ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার প্রতিবাদে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল। হত্যাকাণ্ডের বিচারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন তারা -সংবাদ
গতকাল মঙ্গলবার রাতে ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এএফ রহমান হলের ছাত্র ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। বুধবার, (১৪ মে ২০২৫) বিক্ষোভ মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হয়ে ছুরিকাঘাতে নিহত ছাত্রদল নেতা সাম্যর মৃত্যুর ঘটনার বিচার দাবি করেন। এ সময় তারা উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান এবং প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদের পদত্যাগ দাবি করেন।
হত্যার ঘটনা তদন্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ সদস্যের কমিটি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ শোক ও অর্ধদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ
দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি
গ্রেপ্তার তিনজন কারাগারে, রিমান্ড আবেদন পরে
সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসার সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টার ছুরিকাঘাতে আহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫)। রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় বন্ধুরা সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বুধবার দুপুর ১২টার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মিছিল বের করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ওই মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরের সামনে গিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। মিছিলে মহানগর ছাড়াও ঢাকা কলেজ এবং তিতুমীর কলেজের নেতাকর্মীরা যোগ দেন।
পরে মিছিল শেষে সমাবেশে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘গত ৯ মাসে যে দুইটা খুন হয়েছে তার দায়ভার ভিসি-প্রক্টরকে নিতে হবে। আমরা দেখছি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাদের টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে। অথচ সরকার তা নিয়ে নিশ্চুপ।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘অতিদ্রুত আমরা এই ভিসি ও প্রক্টরকে সরানোর অনুরোধ করছি সরকারের কাছে। না হলে আমরা এই ইন্টেরিম সরকারকেই সরাতে বাধ্য হব।’
উপাচার্য-প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনও। গতকাল মঙ্গলবার রাতে, ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক বলেছিলেন, রাতে বন্ধুরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালটির
জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। এরপর চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। তার ডান পায়ে ধারাল অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।
রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ
সাম্য খুন হওয়ার প্রতিবাদে হাসপাতালে জড়ো হওয়া তার বন্ধু, সহপাঠী ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে আসে। রাত পৌনে ২টার দিকে স্যার এফ রহমান হলের সামনে থেকেও বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। পরে সব মিছিল ভিসি চত্বরে এসে জড়ো হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, সৌম্য হত্যার বিচার চাই’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকে। মিছিল শেষে উপাচার্য ও প্রক্টর নিহত শিক্ষার্থীকে দেখতে ভেতরে ঢুকতে চাইলে শিক্ষার্থীদের বাধায় ঢুকতে পারেননি।
পরে মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গিয়ে শেষ হয়। মাঝপথে মিছিলে যোগ দেন প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ। মিছিল শেষে, উপাচার্য ও প্রক্টর নিহত শিক্ষার্থীকে দেখতে ভেতরে ঢুকতে চাইলে শিক্ষার্থীদের বাধায় ঢুকতে পারেননি। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘অথর্ব প্রক্টর, মানি না মানব না’, ‘অথর্ব ভিসি-মানি না, মানব না’সহ নানা স্লোগান দেন। পরে পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে স্থান ত্যাগ করেন উপাচার্য ও প্রক্টর। এরপর শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যে একটা মিছিল নিয়ে যান। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
আজ শোক ও অর্ধদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ
সাম্যকে হত্যার ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার শোক পালন ও অর্ধদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান এ ঘোষণা দেন। এর আগে বেলা দেড়টায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া ও ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ‘রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেইটটি বন্ধ করে দেয়া হবে। পাশাপাশি সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে রমনা পার্কের মতো একটি স্মার্ট পার্ক হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’ এ ক্ষেত্রে ডিএমপি সহযোগিতা করবে তুলে ধরে অধ্যাপক নিয়াজ বলেন, ‘ডিএমপি থেকে একটি পুলিশবক্স স্থাপন করা হবে যেটি শুধু উদ্যানে নিরাপত্তার কাজ করবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই কাজে অংশীজন বা সহযোগী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের সেখানে নিয়োজিত করবে।’
