রেলের পুর্বাঞ্চলে অবৈধ দখলে থাকা জমি -সংবাদ
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের শত শত একর জমি প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে দখল করে রাখলেও এসব জমি উদ্ধারে রেলওয়ের কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে দেখা যায় না। বছরের পর বছর এসব জমিতে অবৈধ দখলদাররা রাজত্ব চালিয়ে আসছে। এসব জমির বর্তমান বাজার দর ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা বলে জানা গেছে। অবৈধ দখলদারদের দখলে থাকা রেলের এসব জমিতে বস্তির পাশাপাশি দোকান ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তুলে মাসে মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি মহল। রেলের নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য, বিশেষ করে আরএনবি (রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী)এর ইনচার্জ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অবৈধ দখল ও বাণিজ্যে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এর ফলে বড় অঙ্কের রাজস্বও হারাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে রেললাইনের দুইপাশের একর একর জমি দখল করে ভাসমান বস্তি-দোকান গড়ে তোলার কারণে রেললাইনে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা বেড়েছে। তবে মাঝে মাঝে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও বড় ধরনের লাগাতার কোনো উচ্ছেদ অভিযান নেই বললেও চলে। প্রয়োজনীয় সাপোর্ট না পাওয়ায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ভূমি থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ থেকে জানা গেছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে মোট জমির পরিমাণ ২৪ হাজার ৪০১ একর। এর মধ্যে প্রায় ৫শ’ একর জমি বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে দখল করে তারা রাজত্ব করছেন। সরেজমিনে এবং একাধিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, রেলের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজস্ব বিভাগ এবং আরএনবির কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে রেলের বিপুল পরিমাণ জমি অবৈধ দখলদাররা রাতারাতি দখল করে তাদের রাজত্ব গড়ে তুলেছে। আবার রেলের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দখলেও রয়েছে বিপুল পরিমাণ জমি। তারা সেখানে বস্তি ও দোকান করে ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছে। বিনিময়ে রেলওয়ে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের আরএনবি পুলিশ ওসি নিজেই মাসিক ভিত্তিতে দখলদারদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি প্রত্যেক দোকান বা স্থাপনার মালিকের কাছ থেকে মাসে ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নিচ্ছেন। এসব টাকার কোনো সরকারি রসিদ নেই, পুরোটাই অননুমোদিত এবং সম্পূর্ণভাবে অনিয়মের মাধ্যমে নিজের পকেটে নেয়া হচ্ছে, এমনটি বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। মাসোহারা প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে সংশ্লিষ্টদের হুমকি দেয়া হয়, অনেক সময় দোকান ভাঙার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করারও অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এই চক্রের পেছনে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও প্রাশাসনিক ব্যক্তিরা রয়েছে বলেই এতদিনেও কাউকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। বারবার গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও রেলওয়ের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো অভিযানে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই বলেও তাদের অভিযোগ। মাঝে মাঝে কিছু ঝুপড়ি ভেঙে দেয়া হলেও কিছুদিনের মধ্যেই আবার তা পুনর্গঠিত হয়। মূলত আরএনবি বাহিনীর দায়িত্ব রেলের সম্পদ রক্ষা করা হলেও তারা নিজেরাই এই দখলদারদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে মাসোহারা তুলে নিচ্ছে। এতে একদিকে যেমন রেলওয়ে বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে এমনটি বলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের আরএনবি ওসি আবু সুফিয়ান বলেন, রেলের জায়গা অবৈধ দখলদারিত্বে বিরুদ্ধে আমারা প্রতিনিয়ত কাজ করছি। আদালত থেকে উচ্ছেদের নির্দেশ এলে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তিনি অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে মাসহারা নেয়ার ব্যাপারে অবগত নন বলে জানান।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ সূত্রমতে, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে সিলেটের জামালপুর, টাঙ্গাইল সেতুর পূর্বপাশ ও চাঁদপুর পর্যন্ত রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অধীন। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রাম জেলায় ২২৫ একর জমি অবৈধ দখলদারদের হাতে। বাকি ২৭৫ একর জমি অন্য জায়গায় বেদখলে আছে। চট্টগ্রাম জেলায় ২২৫ একর জমির মধ্যে ১২৫ একর জমি আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাকি ১০০ একর জায়গা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দখলে রেখেছে। এছাড়া চট্টগ্রামের বাইরে ২৬৭ একর জমির মধ্যে প্রায় দেড়শ’ একর জমি সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান, বাকি জমি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দখলে রেখেছে। এসব জমি অবৈধ দখলমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন বলে জানান রেলওয়ের কর্মকর্তারা।
