alt

জাতীয়

সামরিক কর্তারা শেখ হাসিনাকে ‘ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন’: ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

গণ–অভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ৫ আগস্ট সকালে গণভবনে সামরিক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তখন রেগে গিয়ে তিনি (শেখ হাসিনা) বলেছিলেন, ‘তাহলে তোমরা আমাকে গুলি করে মেরে ফেলো, গণভবনে কবর দিয়ে দাও।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে এ তথ্য জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত রোববার ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করেন চিফ প্রসিকিউটর। তিনি শুনানিতে ৪ ও ৫ আগস্টের কিছু ঘটনাবলি তুলে ধরেন, যার বর্ণনা আনুষ্ঠানিক অভিযোগেও উল্লেখ রয়েছে।

শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের ওই সময়ে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন জাতীয় সংসদের তৎকালীন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। তবে ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা এর বিরোধিতা করেন।

গত বছরের ৪ আগস্ট রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠক খুবই ‘উত্তেজনাপূর্ণ ও ভয়ংকর’ ছিল বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন তাজুল ইসলাম। সেই রাতে শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী কয়েকজন মন্ত্রী ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। বৈঠকে রাগারাগি ও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।

ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, সেদিন (৪ আগস্ট) রাত ১২টা থেকে সোয়া ১২টার দিকে তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টি তোলেন তৎকালীন প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। এতে শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ হন এবং বলেন, যা হওয়ার হবে, তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন না। তিনি সেনাপ্রধানকে মেরুদণ্ড শক্ত করে কঠোর হয়ে বিক্ষোভ দমনের নির্দেশ দেন।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, শেখ হাসিনার ওই বক্তব্যের পর তারিক আহমেদ সিদ্দিক বলেছিলেন, সেনাবাহিনী গুলি চালিয়ে কিছু লোককে মেরে ফেললে বিক্ষোভ এমনিতেই দমন হয়ে যাবে। এ সময় তারিক আহমেদ সিদ্দিক বিমানবাহিনীকে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর কথা বলেন। তবে হেলিকপ্টার থেকে গুলির কথা বলায় বিমানবাহিনীর প্রধান ভীষণ রেগে যান। শেখ হাসিনার উদ্দেশে বিমানবাহিনীর প্রধান বলেন, ‘তিনি (তারিক আহমেদ সিদ্দিক) আপনাকে ডুবিয়েছে এবং আরও ডুবাবে।’

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, কঠোর অবস্থানে থাকার জন্য শেখ হাসিনাকে সেই রাতে (৪ আগস্ট) পরামর্শ দিয়েছিলেন ‘গ্যাং অব ফোর’। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। কোনোভাবেই নরম হওয়া যাবে না, এমন পরামর্শ তাঁরা দিয়েছিলেন।

গণভবনে ৫ আগস্ট সকালের একটি বৈঠকের কথাও শুনানিতে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বৈঠকে তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘ওরা ভালো কাজ করছে, সেনাবাহিনী পারবে না কেন?’ তখন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন বলেন, ‘পরিস্থিতি যে পর্যায় গেছে, তাতে পুলিশের পক্ষেও আর বেশি সময় এমন কঠোর অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব না।...অস্ত্র–গোলাবারুদ আর অবশিষ্ট নেই, ফোর্স টায়ার্ড (বাহিনী ক্লান্ত) হয়ে গেছে।’ এরপর সামরিক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ওই বৈঠকের এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা রেগে যান এবং বলেন, ‘তাহলে তোমরা আমাকে গুলি করে মেরে ফেলো এবং গণভবনে কবর দিয়ে দাও।’

ওই বৈঠক থেকে সামরিক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনাকে গণভবনের অন্য একটি কক্ষে নিয়ে যান বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, ওই কক্ষে শেখ হাসিনার কাছে সামগ্রিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা হয় এবং তাঁকে পদত্যাগ করতে আবার অনুরোধ করেন সামরিক কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ডাকে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির কারণে গণভবন অভিমুখে ঢাকার চারপাশ থেকে মিছিল আসছে।

একপর্যায়ে শেখ হাসিনাকে ছোট বোন শেখ রেহানা বোঝানোর চেষ্টা করেন বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, শেখ রেহানা একপর্যায়ে শেখ হাসিনার পা জড়িয়ে ধরেন। কিন্তু শেখ হাসিনা রাজি (পদত্যাগে) হচ্ছিলেন না। পরে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে কথা বলেন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, জয়কে সামরিক কর্মকর্তারা বলেন, প্রাণে বাঁচাতে হলে তাঁর মায়ের পদত্যাগ করা ছাড়া উপায় নেই। সময় গুরুত্বপূর্ণ। আর এখনই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন জয় এবং তাঁর কথায় ক্ষমতা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনা।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, শেখ হাসিনা একটি ভাষণ রের্কড করে টেলিভিশনে প্রচারের ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। তবে সামরিক কর্মকর্তারা তাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

