alt

জাতীয়

সুব্রত বাইন ৮, মোল্লা মাসুদসহ তিনজন ৬ দিনের রিমান্ডে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

রাজধানীর হাতিরঝিল থানার অস্ত্র আইনের মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের ৮ দিন, আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদসহ তিনজনের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বুধবার,(২৮ মে ২০২৫) ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জাকির হোসাইন এ আদেশ দেয়।

প্রসিকিউশন পুলিশের এসআই মোকছেদুল ইসলাম এ তথ্য জানান। রিমান্ডে যাওয়া অপর দুই আসামি হলেন আরাফাত ইবনে নাসির ওরফে শ্যুটার আরাফাত ও এম এ এস শরীফ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার এসআই রিয়াদ আহমেদ তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, ২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী মোল্লা মাসুদসহ ২৩ জনকে শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে এবং তাদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। সুব্রত বাইন সে সময় খুন-ডাকাতি সংঘটনের মধ্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে। আসামিরা বিভিন্ন মামলায় সাজা পেয়ে সাজা ভোগ করা অবস্থায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও সন্ত্রাসী কর্মকা- শুরু করেন।

এ অবস্থায় গত ২৭ মে সেনাবাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, তারা অবৈধ এ অস্ত্র, গুলি ও অন্য সরঞ্জাম অপরাধ ঘটানোর জন্য নিজেদের কাছে রেখেছিলেন। গ্রেপ্তার করা আসামিরা সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ করে আসছে।

প্রাথমিক তদন্তে আসামিদের মামলায় জড়িত থাকার সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তাদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের আরও অনেক সহযোগীকে গ্রেপ্তার এবং আরও বিপুল অস্ত্র-গুলি উদ্ধারের সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করেন তদন্ত কর্মকর্তা। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের পাশাপাশি জামিনের বিরোধিতা করে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আসামিরা জামিনে মুক্তি পেলে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। আসামিদের রিমান্ড আবেদন বাতিল করে জামিন প্রার্থনা করেন তাদের আইনজীবী মজিবুর রহমান। শুনানি শেষে আদালত চারজনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেয়।

সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদসহ চারজনকে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা ও কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ অভিযানে কুষ্টিয়া জেলা থেকে সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোল্লা মাসুদ ওরফে আবু রাসেল মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সুব্রত বাইনের দুই সহযোগী ‘শ্যুটার’ আরাফাত ও শরীফকে। অভিযানে তাদের কাছ থেকে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড গুলি ও একটি স্যাটেলাইট ফোন জব্দ করার কথা জানায় আইএসপিআর। গ্রেপ্তারের পরগত বুধবার তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়।

আইএসপিআর বলছে, এই চারজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন নাশকতার অভিযোগে মামলা রয়েছে। ‘সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ সেভেন স্টার সন্ত্রাসী দলের নেতা এবং তালিকাভুক্ত ‘২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর’ অন্যতম।” পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, হত্যা, চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে।

আদালতের কাঠগড়ায় সুব্রত বাইনের এক বিকেল

রিমান্ড শুনানির আগে আদালতে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন আলোচিত ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ সুব্রত বাইন। সাংবাদিকদের উদ্দেশে আদালতে তিনি বলেছেন,‘সত্য কথা লিখবেন। আমি যা তাই লিখবেন। অন্য কিছু লিখবেন না। হলুদ সাংবাদিকতা যেন না হয়। সাংবাদিকরা ১৯৮৯ সাল থেকে লিখতেছে। কিন্তু জায়গামত পৌঁছাতে পারেনি।’ এরপর সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন থাকলে করতে বলেন সুব্রত। কিন্তু এর মধ্যেই তার সঙ্গে আরেকজন কথা বলতে চান। তখন তাকে থামিয়ে দিয়ে সুব্রত বলেন, ‘যা বলার আমি বলব’।

শুনানি শুরুর আগে সাংবাদিকদের নিয়ে সুব্রত বলেন,‘সাংবাদিকদের রসালো লিখতে লিখতে অভ্যাস হয়ে গেছে। অথচ কারও কাছে কোনো প্রমাণ নাই। বাঁচার জন্য কে কি না করে। কত মানুষ মরে পচে গেছে। ঘাসও পচে গেছে। বেঁচে আছি, আল্লাহ জীবন্ত রেখেছেন।’ এসময় আদালতে তিনি তার আইনজীবীকে খোঁজেন। বলেন, ‘মজিবর ভাই কই। আমার উকিল কই।’