রেলের পুর্বাঞ্চলে অবৈধ দখলে থাকা জমি -সংবাদ
শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের শত শত একর জমি প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে দখল করে রাখলেও এসব জমি উদ্ধারে রেলওয়ের কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে দেখা যায় না। বছরের পর বছর এসব জমিতে অবৈধ দখলদাররা রাজত্ব চালিয়ে আসছে। এসব জমির বর্তমান বাজার দর ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা বলে জানা গেছে। অবৈধ দখলদারদের দখলে থাকা রেলের এসব জমিতে বস্তির পাশাপাশি দোকান ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তুলে মাসে মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি মহল। রেলের নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য, বিশেষ করে আরএনবি (রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী)এর ইনচার্জ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অবৈধ দখল ও বাণিজ্যে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এর ফলে বড় অঙ্কের রাজস্বও হারাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে রেললাইনের দুইপাশের একর একর জমি দখল করে ভাসমান বস্তি-দোকান গড়ে তোলার কারণে রেললাইনে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা বেড়েছে। তবে মাঝে মাঝে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও বড় ধরনের লাগাতার কোনো উচ্ছেদ অভিযান নেই বললেও চলে। প্রয়োজনীয় সাপোর্ট না পাওয়ায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ভূমি থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ থেকে জানা গেছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে মোট জমির পরিমাণ ২৪ হাজার ৪০১ একর। এর মধ্যে প্রায় ৫শ’ একর জমি বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে দখল করে তারা রাজত্ব করছেন। সরেজমিনে এবং একাধিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, রেলের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজস্ব বিভাগ এবং আরএনবির কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে রেলের বিপুল পরিমাণ জমি অবৈধ দখলদাররা রাতারাতি দখল করে তাদের রাজত্ব গড়ে তুলেছে। আবার রেলের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দখলেও রয়েছে বিপুল পরিমাণ জমি। তারা সেখানে বস্তি ও দোকান করে ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছে। বিনিময়ে রেলওয়ে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের আরএনবি পুলিশ ওসি নিজেই মাসিক ভিত্তিতে দখলদারদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি প্রত্যেক দোকান বা স্থাপনার মালিকের কাছ থেকে মাসে ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নিচ্ছেন। এসব টাকার কোনো সরকারি রসিদ নেই, পুরোটাই অননুমোদিত এবং সম্পূর্ণভাবে অনিয়মের মাধ্যমে নিজের পকেটে নেয়া হচ্ছে, এমনটি বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। মাসোহারা প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে সংশ্লিষ্টদের হুমকি দেয়া হয়, অনেক সময় দোকান ভাঙার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করারও অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এই চক্রের পেছনে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও প্রাশাসনিক ব্যক্তিরা রয়েছে বলেই এতদিনেও কাউকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। বারবার গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও রেলওয়ের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো অভিযানে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই বলেও তাদের অভিযোগ। মাঝে মাঝে কিছু ঝুপড়ি ভেঙে দেয়া হলেও কিছুদিনের মধ্যেই আবার তা পুনর্গঠিত হয়। মূলত আরএনবি বাহিনীর দায়িত্ব রেলের সম্পদ রক্ষা করা হলেও তারা নিজেরাই এই দখলদারদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে মাসোহারা তুলে নিচ্ছে। এতে একদিকে যেমন রেলওয়ে বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে এমনটি বলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের আরএনবি ওসি আবু সুফিয়ান বলেন, রেলের জায়গা অবৈধ দখলদারিত্বে বিরুদ্ধে আমারা প্রতিনিয়ত কাজ করছি। আদালত থেকে উচ্ছেদের নির্দেশ এলে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তিনি অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে মাসহারা নেয়ার ব্যাপারে অবগত নন বলে জানান।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ সূত্রমতে, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে সিলেটের জামালপুর, টাঙ্গাইল সেতুর পূর্বপাশ ও চাঁদপুর পর্যন্ত রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অধীন। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রাম জেলায় ২২৫ একর জমি অবৈধ দখলদারদের হাতে। বাকি ২৭৫ একর জমি অন্য জায়গায় বেদখলে আছে। চট্টগ্রাম জেলায় ২২৫ একর জমির মধ্যে ১২৫ একর জমি আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাকি ১০০ একর জায়গা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দখলে রেখেছে। এছাড়া চট্টগ্রামের বাইরে ২৬৭ একর জমির মধ্যে প্রায় দেড়শ’ একর জমি সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান, বাকি জমি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দখলে রেখেছে। এসব জমি অবৈধ দখলমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন বলে জানান রেলওয়ের কর্মকর্তারা।