অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন, হয়রানি বন্ধ, মামলা প্রত্যাহারসহ সাত দফা দাবিতে মঙ্গলবার,(২৭ মে ২০২৫) সপ্তম দিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) কর্মীরা। প্রায় কয়েক হাজার কর্মীর মুহুর্মুহু স্লোগানে সংশ্লিষ্ট এলাকা ছিল উত্তাল। যারা নিজ নিজ কর্মস্থল এলাকায় আছেন তারাও আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন। এ কারণে বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত গ্রাহকসেবা বিঘ্নিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আন্দোলনরতদের দাবি, ‘পবিস কর্মীদের ফ্যাসিবাদী কায়দায় দমন-পীড়নের মাধ্যমে কর্মপরিবেশ অস্থিতিশীলকারী ও অত্যাচারী আরইবি চেয়ারম্যানের অতি দ্রুত অপসারণ করতে হবে।’ তারা বলছেন, ‘টানা সাত দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেলে কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তাই দাবি না মেনে নেয়া পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।’

পবিসের এই আন্দোলনে ইতোমধ্যে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন শুরু করেছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

এর আগে গত বছরের অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। এতে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল ওই সব এলাকার গ্রাহকরা। এবার বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখে কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশন। নিয়মিত সেবা না দিলেও জরুরি সেবা চালু রেখেছে তারা।

দেশে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সরকারি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস)। এসব সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে দুই দফা দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। এখন সাত দফা দাবিতে ৭ দিন ধরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন তারা।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশন থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জরুরি সেবা চালু রেখে মঙ্গলবার থেকে সারাদেশের ৮০টি পবিসে কর্মবিরতি পালন করা হবে। সমিতিতে অবস্থানরত মিটার রিডাররা মঙ্গলবার (২৭ মে) সকাল ৯টায় একযোগে রিডিং বই জমা দিয়ে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। জনদুর্ভোগ বা সেবা বিঘ্নিত করে কর্মসূচি পালন করতে চান না তারা। তাই দাবি মেনে নিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারা বলছেন, অন্যথায় ভবিষ্যতে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন। এতে জনদুর্ভোগ তৈরি হলে এর দায়ভার বিদ্যুৎ

বিভাগসহ সরকারকে বহন করতে হবে।’

গত বছরের শুরু থেকেই দুই দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে আসছিলেন পবিস কর্মীরা। আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়। একপর্যায়ে তাদের একজনের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে গত অক্টোবরে বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেন তারা। এর পর থেকেই কারও কারও বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাসহ বিভিন্নরকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে থাকে আরইবি। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, এখন পর্যন্ত ২৯ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। ৪০ জন সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। ছয় হাজারের বেশি কর্মীকে নিজ এলাকা থেকে দূরের এলাকায় বদলি করা হয়েছে বলেও জানান তারা।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশন জানায়, গত ২৭ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, এক ও অভিন্ন সার্ভিস কোড বাস্তবায়ন করে আরইবি ও সমিতি একীভূত করতে হবে। তবে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে আপত্তি জানায় বিদ্যুৎ বিভাগ। ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বলা হয়। অ্যাসোসিয়েশন বলছে, সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে চলমান মামলা প্রত্যাহার ও চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবিতে গত ২১ জানুয়ারি ও ২৬ এপ্রিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা। এর সঙ্গে ২৮ হাজার ৩০৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বাক্ষর জমা দেয়া হয়। তাদের দাবির মধ্যে আছে, আরইবি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ। এক ও অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আরইবি ও পবিস একীভূত করে অন্য বিতরণ সংস্থার মতো পুনর্গঠন। মিটার রিডার, লাইন শ্রমিক ও পোষ্য কর্মীদের চাকরি নিয়মিত করা।