সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে
বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন সচিবালয়ে আন্দোলনরত কর্মচারী নেতারা। তারা ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
বুধবার,(২৮ মে ২০২৫) সচিবালয়ে কর্মচারী ইউনিয়ন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান বাদিউল কবীর।
তারা বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানান তিনি। তবে হাসপাতালসহ অন্যান্য জরুরি সেবার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে আরও কম সময় কর্মবিরতি চলবে বলেও তিনি জানান।
ওই আইন বাতিলের বিষয়ে প্রশাসনের আশ্বাস পেয়েছেন দাবি করে বাদিউল কবীর বলেন, ‘এই কালো আইন সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে মোটামুটি একটা সবুজ সংকেত পেয়েছি। প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরলে উপদেষ্টারা এটা নিয়ে কথা বলবেন।’
আন্দোলনের ‘ফসল’ হিসেবে কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে ‘বিচার বিশ্লেষণ’ শুরু হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আজকে (বুধবার) দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন সচিব মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে কথা বলেছেন। উনারা পরিষ্কার করে কিছু না বললেও আমাদের বুঝতে বাকি নেই।’
ভূমি সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ গতকাল গণমাধ্যমকে জানান, এদিন সকালে তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। জাপান সফর শেষে দেশে ফেরার পর প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিষয়টি তুলে ধরবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ।
সচিব আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাপান থেকে দেশে ফিরলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে। সচিব এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত না হওয়ায় কিছু বলতে পারছেন না।
গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদন হয়। এর পর ২৫ মে-এর অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
কর্মচারীদের অভিযোগ, সাড়ে চার দশক আগের বিশেষ বিধানের কিছু ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন ধারা’ সংযোজন করে অধ্যাদেশটি করা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় খসড়াটি অনুমোদনের পর থেকেই এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-মিছিল করে আসছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা।
এর মধ্যেই গত রোববার সন্ধ্যায় ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে সরকার। এতে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন কর্মচারীরা। এ অবস্থায় অধ্যাদেশটি প্রত্যাহারের দাবিতে গত সোমবার বেলা ১১টায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারী মিছিল করে সচিবালয় চত্বরের বাদামতলায় জমায়েত হন। সেখানে দিনব্যাপী বিক্ষোভ করেন।
সংশোধিত অধ্যাদেশে পুরনো আইনের সঙ্গে ‘৩৭ক’ নামের আরেকটি ধারা সংযোজন করা হয়। এতে একজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে দুই দফায় সাত দিন করে নোটিসের পর দায়ী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা রাখার বিধান রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশে ‘আচরণ বা দণ্ড সংক্রান্ত’ বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে কেউ যদি এমন কাজ করে যা অনানুগত্যের শামিল এবং যা অন্য কর্মচারীদের মাঝে অনানুগত্য সৃষ্টি করতে পারে বা শৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটাতে পারে বা অন্যের কর্তব্য পালনে বাধার সৃষ্টি করতে পারে;
এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে ছুটি ব্যতীত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে। কাউকে কর্মবিরতিতে বাধ্য বা উস্কানি দেয়া, অন্য কর্মচারীকে কাজে বাধা দেয়া হলে; কোনো কর্মচারীকে তার কর্মস্থলে আসতে বা কাজ করতে বাধা দেয়া হলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হবে।
এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে পদাবনতি বা গ্রেড অবনতি, চাকরি থেকে অপসারণ কিংবা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।
এসব অসদাচরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গঠন, সাত দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ জানিয়ে জবাব না দিলে আবার সাত দিনের নোটিস দেয়ার পর তা বিবেচনা করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর আপিল রাখার সুযোগ রয়েছে। দণ্ডের নোটিস হাতে পাওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করা যাবে।
অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের মধ্যে ২৭ মে সকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ বেশ কয়েকজন সচিবকে নিয়ে জরুরি সভা করেন। ওই সভায় অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত হয়।
পরে ভূমি সচিব, পরিসংখ্যান সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, সকল সচিব মিলে বুধবার (গতকাল) সকাল ১০টায় মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বিষয়টি অবহিত করবেন। এরপর সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এবং সেটি জানানো হবে। সচিবদের সঙ্গে বৈঠকের পর গতকালের জন্য আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন কর্মচারী নেতারা।
