পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর চালিতাবুনিয়ায় নিজের তরমুজ খেতে চাষি শাকিল মিয়া -সংবাদ
পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলায় মো. নেছার উদ্দিন (৪৬)। চার সন্তানের জনক নেছার উদ্দিনের সংসারে খুব বেশি স্বচ্ছলতা ছিল না। কিন্ত এবার তরমুজ চাষ করে তিনি সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন।
এক বিঘা জমিতে লাখ টাকার বেশি লাভ
দেশের সাতটি বিভাগের ৩৫টি জেলার ১২১টি উপজেলায় শস্য বৈচিত্র্য ও কৃষি বাণিজ্যিকীকরণ বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা ও জাতীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে
ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের চতলাখালী গ্রামের নেছার উদ্দিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয় সংবাদের এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘এই প্রদর্শনী থেকে ১০ কড়া (৩৩ শতক) জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। ২ লাখ ১৫ হাজার ট্যাহা (টাকা) বেচচি। আমার খরচ গেছে এম্মে হাজারের মতো গেছে। আল্লায় দিছে অনেক ট্যাহা লাভ হইছে। এটা হলো ৪ মাসের ফসল। কৃষি অফিস থেকে ১০ পদের সার ও ঔষুধ দিছে। সব ঔষুদের নাম তো কইতে পারি না, ১০ পদের দিছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আড়াই কানিতে (২০ বিঘা) তরমুজ দিছিলাম, ২৫ লাখ ট্যাকা বিক্রি করছি। আমি অন্য জমিতে মুগডাল ও অনান্য ফসল করছি।’
ওই জেলার চালিতাবুনিয়া গ্রাম ও ইউনিয়নের মো. শাকিল মিয়া (২৬) তার নিজের জমিতে তরমুজ লাগিয়েছিলেন। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আর্লি ড্রাগন জাতের তরমুজের বীজ লাগিয়ে আমি এক বিঘা জমিতে দেড় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করি। ওই এক বিঘা জমিতে প্রায় এক হাজার আর্লি ড্রাগন জাতের তরমুজের চারা লাগিয়ে ভালো ফল পেয়েছি। ইনশাল্লাহ আগামীতে আরও তরমুজের চাষ করবো।’
শুধু নেছার উদ্দিন বা শাকিল মিয়ায় নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সারাদেশের চর এলাকাগুলোতে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের আবাদ বাড়ানোর প্রকল্পের আওতায় তরমুজ চাষ করে সবাই লাভবান হয়েছেন। যে জায়গাগুলোতে আগে কোনো চাষ হতো সেখানকার বিস্তৃত চরে তরমুজ চাষ করে সবাই লাভবান হয়েছেন।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেশের চরাঞ্চলের জমিতে খরা-সহনশীল ও স্বল্প জীবনকালীন ফসলের জাত, উপযুক্ত কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এর ফলে শস্য বৈচিত্র্য ও কৃষি বাণিজ্যিকীকরণ বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা ও জাতীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এতে ওই অঞ্চলের উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ বাড়বে পাঁচ শতাংশ।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশের চর এলাকায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্প থেকে জানা যায়, সরকারের সম্পূূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ২০৯ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশের সাতটি বিভাগের ৩৫টি জেলার ১২১টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে এই প্রকল্প। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে দেশের চর এলাকার অধিক ফলন উপযোগী আখ, পাট, কালোজিরা, ভূট্টা, মিষ্টি আলু, সূর্যমুখী, মরিচ, মটরশুটি, মুগ, সরিষা, মসুর, সয়াবিন, তরমুজ, মাল্টা, পেয়ারা ও আম চাষের ফলন বাড়ানো সম্ভব
হয়েছে। একই সঙ্গে উন্নত কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও পতিত জমি ব্যবহারের মাধ্যমে চরাঞ্চলের শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
প্রকল্পের আওতায় কৃষকের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বিভিন্ন সময় মাঠ দিবস ও সেমিনার বা ওয়ার্কশপের আয়োজন করে কৃষকদের সঠিক সময়ে সঠিক ফসল লাগানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক(পিডি) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ আশা করছি, প্রকল্পটির মাধ্যমে দেশের চরাঞ্চলের জমিতে খরা সহনশীল ও স্বল্প জীবনকালীন ফসলের জাত, উপযুক্ত কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘এতে দেশের পতিত জমি ব্যবহারের মাধ্যমে চর অঞ্চলের শস্যের নিবিড়তা ১৪০ শতাংশ থেকে ১৪৫ শতাংশে উন্নীত হবে। এর ফলে শস্য বৈচিত্র্য ও কৃষি বাণিজ্যিকীকরণ বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা ও জাতীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্প মেয়াদে স্বল্পকালীন, খরা সহনশীল ও জলামগ্ন সহনশীল জাত, আধুনিক ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, ফসলের পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে এলএলপি পাম্প সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।’
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছে, প্রকল্পটির মাধ্যমে দেশের চরাঞ্চলের জমিতে খরা সহনশীল ও স্বল্পজীবনকালীন ফসলের জাত, উপযুক্ত কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করা হবে। এর ফলে শস্য বৈচিতত্র্য ও কৃষি বাণিজ্যিকীকরণ বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা ও জাতীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর চালিতাবুনিয়ায় নিজের তরমুজ খেতে চাষি শাকিল মিয়া -সংবাদ
শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫
পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলায় মো. নেছার উদ্দিন (৪৬)। চার সন্তানের জনক নেছার উদ্দিনের সংসারে খুব বেশি স্বচ্ছলতা ছিল না। কিন্ত এবার তরমুজ চাষ করে তিনি সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন।
এক বিঘা জমিতে লাখ টাকার বেশি লাভ
দেশের সাতটি বিভাগের ৩৫টি জেলার ১২১টি উপজেলায় শস্য বৈচিত্র্য ও কৃষি বাণিজ্যিকীকরণ বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা ও জাতীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে
ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের চতলাখালী গ্রামের নেছার উদ্দিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয় সংবাদের এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘এই প্রদর্শনী থেকে ১০ কড়া (৩৩ শতক) জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। ২ লাখ ১৫ হাজার ট্যাহা (টাকা) বেচচি। আমার খরচ গেছে এম্মে হাজারের মতো গেছে। আল্লায় দিছে অনেক ট্যাহা লাভ হইছে। এটা হলো ৪ মাসের ফসল। কৃষি অফিস থেকে ১০ পদের সার ও ঔষুধ দিছে। সব ঔষুদের নাম তো কইতে পারি না, ১০ পদের দিছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আড়াই কানিতে (২০ বিঘা) তরমুজ দিছিলাম, ২৫ লাখ ট্যাকা বিক্রি করছি। আমি অন্য জমিতে মুগডাল ও অনান্য ফসল করছি।’
ওই জেলার চালিতাবুনিয়া গ্রাম ও ইউনিয়নের মো. শাকিল মিয়া (২৬) তার নিজের জমিতে তরমুজ লাগিয়েছিলেন। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আর্লি ড্রাগন জাতের তরমুজের বীজ লাগিয়ে আমি এক বিঘা জমিতে দেড় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করি। ওই এক বিঘা জমিতে প্রায় এক হাজার আর্লি ড্রাগন জাতের তরমুজের চারা লাগিয়ে ভালো ফল পেয়েছি। ইনশাল্লাহ আগামীতে আরও তরমুজের চাষ করবো।’
শুধু নেছার উদ্দিন বা শাকিল মিয়ায় নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সারাদেশের চর এলাকাগুলোতে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের আবাদ বাড়ানোর প্রকল্পের আওতায় তরমুজ চাষ করে সবাই লাভবান হয়েছেন। যে জায়গাগুলোতে আগে কোনো চাষ হতো সেখানকার বিস্তৃত চরে তরমুজ চাষ করে সবাই লাভবান হয়েছেন।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেশের চরাঞ্চলের জমিতে খরা-সহনশীল ও স্বল্প জীবনকালীন ফসলের জাত, উপযুক্ত কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এর ফলে শস্য বৈচিত্র্য ও কৃষি বাণিজ্যিকীকরণ বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা ও জাতীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এতে ওই অঞ্চলের উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ বাড়বে পাঁচ শতাংশ।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশের চর এলাকায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্প থেকে জানা যায়, সরকারের সম্পূূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ২০৯ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশের সাতটি বিভাগের ৩৫টি জেলার ১২১টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে এই প্রকল্প। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে দেশের চর এলাকার অধিক ফলন উপযোগী আখ, পাট, কালোজিরা, ভূট্টা, মিষ্টি আলু, সূর্যমুখী, মরিচ, মটরশুটি, মুগ, সরিষা, মসুর, সয়াবিন, তরমুজ, মাল্টা, পেয়ারা ও আম চাষের ফলন বাড়ানো সম্ভব
হয়েছে। একই সঙ্গে উন্নত কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও পতিত জমি ব্যবহারের মাধ্যমে চরাঞ্চলের শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
প্রকল্পের আওতায় কৃষকের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বিভিন্ন সময় মাঠ দিবস ও সেমিনার বা ওয়ার্কশপের আয়োজন করে কৃষকদের সঠিক সময়ে সঠিক ফসল লাগানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক(পিডি) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ আশা করছি, প্রকল্পটির মাধ্যমে দেশের চরাঞ্চলের জমিতে খরা সহনশীল ও স্বল্প জীবনকালীন ফসলের জাত, উপযুক্ত কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘এতে দেশের পতিত জমি ব্যবহারের মাধ্যমে চর অঞ্চলের শস্যের নিবিড়তা ১৪০ শতাংশ থেকে ১৪৫ শতাংশে উন্নীত হবে। এর ফলে শস্য বৈচিত্র্য ও কৃষি বাণিজ্যিকীকরণ বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা ও জাতীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্প মেয়াদে স্বল্পকালীন, খরা সহনশীল ও জলামগ্ন সহনশীল জাত, আধুনিক ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, ফসলের পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে এলএলপি পাম্প সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।’
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছে, প্রকল্পটির মাধ্যমে দেশের চরাঞ্চলের জমিতে খরা সহনশীল ও স্বল্পজীবনকালীন ফসলের জাত, উপযুক্ত কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করা হবে। এর ফলে শস্য বৈচিতত্র্য ও কৃষি বাণিজ্যিকীকরণ বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা ও জাতীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।