মোবাইলে অর্থ লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান নগদের প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ‘দুর্নীতি’ ও অর্থ পাচারের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার, (১৪ মে ২০২৫) দুদকের সহকারী পরিচালক রুহুল হক ও তানজির আহমেদের নেতৃত্বে একটি দল প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালায়। অভিযানের পর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায় তারা।
তানজির আহমেদ বলেন, ‘আমরা নথিপত্র সংগ্রহ করেছি। দুদকে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেয়ার আগে এসব নথিপত্র খতিয়ে দেখা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নগদের ৭০ শতাংশের বেশি মালিকানা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের। তাই, বিদেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখব। এ ছাড়াও নগদের পেছনে আওয়ামী লীগের কে বা কারা রয়েছেন এবং ডাক বিভাগের সঙ্গে অন্যায্য চুক্তিতে কে কে প্রভাব রেখেছিল সেটিও যাচাই করা হবে।’ এ বিষয়ে নগদের প্রশাসক মোহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার গণমাধ্যমকে বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে ১৭শ’ কোটি টাকা পাচার এবং ৬০০ কোটি টাকার ই-মানিসংক্রান্ত অনিয়ম পাওয়া গেছে।
দুদক থেকে জানা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসররা ডাক বিভাগকে ব্যবহার করে বিধিবহির্ভূতভাবে ডিজিটাল অর্থ লেনদেন প্ল্যাটফরম নগদ চালু করে। শুরুতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন, সাবেক এমপি নাহিম রাজ্জাক, রাজি মোহাম্মদ ফকরুলসহ প্রভাবশালী চক্র এ প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন। খোকন তার স্ত্রী নূপুরের নামে ৫০০ শেয়ার নিয়েছিলেন। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে তখন আইনবহির্ভূতভাবে নগদ প্রতিষ্ঠা নিয়ে সংবাদ প্রচার হলে তোলপাড় শুরু হয়। কিন্তু প্রভাবশালী চক্রটি শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছত্রছায়ায় এ ব্যবসা চালিয়ে যায়। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ও তার দোসররা পালানোর পর নগদের দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
অভিযোগসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর
(এমএফএস) প্রায় পাঁচ হাজারের মতো অবৈধ এজেন্ট রয়েছে। এসব এজেন্টের মাধ্যমে গত এক বছরে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকার মতো বিদেশে পাচার হয়েছে। এজেন্টরা হুন্ডির মাধ্যমে ওই টাকা পাচার করেছে। এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতেই নগদে অভিযান চালানো হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নগদ বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত ই-মানি তৈরি করে বেশ কিছু বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছে। অভিযানকালে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, নগদ প্রায় ৬০০ কোটি টাকার বেশি অনিয়মিত ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে লেনদেন করেছে। এছাড়া ট্রাস্ট অ্যাকাউন্টের সঙ্গে নগদের মূল অ্যাকাউন্টের হিসাবের গরমিল পাওয়া গেছে। অভিযোগের বিষয়গুলো বিশদভাবে যাচাইয়ে গঠিত টিম সংশ্লিষ্ট সব নথি সংগ্রহ করে। নথি পর্যালোচনা করে কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
বুধবার দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বলেন, ‘নগদ বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত ই-মানি তৈরি করে বেশ কিছু বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছে। অভিযানের সময় সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।’ দুদক বলছে, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ছাড়া ৯৭ হাজার হিসাব খোলা হয়েছে। ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন সেবা দিতে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি হিসেবে ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করে নগদ। পরে চলতি বছর জুনে নগদকে ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে চূড়ান্ত লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন তফসিলি ব্যাংকের তালিকায় যুক্ত করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২১ আগস্ট নগদ ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের আগের পর্ষদ ভেঙে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক বদিউজ্জামান দিদারকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বুধবার দুদকের অভিযানের পর প্রাথমিকভাবে নগদের ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা পাচার ও ৬৪৫ কোটি টাকার ই-মানিবিষয়ক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার তথ্য উপস্থিত সাংবাদিকদের দেন বদিউজ্জামান।
এরপর সেখান থেকে বের হয়ে বিকেলে গুলশানের দিকে যাওয়ার পথে তিনি হামলার শিকার হন। এদিকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ‘নগদ’-এর বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত সপ্তাহে করা যেখানে আসামি করা হয়েছে কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুকসহ ২৪ জনকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে মতিঝিল থানায় মামলাটি করেন ‘পেমেন্ট সিস্টেমস’ বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ আমীর খসরু। মামলায় বলা হয়, গত বছরের ২১ থেকে ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক নগদের কার্যক্রম পরিদর্শন করে। তাতে বিভিন্ন ব্যাংকের ‘ট্রাস্ট কাম সেটেলমেন্ট’ হিসেবে ইস্যুকৃত ই-মানির বিপরীতে রিয়েল মানির ১০১ কোটি টাকার বেশি ঘাটতি পাওয়া যায়।
বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
মোবাইলে অর্থ লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান নগদের প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ‘দুর্নীতি’ ও অর্থ পাচারের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার, (১৪ মে ২০২৫) দুদকের সহকারী পরিচালক রুহুল হক ও তানজির আহমেদের নেতৃত্বে একটি দল প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালায়। অভিযানের পর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায় তারা।
তানজির আহমেদ বলেন, ‘আমরা নথিপত্র সংগ্রহ করেছি। দুদকে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেয়ার আগে এসব নথিপত্র খতিয়ে দেখা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নগদের ৭০ শতাংশের বেশি মালিকানা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের। তাই, বিদেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখব। এ ছাড়াও নগদের পেছনে আওয়ামী লীগের কে বা কারা রয়েছেন এবং ডাক বিভাগের সঙ্গে অন্যায্য চুক্তিতে কে কে প্রভাব রেখেছিল সেটিও যাচাই করা হবে।’ এ বিষয়ে নগদের প্রশাসক মোহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার গণমাধ্যমকে বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে ১৭শ’ কোটি টাকা পাচার এবং ৬০০ কোটি টাকার ই-মানিসংক্রান্ত অনিয়ম পাওয়া গেছে।
দুদক থেকে জানা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসররা ডাক বিভাগকে ব্যবহার করে বিধিবহির্ভূতভাবে ডিজিটাল অর্থ লেনদেন প্ল্যাটফরম নগদ চালু করে। শুরুতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন, সাবেক এমপি নাহিম রাজ্জাক, রাজি মোহাম্মদ ফকরুলসহ প্রভাবশালী চক্র এ প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন। খোকন তার স্ত্রী নূপুরের নামে ৫০০ শেয়ার নিয়েছিলেন। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে তখন আইনবহির্ভূতভাবে নগদ প্রতিষ্ঠা নিয়ে সংবাদ প্রচার হলে তোলপাড় শুরু হয়। কিন্তু প্রভাবশালী চক্রটি শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছত্রছায়ায় এ ব্যবসা চালিয়ে যায়। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ও তার দোসররা পালানোর পর নগদের দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
অভিযোগসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর
(এমএফএস) প্রায় পাঁচ হাজারের মতো অবৈধ এজেন্ট রয়েছে। এসব এজেন্টের মাধ্যমে গত এক বছরে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকার মতো বিদেশে পাচার হয়েছে। এজেন্টরা হুন্ডির মাধ্যমে ওই টাকা পাচার করেছে। এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতেই নগদে অভিযান চালানো হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নগদ বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত ই-মানি তৈরি করে বেশ কিছু বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছে। অভিযানকালে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, নগদ প্রায় ৬০০ কোটি টাকার বেশি অনিয়মিত ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে লেনদেন করেছে। এছাড়া ট্রাস্ট অ্যাকাউন্টের সঙ্গে নগদের মূল অ্যাকাউন্টের হিসাবের গরমিল পাওয়া গেছে। অভিযোগের বিষয়গুলো বিশদভাবে যাচাইয়ে গঠিত টিম সংশ্লিষ্ট সব নথি সংগ্রহ করে। নথি পর্যালোচনা করে কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
বুধবার দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বলেন, ‘নগদ বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত ই-মানি তৈরি করে বেশ কিছু বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছে। অভিযানের সময় সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।’ দুদক বলছে, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ছাড়া ৯৭ হাজার হিসাব খোলা হয়েছে। ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন সেবা দিতে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি হিসেবে ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করে নগদ। পরে চলতি বছর জুনে নগদকে ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে চূড়ান্ত লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন তফসিলি ব্যাংকের তালিকায় যুক্ত করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২১ আগস্ট নগদ ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের আগের পর্ষদ ভেঙে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক বদিউজ্জামান দিদারকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বুধবার দুদকের অভিযানের পর প্রাথমিকভাবে নগদের ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা পাচার ও ৬৪৫ কোটি টাকার ই-মানিবিষয়ক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার তথ্য উপস্থিত সাংবাদিকদের দেন বদিউজ্জামান।
এরপর সেখান থেকে বের হয়ে বিকেলে গুলশানের দিকে যাওয়ার পথে তিনি হামলার শিকার হন। এদিকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ‘নগদ’-এর বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত সপ্তাহে করা যেখানে আসামি করা হয়েছে কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুকসহ ২৪ জনকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে মতিঝিল থানায় মামলাটি করেন ‘পেমেন্ট সিস্টেমস’ বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ আমীর খসরু। মামলায় বলা হয়, গত বছরের ২১ থেকে ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক নগদের কার্যক্রম পরিদর্শন করে। তাতে বিভিন্ন ব্যাংকের ‘ট্রাস্ট কাম সেটেলমেন্ট’ হিসেবে ইস্যুকৃত ই-মানির বিপরীতে রিয়েল মানির ১০১ কোটি টাকার বেশি ঘাটতি পাওয়া যায়।