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে
বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন সচিবালয়ে আন্দোলনরত কর্মচারী নেতারা। তারা ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
বুধবার,(২৮ মে ২০২৫) সচিবালয়ে কর্মচারী ইউনিয়ন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান বাদিউল কবীর।
তারা বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানান তিনি। তবে হাসপাতালসহ অন্যান্য জরুরি সেবার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে আরও কম সময় কর্মবিরতি চলবে বলেও তিনি জানান।
ওই আইন বাতিলের বিষয়ে প্রশাসনের আশ্বাস পেয়েছেন দাবি করে বাদিউল কবীর বলেন, ‘এই কালো আইন সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে মোটামুটি একটা সবুজ সংকেত পেয়েছি। প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরলে উপদেষ্টারা এটা নিয়ে কথা বলবেন।’
আন্দোলনের ‘ফসল’ হিসেবে কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে ‘বিচার বিশ্লেষণ’ শুরু হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আজকে (বুধবার) দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন সচিব মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে কথা বলেছেন। উনারা পরিষ্কার করে কিছু না বললেও আমাদের বুঝতে বাকি নেই।’
ভূমি সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ গতকাল গণমাধ্যমকে জানান, এদিন সকালে তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। জাপান সফর শেষে দেশে ফেরার পর প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিষয়টি তুলে ধরবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ।
সচিব আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাপান থেকে দেশে ফিরলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে। সচিব এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত না হওয়ায় কিছু বলতে পারছেন না।
গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদন হয়। এর পর ২৫ মে-এর অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
কর্মচারীদের অভিযোগ, সাড়ে চার দশক আগের বিশেষ বিধানের কিছু ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন ধারা’ সংযোজন করে অধ্যাদেশটি করা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় খসড়াটি অনুমোদনের পর থেকেই এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-মিছিল করে আসছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা।
এর মধ্যেই গত রোববার সন্ধ্যায় ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে সরকার। এতে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন কর্মচারীরা। এ অবস্থায় অধ্যাদেশটি প্রত্যাহারের দাবিতে গত সোমবার বেলা ১১টায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারী মিছিল করে সচিবালয় চত্বরের বাদামতলায় জমায়েত হন। সেখানে দিনব্যাপী বিক্ষোভ করেন।
সংশোধিত অধ্যাদেশে পুরনো আইনের সঙ্গে ‘৩৭ক’ নামের আরেকটি ধারা সংযোজন করা হয়। এতে একজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে দুই দফায় সাত দিন করে নোটিসের পর দায়ী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা রাখার বিধান রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশে ‘আচরণ বা দণ্ড সংক্রান্ত’ বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে কেউ যদি এমন কাজ করে যা অনানুগত্যের শামিল এবং যা অন্য কর্মচারীদের মাঝে অনানুগত্য সৃষ্টি করতে পারে বা শৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটাতে পারে বা অন্যের কর্তব্য পালনে বাধার সৃষ্টি করতে পারে;
এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে ছুটি ব্যতীত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে। কাউকে কর্মবিরতিতে বাধ্য বা উস্কানি দেয়া, অন্য কর্মচারীকে কাজে বাধা দেয়া হলে; কোনো কর্মচারীকে তার কর্মস্থলে আসতে বা কাজ করতে বাধা দেয়া হলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হবে।
এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে পদাবনতি বা গ্রেড অবনতি, চাকরি থেকে অপসারণ কিংবা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।
এসব অসদাচরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গঠন, সাত দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ জানিয়ে জবাব না দিলে আবার সাত দিনের নোটিস দেয়ার পর তা বিবেচনা করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর আপিল রাখার সুযোগ রয়েছে। দণ্ডের নোটিস হাতে পাওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করা যাবে।
অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের মধ্যে ২৭ মে সকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ বেশ কয়েকজন সচিবকে নিয়ে জরুরি সভা করেন। ওই সভায় অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত হয়।
পরে ভূমি সচিব, পরিসংখ্যান সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, সকল সচিব মিলে বুধবার (গতকাল) সকাল ১০টায় মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বিষয়টি অবহিত করবেন। এরপর সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এবং সেটি জানানো হবে। সচিবদের সঙ্গে বৈঠকের পর গতকালের জন্য আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন কর্মচারী নেতারা।