জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ‘তীব্র তাপপ্রবাহ’ দেশের গর্ভবতী নারীদের বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলেছে। বুধবার, (১৪ মে ২০২৫) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্লাইমেট সেন্ট্রাল কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
তাপপ্রবাহের ফলে দেশে সময়ের আগে শিশু জন্মহার বাড়ছে
তীব্র তাপপ্রবাহে গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি শুধু একটি পরিবেশগত ইস্যু নয় বরং এটি একটি মানবিক ও আইনি সংকট : রাওমান স্মিতা
সংস্থাটি বলছে, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ‘তাপপ্রবাহের কারণে প্রসবকালীন ঝুঁকি’ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এতে মায়েদের গর্ভকালীন জটিলতা ও সময়ের আগেই বাচ্চা প্রসবের হার বাড়ছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বছরে গড়ে ৩৪ দিন তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে যে দিনগুলোকে ‘প্রসবকালীন ঝুঁকিপূর্ণ তাপপ্রবাহের দিন’ হিসেবে ধরা হয়েছে। এই দিনগুলোতে তাপমাত্রা স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রার চেয়ে ৯৫ শতাংশ বেশি। যা গর্ভবতী নারীদের শারীরিক জটিলতা তৈরি করে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির দাবি, বাংলাদেশের শহরগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম সবচেয়ে ‘বিপদাপন্ন’। ২০২০-২০২৪ সময়কালে শহরটিতে গড় তাপমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত ৩০টি প্রসবকালীন ঝুঁকিপূর্ণ তাপমাত্রার দিন পাওয়া গেছে। যা দেশের মোট ঝুঁকিপূর্ণ দিনের ৬১ শতাংশ। সেই হিসেবে চট্টগ্রামকে দেশের অন্যতম ‘তাপমাত্রার-হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ক্লাইমেট সেন্ট্রাল বলছে, বাংলাদেশের এ সংকট একটি বৈশ্বিক বাস্তবতার প্রতিফলন। কেননা বিশ্বের ২৪৭টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে ৯০ শতাংশেই গত পাঁচ বছরে প্রসবকালীন ঝুঁকিপূর্ণ তাপমাত্রার দিন দ্বিগুণ হয়েছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ দেশে বছরে অন্তত এক মাস এমন দিন সহ্য করতে হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া, সাব-সাহারান আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ এসব দেশ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে অত্যন্ত কম অবদান রাখে।
বিশেষজ্ঞরাও অতিরিক্ত গরম দিনের জন্য মূলত তেল-গ্যাস, কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানিকে দায়ী করছেন। ক্লাইমেট সেন্ট্রালের বিজ্ঞান বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. ক্রিস্টিনা ডাল বলেছেন, ‘মাত্র একটি চরম তাপমাত্রার দিনও গর্ভকালীন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা এখনও সবার জন্য সহজলভ্য নয়, সেখানে এই গরম পরিস্থিতি গর্ভবতী নারীদের জন্য অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট মোকাবিলায় এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে গর্ভবতী নারীদের জন্য চরম গরমে বিশেষ চিকিৎসাসেবা, সচেতনতামূলক প্রচারণা, এবং তাপ সহনশীল হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ করা প্রয়োজন।
গ্রিন ফাইন্যান্স, মানবাধিকার, শান্তি ও যুব উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা সংগঠন গ্লোবাল ল’ থিংকার্স সোসাইটি’র সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাওমান স্মিতা বলেন, ‘তীব্র তাপপ্রবাহে গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি শুধু একটি পরিবেশগত ইস্যু নয় বরং এটি একটি মানবিক ও আইনি সংকট। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫ (ক) ধারা ও জাতিসংঘ মানবাধিকার সনদের ২৫ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি নারীর নিরাপদ মাতৃত্ব ও স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এই অধিকার জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।’
তিনি সংকট মোকাবিলায় ‘জলবায়ু-সহনশীল স্বাস্থ্যনীতি’র প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বলেন, ‘গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষ চিকিৎসা সেবা, সচেতনতা, এবং তাপপ্রতিরোধী অবকাঠামোর আইনি কাঠামো নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন আইনজীবী ও সামাজিক নেতৃত্বের প্রতিনিধি হিসেবে আমি জোরালোভাবে বলছি, উন্নত দেশগুলোকে “লস অ্যান্ড ড্যামেজ” কাঠামোর আওতায় ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেইসঙ্গে রাষ্ট্রকে ন্যায়বিচার, জবাবদিহি ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে নারীর স্বাস্থ্য ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
‘সংকট মোকাবিলায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর না চাপিয়ে এই প্রজন্মকেই মোকাবিলা করতে হবে। সেইসঙ্গে জরুরিভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে’, বলেও মত রাওমান স্মিতার।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা আক্তার বলেন, ‘বাংলাদেশ মাতৃস্বাস্থ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন এই অর্জনকে হুমকির মুখে ফেলছে। আমাদের এখন প্রয়োজন একটি জলবায়ুবান্ধব স্বাস্থ্যনীতি।’
ক্লাইমেট সেন্ট্রাল তাদের প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের গর্ভবতী নারীরা আরও তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে। তারা বলছে; চরম তাপপ্রবাহ শুধু একটি পরিবেশগত ইস্যু নয় এটি একটি মানবিক সংকট, যার প্রভাব প্রজন্মের পর প্রজন্ম পোহাতে হবে।
বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ‘তীব্র তাপপ্রবাহ’ দেশের গর্ভবতী নারীদের বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলেছে। বুধবার, (১৪ মে ২০২৫) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্লাইমেট সেন্ট্রাল কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
তাপপ্রবাহের ফলে দেশে সময়ের আগে শিশু জন্মহার বাড়ছে
তীব্র তাপপ্রবাহে গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি শুধু একটি পরিবেশগত ইস্যু নয় বরং এটি একটি মানবিক ও আইনি সংকট : রাওমান স্মিতা
সংস্থাটি বলছে, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ‘তাপপ্রবাহের কারণে প্রসবকালীন ঝুঁকি’ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এতে মায়েদের গর্ভকালীন জটিলতা ও সময়ের আগেই বাচ্চা প্রসবের হার বাড়ছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বছরে গড়ে ৩৪ দিন তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে যে দিনগুলোকে ‘প্রসবকালীন ঝুঁকিপূর্ণ তাপপ্রবাহের দিন’ হিসেবে ধরা হয়েছে। এই দিনগুলোতে তাপমাত্রা স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রার চেয়ে ৯৫ শতাংশ বেশি। যা গর্ভবতী নারীদের শারীরিক জটিলতা তৈরি করে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির দাবি, বাংলাদেশের শহরগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম সবচেয়ে ‘বিপদাপন্ন’। ২০২০-২০২৪ সময়কালে শহরটিতে গড় তাপমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত ৩০টি প্রসবকালীন ঝুঁকিপূর্ণ তাপমাত্রার দিন পাওয়া গেছে। যা দেশের মোট ঝুঁকিপূর্ণ দিনের ৬১ শতাংশ। সেই হিসেবে চট্টগ্রামকে দেশের অন্যতম ‘তাপমাত্রার-হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ক্লাইমেট সেন্ট্রাল বলছে, বাংলাদেশের এ সংকট একটি বৈশ্বিক বাস্তবতার প্রতিফলন। কেননা বিশ্বের ২৪৭টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে ৯০ শতাংশেই গত পাঁচ বছরে প্রসবকালীন ঝুঁকিপূর্ণ তাপমাত্রার দিন দ্বিগুণ হয়েছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ দেশে বছরে অন্তত এক মাস এমন দিন সহ্য করতে হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া, সাব-সাহারান আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ এসব দেশ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে অত্যন্ত কম অবদান রাখে।
বিশেষজ্ঞরাও অতিরিক্ত গরম দিনের জন্য মূলত তেল-গ্যাস, কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানিকে দায়ী করছেন। ক্লাইমেট সেন্ট্রালের বিজ্ঞান বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. ক্রিস্টিনা ডাল বলেছেন, ‘মাত্র একটি চরম তাপমাত্রার দিনও গর্ভকালীন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা এখনও সবার জন্য সহজলভ্য নয়, সেখানে এই গরম পরিস্থিতি গর্ভবতী নারীদের জন্য অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট মোকাবিলায় এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে গর্ভবতী নারীদের জন্য চরম গরমে বিশেষ চিকিৎসাসেবা, সচেতনতামূলক প্রচারণা, এবং তাপ সহনশীল হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ করা প্রয়োজন।
গ্রিন ফাইন্যান্স, মানবাধিকার, শান্তি ও যুব উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা সংগঠন গ্লোবাল ল’ থিংকার্স সোসাইটি’র সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাওমান স্মিতা বলেন, ‘তীব্র তাপপ্রবাহে গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি শুধু একটি পরিবেশগত ইস্যু নয় বরং এটি একটি মানবিক ও আইনি সংকট। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫ (ক) ধারা ও জাতিসংঘ মানবাধিকার সনদের ২৫ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি নারীর নিরাপদ মাতৃত্ব ও স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এই অধিকার জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।’
তিনি সংকট মোকাবিলায় ‘জলবায়ু-সহনশীল স্বাস্থ্যনীতি’র প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বলেন, ‘গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষ চিকিৎসা সেবা, সচেতনতা, এবং তাপপ্রতিরোধী অবকাঠামোর আইনি কাঠামো নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন আইনজীবী ও সামাজিক নেতৃত্বের প্রতিনিধি হিসেবে আমি জোরালোভাবে বলছি, উন্নত দেশগুলোকে “লস অ্যান্ড ড্যামেজ” কাঠামোর আওতায় ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেইসঙ্গে রাষ্ট্রকে ন্যায়বিচার, জবাবদিহি ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে নারীর স্বাস্থ্য ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
‘সংকট মোকাবিলায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর না চাপিয়ে এই প্রজন্মকেই মোকাবিলা করতে হবে। সেইসঙ্গে জরুরিভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে’, বলেও মত রাওমান স্মিতার।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা আক্তার বলেন, ‘বাংলাদেশ মাতৃস্বাস্থ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন এই অর্জনকে হুমকির মুখে ফেলছে। আমাদের এখন প্রয়োজন একটি জলবায়ুবান্ধব স্বাস্থ্যনীতি।’
ক্লাইমেট সেন্ট্রাল তাদের প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের গর্ভবতী নারীরা আরও তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে। তারা বলছে; চরম তাপপ্রবাহ শুধু একটি পরিবেশগত ইস্যু নয় এটি একটি মানবিক সংকট, যার প্রভাব প্রজন্মের পর প্রজন্ম পোহাতে হবে।