alt

জাতীয়

বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন, এখন ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখছেন ওবায়দুল কাদের

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ৯ মাস পর প্রথমবারের মতো দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কণ্ঠ শোনা গেল ইন্টারনেটে। গত বছর ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার ভারতে চলে যাওয়ার দিন কীভাবে স্ত্রী ইসরাতুন্নেছাকে নিয়ে পাঁচ ঘণ্টা একটি বাড়ির বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন, সেই গল্প ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়াল’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন ওবায়দুল কাদের। তার ভাষ্য, সরকার পতনের পরও তিন মাস তিনি বাংলাদেশে ছিলেন। পরে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যান।

তিয়াত্তর পেরোনো রাজনীতিক কাদের স্বপ্ন দেখেছেন, সময় এলে তারা আবারও দেশে ফিরবেন, আওয়ামী লীগও আবার ক্ষমতায় ফিরবে। তিনি বলেন তারা আবার দেশে ফিরবেন, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরবে, শেখ হাসিনা আবারও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন। এ বিষয়ে তিনি ‘শতভাগ আশাবাদী’। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় বা জুলাই অভ্যুত্থানের দিনগুলোতে যা ঘটে গেছে, সেজন্য ভারতে বসে ক্ষমা চাইতে তিনি রাজি নন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দ্য ওয়ালের এক্সিকিউটিভ এডিটর অমল সরকার।

দেশ ছাড়লেন কীভাবে

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা গ্রেপ্তার হলেও ওবায়দুল কাদের কীভাবে দেশ ছাড়তে পারলেন, সাক্ষাৎকারে তিনি (কাদের) সেটা খোলসা করেননি। গত বছর জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনে দমন-পীড়নের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো ওবায়দুল কাদেরের নামেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এদিকে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি সেই বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির সব ধরনের কর্মকা- নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই হিসেবে আওয়ামী লীগ এখন নিষিদ্ধ দল এবং ওবায়দুল কাদের সেই দলের পলাতক এক নেতা, যার মাথার ওপর কয়েকশ’ হত্যা মামলা ঝুলছে।

ষড়যন্ত্রমূলক

অমল সরকারের প্রশ্নের উত্তরে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনকে ওবায়দুল কাদের বর্ণনা করেন ‘ষড়যন্ত্রমূলক ছাত্র উত্থান’ হিসেবে। তিনি বলেন, ‘আমি খুবই ভাগ্যবান, সেদিন আমার বেঁচে থাকার কথা ছিল না। মৃত্যু থেকে অনেক কাছে ছিলাম।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকায় জাতীয় সংসদ এলাকায় যে বাসায় তিনি থাকতেন, সেখান থেকে পাশের আরেকটি বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি এবং তার স্ত্রী ইসরাতুন্নেছা কাদের। চারদিক থেকে মিছিল আসছিল। শুরুতে মিছিলগুলো গণভবনকেন্দ্রিক থাকলেও পরে সংসদ এলাকাতেও তা ছড়িয়ে পড়ে, যা দেখে অবাক হওয়ার কথা বলেছেন কাদের। তার ভাষায়, সেটা কোনো রাজনৈতিক অভ্যুত্থান নয়, ‘লুটপাটের অভ্যুত্থান’ ছিল।

বাথরুমে ৫ ঘণ্টা

তিনি বলেন, ‘আমি যে বাসাটায় ছিলাম, তারা সে বাসাতেও হামলা করে। তবে তারা জানতো না যে সেখানে আমি আছি। আমার বাসায় তারা লুটপাট করেছে। কিন্তু যে বাসায় আমি গিয়ে আশ্রয় নিলাম, সেখানে তারা হামলা করবে এটা আমি ভাবতে পারিনি। কিন্তু সেখানেও দেখলাম যে অনেক লোকজন ঢুকে পড়ে এবং তারা ভাঙচুর-লুটপাট করতে থাকে। আমি আমার স্ত্রীসহ আমরা বাথরুমে ঢুকে অনেকক্ষণ ছিলাম, প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। তারপর একটা পর্যায়ে এরা তো ওই বাথরুমের ভেতর, সেখানেও কমোড, বেসিন এগুলো তো লুটপাট করেছে সবই।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রথমত তাদেরকে আমার ওয়াইফ, সে বাথরুমের মুখে দাঁড়িয়ে বারবার বলছিল যে আমি অসুস্থ, এ কথা বলে তাদের ফিরিয়েছে। একটা পর্যায়ে তারা বাথরুমে যেগুলো আছে সেগুলো লুট করার জন্য জোরপূর্বক প্রবেশের হুমকি দেয়। সে সময় আমার ওয়াইফ জিজ্ঞেস করে যে কী করব? আমি বলি খুলে দাও, যাও। তারপরে সাত-আট জন ছেলে ঢুকলো। তারা খুবই আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভঙ্গি নিয়ে। তখন হঠাৎ তারা আমার দিকে তাকায়। আমার দিকে তাকিয়ে বলে ‘নেত্রী চলে গেল, আপনি যাননি কেন’। আমি কিছু বলছিলাম না।’