পরে আবার বলেন,‘সাংবাদিকরা কিছু না জেনে লিখে দেয়। আমারও তো পরিবার আছে। কী এফেক্ট পড়ে। কিন্তু আমি কোনো প্রতিবাদ করিনি ১৯৮৭ সাল থেকে।’ তিনি বলেন,‘সাংবাদিকরা এত খবর রাখে, আড়াই বছর আগে আয়না ঘরে রাখে, সেই খবর নাই। এখন আমাকে ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ বানানো হচ্ছে। প্রমাণ দিয়ে দেখান আমি চাঁদাবাজি, ছিনতাই করেছি কিনা। ‘যারা আমার নামে চাঁদাবাজি, ছিনতাই করছে তাদের ধরেন। আমার টাকা থাকলে পত্রিকা অফিস, টিভি অফিস খুলে নিতাম। আমার কোনো পাওয়ার নাই, পাওয়ার দরকারও নাই। পাওয়ার আমার পিছে ঘোরে। সর্বশ্রেষ্ঠ পাওয়ারকে আমি সেজদাহ করি।’

‘৫ অগাস্ট রাতে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয়’

সুব্রতর দাবি, গণআন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলে তাকে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয়। তার আগে তাকে ‘আয়নাঘরে’ রেখে নির্যাতন চালানো হয়। তিনি বলেন,‘২০২২ সালে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে দেশে নিয়ে আসে। আমাকে আয়না ঘরে রাখা হয়। যা কবরের মত। রড দিয়ে পিটিয়েছে। দেখেন আমার মাথায় কী করছে।’ মাথায় হাত দিয়ে দেখাতে দেখাতে তিনি বলেন,‘এখনও বেঁচে আছি। ৫ অগাস্ট রাত ৩টার দিকে আমাকে রাস্তায় ছেড়ে দেয়।’ সুব্রত বাইন ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের সময় অস্ত্র উদ্ধারের কথা জানিয়েছে সেনাবাহিনী। সুব্রতর দাবি, নিজের নিরাপত্তার জন্যেই সঙ্গে অস্ত্র রাখেন।

তার কথায়,‘কে মরতে চায়। ৮৪/৮৫ থেকে আমার শত্রুতা। লিয়াকত, মুরগী মিলন, আমির হোসেন আমু আমার এন্টি (প্রতিপক্ষ) ছিল। তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে এখানে আসছি।

‘আমার নাম বিক্রি করে যারা চাঁদাবাজি করছে। যে চাঁদা চেয়েছে তাকে ধরুন। আরেকজনকে ব্লেম দিয়ে কী লাভ। নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের কাছে প্রত্যাশা, তারা সত্যটা তুলে ধরবেন।’ আদালতে প্রসিকিউশন বিভাগের ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান বলেন, তাদের কাছ থেকে স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। তখন সুব্রত বলেন,‘মোবাইলটা দেখান। চায়না ফোনকে স্যাটেলাইট ফোন বলছে। ওটা সিটিসেল মডেলের চায়না ফোন।’ শুনানি নিয়ে বিচারক সুব্রতসহ চারজনের রিমান্ড আদেশ দেন। এরপর আদালতকে সুব্রত বলেন, ‘আমার নামাজ যেন কাজা না হয়। নামাজের ব্যবস্থা যেন থাকে।’ এসময় বিচারক পুলিশকে বিষয়টি দেখতে বলেন।

১৯৯১ সালে ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ হত্যার মধ্য দিয়ে তার সন্ত্রাস জীবনের উত্থান শুরু হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী ও পুরস্কার ঘোষণার প্রায় দুই বছর পর ২০০৩ সালের দিকে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর তৎপরতা বেড়ে গেলে সুব্রত ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর কলকাতার স্পেশাল টাস্কফোর্স কারাইয়া এলাকা থেকে ২০০৮ সালের ১৩ অক্টোবর সুব্রতকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে কলকাতায় অস্ত্র ও অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলাও হয়। ওই মামলায় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার গা ঢাকা দেন সুব্রত।

