেবে’, যোগ করেন তিনি।
এদিকে গ্রেপ্তারের পর আইভীকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের গ্রীন্সলেজ ব্যাংকের সামনে হামলা করে বিএনপি ও সহযোগিতার সংগঠনের সদস্যরা। ওই সময় ইটপাটকেল ছোড়াসহ ককটেল বিস্ফোরণও ঘটে। এতে দুইজন পুলিশ সদস্যসহ আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়।
সকাল দশটায় সেলিনা হায়াৎ আইভীকে জুলাই আন্দোলনে সিদ্ধিরগঞ্জে নিহত পোশাক শ্রমিক মিনারুল হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়। এ সময় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঈনুদ্দিন কাদির তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় পাঁচটি মামলায় রয়েছে। সে মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাস্তায় হামলার একটি ঘটনা ঘটেছে। কয়েকজন আহতও হয়েছেন। গ্রেপ্তারের পর আদালতের কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করার সুযোগ হয়নি। তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর একাধিক থানায় হত্যাসহ অন্তত পাঁচটি মামলায় আসামি করা হয় সাবেক সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে। সরকার পতনের পর দলটির অনেক নেতাকর্মী পালিয়ে গেলেও আইভী ছিলেন তার পৈতৃক বাড়িতে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আলী আহাম্মদ চুনকার সন্তান। আমার বাবা দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে সাম্যের রাজনীতি করেছেন। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলার কারণে আমার যদি অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে আমি সেই অপরাধে অপরাধী হতে চাই। এ জন্য যদি আমার বিচার হয় তাহলে হবে।’
সাবেক এ মেয়র বলেন, ‘কিন্তু নারায়ণগঞ্জ শহরে ২১ বছর আপনাদের আমি সেবা দিয়েছি। কোনোদিন কেউ বলতে পারবেন না যে, আমি কারও প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে অন্য কোনো দলের প্রতি আঘাত করেছি অথবা কারও সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছি। নিজের দলের ভেতরে থেকেও দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি।’
শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫
ছয় ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত পোশাক শ্রমিক মিনারুল হত্যা মামলায় তাকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।
শুক্রবার, (০৯ মে ২০২৫) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালত পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় শহরের দেওভোগ এলাকায় সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করতে তার পৈতৃক বাড়ি ‘চুনকা কুটিরে’ অভিযান চালায় পুলিশ। খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকা ও নগরবাসী চুনকা কুটিরের সামনে জড়ো হয় কয়েকশ’ নারী-পুরুষ। এ সময় তারা ‘নির্দোষ আইভীকে নিয়ে যেতে দেবে না’ বলে স্লোগান দিতে থাকে।
অন্যদিকে পুলিশ চুনকা কুটিরে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের বাধা দেয় বিক্ষুদ্ধ জনগণ। এ সময় দফায় দফায় আলোচনার পর চুনকা কুটিরে প্রবেশ করলে আইভী জানান, রাতের আঁধারে তিনি কোথাও যাবেন না। কোথাও যেতে হলে সকালে যাবেন। ফলে সারারাত সেখানেই অবস্থান করেন পুলিশ সদস্যরা।
শুক্রবার সকাল পৌনে ৬টায় তিনি স্বেচ্ছায় পুলিশের গাড়িতে ওঠেন। তাকে পুলিশের গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময় হাজারো নারী-পুরুষ সড়কে তার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন ও মিছিল করেন।
পুলিশের গাড়িতে ওঠার আগে সাংবাদিকদের আইভী বলেন, ‘আমি কি জুলুমবাজ? আমি কি হত্যা করেছি, চাঁদাবাজি করেছি? নারায়ণগঞ্জ শহরে কখনও কোনো বিরোধীদলকে আঘাত করেছি, এমন রেকর্ড কি আমার আছে? তাহলে কীসের জন্যে, কার স্বার্থে আমাকে অ্যারেস্ট করা হলো? বর্তমানের যারা সরকারে আছেন তারা সাম্যের কথা বলেছেন। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আপনারা আন্দোলন করেছেন। সরকার হটিয়ে নতুন সরকার এনেছেন। তারপরও কেন এই বৈষম্য? তাহলে অনেস্ট রাজনীতি আর সততার কীসের মূল্যায়ন?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আমি ঠিক জানি না। যেহেতু আমার এখানে (বাড়ি) প্রশাসন এসেছে এবং ওনারা বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে। যদিও ওয়ারেন্টের কাগজ তারা দেখাতে পারেন নাই। কিন্তু আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আমি তাদের সঙ্গে যাচ্ছি’
‘আমি তো বাড়িতেই ছিলাম, আমি তো পালাইনি। তাহলে আমাকে কেন অ্যারেস্ট করা হলো, এই জবাব জনগণের কাছে চাই, জনগণই দেবে’, যোগ করেন তিনি।
এদিকে গ্রেপ্তারের পর আইভীকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের গ্রীন্সলেজ ব্যাংকের সামনে হামলা করে বিএনপি ও সহযোগিতার সংগঠনের সদস্যরা। ওই সময় ইটপাটকেল ছোড়াসহ ককটেল বিস্ফোরণও ঘটে। এতে দুইজন পুলিশ সদস্যসহ আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়।
সকাল দশটায় সেলিনা হায়াৎ আইভীকে জুলাই আন্দোলনে সিদ্ধিরগঞ্জে নিহত পোশাক শ্রমিক মিনারুল হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়। এ সময় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঈনুদ্দিন কাদির তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় পাঁচটি মামলায় রয়েছে। সে মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাস্তায় হামলার একটি ঘটনা ঘটেছে। কয়েকজন আহতও হয়েছেন। গ্রেপ্তারের পর আদালতের কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করার সুযোগ হয়নি। তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর একাধিক থানায় হত্যাসহ অন্তত পাঁচটি মামলায় আসামি করা হয় সাবেক সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে। সরকার পতনের পর দলটির অনেক নেতাকর্মী পালিয়ে গেলেও আইভী ছিলেন তার পৈতৃক বাড়িতে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আলী আহাম্মদ চুনকার সন্তান। আমার বাবা দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে সাম্যের রাজনীতি করেছেন। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলার কারণে আমার যদি অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে আমি সেই অপরাধে অপরাধী হতে চাই। এ জন্য যদি আমার বিচার হয় তাহলে হবে।’
সাবেক এ মেয়র বলেন, ‘কিন্তু নারায়ণগঞ্জ শহরে ২১ বছর আপনাদের আমি সেবা দিয়েছি। কোনোদিন কেউ বলতে পারবেন না যে, আমি কারও প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে অন্য কোনো দলের প্রতি আঘাত করেছি অথবা কারও সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছি। নিজের দলের ভেতরে থেকেও দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি।’