আমার ভাগ্য

কীভাবে সেখান থেকে বের হলেন, সেই বর্ণনা দিতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এরপর এরা এদের একটা শার্ট, এদের ওই ব্যাজ, লাল পতাকা শোভিত ব্যাজ লাগিয়ে আবার কালো একটা মুখে একটা মাস্ক দিয়ে আমাকে হাঁটতে হাঁটতে সংসদ এলাকা থেকে বড় রাস্তায় গণভবন অভিমুখী রাস্তায়, ওখানে নিয়ে যায়। হঠাৎ করে কোথা থেকে একটা ট্যাক্সি আসে। ইজিবাইক। সেটা খালি ছিল। ওখানে কোনো গাড়ি-ঘোড়া কিছুই ছিল না। ওটা হঠাৎ করে কেন যেন এসে পড়লো। হয়তো আমার ভাগ্য। এরা দু’জনে আমাকে নিয়ে আমার ওয়াইফকে নিয়ে ওটাতে উঠল। আর বলতে লাগল...পথে তো অসংখ্য মানুষ, চেকআপ সব জায়গায়; এরা বলতে লাগল যে ‘আমাদের চাচা-চাচি অসুস্থ। হাসপাতালে নিচ্ছি। ডিস্টার্ব করবা না।’ এই করে করে নিয়ে গেল অনেক দূরে একটা জায়গায়।”

এরপর ওবায়দুল কাদের কোথায় ছিলেন, তা জানতে চেয়েছিল দ্য ওয়াল। জবাবে তিনি বলেন, তিন মাসের মতো তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন।

*ভুল-ত্রুটি*

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদের দায় নিচ্ছেন কি না, তা জানতে চেয়েছিল দ্য ওয়াল। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, সেভাবে আমি কাজ করেছি। এখন জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে আমার ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। আই এম নট ইমিউন ফ্রম মিস্টেকস। মানুষের ভুল হবে। সে ভুল-ত্রুটি আমারও থাকতে পারে।’ নির্বাচনে অনিয়ম, মানবাধিকার হরণ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, দুর্নীতি- ইত্যাদি নানা অভিযোগ আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে রয়েছে। এত বড় ঘটনার পর আওয়ামী লীগ ভুল স্বীকার বা দুঃখ প্রকাশ করেনি। এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন অমল সরকার। জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে যা কিছু দিয়েছে, শেখ হাসিনা যা কিছু করেছেন, তার ‘কোনো তুলনা হয় না’।

*আবার ক্ষমতায়*

অমল সরকারের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা আবার দেশে ফিরবেন, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরবে, শেখ হাসিনা আবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন- এ বিষয়ে তিনি ‘শতভাগ আশাবাদী’। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর ভারত ছাড়া অন্য কোনো দেশ যে সেভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়নি, সেটা ওবায়দুল কাদেরকে মনে করিয়ে দেন অমল সরকার।

কাদের তখন বলেন, ‘ভারত আমাদের দুঃসময়ের বিশ্বস্ত বন্ধু, সংকটে আমরা বারবার ভারতের কাছে ছুটেছি। অন্য কোনো দেশের সঙ্গে আমাদের কোনো বৈরিতা নেই। আমরা কারো বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য দিচ্ছি না, কারো সমালোচনা করছি না।’ কাদের আরও বলেন, ‘এখন আমাদের দেশকে, যেখান থেকে আমরা বাংলাদেশে স্থানচ্যুত হয়েছি, যেখান থেকে আমরা দেশের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি, সেই শিকড়ে আমাদের ফিরে যেতে হবে। এই আমাদের চিন্তা।’

অমল সরকার তখন বলেন, ‘কিন্তু তার জন্য তো মানে দেশবাসীর কাছে ন্যূনতম নিজেদের ভুল স্বীকার করতে হবে...।’ জবাবে কাদের বলেন, ‘ভারতে বসে আমি এ ক্ষমা প্রার্থনা কেন করব। আমি দেশে গিয়ে আমার ভুলের জন্য...আমার ভুল-ত্রুটি হলে সেটার জন্য আমাদের নেত্রী আছেন, তিনিই দেশবাসীকে বলবেন। এখান থেকে বলা কি ঠিক?’

