চাকরির নতুন অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে অনড় সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মঙ্গলবার ও তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। তবে আজ কর্মসূচি স্থগিত -সংবাদ
সচিবালয়ে লাগাতার বিক্ষোভের মধ্যে মঙ্গলবার,(২৭ মে ২০২৫) কয়েকজন সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর বুধবারে (আজ) জন্য আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকারি কর্মচারীরা। এর আগে দুপুর পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা।
আর ‘দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিবাদের আমলাদের উৎখাতযাত্রা’ নামের একটি কর্মসূচি নিয়ে গতকাল সোমবার মধ্য রাত থেকে সচিবালয়ের সামনে ফুটপাথে অবস্থান নিয়েছে ‘জুলাই মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠন।
আজ আন্দোলন স্থগিত
বিক্ষোভের বিরুদ্ধে সচিবালয়ের পাশে ‘জুলাই মঞ্চের’ অবস্থান
মঙ্গলবার ভূমি মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকের পর আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতা নুরুল ইসলাম বুধবারের আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আইনের কোনো সংশোধন চাই না। পুরোপুরি বাতিল চাই। আজকের বৈঠকের মাধ্যমে সরকারকে সেই বার্তা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য আগামীকালের কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।’
কর্মচারীদের আরেক নেতা বাদিউল কবীর বলেন, ‘আগামীকাল আইনের প্রতিবাদে আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত থাকবে।’ সরকার সিদ্ধান্ত জানানোর পর আন্দোলন বিষয়ে পরবর্তী ঘোষণা দেয়া হবে জানান তিনি।
বৈঠক শেষে ভূমি সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ বলেন, ‘সচিবালয়ের কর্মচারীরা সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ সম্পূর্ণভাবে বাতিল চেয়েছেন। এই তথ্য আগামীকাল কেবিনেট সচিবকে জানানো হবে। এরপর সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে। এজন্য আগামীকাল (আজ) সচিবালয়ের কর্মচারীরা আন্দোলন স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।’
সচিবালয়ে কর্মচারীদের লাগাতার আন্দোলনের মধ্যে মঙ্গলবার সকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ বেশ কয়েকজন সচিবকে নিয়ে জরুরি সভা করেন। ওই সভায় অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত হয়।
পরে দুপুর ২টায় ভূমি সচিব, পরিসংখ্যান সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
দুই ঘণ্টা বৈঠকের পর ভূমি সচিব বলেন, ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে কয়েকদিন ধরে আন্দোলন হচ্ছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে আজ (মঙ্গলবার) সকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও কয়েকজন সচিবকে নিয়ে একটি মিটিং করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত দেয়।’
বৈঠকের মাধ্যমে আন্দোলনকারীরা কী চান সেই বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে ভূমি সচিব বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা পুরো আইনটি বাতিল চেয়েছে। তারা মনে করে এটি মিসইউজ হতে পারে।’
সচিব সালেহ আহমেদ বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) সকাল ১০টায় আজকের বৈঠকে অংশ নেয়া সব সচিব মিলে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বিষয়টি অবহিত করা হবে। এরপর সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এবং সেটি জানানো হবে। ততক্ষণ আন্দোলনকারীরা তাদের আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদন হয়। এর পর গত রোববার এর অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
কর্মচারীদের অভিযোগ, সাড়ে চার দশক আগের বিশেষ বিধানের কিছু ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন ধারা’ সংযোজন করে অধ্যাদেশটি করা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় খসড়াটি অনুমোদনের পর থেকেই এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-মিছিল করে আসছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা।
এর মধ্যেই গত রোববার সন্ধ্যায় ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে সরকার। এতে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন কর্মচারীরা। এ অবস্থায় অধ্যাদেশটি প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারী মিছিল করে সচিবালয় চত্বরের বাদামতলায় জমায়েত হন। সেখানে দিনব্যাপী বিক্ষোভ করেন।
সংশোধিত অধ্যাদেশে পুরনো আইনের সঙ্গে ‘৩৭ক’ নামের আরেকটি ধারা সংযোজন করা হয়। এতে একজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে দুই দফায় সাত দিন করে নোটিসের পর দায়ী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা রাখার বিধান রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশে ‘আচরণ বা দ- সংক্রান্ত’ বিশেষ বিধানে বলা হয়েছেÑ কেউ যদি এমন কাজ করে যা অনানুগত্যের শামিল এবং যা অন্য কর্মচারীদের মাঝে অনানুগত্য সৃষ্টি করতে পারে বা শৃঙ্খলা বিঘœ ঘটাতে পারে বা অন্যের কর্তব্য পালনে বাধার সৃষ্টি করতে পারে;
এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে ছুটি ব্যতীত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে। কাউকে কর্মবিরতিতে বাধ্য বা উস্কানি দেয়া, অন্য কর্মচারীকে কাজে বাধা দেয়া হলে; কোনো কর্মচারীকে তার কর্মস্থলে আসতে বা কাজ করতে বাধা দেয়া হলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হবে।
এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে পদাবনতি বা গ্রেড অবনতি, চাকরি থেকে অপসারণ কিংবা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।
এসব অসদাচরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গঠন, সাত দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ জানিয়ে জবাব না দিলে আবার সাত দিনের নোটিস দেয়ার পর তা বিবেচনা করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর আপিল রাখার সুযোগ রয়েছে। দ-ের নোটিস হাতে পাওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করা যাবে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সরকার প্রয়োজন মনে করছে বলেই এ আইন করছে।
বিক্ষোভের বিরুদ্ধে সচিবালয়ের বিপরীত পাশে ‘জুলাই মঞ্চের’ অবস্থান:
সচিবালয় ও এনবিআরসহ প্রশাসনের সব স্তর থেকে ‘দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিবাদের আমলাদের উৎখাতযাত্রা’ নামের একটি কর্মসূচি নিয়ে গত সোমবার মধ্য রাত থেকে সচিবালয়ের উল্টো দিকে ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তন-সংলগ্ন ফুটপাথে অবস্থান নিয়েছে ‘জুলাই মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠন।
তারা আওয়ামী লীগের ‘চরম দোসর’ হিসেবে ৪৪ জন আমলার নামের তালিকা ছবিসহ প্রকাশ করে সেখানে প্রদর্শন করছে এবং তাদের অপসারণের দাবি জানিয়েছে।
‘কড়া’ নিরাপত্তার মধ্যে বিক্ষোভ:
আন্দোলনকারীরা এই অধ্যাদেশকে ‘নিবর্তনমূলক কালো আইন’ বলছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মঙ্গলবার ও সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ করেছেন কর্মচারীরা।
সচিবালয়ের প্রধান ফটকে বিশেষায়িত বাহিনী ‘সোয়াট’ মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া বিজিবি ও র্যাব মোতায়েন করা হয়। সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
এদিন সচিবালয়ে দর্শনার্থী প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সরকার। বেলা ১টা পর্যন্ত সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদেরও প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার পরে বিএনপি সমর্থিত বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি এবিএম আব্দুস সাত্তার গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে গেলে নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে ঘুরিয়ে দেন।
কর্মচারীদের আজকের বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর বেলা একটার পর সাংবাদিকদের সচিবালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে অনুমোদন দেয়া হয়।
চাকরির নতুন অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে অনড় সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মঙ্গলবার ও তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। তবে আজ কর্মসূচি স্থগিত -সংবাদ
মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
সচিবালয়ে লাগাতার বিক্ষোভের মধ্যে মঙ্গলবার,(২৭ মে ২০২৫) কয়েকজন সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর বুধবারে (আজ) জন্য আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকারি কর্মচারীরা। এর আগে দুপুর পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা।
আর ‘দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিবাদের আমলাদের উৎখাতযাত্রা’ নামের একটি কর্মসূচি নিয়ে গতকাল সোমবার মধ্য রাত থেকে সচিবালয়ের সামনে ফুটপাথে অবস্থান নিয়েছে ‘জুলাই মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠন।
আজ আন্দোলন স্থগিত
বিক্ষোভের বিরুদ্ধে সচিবালয়ের পাশে ‘জুলাই মঞ্চের’ অবস্থান
মঙ্গলবার ভূমি মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকের পর আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতা নুরুল ইসলাম বুধবারের আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আইনের কোনো সংশোধন চাই না। পুরোপুরি বাতিল চাই। আজকের বৈঠকের মাধ্যমে সরকারকে সেই বার্তা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য আগামীকালের কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।’
কর্মচারীদের আরেক নেতা বাদিউল কবীর বলেন, ‘আগামীকাল আইনের প্রতিবাদে আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত থাকবে।’ সরকার সিদ্ধান্ত জানানোর পর আন্দোলন বিষয়ে পরবর্তী ঘোষণা দেয়া হবে জানান তিনি।
বৈঠক শেষে ভূমি সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ বলেন, ‘সচিবালয়ের কর্মচারীরা সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ সম্পূর্ণভাবে বাতিল চেয়েছেন। এই তথ্য আগামীকাল কেবিনেট সচিবকে জানানো হবে। এরপর সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে। এজন্য আগামীকাল (আজ) সচিবালয়ের কর্মচারীরা আন্দোলন স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।’
সচিবালয়ে কর্মচারীদের লাগাতার আন্দোলনের মধ্যে মঙ্গলবার সকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ বেশ কয়েকজন সচিবকে নিয়ে জরুরি সভা করেন। ওই সভায় অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত হয়।
পরে দুপুর ২টায় ভূমি সচিব, পরিসংখ্যান সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