এরপর ২০০৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের কর্মকর্তাদের ধাওয়া খেয়ে সুব্রত বাইন নেপাল সীমান্তের কাকরভিটা শহরে ঢুকে পড়েন। পরে নেপালের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের প্রায় তিন বছরের মাথায় ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর সুড়ঙ্গ খুঁড়ে নেপালের কারাগার থেকে পালিয়ে ফের ভারতে অনুপ্রবেশ করেন সুব্রত বাইন। একই বছরের ২৭ নভেম্বর কলকাতার বৌবাজারের একটি বাসা থেকে সুব্রতকে গ্রেপ্তার করে ভারতীয় পুলিশ। সেখানে ফতেহ আলী নাম নিয়ে ছদ্মবেশে অবস্থান করছিলেন তিনি।

ছবি

সব দল নয়, একটি নির্দিষ্ট দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইছে: প্রধান উপদেষ্টা

আরও ৬৮টি সরকারি কলেজের নাম পরিবর্তন

ছবি

আমের বাম্পার ফলন রোয়াংছড়ির মিশ্র বাগানে

লৌহজংয়ের তালতলা-ডহরী খালে চাঁদাবাজি

মেজর সিনহা হত্যা: হাইকোর্টের রায় সোমবার

জুলাই আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলায় জবির সাবেক অধ্যাপক আনোয়ারা কারাগারে

‘বিশেষ কারণে’ হজযাত্রী পরিবহন একদিন সময় বাড়িয়েছে মন্ত্রণালয়

ছবি

বাংলাদেশ থেকে এক লাখ শ্রমিক নেবে জাপান

ছবি

সীমান্ত দিয়ে আরও ৪৩ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারত

জুলাইযোদ্ধা-কর্মচারী সংঘর্ষ: চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে বৃহস্পতিবারও চালু হয়নি সেবা

চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলে ‘ইতিবাচক’ খবরের অপেক্ষায় সচিবালয়ের কর্মচারীরা

গণতন্ত্র পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে: খালেদা জিয়া

ইশরাকের শপথের সিদ্ধান্ত নেবে ইসি: আপিল বিভাগ

ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন করা সম্ভব : তারেক রহমান

ছবি

নিম্নচাপ: উপকূলে প্লাবন, সারাদেশে বৃষ্টি, দুর্ভোগ

ছবি

বৃষ্টি উপেক্ষা করে নগর ভবনে ইশরাক সমর্থকদের বিক্ষোভ

ছবি

ছয় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির ঝুঁকি, বাড়ছে একাধিক নদীর পানি

ছবি

ঈদুল আজহায় পুলিশের ‘নিরাপত্তা পরামর্শ’

বিশেষ বিসিএসে আবেদন ১ জুন থেকে, নিয়োগ পাবেন চিকিৎসক ও ডেন্টাল সার্জন

ছবি

সচিবালয়ে কর্মবিরতির পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

ছবি

বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ শ্রমিক নেবে জাপান

ছবি

জুলাইযোদ্ধা-কর্মচারী সংঘর্ষ: দ্বিতীয় দিনেও চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে বন্ধ চিকিৎসাসেবা

ছবি

পারস্পরিক বৈশ্বিক আস্থা হুমকির মুখে: নিক্কেই ফোরামে অধ্যাপক ইউনূস

ছবি

নয়টি অঞ্চলে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আভাস, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সংকেত

সচিবালয়ে এক ঘণ্টার কর্মবিরতি

ছবি

সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে সারা দিনে ঝরতে পারে বৃষ্টি

প্রতিবাদে চট্টগ্রামে সংঘর্ষ, আহত ৩

নতুন মামলায় গ্রেপ্তার আমু, ইনু ও মেননসহ ১১ জন

বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ: শিগগিরই ‘কঠোর’ কর্মসূচির পরিকল্পনা ২৫ ক্যাডারের

ছবি

গরুর খামার করে স্বাবলম্বী আগৈলঝাড়ার শামিম

আরও ১৩৭ জনকে ঠেলে পাঠালো ভারত

ছবি

‘জুলাই বিপ্লবীদের’ ধন্যবাদ দিলেন ‘মুক্ত-স্বাধীন’ আজহার

ছবি

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়রকে পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ

ছবি

লঘুচাপ: সাগর উত্তাল, ১৯ অঞ্চলে ঝড়ের আভাস

মিরপুরে দম্পতি খুন, ঘটনাস্থল থেকে একজন আটক

tab

জাতীয়

সুব্রত বাইন ৮, মোল্লা মাসুদসহ তিনজন ৬ দিনের রিমান্ডে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

রাজধানীর হাতিরঝিল থানার অস্ত্র আইনের মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের ৮ দিন, আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদসহ তিনজনের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বুধবার,(২৮ মে ২০২৫) ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জাকির হোসাইন এ আদেশ দেয়।