প্রতিবাদে চট্টগ্রামে সংঘর্ষ, আহত ৩

নতুন মামলায় গ্রেপ্তার আমু, ইনু ও মেননসহ ১১ জন

বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ: শিগগিরই ‘কঠোর’ কর্মসূচির পরিকল্পনা ২৫ ক্যাডারের

ছবি

গরুর খামার করে স্বাবলম্বী আগৈলঝাড়ার শামিম

আরও ১৩৭ জনকে ঠেলে পাঠালো ভারত

ছবি

সুব্রত বাইন ৮, মোল্লা মাসুদসহ তিনজন ৬ দিনের রিমান্ডে

ছবি

‘জুলাই বিপ্লবীদের’ ধন্যবাদ দিলেন ‘মুক্ত-স্বাধীন’ আজহার

ছবি

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়রকে পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ

ছবি

লঘুচাপ: সাগর উত্তাল, ১৯ অঞ্চলে ঝড়ের আভাস

মিরপুরে দম্পতি খুন, ঘটনাস্থল থেকে একজন আটক

রাজশাহীর পর এবার চট্টগ্রাম, শিবিরের বিরুদ্ধে বাম ছাত্রজোটের ওপর হামলার অভিযোগ

‘হয়রানিমূলক’ ১১৪৪৮ মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ, সহযোগিতা চায় সরকার

৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা

ছবি

চক্ষুবিজ্ঞানের কর্মচারীদের সঙ্গে জুলাই আহতদের মারামারি

বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিদিন এক ঘণ্টা কর্মবিরতির ঘোষণা সচিবালয় কর্মচারীদের

ছবি

ক্ষমতায় থাকতে চাইলে নির্বাচনে আসুন: অন্তর্বর্তী সরকারকে তারেক রহমান

ছবি

কোরবানির বর্জ্য অপসারণে সেনা সহায়তার প্রসঙ্গে ডিএনসিসি–সেনাবাহিনীর ব্যাখ্যা

ছবি

বাংলাদেশে জিলহজের চাঁদ দেখা গেছে, ৭ জুন কোরবানির ঈদ

চক্ষু ইনস্টিটিউটে জুলাইয়ের আহতদের সঙ্গে কর্মচারীদের মারামারি

লঘুচাপ হয়ে উঠেছে ‘সুস্পষ্ট লঘুচাপ’, দেশে বাড়ছে বৃষ্টির সম্ভাবনা

ছবি

ভারি বৃষ্টিতে চার বিভাগে নদ-নদীর পানি বাড়ার আশঙ্কা, কিছু এলাকায় বিপৎসীমা ছাড়াতে পারে

ছবি

পাচার হওয়া সম্পদ ফেরাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাইল বাংলাদেশ

ছবি

জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলাম কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন

গভীররাতে বিভিন্ন স্থানে ভূকম্পন অনুভূত

ছবি

চার দিনের সফরে জাপানের পথে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

জিলহজের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৭ বা ৮ জুন ঈদুল আজহা, ছুটি টানা ১০ দিন

সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ: আইজিপি

ঢাবির দুই শিক্ষার্থীকে মারধর: তিন ব্যবসায়ী রিমান্ডে

এনসিপির সাবেক নেতা ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টার দুই পিও’র দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ট্যানারি মালিকদের কাছে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের পাওনা ২৫ কোটি টাকা

দুই যুবদল নেতাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা, নাম প্রত্যাহারের দাবিতে থানা ঘেরাও

ছবি

উত্তম কৃষি চর্চা পদ্ধতিতে চাষ, বিষমুক্ত আম চাষে এগিয়ে যাচ্ছে কৃষি

ছবি

রাস্তা আটকে ইশরাক সমর্থকদের বিক্ষোভ, যানজটে নাকাল পথযাত্রী

‘ইলেকট্রিক শক’ মেশিন দেখতে চাওয়ায় সাম্যকে ছুরিকাঘাতে হত্যা: ডিএমপি কমিশনার

ছবি

টানা ৭ দিন ধরে শহীদ মিনারে আন্দোলনে পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরা

tab

জাতীয়

বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন, এখন ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখছেন ওবায়দুল কাদের