দুই ঘণ্টা বৈঠকের পর ভূমি সচিব বলেন, ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে কয়েকদিন ধরে আন্দোলন হচ্ছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে আজ (মঙ্গলবার) সকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও কয়েকজন সচিবকে নিয়ে একটি মিটিং করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত দেয়।’
বৈঠকের মাধ্যমে আন্দোলনকারীরা কী চান সেই বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে ভূমি সচিব বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা পুরো আইনটি বাতিল চেয়েছে। তারা মনে করে এটি মিসইউজ হতে পারে।’
সচিব সালেহ আহমেদ বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) সকাল ১০টায় আজকের বৈঠকে অংশ নেয়া সব সচিব মিলে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বিষয়টি অবহিত করা হবে। এরপর সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এবং সেটি জানানো হবে। ততক্ষণ আন্দোলনকারীরা তাদের আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদন হয়। এর পর গত রোববার এর অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
কর্মচারীদের অভিযোগ, সাড়ে চার দশক আগের বিশেষ বিধানের কিছু ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন ধারা’ সংযোজন করে অধ্যাদেশটি করা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় খসড়াটি অনুমোদনের পর থেকেই এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-মিছিল করে আসছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা।
এর মধ্যেই গত রোববার সন্ধ্যায় ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে সরকার। এতে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন কর্মচারীরা। এ অবস্থায় অধ্যাদেশটি প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারী মিছিল করে সচিবালয় চত্বরের বাদামতলায় জমায়েত হন। সেখানে দিনব্যাপী বিক্ষোভ করেন।
সংশোধিত অধ্যাদেশে পুরনো আইনের সঙ্গে ‘৩৭ক’ নামের আরেকটি ধারা সংযোজন করা হয়। এতে একজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে দুই দফায় সাত দিন করে নোটিসের পর দায়ী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা রাখার বিধান রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশে ‘আচরণ বা দ- সংক্রান্ত’ বিশেষ বিধানে বলা হয়েছেÑ কেউ যদি এমন কাজ করে যা অনানুগত্যের শামিল এবং যা অন্য কর্মচারীদের মাঝে অনানুগত্য সৃষ্টি করতে পারে বা শৃঙ্খলা বিঘœ ঘটাতে পারে বা অন্যের কর্তব্য পালনে বাধার সৃষ্টি করতে পারে;
এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে ছুটি ব্যতীত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে। কাউকে কর্মবিরতিতে বাধ্য বা উস্কানি দেয়া, অন্য কর্মচারীকে কাজে বাধা দেয়া হলে; কোনো কর্মচারীকে তার কর্মস্থলে আসতে বা কাজ করতে বাধা দেয়া হলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হবে।
এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে পদাবনতি বা গ্রেড অবনতি, চাকরি থেকে অপসারণ কিংবা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।
এসব অসদাচরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গঠন, সাত দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ জানিয়ে জবাব না দিলে আবার সাত দিনের নোটিস দেয়ার পর তা বিবেচনা করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর আপিল রাখার সুযোগ রয়েছে। দ-ের নোটিস হাতে পাওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করা যাবে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সরকার প্রয়োজন মনে করছে বলেই এ আইন করছে।
বিক্ষোভের বিরুদ্ধে সচিবালয়ের বিপরীত পাশে ‘জুলাই মঞ্চের’ অবস্থান:
সচিবালয় ও এনবিআরসহ প্রশাসনের সব স্তর থেকে ‘দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিবাদের আমলাদের উৎখাতযাত্রা’ নামের একটি কর্মসূচি নিয়ে গত সোমবার মধ্য রাত থেকে সচিবালয়ের উল্টো দিকে ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তন-সংলগ্ন ফুটপাথে অবস্থান নিয়েছে ‘জুলাই মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠন।
তারা আওয়ামী লীগের ‘চরম দোসর’ হিসেবে ৪৪ জন আমলার নামের তালিকা ছবিসহ প্রকাশ করে সেখানে প্রদর্শন করছে এবং তাদের অপসারণের দাবি জানিয়েছে।
‘কড়া’ নিরাপত্তার মধ্যে বিক্ষোভ:
আন্দোলনকারীরা এই অধ্যাদেশকে ‘নিবর্তনমূলক কালো আইন’ বলছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মঙ্গলবার ও সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ করেছেন কর্মচারীরা।
সচিবালয়ের প্রধান ফটকে বিশেষায়িত বাহিনী ‘সোয়াট’ মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া বিজিবি ও র্যাব মোতায়েন করা হয়। সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
এদিন সচিবালয়ে দর্শনার্থী প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সরকার। বেলা ১টা পর্যন্ত সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদেরও প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার পরে বিএনপি সমর্থিত বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি এবিএম আব্দুস সাত্তার গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে গেলে নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে ঘুরিয়ে দেন।
কর্মচারীদের আজকের বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর বেলা একটার পর সাংবাদিকদের সচিবালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে অনুমোদন দেয়া হয়।