সময়–সংকটের কারণে শেখ হাসিনাকে গোছানোর জন্য ৪৫ মিনিট সময় দেওয়া হয় উল্লেখ করে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, কারণ গণভবন অভিমুখে লাখ লাখ ছাত্র-জনতার মিছিল আসছিল।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ৫ আগস্ট বেলা ১১টায় আইএসপিআর থেকে বিটিভির মহাপরিচালককে জানানো হয়, সেনাপ্রধান বেলা দুইটায় জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন। অবশ্য সেনাপ্রধান বক্তব্য দেন বিকেল চারটায়। সেনাপ্রধানের বক্তব্যের আগে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।

ছবি

জিলহজের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৭ বা ৮ জুন ঈদুল আজহা, ছুটি টানা ১০ দিন

সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ: আইজিপি

ঢাবির দুই শিক্ষার্থীকে মারধর: তিন ব্যবসায়ী রিমান্ডে

এনসিপির সাবেক নেতা ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টার দুই পিও’র দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ট্যানারি মালিকদের কাছে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের পাওনা ২৫ কোটি টাকা

দুই যুবদল নেতাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা, নাম প্রত্যাহারের দাবিতে থানা ঘেরাও

ছবি

উত্তম কৃষি চর্চা পদ্ধতিতে চাষ, বিষমুক্ত আম চাষে এগিয়ে যাচ্ছে কৃষি

ছবি

রাস্তা আটকে ইশরাক সমর্থকদের বিক্ষোভ, যানজটে নাকাল পথযাত্রী

‘ইলেকট্রিক শক’ মেশিন দেখতে চাওয়ায় সাম্যকে ছুরিকাঘাতে হত্যা: ডিএমপি কমিশনার

ছবি

টানা ৭ দিন ধরে শহীদ মিনারে আন্দোলনে পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরা

মিরপুরে প্রকাশ্যে গুলি করে ২২ লাখ টাকা ছিনতাই

ছবি

সেনা অভিযানে ‘শীর্ষ অপরাধী’ সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ গ্রেপ্তার

পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরা দেশে ‘অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির’ চেষ্টা করছে: মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি

বিনা শর্তে ক্ষমা চাইলেন জামায়াতের আমির শফিকুর

ছবি

নির্বাচন বিলম্বিত করতে কিছু দৃশ্যপট তৈরি করা হচ্ছে: বিএনপি

সেনাপ্রধানের সঙ্গে জামায়াত নেতাদের সাক্ষাৎ

ছবি

মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল, জামায়াত নেতা আজহার ‘বেকসুর’ খালাস

ছবি

‘কড়া’ নিরাপত্তার মধ্যে মঙ্গলবার ও সচিবালয়ে কর্মচারীদের বিক্ষোভ

ছবি

জাপান সফরে এমআইডিআই প্রকল্পে অর্থায়ন নিশ্চিত করবেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

সারা দেশে ২৫টি ক্যাডার কর্মকর্তাদের ‘কলম বিরতি’ কর্মসূচি পালন

ছবি

ভারতের প্রতি বাংলাদেশিদের প্রোপার চ্যানেলে পাঠানোর আহ্বান জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সচিবালয়ের বাইরে কড়া নিরাপত্তা, ভেতরে কর্মচারীদের বিক্ষোভ

ছবি

জামায়াতের আজহার খালাস: ‘ন্যায়বিচারের’ সুযোগ তৈরী করেছে জুলাই আন্দোলন, বললেন উপদেষ্টা আসিফ

ছবি

কোন যুক্তিতে আজহারুলের রায়? কী বলছেন তার আইনজীবী

ছবি

কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও সচিবালয়ে চতুর্থ দিনের মতো কর্মচারীদের বিক্ষোভ

ছবি

জয়কে ‘অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা’ মামলায় শফিক রেহমান খালাস

ছবি

যুদ্ধাপরাধ: জামায়াত নেতা আজহার খালাস, মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল

ছবি

সচিবালয় ঘিরে কড়া নিরাপত্তা, সোয়াট ও বিজিবি মোতায়েন

জুনের প্রথম সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফায় আলোচনা হবে

ভারি বৃষ্টি ও ভূমিধসের আভাস আবহাওয়া অধিদপ্তরের

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ

‘বাস বিক্রি ও সুদের টাকার ঝামেলায় রাইদা ডিপোর মালিককে হত্যা’

মহাসড়কে কাল থেকে বাড়তি নিরাপত্তা শুরু

দেশের সুবিধার জন্যেই চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে পরিকল্পনা: উপদেষ্টা

ঢাবি উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে ছাত্রদলের অবস্থান

ছবি

হাতির আবাসস্থল দখল নিয়ে মানুষ ও হাতির মধ্যে দ্বন্দ্ব

tab

জাতীয়

সামরিক কর্তারা শেখ হাসিনাকে ‘ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন’: ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

গণ–অভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ৫ আগস্ট সকালে গণভবনে সামরিক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তখন রেগে গিয়ে তিনি (শেখ হাসিনা) বলেছিলেন, ‘তাহলে তোমরা আমাকে গুলি করে মেরে ফেলো, গণভবনে কবর দিয়ে দাও।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে এ তথ্য জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত রোববার ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করেন চিফ প্রসিকিউটর। তিনি শুনানিতে ৪ ও ৫ আগস্টের কিছু ঘটনাবলি তুলে ধরেন, যার বর্ণনা আনুষ্ঠানিক অভিযোগেও উল্লেখ রয়েছে।

শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের ওই সময়ে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন জাতীয় সংসদের তৎকালীন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। তবে ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা এর বিরোধিতা করেন।

গত বছরের ৪ আগস্ট রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠক খুবই ‘উত্তেজনাপূর্ণ ও ভয়ংকর’ ছিল বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন তাজুল ইসলাম। সেই রাতে শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী কয়েকজন মন্ত্রী ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। বৈঠকে রাগারাগি ও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।

ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, সেদিন (৪ আগস্ট) রাত ১২টা থেকে সোয়া ১২টার দিকে তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টি তোলেন তৎকালীন প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। এতে শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ হন এবং বলেন, যা হওয়ার হবে, তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন না। তিনি সেনাপ্রধানকে মেরুদণ্ড শক্ত করে কঠোর হয়ে বিক্ষোভ দমনের নির্দেশ দেন।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, শেখ হাসিনার ওই বক্তব্যের পর তারিক আহমেদ সিদ্দিক বলেছিলেন, সেনাবাহিনী গুলি চালিয়ে কিছু লোককে মেরে ফেললে বিক্ষোভ এমনিতেই দমন হয়ে যাবে। এ সময় তারিক আহমেদ সিদ্দিক বিমানবাহিনীকে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর কথা বলেন। তবে হেলিকপ্টার থেকে গুলির কথা বলায় বিমানবাহিনীর প্রধান ভীষণ রেগে যান। শেখ হাসিনার উদ্দেশে বিমানবাহিনীর প্রধান বলেন, ‘তিনি (তারিক আহমেদ সিদ্দিক) আপনাকে ডুবিয়েছে এবং আরও ডুবাবে।’

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, কঠোর অবস্থানে থাকার জন্য শেখ হাসিনাকে সেই রাতে (৪ আগস্ট) পরামর্শ দিয়েছিলেন ‘গ্যাং অব ফোর’। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। কোনোভাবেই নরম হওয়া যাবে না, এমন পরামর্শ তাঁরা দিয়েছিলেন।

গণভবনে ৫ আগস্ট সকালের একটি বৈঠকের কথাও শুনানিতে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বৈঠকে তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘ওরা ভালো কাজ করছে, সেনাবাহিনী পারবে না কেন?’ তখন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন বলেন, ‘পরিস্থিতি যে পর্যায় গেছে, তাতে পুলিশের পক্ষেও আর বেশি সময় এমন কঠোর অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব না।...অস্ত্র–গোলাবারুদ আর অবশিষ্ট নেই, ফোর্স টায়ার্ড (বাহিনী ক্লান্ত) হয়ে গেছে।’ এরপর সামরিক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ওই বৈঠকের এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা রেগে যান এবং বলেন, ‘তাহলে তোমরা আমাকে গুলি করে মেরে ফেলো এবং গণভবনে কবর দিয়ে দাও।’

ওই বৈঠক থেকে সামরিক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনাকে গণভবনের অন্য একটি কক্ষে নিয়ে যান বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, ওই কক্ষে শেখ হাসিনার কাছে সামগ্রিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা হয় এবং তাঁকে পদত্যাগ করতে আবার অনুরোধ করেন সামরিক কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ডাকে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির কারণে গণভবন অভিমুখে ঢাকার চারপাশ থেকে মিছিল আসছে।

একপর্যায়ে শেখ হাসিনাকে ছোট বোন শেখ রেহানা বোঝানোর চেষ্টা করেন বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, শেখ রেহানা একপর্যায়ে শেখ হাসিনার পা জড়িয়ে ধরেন। কিন্তু শেখ হাসিনা রাজি (পদত্যাগে) হচ্ছিলেন না। পরে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে কথা বলেন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, জয়কে সামরিক কর্মকর্তারা বলেন, প্রাণে বাঁচাতে হলে তাঁর মায়ের পদত্যাগ করা ছাড়া উপায় নেই। সময় গুরুত্বপূর্ণ। আর এখনই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন জয় এবং তাঁর কথায় ক্ষমতা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনা।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, শেখ হাসিনা একটি ভাষণ রের্কড করে টেলিভিশনে প্রচারের ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। তবে সামরিক কর্মকর্তারা তাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

সময়–সংকটের কারণে শেখ হাসিনাকে গোছানোর জন্য ৪৫ মিনিট সময় দেওয়া হয় উল্লেখ করে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, কারণ গণভবন অভিমুখে লাখ লাখ ছাত্র-জনতার মিছিল আসছিল।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ৫ আগস্ট বেলা ১১টায় আইএসপিআর থেকে বিটিভির মহাপরিচালককে জানানো হয়, সেনাপ্রধান বেলা দুইটায় জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন। অবশ্য সেনাপ্রধান বক্তব্য দেন বিকেল চারটায়। সেনাপ্রধানের বক্তব্যের আগে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।

back to top