এছাড়া নিয়মিত সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে অভিযানের জন্য একটা টিমও গঠন করা হবে বলেও জানান উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে সব সময়ই কনসার্ন ছিল। আমরা এর আগেও রেইড দিয়েছি। তবে সেটা দীর্ঘমেয়াদি করা যায়নি। তাই, রেইড দিয়েও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। ‘তাই আমরা একটা রেইড টিম করবো যেখানে ডিএমপি ও আমাদের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা থাকবেন। পাশাপাশি সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের সবখানে লাইটের ব্যবস্থা করার জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।’
গ্রেপ্তার তিনজন কারাগারে
পুলিশ রিমান্ডের আবেদন না করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার তিনজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই তৌফিক হাসান বুধবার দুপুরে তাদের আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর হাকিম জামসেদ আলম তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। গ্রেপ্তাররা হলেন মাদারীপুর সদরের এরশাদ হাওলাদারের ছেলে মো. তামিম হাওলাদার (৩০), কালাম সরদারের ছেলে পলাশ সরদার (৩০) ও ডাসার থানার যতীন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে সম্রাট মল্লিক (২৮)। এর আগে এসআই তৌফিক হাসান গ্রেপ্তার তিনজনের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করার কথা বললেও আদালতের আদেশের পর তিনি বলেন, ‘বুধবার রিমান্ড আবেদন করা হয়নি। পরে, হয়তো আজ তাদের রিমান্ড আবেদন করা হবে।’ গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর রাজাবাজারসহ কয়েকটি এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সাম্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পড়তেন। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায়। বুধবার বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জানাজার পর সাম্যের মরদেহ গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।
নিহত সাম্যর বন্ধুরা জানিয়েছেন, ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত সাম্য এফ রহমান হলের ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। সাম্যকে ছুরিকাঘাতের ঘটনার বিবরণ দিয়ে রাফি ও তার আরেক বন্ধু আবাবিল আহমেদ বিশাল বলেন, রাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান মুক্ত মঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন সাম্য। এ সময় অন্য একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে তার মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং ধস্তাধস্তি হয়।
একপর্যায়ে সাম্যকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ডান পায়ের ঊরুতে আঘাত করে পালিয়ে যায় ওই মোটরসাইকেলের আরোহী। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে তার মৃত্যু হয়। বুধবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশ এক বার্তায় জানিয়েছে, সাম্য হত্যার ঘটনায় অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। ওসি মনসুর বলেন, ‘এদের মধ্যে দুইজন ঘটনাস্থলে ছিলেন বলে তথ্য দিয়েছে সাম্যর বন্ধু। ওই বন্ধুই তাদের শনাক্ত করেছেন।’
‘সাম্যর খুন আমরা মানতে পারছি না’
আমাদের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের খবরে তার সিরাজগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। এমন বিনয়ী আর নম্র-ভদ্র ছেলেকে খুন হতে হবে এটা স্বজন-প্রতিবেশী কেউ মেনে নিতে পারছেন না। গণমাধ্যমে সাম্যর মৃত্যুর খবর দেখে স্বজন ও প্রতিবেশীরা ভিড় করেন বেলকুচি উপজেলার ধুকরিয়াবেড়া ইউনিয়নের সরাতৈল গ্রামের বাড়িতে।
সাম্যর চাচা কায়সার উল আলম বলেন, ‘টেলিভিশনে ভাতিজা সাম্যর হত্যার সংবাদ দেখে গ্রামবাসী ও স্বজনদের ফোন আসতে থাকে। তারা বাড়িতে ভিড় করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এমন সম্ভাবনাময় টগবগে তরুণকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হবে আমরা কখনও ভাবিনি। ভাবতেই পারছি না, আমার ভাতিজার সঙ্গে আর কখনও কথা হবে না, সে আর বাড়ি আসবে না।’
সাম্যর প্রতিবেশী চাচা কবির সরদার বলেন, ‘সাম্য প্রতি বছর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসত। আমাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় হতো। এমন বিনয়ী নম্র-ভদ্র একটা ছেলেকে এভাবে খুন করা হবে এটা আমরা তা মেনে নিতে পারছি না। সাম্য আর বাড়িতে আসবে না, এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।’ সাম্যর ছোট চাচি তানিয়া খাতুন বলেন, ‘প্রতি বছর দুই-তিনবার সাম্য গ্রামের বাড়িতে আসত। তার সঙ্গে আমাদের অনেক স্মৃতি। হঠাৎ এমন সংবাদে আমরা হতবাক হয়েছি।’ স্বজন ও প্রতিবেশীরা সাম্য হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করেছেন।