প্রসিকিউশন পুলিশের এসআই মোকছেদুল ইসলাম এ তথ্য জানান। রিমান্ডে যাওয়া অপর দুই আসামি হলেন আরাফাত ইবনে নাসির ওরফে শ্যুটার আরাফাত ও এম এ এস শরীফ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার এসআই রিয়াদ আহমেদ তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, ২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী মোল্লা মাসুদসহ ২৩ জনকে শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে এবং তাদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। সুব্রত বাইন সে সময় খুন-ডাকাতি সংঘটনের মধ্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে। আসামিরা বিভিন্ন মামলায় সাজা পেয়ে সাজা ভোগ করা অবস্থায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও সন্ত্রাসী কর্মকা- শুরু করেন।

এ অবস্থায় গত ২৭ মে সেনাবাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, তারা অবৈধ এ অস্ত্র, গুলি ও অন্য সরঞ্জাম অপরাধ ঘটানোর জন্য নিজেদের কাছে রেখেছিলেন। গ্রেপ্তার করা আসামিরা সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ করে আসছে।

প্রাথমিক তদন্তে আসামিদের মামলায় জড়িত থাকার সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তাদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের আরও অনেক সহযোগীকে গ্রেপ্তার এবং আরও বিপুল অস্ত্র-গুলি উদ্ধারের সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করেন তদন্ত কর্মকর্তা। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের পাশাপাশি জামিনের বিরোধিতা করে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আসামিরা জামিনে মুক্তি পেলে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। আসামিদের রিমান্ড আবেদন বাতিল করে জামিন প্রার্থনা করেন তাদের আইনজীবী মজিবুর রহমান। শুনানি শেষে আদালত চারজনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেয়।

সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদসহ চারজনকে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা ও কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ অভিযানে কুষ্টিয়া জেলা থেকে সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোল্লা মাসুদ ওরফে আবু রাসেল মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সুব্রত বাইনের দুই সহযোগী ‘শ্যুটার’ আরাফাত ও শরীফকে। অভিযানে তাদের কাছ থেকে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড গুলি ও একটি স্যাটেলাইট ফোন জব্দ করার কথা জানায় আইএসপিআর। গ্রেপ্তারের পরগত বুধবার তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়।

আইএসপিআর বলছে, এই চারজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন নাশকতার অভিযোগে মামলা রয়েছে। ‘সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ সেভেন স্টার সন্ত্রাসী দলের নেতা এবং তালিকাভুক্ত ‘২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর’ অন্যতম।” পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, হত্যা, চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে।

আদালতের কাঠগড়ায় সুব্রত বাইনের এক বিকেল

রিমান্ড শুনানির আগে আদালতে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন আলোচিত ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ সুব্রত বাইন। সাংবাদিকদের উদ্দেশে আদালতে তিনি বলেছেন,‘সত্য কথা লিখবেন। আমি যা তাই লিখবেন। অন্য কিছু লিখবেন না। হলুদ সাংবাদিকতা যেন না হয়। সাংবাদিকরা ১৯৮৯ সাল থেকে লিখতেছে। কিন্তু জায়গামত পৌঁছাতে পারেনি।’ এরপর সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন থাকলে করতে বলেন সুব্রত। কিন্তু এর মধ্যেই তার সঙ্গে আরেকজন কথা বলতে চান। তখন তাকে থামিয়ে দিয়ে সুব্রত বলেন, ‘যা বলার আমি বলব’।

শুনানি শুরুর আগে সাংবাদিকদের নিয়ে সুব্রত বলেন,‘সাংবাদিকদের রসালো লিখতে লিখতে অভ্যাস হয়ে গেছে। অথচ কারও কাছে কোনো প্রমাণ নাই। বাঁচার জন্য কে কি না করে। কত মানুষ মরে পচে গেছে। ঘাসও পচে গেছে। বেঁচে আছি, আল্লাহ জীবন্ত রেখেছেন।’ এসময় আদালতে তিনি তার আইনজীবীকে খোঁজেন। বলেন, ‘মজিবর ভাই কই। আমার উকিল কই।’

