বাবুই পাখির বাসা -সংবাদ
শৈল্পিক কারুকার্যে ভরা বাবুইপাখির বাসা, এখন খুব একটা দেখা যায় না বললেই চলে। আবহমান গ্রাম বাংলায় তাল কিংবা নারকেল বা সুপারি গাছে বেশি দেখা যেতো বাবুই পাখির বাসা।
পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ছয়টি পর্যন্ত বাসা তৈরি করতে পারে, একটা বাসা তৈরিতে ১০/১২ দিন সময় লাগে
বিশ্বে বাবুই পাখির প্রজাতির সংখ্যা১১৭টি। আমাদের দেশে তিন প্রজাতির বাবুই দেখা যায়
শীতকালের শুরুতে শিল্পী পাখি বাবুই বুনতে শুরু করতো তার বাসা। কোনোটা এক কক্ষ, আবার কোনোটাতে থাকতো একাধিক কক্ষও। তাদের বাসার বুনন দেখে কম-বেশি সবাই মুগ্ধ হতো।
কালের বিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে আজ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে বাবুই পাখির বাসা। কারণ তাল গাছ কমে যাচ্ছে। কমছে পাখির সংখ্যাও।
জানা যায়, আগে চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ আশপাশের গ্রামগঞ্জের তাল, নারিকেল, বাবলা ও সুপারি গাছে প্রচুর বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়তো। এসব বাসা শুধুমাত্র শৈল্পিক নিদর্শনই ছিল না, মানুষের মনে চিন্তার খোরাক এবং উৎসাহ জোগাত। পাখি প্রেমিরা বলেন, বাবুই পাখির বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়ে বাতাসে টিকে থাকে। খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ, ঘাস, আখের পাতা ও কাঁশবনের লতাপাতা দিয়ে উঁচুগাছে বাসা তৈরি করে বাবুই পাখিরা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নিলিমা আক্তার হ্যাপি বলেন, বাবুই পাখির একটা বাসা তৈরিতে ১০/১২ দিন সময় লাগে। এপ্রিলের শেষ থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এদের প্রজনন কাল। প্রজনন সময় ছাড়া অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী পাখির গায়ে কালো কালো দাগসহ পিঠ তামাটে বর্ণের হয়। নিচের দিকে কোনো দাগ থাকে না। ঠোঁট পুরো মোচাকৃতি, লেজ চৌকা। তবে প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির রঙ হয় গাঢ় বাদামি। বুকের ওপরের দিক হয় ফ্যাকাশে।
পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ছয়টি পর্যন্ত বাসা তৈরি করতে পারে। সেই বাসাগুলোতেই প্রজনন প্রক্রিয়ায় স্ত্রী বাবুই ডিমে তা দেয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা ফোটে। আর তিন সপ্তাহ পর বাবুই বাচ্চা ছেড়ে উড়ে যায়। বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম হলো পাকা ধানের মৌসুম। স্ত্রী বাবুই দুধ, ধান সংগ্রহ করে বাচ্চাদের খাওয়ায়। বাবুই পাখির প্রধান খাদ্য তালিকায় আছে ধান, চাল, গম, পোকা-মাকড় প্রভৃতি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পাখি ও পরিবেশবিদ বকতিয়ার হামিদ বলেন, এক সময় গ্রামাঞ্চলে প্রচুর তাল, নারিকেল, বাবলা গাছ ও খেজুরগাছ দেখা যেত। আর এ সব গাছে বাসা বেঁধে বসবাস করত বাবুই পাখি। বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ এবং তাদের শৈল্পিক বাসা মানুষকে আনন্দ দিত। কিন্তু বর্তমানে সেই তালগাছ যেমন আর দেখা যায় না, তেমনি দেখা মেলে না শৈল্পিক বাবুই পাখিরও। গ্রামের মাঠের ধারে, পুকুর কিংবা নদীর তীরে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে শৈল্পিক পাখি বাবুইও। এখন এসব যেন বইয়ের ছড়া এবং দাদুর কাছে শোনা গল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
দর্শনা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুল আলম বলেন, ‘বাবুই-চড়ুই সদৃশ পাখি। বিশ্বে বাবুই পাখির
প্রজাতির সংখ্যা ১১৭টি। তবে আমাদের দেশে তিন প্রজাতির বাবুই বাস করে। এগুলো হলো বাংলা বাবুই, দাগী বাবুই ও দেশি বাবুই। গাছে ঝুড়ির মতো চমৎকার বাসা তৈরি করায় এ পাখির পরিচিতি জগতজোড়া। অনেকেই একে তাঁতি পাখিও বলে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, পরিবেশে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা এবং বড় বড় তাল, খেজুর, নারিকেল ও বাবলা গাছ না থাকার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে ‘কারিগর’ পাখি- বাবুই। তাই বাবুই পাখি ও এর শৈল্পিক নিদর্শন, নিজের বোনা বাসা রক্ষার জন্য দ্রুত সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
বাবুই পাখির বাসা -সংবাদ
মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
শৈল্পিক কারুকার্যে ভরা বাবুইপাখির বাসা, এখন খুব একটা দেখা যায় না বললেই চলে। আবহমান গ্রাম বাংলায় তাল কিংবা নারকেল বা সুপারি গাছে বেশি দেখা যেতো বাবুই পাখির বাসা।
পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ছয়টি পর্যন্ত বাসা তৈরি করতে পারে, একটা বাসা তৈরিতে ১০/১২ দিন সময় লাগে
বিশ্বে বাবুই পাখির প্রজাতির সংখ্যা১১৭টি। আমাদের দেশে তিন প্রজাতির বাবুই দেখা যায়
শীতকালের শুরুতে শিল্পী পাখি বাবুই বুনতে শুরু করতো তার বাসা। কোনোটা এক কক্ষ, আবার কোনোটাতে থাকতো একাধিক কক্ষও। তাদের বাসার বুনন দেখে কম-বেশি সবাই মুগ্ধ হতো।
কালের বিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে আজ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে বাবুই পাখির বাসা। কারণ তাল গাছ কমে যাচ্ছে। কমছে পাখির সংখ্যাও।
জানা যায়, আগে চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ আশপাশের গ্রামগঞ্জের তাল, নারিকেল, বাবলা ও সুপারি গাছে প্রচুর বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়তো। এসব বাসা শুধুমাত্র শৈল্পিক নিদর্শনই ছিল না, মানুষের মনে চিন্তার খোরাক এবং উৎসাহ জোগাত। পাখি প্রেমিরা বলেন, বাবুই পাখির বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়ে বাতাসে টিকে থাকে। খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ, ঘাস, আখের পাতা ও কাঁশবনের লতাপাতা দিয়ে উঁচুগাছে বাসা তৈরি করে বাবুই পাখিরা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নিলিমা আক্তার হ্যাপি বলেন, বাবুই পাখির একটা বাসা তৈরিতে ১০/১২ দিন সময় লাগে। এপ্রিলের শেষ থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এদের প্রজনন কাল। প্রজনন সময় ছাড়া অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী পাখির গায়ে কালো কালো দাগসহ পিঠ তামাটে বর্ণের হয়। নিচের দিকে কোনো দাগ থাকে না। ঠোঁট পুরো মোচাকৃতি, লেজ চৌকা। তবে প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির রঙ হয় গাঢ় বাদামি। বুকের ওপরের দিক হয় ফ্যাকাশে।
পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ছয়টি পর্যন্ত বাসা তৈরি করতে পারে। সেই বাসাগুলোতেই প্রজনন প্রক্রিয়ায় স্ত্রী বাবুই ডিমে তা দেয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা ফোটে। আর তিন সপ্তাহ পর বাবুই বাচ্চা ছেড়ে উড়ে যায়। বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম হলো পাকা ধানের মৌসুম। স্ত্রী বাবুই দুধ, ধান সংগ্রহ করে বাচ্চাদের খাওয়ায়। বাবুই পাখির প্রধান খাদ্য তালিকায় আছে ধান, চাল, গম, পোকা-মাকড় প্রভৃতি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পাখি ও পরিবেশবিদ বকতিয়ার হামিদ বলেন, এক সময় গ্রামাঞ্চলে প্রচুর তাল, নারিকেল, বাবলা গাছ ও খেজুরগাছ দেখা যেত। আর এ সব গাছে বাসা বেঁধে বসবাস করত বাবুই পাখি। বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ এবং তাদের শৈল্পিক বাসা মানুষকে আনন্দ দিত। কিন্তু বর্তমানে সেই তালগাছ যেমন আর দেখা যায় না, তেমনি দেখা মেলে না শৈল্পিক বাবুই পাখিরও। গ্রামের মাঠের ধারে, পুকুর কিংবা নদীর তীরে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে শৈল্পিক পাখি বাবুইও। এখন এসব যেন বইয়ের ছড়া এবং দাদুর কাছে শোনা গল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
দর্শনা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুল আলম বলেন, ‘বাবুই-চড়ুই সদৃশ পাখি। বিশ্বে বাবুই পাখির
প্রজাতির সংখ্যা ১১৭টি। তবে আমাদের দেশে তিন প্রজাতির বাবুই বাস করে। এগুলো হলো বাংলা বাবুই, দাগী বাবুই ও দেশি বাবুই। গাছে ঝুড়ির মতো চমৎকার বাসা তৈরি করায় এ পাখির পরিচিতি জগতজোড়া। অনেকেই একে তাঁতি পাখিও বলে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, পরিবেশে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা এবং বড় বড় তাল, খেজুর, নারিকেল ও বাবলা গাছ না থাকার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে ‘কারিগর’ পাখি- বাবুই। তাই বাবুই পাখি ও এর শৈল্পিক নিদর্শন, নিজের বোনা বাসা রক্ষার জন্য দ্রুত সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।