ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার ঘোষণা দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার, (১৪ মে ২০২৫) দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন। আইএমএফের শর্ত প্রতিপালনের উদ্দেশ্যে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
আগামী জুনের মধ্যে আইএমএফের ঝুলে থাকা চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের আশা
রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের অবস্থা ভালো থাকায় ডলারের দাম বাড়বে না
ব্যাংক সংস্কার শুরু হয়েছে, এটা চলমান থাকবে
ব্যাংক নয়, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে সরকার
তিনি বলেছেন, ‘দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ডলারের বিনিময় হার শিগগির বাজারভিত্তিক করা হবে। রপ্তানি, রেমিট্যান্সের প্রবাহ এখন ভালো। তাই ডলারের দাম বাড়বে না। এ পদক্ষেপের ফলে অর্থনীতিতে আরও স্বচ্ছতা আসবে। বাজারের চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে ডলারের দাম নির্ধারিত হবে।’
দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন গভর্নর। সংবাদ সম্মেলনে ডেপুটি গভর্নর নুরুন্নাহার, ড. হাবিবুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর আশ্বস্ত করে আরও বলেন, ‘রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) উচ্চপ্রবাহ থাকায় বাজারভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় ডলারের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে না। এই পদক্ষেপের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকর হবে। দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চলমান আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। আগামী জুন মাসে আইএমএফের দুটি কিস্তিসহ দেশের অর্থনৈতিক সহায়তা তহবিল হিসেবে পাওয়া যাবে।’
ব্যাংকে সুশাসন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ব্যাংকের গর্ভানেন্স নিশ্চিত করা। এরই মধ্যে ১৪টি বোর্ড পরিবর্তন আনা হয়েছে, যেখানে গুণগত পরিবর্তন এসেছে। বিতরণ করা ঋণের ১০ শতাংশের বেশি খেলাপি হলে লভ্যাংশ দিতে পারবে না ব্যাংক। পাশাপাশি নগদ জমা ও বিধিবদ্ধ জমায় ঘাটতির কারণে কোনো ব্যাংকের ওপর আরোপ করা দ-সুদ বা জরিমানা অনাদায়ী থাকলেও লভ্যাংশ দিতে পারবে না ব্যাংকগুলো।’
ব্যাংক সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক সংস্কার শুরু হয়েছে। আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে। যারা উল্টাপাল্টা করবেন তাদের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ব্যাংককে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। শর্টফুল (আর্থিক ঘাটতি) থাকলে আমরা সে ব্যাংক নিয়ে নেবো। বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতকারীর সঙ্গে আছে। রাষ্ট্র সাময়িক সময়ের জন্য নিয়ে নেবে এতে ব্যাংক ভালো থাকবে, ঘুরে দাঁড়াবে। আমরা ব্যাংক নয়, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় আসবো।’
আর্থিক সংকটে ২০২২ সালে আইএমএফের দ্বারস্থ হয় বাংলাদেশ। অনেক আলোচনা শেষে পরের বছরের শুরুতে বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। ঋণের সঙ্গে আর্থিক খাতের সংস্কার ও অভ্যন্তরীণ আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণের জন্য বেশ কিছু পরামর্শ মানার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। ওই সব শর্ত প্রতিপালনের বিষয়টি পর্যালোচনা সাপেক্ষে ধাপে ধাপে আসছে ঋণের কিস্তিগুলো। ইতোমধ্যে ঋণের তিনটি কিস্তিতে প্রায় ২২১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।
তৃতীয় পর্যালোচনা শেষে গত ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চতুর্থ কিস্তির ৬৪ দশমিক ৫ কোটি ডলার ছাড় দেয়ার কথা ছিল সংস্থাটির। তবে সেই সভা না হওয়ায় কিস্তির ঋণ অনুমোদন বিলম্বিত হয়। ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে দেয়া শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনায় আবার ঢাকায় এসেছিল আইএমএফের ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল। সম্প্রতি তারা পর্যবেক্ষণ শেষে ঢাকা ত্যাগ করে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন সভার বৈঠক গত শনিবার শেষ হয়েছে। বসন্তকালীন বৈঠকের এক ফাঁকে আইএমএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গত বুধবার বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের আলাদা বৈঠক হয়। বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীসহ ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারপরও বিষয়টি সুরাহা হয়নি। অবশেষে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা দিলো যে, বাংলাদেশ ডলারকে বাজারভিত্তিক করবে এবং আইএমএফও ঋণের কিস্তি ছাড় করবে।
বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার ঘোষণা দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার, (১৪ মে ২০২৫) দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন। আইএমএফের শর্ত প্রতিপালনের উদ্দেশ্যে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
আগামী জুনের মধ্যে আইএমএফের ঝুলে থাকা চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের আশা
রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের অবস্থা ভালো থাকায় ডলারের দাম বাড়বে না
ব্যাংক সংস্কার শুরু হয়েছে, এটা চলমান থাকবে
ব্যাংক নয়, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে সরকার
তিনি বলেছেন, ‘দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ডলারের বিনিময় হার শিগগির বাজারভিত্তিক করা হবে। রপ্তানি, রেমিট্যান্সের প্রবাহ এখন ভালো। তাই ডলারের দাম বাড়বে না। এ পদক্ষেপের ফলে অর্থনীতিতে আরও স্বচ্ছতা আসবে। বাজারের চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে ডলারের দাম নির্ধারিত হবে।’
দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন গভর্নর। সংবাদ সম্মেলনে ডেপুটি গভর্নর নুরুন্নাহার, ড. হাবিবুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর আশ্বস্ত করে আরও বলেন, ‘রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) উচ্চপ্রবাহ থাকায় বাজারভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় ডলারের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে না। এই পদক্ষেপের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকর হবে। দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চলমান আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। আগামী জুন মাসে আইএমএফের দুটি কিস্তিসহ দেশের অর্থনৈতিক সহায়তা তহবিল হিসেবে পাওয়া যাবে।’
ব্যাংকে সুশাসন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ব্যাংকের গর্ভানেন্স নিশ্চিত করা। এরই মধ্যে ১৪টি বোর্ড পরিবর্তন আনা হয়েছে, যেখানে গুণগত পরিবর্তন এসেছে। বিতরণ করা ঋণের ১০ শতাংশের বেশি খেলাপি হলে লভ্যাংশ দিতে পারবে না ব্যাংক। পাশাপাশি নগদ জমা ও বিধিবদ্ধ জমায় ঘাটতির কারণে কোনো ব্যাংকের ওপর আরোপ করা দ-সুদ বা জরিমানা অনাদায়ী থাকলেও লভ্যাংশ দিতে পারবে না ব্যাংকগুলো।’
ব্যাংক সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক সংস্কার শুরু হয়েছে। আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে। যারা উল্টাপাল্টা করবেন তাদের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ব্যাংককে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। শর্টফুল (আর্থিক ঘাটতি) থাকলে আমরা সে ব্যাংক নিয়ে নেবো। বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতকারীর সঙ্গে আছে। রাষ্ট্র সাময়িক সময়ের জন্য নিয়ে নেবে এতে ব্যাংক ভালো থাকবে, ঘুরে দাঁড়াবে। আমরা ব্যাংক নয়, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় আসবো।’
আর্থিক সংকটে ২০২২ সালে আইএমএফের দ্বারস্থ হয় বাংলাদেশ। অনেক আলোচনা শেষে পরের বছরের শুরুতে বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। ঋণের সঙ্গে আর্থিক খাতের সংস্কার ও অভ্যন্তরীণ আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণের জন্য বেশ কিছু পরামর্শ মানার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। ওই সব শর্ত প্রতিপালনের বিষয়টি পর্যালোচনা সাপেক্ষে ধাপে ধাপে আসছে ঋণের কিস্তিগুলো। ইতোমধ্যে ঋণের তিনটি কিস্তিতে প্রায় ২২১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।
তৃতীয় পর্যালোচনা শেষে গত ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চতুর্থ কিস্তির ৬৪ দশমিক ৫ কোটি ডলার ছাড় দেয়ার কথা ছিল সংস্থাটির। তবে সেই সভা না হওয়ায় কিস্তির ঋণ অনুমোদন বিলম্বিত হয়। ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে দেয়া শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনায় আবার ঢাকায় এসেছিল আইএমএফের ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল। সম্প্রতি তারা পর্যবেক্ষণ শেষে ঢাকা ত্যাগ করে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন সভার বৈঠক গত শনিবার শেষ হয়েছে। বসন্তকালীন বৈঠকের এক ফাঁকে আইএমএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গত বুধবার বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের আলাদা বৈঠক হয়। বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীসহ ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারপরও বিষয়টি সুরাহা হয়নি। অবশেষে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা দিলো যে, বাংলাদেশ ডলারকে বাজারভিত্তিক করবে এবং আইএমএফও ঋণের কিস্তি ছাড় করবে।