স্বজনরা জানান, শাহরিয়ার আলম সাম্যের বাবা ফকরুল আলম ঢাকার মিরপুরে রূপনগর আবাসিক এলাকায় ১৮ নম্বর সড়কে একটি বহুতল ভবনের সপ্তম তলায় নিজস্ব ফ্লাটে থাকেন। চার ভাইয়ের মধ্যে সাম্য সবার ছোট। তার বড় ভাই আমিরুল ইসলাম সাগর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
শিক্ষাজীবনের শুরুতে সাম্য উল্লাপাড়া মোমোনা আলী বিজ্ঞান স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। সেখান থেকে এসএসসি পাস করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কয়েক বছর আগে তার মা মারা গেছেন। এদিকে, সাম্য হত্যার প্রতিবাদে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ এবং ইসলামী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সমন্বয়ে সকালে বিক্ষোভ হয়েছে। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ বলেন, ‘দেশের যে কোনো আন্দোলনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাই বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছে। অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার আমরাই বেশি হয়েছি। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করছি।’
বাদ মাগরিব জানাজা ও দাফন
ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরে সাম্যর প্রথম জানাজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে তার মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন স্বজনরা। সাম্যর চাচা কায়সার উল আলম বলেন, ‘বাদ মাগরিব সড়াতৈল গ্রামের মাদ্রাসা মাঠে তার দ্বিতীয় জানাজা হবে। পরে সড়াতৈল কবরস্থানে তাকে দাফন করার কথা রয়েছে। আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
৭ সদস্যের কমিটি
এদিকে, সাম্য হত্যার ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে প্রশাসন। বুধবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুর্বৃত্তদের হামলায় সাম্যর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল হক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তৈয়েবুর রহমান, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম এবং ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক মো. আবুল কালাম সরকার। সহকারী প্রক্টর শারমীন কবিকে কমিটির সদস্য-সচিব করা হয়েছে। ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তদন্ত) সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন।
ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার প্রতিবাদে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল। হত্যাকাণ্ডের বিচারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন তারা -সংবাদ
বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
গতকাল মঙ্গলবার রাতে ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এএফ রহমান হলের ছাত্র ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। বুধবার, (১৪ মে ২০২৫) বিক্ষোভ মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হয়ে ছুরিকাঘাতে নিহত ছাত্রদল নেতা সাম্যর মৃত্যুর ঘটনার বিচার দাবি করেন। এ সময় তারা উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান এবং প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদের পদত্যাগ দাবি করেন।
হত্যার ঘটনা তদন্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ সদস্যের কমিটি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ শোক ও অর্ধদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ
দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি
গ্রেপ্তার তিনজন কারাগারে, রিমান্ড আবেদন পরে
সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসার সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টার ছুরিকাঘাতে আহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫)। রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় বন্ধুরা সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বুধবার দুপুর ১২টার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মিছিল বের করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ওই মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরের সামনে গিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। মিছিলে মহানগর ছাড়াও ঢাকা কলেজ এবং তিতুমীর কলেজের নেতাকর্মীরা যোগ দেন।
পরে মিছিল শেষে সমাবেশে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘গত ৯ মাসে যে দুইটা খুন হয়েছে তার দায়ভার ভিসি-প্রক্টরকে নিতে হবে। আমরা দেখছি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাদের টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে। অথচ সরকার তা নিয়ে নিশ্চুপ।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘অতিদ্রুত আমরা এই ভিসি ও প্রক্টরকে সরানোর অনুরোধ করছি সরকারের কাছে। না হলে আমরা এই ইন্টেরিম সরকারকেই সরাতে বাধ্য হব।’