পরে আবার বলেন,‘সাংবাদিকরা কিছু না জেনে লিখে দেয়। আমারও তো পরিবার আছে। কী এফেক্ট পড়ে। কিন্তু আমি কোনো প্রতিবাদ করিনি ১৯৮৭ সাল থেকে।’ তিনি বলেন,‘সাংবাদিকরা এত খবর রাখে, আড়াই বছর আগে আয়না ঘরে রাখে, সেই খবর নাই। এখন আমাকে ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ বানানো হচ্ছে। প্রমাণ দিয়ে দেখান আমি চাঁদাবাজি, ছিনতাই করেছি কিনা। ‘যারা আমার নামে চাঁদাবাজি, ছিনতাই করছে তাদের ধরেন। আমার টাকা থাকলে পত্রিকা অফিস, টিভি অফিস খুলে নিতাম। আমার কোনো পাওয়ার নাই, পাওয়ার দরকারও নাই। পাওয়ার আমার পিছে ঘোরে। সর্বশ্রেষ্ঠ পাওয়ারকে আমি সেজদাহ করি।’

‘৫ অগাস্ট রাতে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয়’

সুব্রতর দাবি, গণআন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলে তাকে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয়। তার আগে তাকে ‘আয়নাঘরে’ রেখে নির্যাতন চালানো হয়। তিনি বলেন,‘২০২২ সালে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে দেশে নিয়ে আসে। আমাকে আয়না ঘরে রাখা হয়। যা কবরের মত। রড দিয়ে পিটিয়েছে। দেখেন আমার মাথায় কী করছে।’ মাথায় হাত দিয়ে দেখাতে দেখাতে তিনি বলেন,‘এখনও বেঁচে আছি। ৫ অগাস্ট রাত ৩টার দিকে আমাকে রাস্তায় ছেড়ে দেয়।’ সুব্রত বাইন ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের সময় অস্ত্র উদ্ধারের কথা জানিয়েছে সেনাবাহিনী। সুব্রতর দাবি, নিজের নিরাপত্তার জন্যেই সঙ্গে অস্ত্র রাখেন।

তার কথায়,‘কে মরতে চায়। ৮৪/৮৫ থেকে আমার শত্রুতা। লিয়াকত, মুরগী মিলন, আমির হোসেন আমু আমার এন্টি (প্রতিপক্ষ) ছিল। তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে এখানে আসছি।

‘আমার নাম বিক্রি করে যারা চাঁদাবাজি করছে। যে চাঁদা চেয়েছে তাকে ধরুন। আরেকজনকে ব্লেম দিয়ে কী লাভ। নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের কাছে প্রত্যাশা, তারা সত্যটা তুলে ধরবেন।’ আদালতে প্রসিকিউশন বিভাগের ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান বলেন, তাদের কাছ থেকে স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। তখন সুব্রত বলেন,‘মোবাইলটা দেখান। চায়না ফোনকে স্যাটেলাইট ফোন বলছে। ওটা সিটিসেল মডেলের চায়না ফোন।’ শুনানি নিয়ে বিচারক সুব্রতসহ চারজনের রিমান্ড আদেশ দেন। এরপর আদালতকে সুব্রত বলেন, ‘আমার নামাজ যেন কাজা না হয়। নামাজের ব্যবস্থা যেন থাকে।’ এসময় বিচারক পুলিশকে বিষয়টি দেখতে বলেন।

১৯৯১ সালে ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ হত্যার মধ্য দিয়ে তার সন্ত্রাস জীবনের উত্থান শুরু হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী ও পুরস্কার ঘোষণার প্রায় দুই বছর পর ২০০৩ সালের দিকে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর তৎপরতা বেড়ে গেলে সুব্রত ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর কলকাতার স্পেশাল টাস্কফোর্স কারাইয়া এলাকা থেকে ২০০৮ সালের ১৩ অক্টোবর সুব্রতকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে কলকাতায় অস্ত্র ও অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলাও হয়। ওই মামলায় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার গা ঢাকা দেন সুব্রত।

এরপর ২০০৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের কর্মকর্তাদের ধাওয়া খেয়ে সুব্রত বাইন নেপাল সীমান্তের কাকরভিটা শহরে ঢুকে পড়েন। পরে নেপালের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের প্রায় তিন বছরের মাথায় ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর সুড়ঙ্গ খুঁড়ে নেপালের কারাগার থেকে পালিয়ে ফের ভারতে অনুপ্রবেশ করেন সুব্রত বাইন। একই বছরের ২৭ নভেম্বর কলকাতার বৌবাজারের একটি বাসা থেকে সুব্রতকে গ্রেপ্তার করে ভারতীয় পুলিশ। সেখানে ফতেহ আলী নাম নিয়ে ছদ্মবেশে অবস্থান করছিলেন তিনি।

back to top