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ৯ মাস পর প্রথমবারের মতো দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কণ্ঠ শোনা গেল ইন্টারনেটে। গত বছর ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার ভারতে চলে যাওয়ার দিন কীভাবে স্ত্রী ইসরাতুন্নেছাকে নিয়ে পাঁচ ঘণ্টা একটি বাড়ির বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন, সেই গল্প ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়াল’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন ওবায়দুল কাদের। তার ভাষ্য, সরকার পতনের পরও তিন মাস তিনি বাংলাদেশে ছিলেন। পরে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যান।

তিয়াত্তর পেরোনো রাজনীতিক কাদের স্বপ্ন দেখেছেন, সময় এলে তারা আবারও দেশে ফিরবেন, আওয়ামী লীগও আবার ক্ষমতায় ফিরবে। তিনি বলেন তারা আবার দেশে ফিরবেন, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরবে, শেখ হাসিনা আবারও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন। এ বিষয়ে তিনি ‘শতভাগ আশাবাদী’। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় বা জুলাই অভ্যুত্থানের দিনগুলোতে যা ঘটে গেছে, সেজন্য ভারতে বসে ক্ষমা চাইতে তিনি রাজি নন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দ্য ওয়ালের এক্সিকিউটিভ এডিটর অমল সরকার।

দেশ ছাড়লেন কীভাবে

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা গ্রেপ্তার হলেও ওবায়দুল কাদের কীভাবে দেশ ছাড়তে পারলেন, সাক্ষাৎকারে তিনি (কাদের) সেটা খোলসা করেননি। গত বছর জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনে দমন-পীড়নের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো ওবায়দুল কাদেরের নামেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এদিকে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি সেই বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির সব ধরনের কর্মকা- নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই হিসেবে আওয়ামী লীগ এখন নিষিদ্ধ দল এবং ওবায়দুল কাদের সেই দলের পলাতক এক নেতা, যার মাথার ওপর কয়েকশ’ হত্যা মামলা ঝুলছে।

ষড়যন্ত্রমূলক

অমল সরকারের প্রশ্নের উত্তরে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনকে ওবায়দুল কাদের বর্ণনা করেন ‘ষড়যন্ত্রমূলক ছাত্র উত্থান’ হিসেবে। তিনি বলেন, ‘আমি খুবই ভাগ্যবান, সেদিন আমার বেঁচে থাকার কথা ছিল না। মৃত্যু থেকে অনেক কাছে ছিলাম।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকায় জাতীয় সংসদ এলাকায় যে বাসায় তিনি থাকতেন, সেখান থেকে পাশের আরেকটি বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি এবং তার স্ত্রী ইসরাতুন্নেছা কাদের। চারদিক থেকে মিছিল আসছিল। শুরুতে মিছিলগুলো গণভবনকেন্দ্রিক থাকলেও পরে সংসদ এলাকাতেও তা ছড়িয়ে পড়ে, যা দেখে অবাক হওয়ার কথা বলেছেন কাদের। তার ভাষায়, সেটা কোনো রাজনৈতিক অভ্যুত্থান নয়, ‘লুটপাটের অভ্যুত্থান’ ছিল।

বাথরুমে ৫ ঘণ্টা

তিনি বলেন, ‘আমি যে বাসাটায় ছিলাম, তারা সে বাসাতেও হামলা করে। তবে তারা জানতো না যে সেখানে আমি আছি। আমার বাসায় তারা লুটপাট করেছে। কিন্তু যে বাসায় আমি গিয়ে আশ্রয় নিলাম, সেখানে তারা হামলা করবে এটা আমি ভাবতে পারিনি। কিন্তু সেখানেও দেখলাম যে অনেক লোকজন ঢুকে পড়ে এবং তারা ভাঙচুর-লুটপাট করতে থাকে। আমি আমার স্ত্রীসহ আমরা বাথরুমে ঢুকে অনেকক্ষণ ছিলাম, প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। তারপর একটা পর্যায়ে এরা তো ওই বাথরুমের ভেতর, সেখানেও কমোড, বেসিন এগুলো তো লুটপাট করেছে সবই।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রথমত তাদেরকে আমার ওয়াইফ, সে বাথরুমের মুখে দাঁড়িয়ে বারবার বলছিল যে আমি অসুস্থ, এ কথা বলে তাদের ফিরিয়েছে। একটা পর্যায়ে তারা বাথরুমে যেগুলো আছে সেগুলো লুট করার জন্য জোরপূর্বক প্রবেশের হুমকি দেয়। সে সময় আমার ওয়াইফ জিজ্ঞেস করে যে কী করব? আমি বলি খুলে দাও, যাও। তারপরে সাত-আট জন ছেলে ঢুকলো। তারা খুবই আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভঙ্গি নিয়ে। তখন হঠাৎ তারা আমার দিকে তাকায়। আমার দিকে তাকিয়ে বলে ‘নেত্রী চলে গেল, আপনি যাননি কেন’। আমি কিছু বলছিলাম না।’

