চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পশ্চাৎভূমি বা হিন্টারল্যান্ড হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। ওই অঞ্চলের পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হতে পারে। এমনকি সেখান থেকে কাঁচামাল এনে বাংলাদেশে মূল্য সংযোজন করেও রপ্তানি করা যেতে পারে। এ জন্যই আমরা চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে পরিকল্পনা করছি, প্রকল্প নিয়েছি। এতে বাংলাদেশের অনেক সুবিধা হবে।
সোমবার,( ২৬ মে ২০২৫) রাজধানীর বনানীতে অর্থনৈতিক করিডর ও দেশের অবকাঠামোর উন্নয়ন নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় আলোচনা সভাটি আয়োজন করেছে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশ। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের সম্পদ। ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে অনেক বাঁশ, বেতসহ অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। সেগুলো আমরা চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি সুযোগ করে দিতে পারি। সবচেয়ে ভালো হয়, সেই কাঁচামালগুলো চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করা গেলে। তাতে দুই দেশের জন্যই ভালো হবে।’
তবে এ জন্য অনুকূল ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশ আগে তৈরি করতে হবে বলে জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সেটি করা গেলে এ অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত সুবিধাজনক জায়গায় হতে পারে। এ জন্যই আমরা চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে পরিকল্পনা করছি, প্রকল্প নিয়েছি। করিডরের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। তবে এর আগে দেশের অভ্যন্তরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক করতে হবে। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে অপব্যয়ের প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না।’
পরিকল্পনা উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘উত্তরাধিকার সূত্রে অসংখ্য প্রকল্প আমরা পেয়েছি। আমরা এ বছর যে উন্নয়ন বাজেট করতে যাচ্ছি, সেখানে প্রায় ১ হাজার ২০০টির মতো প্রকল্প রয়েছে। এগুলোর ৯৮ থেকে ৯৯ শতাংশই বিগত সরকারের সময়ে নেয়া প্রকল্প। এসব প্রকল্পে বরাদ্দ করতে গিয়েই আমাদের অর্থ চলে যাচ্ছে। ফলে নতুন প্রকল্প গ্রহণ অন্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর সুযোগ সীমিত। ঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করে অতীতে অনেক প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। যেমন গাজীপুর থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ নথিপত্রে ৯৫-৯৮ শতাংশ শেষ দেখানো হয়েছে। কিন্তু এটি ভুলভাবে নকশা করা হয়েছিল। প্রকল্পটি ৩ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ নিয়ে শুরু হয়েছিল। কিন্তু নকশায় ত্রুটির কারণে প্রকল্পটি শেষ করতে এখন আরও তিন হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে।’
পরিকল্পনা উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এ ধরনের আরও প্রকল্প রয়েছে। যেমন ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙা পর্যন্ত একটি বিশ্বমানের এক্সপ্রেসওয়ে করা হয়েছে। কিন্তু ভাঙ্গার পরে আর যাওয়ার জায়গা নেই। পদ্মা সেতু হওয়ায় যাত্রীদের পারাপারে অনেক সুবিধা হয়েছে। কিন্তু এটি তৈরির খরচ বিবেচনায় ওই অঞ্চলে সেভাবে বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হয়নি।’
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা ছাড়া আমরা সামনের দিকে এগোতে পারবো না, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং আমাদের সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে। এলডিসি উত্তরণের জন্য আরও সময় নেয়া উচিত, নাকি এখনই করা উচিত এ নিয়ে নানা মত রয়েছে, অনেক ভুল ধারণাও রয়েছে।’
প্যানেল আলোচনায় সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘আমরা প্রায় সময় বড় অবকাঠামোকে অগ্রাধিকার দিই। কিন্তু ব্যবসার পরিবেশ উন্নত না করে, শুধু অবকাঠামো দিয়ে সামনে আগানো যাবে না। আমাদের রপ্তানি খাত শুধু তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভর করে আছে। অথচ দশকের পর দশক ধরে চামড়া খাতে সমস্যা সমাধান হয়নি।’ দেশে রপ্তানিমুখী বিনিয়োগ আকর্ষণ বাড়ানো আবশ্যক বলে জানান তিনি।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, ‘গ্যাসের সমস্যার কারণে বিদ্যমান কারখানাই চালাতে পারছি না, সেখানে ব্যবসা সম্প্রসারণ বা নতুন বিনিয়োগ কী করে আসবে।’
অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি ব্যবসা সহজীকরণের কথা বলেন এইচএসবিসি বাংলাদেশের সিইও মো. মাহবুব উর রহমান। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘দেশে নতুন বিনিয়োগ আসছে না বললেই চলে, যা আসছে তার বেশির ভাগই পুনর্বিনিয়োগ।’
সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পশ্চাৎভূমি বা হিন্টারল্যান্ড হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। ওই অঞ্চলের পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হতে পারে। এমনকি সেখান থেকে কাঁচামাল এনে বাংলাদেশে মূল্য সংযোজন করেও রপ্তানি করা যেতে পারে। এ জন্যই আমরা চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে পরিকল্পনা করছি, প্রকল্প নিয়েছি। এতে বাংলাদেশের অনেক সুবিধা হবে।
সোমবার,( ২৬ মে ২০২৫) রাজধানীর বনানীতে অর্থনৈতিক করিডর ও দেশের অবকাঠামোর উন্নয়ন নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় আলোচনা সভাটি আয়োজন করেছে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশ। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের সম্পদ। ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে অনেক বাঁশ, বেতসহ অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। সেগুলো আমরা চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি সুযোগ করে দিতে পারি। সবচেয়ে ভালো হয়, সেই কাঁচামালগুলো চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করা গেলে। তাতে দুই দেশের জন্যই ভালো হবে।’
তবে এ জন্য অনুকূল ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশ আগে তৈরি করতে হবে বলে জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সেটি করা গেলে এ অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত সুবিধাজনক জায়গায় হতে পারে। এ জন্যই আমরা চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে পরিকল্পনা করছি, প্রকল্প নিয়েছি। করিডরের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। তবে এর আগে দেশের অভ্যন্তরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক করতে হবে। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে অপব্যয়ের প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না।’
পরিকল্পনা উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘উত্তরাধিকার সূত্রে অসংখ্য প্রকল্প আমরা পেয়েছি। আমরা এ বছর যে উন্নয়ন বাজেট করতে যাচ্ছি, সেখানে প্রায় ১ হাজার ২০০টির মতো প্রকল্প রয়েছে। এগুলোর ৯৮ থেকে ৯৯ শতাংশই বিগত সরকারের সময়ে নেয়া প্রকল্প। এসব প্রকল্পে বরাদ্দ করতে গিয়েই আমাদের অর্থ চলে যাচ্ছে। ফলে নতুন প্রকল্প গ্রহণ অন্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর সুযোগ সীমিত। ঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করে অতীতে অনেক প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। যেমন গাজীপুর থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ নথিপত্রে ৯৫-৯৮ শতাংশ শেষ দেখানো হয়েছে। কিন্তু এটি ভুলভাবে নকশা করা হয়েছিল। প্রকল্পটি ৩ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ নিয়ে শুরু হয়েছিল। কিন্তু নকশায় ত্রুটির কারণে প্রকল্পটি শেষ করতে এখন আরও তিন হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে।’
পরিকল্পনা উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এ ধরনের আরও প্রকল্প রয়েছে। যেমন ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙা পর্যন্ত একটি বিশ্বমানের এক্সপ্রেসওয়ে করা হয়েছে। কিন্তু ভাঙ্গার পরে আর যাওয়ার জায়গা নেই। পদ্মা সেতু হওয়ায় যাত্রীদের পারাপারে অনেক সুবিধা হয়েছে। কিন্তু এটি তৈরির খরচ বিবেচনায় ওই অঞ্চলে সেভাবে বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হয়নি।’
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা ছাড়া আমরা সামনের দিকে এগোতে পারবো না, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং আমাদের সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে। এলডিসি উত্তরণের জন্য আরও সময় নেয়া উচিত, নাকি এখনই করা উচিত এ নিয়ে নানা মত রয়েছে, অনেক ভুল ধারণাও রয়েছে।’
প্যানেল আলোচনায় সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘আমরা প্রায় সময় বড় অবকাঠামোকে অগ্রাধিকার দিই। কিন্তু ব্যবসার পরিবেশ উন্নত না করে, শুধু অবকাঠামো দিয়ে সামনে আগানো যাবে না। আমাদের রপ্তানি খাত শুধু তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভর করে আছে। অথচ দশকের পর দশক ধরে চামড়া খাতে সমস্যা সমাধান হয়নি।’ দেশে রপ্তানিমুখী বিনিয়োগ আকর্ষণ বাড়ানো আবশ্যক বলে জানান তিনি।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, ‘গ্যাসের সমস্যার কারণে বিদ্যমান কারখানাই চালাতে পারছি না, সেখানে ব্যবসা সম্প্রসারণ বা নতুন বিনিয়োগ কী করে আসবে।’
অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি ব্যবসা সহজীকরণের কথা বলেন এইচএসবিসি বাংলাদেশের সিইও মো. মাহবুব উর রহমান। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘দেশে নতুন বিনিয়োগ আসছে না বললেই চলে, যা আসছে তার বেশির ভাগই পুনর্বিনিয়োগ।’