উপাচার্য-প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনও। গতকাল মঙ্গলবার রাতে, ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক বলেছিলেন, রাতে বন্ধুরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালটির
জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। এরপর চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। তার ডান পায়ে ধারাল অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।
রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ
সাম্য খুন হওয়ার প্রতিবাদে হাসপাতালে জড়ো হওয়া তার বন্ধু, সহপাঠী ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে আসে। রাত পৌনে ২টার দিকে স্যার এফ রহমান হলের সামনে থেকেও বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। পরে সব মিছিল ভিসি চত্বরে এসে জড়ো হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, সৌম্য হত্যার বিচার চাই’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকে। মিছিল শেষে উপাচার্য ও প্রক্টর নিহত শিক্ষার্থীকে দেখতে ভেতরে ঢুকতে চাইলে শিক্ষার্থীদের বাধায় ঢুকতে পারেননি।
পরে মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গিয়ে শেষ হয়। মাঝপথে মিছিলে যোগ দেন প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ। মিছিল শেষে, উপাচার্য ও প্রক্টর নিহত শিক্ষার্থীকে দেখতে ভেতরে ঢুকতে চাইলে শিক্ষার্থীদের বাধায় ঢুকতে পারেননি। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘অথর্ব প্রক্টর, মানি না মানব না’, ‘অথর্ব ভিসি-মানি না, মানব না’সহ নানা স্লোগান দেন। পরে পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে স্থান ত্যাগ করেন উপাচার্য ও প্রক্টর। এরপর শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যে একটা মিছিল নিয়ে যান। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
আজ শোক ও অর্ধদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ
সাম্যকে হত্যার ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার শোক পালন ও অর্ধদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান এ ঘোষণা দেন। এর আগে বেলা দেড়টায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া ও ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ‘রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেইটটি বন্ধ করে দেয়া হবে। পাশাপাশি সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে রমনা পার্কের মতো একটি স্মার্ট পার্ক হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’ এ ক্ষেত্রে ডিএমপি সহযোগিতা করবে তুলে ধরে অধ্যাপক নিয়াজ বলেন, ‘ডিএমপি থেকে একটি পুলিশবক্স স্থাপন করা হবে যেটি শুধু উদ্যানে নিরাপত্তার কাজ করবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই কাজে অংশীজন বা সহযোগী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের সেখানে নিয়োজিত করবে।’
এছাড়া নিয়মিত সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে অভিযানের জন্য একটা টিমও গঠন করা হবে বলেও জানান উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে সব সময়ই কনসার্ন ছিল। আমরা এর আগেও রেইড দিয়েছি। তবে সেটা দীর্ঘমেয়াদি করা যায়নি। তাই, রেইড দিয়েও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। ‘তাই আমরা একটা রেইড টিম করবো যেখানে ডিএমপি ও আমাদের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা থাকবেন। পাশাপাশি সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের সবখানে লাইটের ব্যবস্থা করার জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।’
গ্রেপ্তার তিনজন কারাগারে
পুলিশ রিমান্ডের আবেদন না করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার তিনজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই তৌফিক হাসান বুধবার দুপুরে তাদের আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর হাকিম জামসেদ আলম তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। গ্রেপ্তাররা হলেন মাদারীপুর সদরের এরশাদ হাওলাদারের ছেলে মো. তামিম হাওলাদার (৩০), কালাম সরদারের ছেলে পলাশ সরদার (৩০) ও ডাসার থানার যতীন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে সম্রাট মল্লিক (২৮)। এর আগে এসআই তৌফিক হাসান গ্রেপ্তার তিনজনের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করার কথা বললেও আদালতের আদেশের পর তিনি বলেন, ‘বুধবার রিমান্ড আবেদন করা হয়নি। পরে, হয়তো আজ তাদের রিমান্ড আবেদন করা হবে।’ গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর রাজাবাজারসহ কয়েকটি এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সাম্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পড়তেন। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায়। বুধবার বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জানাজার পর সাম্যের মরদেহ গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।
