বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির তিন সংগঠনের আয়োজনে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে’ ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে কথা বলেন তারেক রহমান -সংবাদ
নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে অভিযোগ করে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে। তিনি আরও বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ যদি ক্ষমতায় থাকতে চায়, তাহলে তাদের রাজনীতিতে আসতে হবে। ক্ষমতা ছেড়ে রাজনীতিতে আসতে হবে, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যেতে হবে।
বুধবার,(২৮ মে ২০২৫) বিকেলে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির তিন সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আয়োজনে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে’ ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
ডিসেম্বরের মধ্যেই নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ
সংস্কার, বিচারের কথা বলে নির্বাচন পেছানোর সুযোগ নেই: আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
এই সরকার ঔপনিবেশিক সরকার, বেশিরভাগ বিদেশি নাগরিক: মির্জা আব্বাস
পদত্যাগ নাটক নয়, নির্বাচনের রোডম্যাপ চাই: সালাউদ্দিন আহমেদ
বেলা দুইটার কিছু আগে এই সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল ১০টা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের অসংখ্য নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে জড়ো হতে শুরু করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বিপরীতে তৈরি করা হয় সমাবেশ মঞ্চ। সমাবেশ ঘিরে নয়াপল্টনসহ আশপাশের সড়কগুলোতে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে।
দুপুরের মধ্যে সমাবেশস্থল ও আশপাশের রাস্তা কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ঢাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা ছাড়াও অন্যান্য জেলা থেকেও ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে আসনে স্থানীয় নেতাকার্মীরা। এক সময়, ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল মোড়, পুরানা পল্টন মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে সমাবেশের ব্যাপ্তি।
সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘এই সরকারের কেউ যদি ক্ষমতায় থাকতে চায় বা রাজনীতি করতে চায় তাহলে আপনাদের বলব, ক্ষমতা ছেড়ে রাজনীতিতে আসেন। যদি আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চায়, তাহলে সরকার থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে আসুন, নির্বাচন করুন। যদি
ভবিষ্যতে নির্বাচনে জনগণের রায় পান তাহলে আবার সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করুন।’
সময়ক্ষেপণ ভিন্ন উদ্দেশ্যে
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বলতে চাই, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে। আবারও বলছি, ডিসেম্বরে মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এরই ভিতরে জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে সংস্কার নিয়ে সময়ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভেতরে এবং বাইরে কারও কারও মনে হয় কিছু ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।’
সবাইকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘সবাইকে বলছি, আপনারাও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিন। নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে। অল্প সংস্কার না বেশি সংস্কার এ নিয়ে চলছে টানাপোড়েন।’
তিনি বলেন, ‘পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের কাছে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা কিংবা নির্বাচন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না। সুতরাং সংস্কার ইস্যুর পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃশ্যমান প্রস্তুতি নেয়া উচিত বলে আমরা বিশ্বাস করি বা আমরা মনে করি।’
অতীতের তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করলেও এবার অন্তবর্তীকালীন সরকার দশ মাসেরও সেই নির্বাচন করতে পারছে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
*নতুন প্রজন্মের সাড়ে ৩ কোটি*
নতুন প্রজন্মের প্রায় সাড়ে তিন কোটি নাগরিক যে ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছেন, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘এই নতুন ভোটাররা আজ পর্যন্ত একটি জাতীয় নির্বাচনেও ভোট দিয়ে তাদের নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ পায়নি।’
তারুণ্যের সমাবেশে তিনি বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের প্রিয় ভাই বোনেরা, আজকের এই সমাবেশ, প্রিয় দেশবাসী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আপনারা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান যাতে অনুষ্ঠিত হয়, তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন।’
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনারা জনগণের কাছে যান, তারা কী বলতে চায় তা মন দিয়ে শুনুন। সে অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেন।’
*স্লোগানে মুখরিত নয়াপল্টন*
সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টনের আশপাশে এলাকায় টানানো হয় মাইক। সকাল থেকেই মাইকে ভেসে আসে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে গান। সমাবেশ শুরুর আগে মঞ্চে দেশীয় শিল্পীরা তাদের জনপ্রিয় গান পরিবেশন করেন।
নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ব্যানার, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সংবলিত ফেস্টুন, টি-শার্ট ও বিভিন্ন রঙের ক্যাপ পরে এবং মাথায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা বেঁধে সমাবেশে আসেন। তারা বিভিন্ন স্লোগানে সমাবেশ প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তোলেন। এদিকে সকাল থেকেই নয়াপল্টন এবং এর আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সালাউদ্দিন আহমেদ।
*ইশরাকের শপথে বাধা স্বৈরাচার*
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা দেখেছি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে আজ ইশরাকের শপথে বাধা দেয়া হচ্ছে। ইশরাকের শপথ গ্রহণে বাধা দিয়ে আজ স্বৈরাচারের ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।’
এ সময় নেতাকর্মীদের নিয়ে তারেক রহমান সেøাগান ধরেন- ‘দিল্লি নয় পিন্ডি নয়, নয় অন্য কোনো দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ।’
বিকেল সাড়ে ৩টায় কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। বিকেল ৪টায় লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
দেশের তরুণ প্রজন্মের সামনে দলের রাষ্ট্রচিন্তা, রাজনৈতিক রূপরেখা ও ভবিষ্যৎ কৌশল বক্তব্যে তুলে ধরেন তারেক রহমান। দেশের নারী-পুরুষ সবার উন্নয়নে কর্মমুখী শিক্ষা, গ্রামীণ পর্যায়ে অসচ্ছলদের জন্য ফ্যামিলি কার্ড, কৃষকদের জন্য ফারমার্স কার্ড, বেকারত্ব দূরীকরণে বিভিন্ন সেক্টরকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষায় তরুণ প্রজন্মকে গড়ে তোলা, ই-কমার্স ও আইটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা উঠে আসে তার বক্তব্যে।
জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তিন বছরের কর্মপরিকল্পনা, সরকারি ও প্রাইভেট সেক্টরকে সমন্বয় করা, খাল খনন ও বৃক্ষ রোপণকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথাও বলেন তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি শুরু করেছেন জিয়াউর রহমান। জনগণই বিএনপির মূল ভিত্তি। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশ ও জনগণের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাষ্ট্র গঠন করবে।’
*হেলাফেলা চলবে না*
নির্বাচন নিয়ে হেলাফেলা করা চলবে না, এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনের রোডম্যাপ পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। বিচারের কথা বলে নির্বাচনের রোডম্যাপ পেছানোর কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে নাকি ঐকমত্য হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য না হয়ে থাকলে সেটা করবে জনগণ। ভোট ও ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার সেই সংস্কার করবে।’ বিচার অসম্পূর্ণ থাকলে সেই দায়িত্ব বিএনপি পালন করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সরকারের পচন ধরেছে, এভাবে চললে আ’লীগ যা করেছে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে: মির্জা আব্বাস
*পচন ধরে গেছে*
মির্জা আব্বাস সমাবেশে বলেন, ‘এই সরকারের (অন্তর্বর্তী সরকার) মাথা থেকে পচন ধরেছে, নিচ পর্যন্ত পচে গেছে। এই সরকার যদি এভাবে চালায় আরও, আওয়ামী লীগ যা ক্ষতি করেছে, তার চাইতে অনেক বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে। সে কারণ নির্বাচন অবশ্যই দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যে কোনো দল আসুক, নির্বাচিত সরকারের হাতে এই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখ-তা নিরাপদ থাকবে বলে বিশ্বাস করি।’
মায়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডোর দেয়া নিয়ে কথা হচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এ নিয়ে লাভ-লোকসান দেখার দরকার নাই। আমরা যেমন ছিলাম, তেমন থাকতে চাই।’ অন্তর্বর্তী সরকার একটি ঔপনিবেশিক সরকার, মন্তব্য করেন মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এই সরকারে যারা আছেন, তাদের বেশিরভাগই দেশের নাগরিক নন।’ অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণার দাবি জানান তিনি।
*পদত্যাগ নাটক*
সালাহউদ্দিন আহমেদ সমাবেশে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছিলাম। আমরা তার (অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা) পদত্যাগ চাইনি। কিন্তু তিনি পদত্যাগের নাটক করেছেন। নিরপেক্ষ সরকার, গণতন্ত্র ও নির্বাচনের দাবিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন ও ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। যৌথ সঞ্চালনায় ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।
তরুণদের কাছে টানতে মে মাসজুড়ে কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপির তিন সংগঠন- ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে চারটি বড় বিভাগ ও শহরে দুই দিন করে মোট আট দিন সেমিনার ও সমাবেশ। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা ও বগুড়ায় সেমিনার ও সমাবেশ হয়েছে। সবশেষ আয়োজন ঢাকার নয়াপল্টনে।
বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির তিন সংগঠনের আয়োজনে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে’ ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে কথা বলেন তারেক রহমান -সংবাদ
বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে অভিযোগ করে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে। তিনি আরও বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ যদি ক্ষমতায় থাকতে চায়, তাহলে তাদের রাজনীতিতে আসতে হবে। ক্ষমতা ছেড়ে রাজনীতিতে আসতে হবে, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যেতে হবে।
বুধবার,(২৮ মে ২০২৫) বিকেলে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির তিন সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আয়োজনে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে’ ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
ডিসেম্বরের মধ্যেই নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ
সংস্কার, বিচারের কথা বলে নির্বাচন পেছানোর সুযোগ নেই: আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
এই সরকার ঔপনিবেশিক সরকার, বেশিরভাগ বিদেশি নাগরিক: মির্জা আব্বাস
পদত্যাগ নাটক নয়, নির্বাচনের রোডম্যাপ চাই: সালাউদ্দিন আহমেদ
বেলা দুইটার কিছু আগে এই সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল ১০টা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের অসংখ্য নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে জড়ো হতে শুরু করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বিপরীতে তৈরি করা হয় সমাবেশ মঞ্চ। সমাবেশ ঘিরে নয়াপল্টনসহ আশপাশের সড়কগুলোতে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে।
দুপুরের মধ্যে সমাবেশস্থল ও আশপাশের রাস্তা কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ঢাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা ছাড়াও অন্যান্য জেলা থেকেও ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে আসনে স্থানীয় নেতাকার্মীরা। এক সময়, ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল মোড়, পুরানা পল্টন মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে সমাবেশের ব্যাপ্তি।
সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘এই সরকারের কেউ যদি ক্ষমতায় থাকতে চায় বা রাজনীতি করতে চায় তাহলে আপনাদের বলব, ক্ষমতা ছেড়ে রাজনীতিতে আসেন। যদি আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চায়, তাহলে সরকার থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে আসুন, নির্বাচন করুন। যদি
ভবিষ্যতে নির্বাচনে জনগণের রায় পান তাহলে আবার সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করুন।’
সময়ক্ষেপণ ভিন্ন উদ্দেশ্যে
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বলতে চাই, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে। আবারও বলছি, ডিসেম্বরে মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এরই ভিতরে জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে সংস্কার নিয়ে সময়ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভেতরে এবং বাইরে কারও কারও মনে হয় কিছু ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।’
সবাইকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘সবাইকে বলছি, আপনারাও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিন। নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে। অল্প সংস্কার না বেশি সংস্কার এ নিয়ে চলছে টানাপোড়েন।’
তিনি বলেন, ‘পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের কাছে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা কিংবা নির্বাচন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না। সুতরাং সংস্কার ইস্যুর পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃশ্যমান প্রস্তুতি নেয়া উচিত বলে আমরা বিশ্বাস করি বা আমরা মনে করি।’
অতীতের তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করলেও এবার অন্তবর্তীকালীন সরকার দশ মাসেরও সেই নির্বাচন করতে পারছে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
*নতুন প্রজন্মের সাড়ে ৩ কোটি*
নতুন প্রজন্মের প্রায় সাড়ে তিন কোটি নাগরিক যে ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছেন, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘এই নতুন ভোটাররা আজ পর্যন্ত একটি জাতীয় নির্বাচনেও ভোট দিয়ে তাদের নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ পায়নি।’
তারুণ্যের সমাবেশে তিনি বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের প্রিয় ভাই বোনেরা, আজকের এই সমাবেশ, প্রিয় দেশবাসী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আপনারা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান যাতে অনুষ্ঠিত হয়, তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন।’
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনারা জনগণের কাছে যান, তারা কী বলতে চায় তা মন দিয়ে শুনুন। সে অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেন।’
*স্লোগানে মুখরিত নয়াপল্টন*
সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টনের আশপাশে এলাকায় টানানো হয় মাইক। সকাল থেকেই মাইকে ভেসে আসে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে গান। সমাবেশ শুরুর আগে মঞ্চে দেশীয় শিল্পীরা তাদের জনপ্রিয় গান পরিবেশন করেন।
নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ব্যানার, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সংবলিত ফেস্টুন, টি-শার্ট ও বিভিন্ন রঙের ক্যাপ পরে এবং মাথায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা বেঁধে সমাবেশে আসেন। তারা বিভিন্ন স্লোগানে সমাবেশ প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তোলেন। এদিকে সকাল থেকেই নয়াপল্টন এবং এর আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সালাউদ্দিন আহমেদ।
*ইশরাকের শপথে বাধা স্বৈরাচার*
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা দেখেছি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে আজ ইশরাকের শপথে বাধা দেয়া হচ্ছে। ইশরাকের শপথ গ্রহণে বাধা দিয়ে আজ স্বৈরাচারের ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।’
এ সময় নেতাকর্মীদের নিয়ে তারেক রহমান সেøাগান ধরেন- ‘দিল্লি নয় পিন্ডি নয়, নয় অন্য কোনো দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ।’
বিকেল সাড়ে ৩টায় কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। বিকেল ৪টায় লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
দেশের তরুণ প্রজন্মের সামনে দলের রাষ্ট্রচিন্তা, রাজনৈতিক রূপরেখা ও ভবিষ্যৎ কৌশল বক্তব্যে তুলে ধরেন তারেক রহমান। দেশের নারী-পুরুষ সবার উন্নয়নে কর্মমুখী শিক্ষা, গ্রামীণ পর্যায়ে অসচ্ছলদের জন্য ফ্যামিলি কার্ড, কৃষকদের জন্য ফারমার্স কার্ড, বেকারত্ব দূরীকরণে বিভিন্ন সেক্টরকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষায় তরুণ প্রজন্মকে গড়ে তোলা, ই-কমার্স ও আইটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা উঠে আসে তার বক্তব্যে।
জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তিন বছরের কর্মপরিকল্পনা, সরকারি ও প্রাইভেট সেক্টরকে সমন্বয় করা, খাল খনন ও বৃক্ষ রোপণকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথাও বলেন তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি শুরু করেছেন জিয়াউর রহমান। জনগণই বিএনপির মূল ভিত্তি। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশ ও জনগণের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাষ্ট্র গঠন করবে।’
*হেলাফেলা চলবে না*
নির্বাচন নিয়ে হেলাফেলা করা চলবে না, এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনের রোডম্যাপ পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। বিচারের কথা বলে নির্বাচনের রোডম্যাপ পেছানোর কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে নাকি ঐকমত্য হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য না হয়ে থাকলে সেটা করবে জনগণ। ভোট ও ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার সেই সংস্কার করবে।’ বিচার অসম্পূর্ণ থাকলে সেই দায়িত্ব বিএনপি পালন করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সরকারের পচন ধরেছে, এভাবে চললে আ’লীগ যা করেছে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে: মির্জা আব্বাস
*পচন ধরে গেছে*
মির্জা আব্বাস সমাবেশে বলেন, ‘এই সরকারের (অন্তর্বর্তী সরকার) মাথা থেকে পচন ধরেছে, নিচ পর্যন্ত পচে গেছে। এই সরকার যদি এভাবে চালায় আরও, আওয়ামী লীগ যা ক্ষতি করেছে, তার চাইতে অনেক বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে। সে কারণ নির্বাচন অবশ্যই দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যে কোনো দল আসুক, নির্বাচিত সরকারের হাতে এই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখ-তা নিরাপদ থাকবে বলে বিশ্বাস করি।’
মায়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডোর দেয়া নিয়ে কথা হচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এ নিয়ে লাভ-লোকসান দেখার দরকার নাই। আমরা যেমন ছিলাম, তেমন থাকতে চাই।’ অন্তর্বর্তী সরকার একটি ঔপনিবেশিক সরকার, মন্তব্য করেন মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এই সরকারে যারা আছেন, তাদের বেশিরভাগই দেশের নাগরিক নন।’ অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণার দাবি জানান তিনি।
*পদত্যাগ নাটক*
সালাহউদ্দিন আহমেদ সমাবেশে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছিলাম। আমরা তার (অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা) পদত্যাগ চাইনি। কিন্তু তিনি পদত্যাগের নাটক করেছেন। নিরপেক্ষ সরকার, গণতন্ত্র ও নির্বাচনের দাবিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন ও ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। যৌথ সঞ্চালনায় ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।
তরুণদের কাছে টানতে মে মাসজুড়ে কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপির তিন সংগঠন- ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে চারটি বড় বিভাগ ও শহরে দুই দিন করে মোট আট দিন সেমিনার ও সমাবেশ। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা ও বগুড়ায় সেমিনার ও সমাবেশ হয়েছে। সবশেষ আয়োজন ঢাকার নয়াপল্টনে।