আমার ভাগ্য

কীভাবে সেখান থেকে বের হলেন, সেই বর্ণনা দিতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এরপর এরা এদের একটা শার্ট, এদের ওই ব্যাজ, লাল পতাকা শোভিত ব্যাজ লাগিয়ে আবার কালো একটা মুখে একটা মাস্ক দিয়ে আমাকে হাঁটতে হাঁটতে সংসদ এলাকা থেকে বড় রাস্তায় গণভবন অভিমুখী রাস্তায়, ওখানে নিয়ে যায়। হঠাৎ করে কোথা থেকে একটা ট্যাক্সি আসে। ইজিবাইক। সেটা খালি ছিল। ওখানে কোনো গাড়ি-ঘোড়া কিছুই ছিল না। ওটা হঠাৎ করে কেন যেন এসে পড়লো। হয়তো আমার ভাগ্য। এরা দু’জনে আমাকে নিয়ে আমার ওয়াইফকে নিয়ে ওটাতে উঠল। আর বলতে লাগল...পথে তো অসংখ্য মানুষ, চেকআপ সব জায়গায়; এরা বলতে লাগল যে ‘আমাদের চাচা-চাচি অসুস্থ। হাসপাতালে নিচ্ছি। ডিস্টার্ব করবা না।’ এই করে করে নিয়ে গেল অনেক দূরে একটা জায়গায়।”

এরপর ওবায়দুল কাদের কোথায় ছিলেন, তা জানতে চেয়েছিল দ্য ওয়াল। জবাবে তিনি বলেন, তিন মাসের মতো তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন।

*ভুল-ত্রুটি*

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদের দায় নিচ্ছেন কি না, তা জানতে চেয়েছিল দ্য ওয়াল। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, সেভাবে আমি কাজ করেছি। এখন জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে আমার ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। আই এম নট ইমিউন ফ্রম মিস্টেকস। মানুষের ভুল হবে। সে ভুল-ত্রুটি আমারও থাকতে পারে।’ নির্বাচনে অনিয়ম, মানবাধিকার হরণ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, দুর্নীতি- ইত্যাদি নানা অভিযোগ আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে রয়েছে। এত বড় ঘটনার পর আওয়ামী লীগ ভুল স্বীকার বা দুঃখ প্রকাশ করেনি। এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন অমল সরকার। জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে যা কিছু দিয়েছে, শেখ হাসিনা যা কিছু করেছেন, তার ‘কোনো তুলনা হয় না’।

*আবার ক্ষমতায়*

অমল সরকারের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা আবার দেশে ফিরবেন, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরবে, শেখ হাসিনা আবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন- এ বিষয়ে তিনি ‘শতভাগ আশাবাদী’। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর ভারত ছাড়া অন্য কোনো দেশ যে সেভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়নি, সেটা ওবায়দুল কাদেরকে মনে করিয়ে দেন অমল সরকার।

কাদের তখন বলেন, ‘ভারত আমাদের দুঃসময়ের বিশ্বস্ত বন্ধু, সংকটে আমরা বারবার ভারতের কাছে ছুটেছি। অন্য কোনো দেশের সঙ্গে আমাদের কোনো বৈরিতা নেই। আমরা কারো বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য দিচ্ছি না, কারো সমালোচনা করছি না।’ কাদের আরও বলেন, ‘এখন আমাদের দেশকে, যেখান থেকে আমরা বাংলাদেশে স্থানচ্যুত হয়েছি, যেখান থেকে আমরা দেশের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি, সেই শিকড়ে আমাদের ফিরে যেতে হবে। এই আমাদের চিন্তা।’

অমল সরকার তখন বলেন, ‘কিন্তু তার জন্য তো মানে দেশবাসীর কাছে ন্যূনতম নিজেদের ভুল স্বীকার করতে হবে...।’ জবাবে কাদের বলেন, ‘ভারতে বসে আমি এ ক্ষমা প্রার্থনা কেন করব। আমি দেশে গিয়ে আমার ভুলের জন্য...আমার ভুল-ত্রুটি হলে সেটার জন্য আমাদের নেত্রী আছেন, তিনিই দেশবাসীকে বলবেন। এখান থেকে বলা কি ঠিক?’

back to top