নিহত সাম্যর বন্ধুরা জানিয়েছেন, ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত সাম্য এফ রহমান হলের ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। সাম্যকে ছুরিকাঘাতের ঘটনার বিবরণ দিয়ে রাফি ও তার আরেক বন্ধু আবাবিল আহমেদ বিশাল বলেন, রাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান মুক্ত মঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন সাম্য। এ সময় অন্য একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে তার মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং ধস্তাধস্তি হয়।
একপর্যায়ে সাম্যকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ডান পায়ের ঊরুতে আঘাত করে পালিয়ে যায় ওই মোটরসাইকেলের আরোহী। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে তার মৃত্যু হয়। বুধবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশ এক বার্তায় জানিয়েছে, সাম্য হত্যার ঘটনায় অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। ওসি মনসুর বলেন, ‘এদের মধ্যে দুইজন ঘটনাস্থলে ছিলেন বলে তথ্য দিয়েছে সাম্যর বন্ধু। ওই বন্ধুই তাদের শনাক্ত করেছেন।’
‘সাম্যর খুন আমরা মানতে পারছি না’
আমাদের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের খবরে তার সিরাজগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। এমন বিনয়ী আর নম্র-ভদ্র ছেলেকে খুন হতে হবে এটা স্বজন-প্রতিবেশী কেউ মেনে নিতে পারছেন না। গণমাধ্যমে সাম্যর মৃত্যুর খবর দেখে স্বজন ও প্রতিবেশীরা ভিড় করেন বেলকুচি উপজেলার ধুকরিয়াবেড়া ইউনিয়নের সরাতৈল গ্রামের বাড়িতে।
সাম্যর চাচা কায়সার উল আলম বলেন, ‘টেলিভিশনে ভাতিজা সাম্যর হত্যার সংবাদ দেখে গ্রামবাসী ও স্বজনদের ফোন আসতে থাকে। তারা বাড়িতে ভিড় করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এমন সম্ভাবনাময় টগবগে তরুণকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হবে আমরা কখনও ভাবিনি। ভাবতেই পারছি না, আমার ভাতিজার সঙ্গে আর কখনও কথা হবে না, সে আর বাড়ি আসবে না।’
সাম্যর প্রতিবেশী চাচা কবির সরদার বলেন, ‘সাম্য প্রতি বছর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসত। আমাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় হতো। এমন বিনয়ী নম্র-ভদ্র একটা ছেলেকে এভাবে খুন করা হবে এটা আমরা তা মেনে নিতে পারছি না। সাম্য আর বাড়িতে আসবে না, এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।’ সাম্যর ছোট চাচি তানিয়া খাতুন বলেন, ‘প্রতি বছর দুই-তিনবার সাম্য গ্রামের বাড়িতে আসত। তার সঙ্গে আমাদের অনেক স্মৃতি। হঠাৎ এমন সংবাদে আমরা হতবাক হয়েছি।’ স্বজন ও প্রতিবেশীরা সাম্য হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করেছেন।
স্বজনরা জানান, শাহরিয়ার আলম সাম্যের বাবা ফকরুল আলম ঢাকার মিরপুরে রূপনগর আবাসিক এলাকায় ১৮ নম্বর সড়কে একটি বহুতল ভবনের সপ্তম তলায় নিজস্ব ফ্লাটে থাকেন। চার ভাইয়ের মধ্যে সাম্য সবার ছোট। তার বড় ভাই আমিরুল ইসলাম সাগর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
শিক্ষাজীবনের শুরুতে সাম্য উল্লাপাড়া মোমোনা আলী বিজ্ঞান স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। সেখান থেকে এসএসসি পাস করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কয়েক বছর আগে তার মা মারা গেছেন। এদিকে, সাম্য হত্যার প্রতিবাদে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ এবং ইসলামী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সমন্বয়ে সকালে বিক্ষোভ হয়েছে। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ বলেন, ‘দেশের যে কোনো আন্দোলনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাই বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছে। অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার আমরাই বেশি হয়েছি। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করছি।’
বাদ মাগরিব জানাজা ও দাফন
ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরে সাম্যর প্রথম জানাজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে তার মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন স্বজনরা। সাম্যর চাচা কায়সার উল আলম বলেন, ‘বাদ মাগরিব সড়াতৈল গ্রামের মাদ্রাসা মাঠে তার দ্বিতীয় জানাজা হবে। পরে সড়াতৈল কবরস্থানে তাকে দাফন করার কথা রয়েছে। আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
৭ সদস্যের কমিটি
এদিকে, সাম্য হত্যার ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে প্রশাসন। বুধবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুর্বৃত্তদের হামলায় সাম্যর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল হক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তৈয়েবুর রহমান, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম এবং ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক মো. আবুল কালাম সরকার। সহকারী প্রক্টর শারমীন কবিকে কমিটির সদস্য-সচিব করা হয়েছে। ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তদন্ত) সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন।