খামার করে স্বাবলম্বী শামিম শিকদার -সংবাদ
বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বাসাইল গ্রামের মো. সেকেন্দার আলী শিকদারের ছেলে শামিম শিকদার। চাকরি তার ভালো লাগেনি, সে গ্রামে গিয়ে গরুর খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছে এবং এটাতেই সে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। চাকরি করা কালীন সময়ে সে দেখেছে তার বাবাকে গরুর খামার করতে তখন সে সিদ্ধান্ত নেয় খামার করার। সেটাও ১৩ বছর আগের কথা। সে সময় তিনি ২০টি গাভী ও ষাঁড় কিনে খামার শুরু করেন। সেই খামারে এখন গরুর সংখ্যা ২৮০টি। এর সঙ্গে রয়েছে পুকুরে মাছ চাষ। সমন্বিত সেই খামার থেকে খরচ বাদে এখন তার মাসে আয় প্রায় ৪ লাখ টাকা। তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক বেকার যুবক খামার করে স্বাবলম্বী হচ্ছে।
শামিম বাড়ির একর জমিতে গড়ে তুলেছেন সমন্বিত খামার। খামারের নাম দিয়েছেন বাসাইল রাইয়ান ডেইরি অ্যান্ড ফ্যাটেনিং ফার্ম। তার খামারে দেশি-বিদেশি জাতের ৫০টি গাভী, ২৩০টি ষাঁড় এবং এক একরের দু’টি পুকুরে মাছের খামার রয়েছে। ৪ একর জমিতে গরুর খাবারে জন্য করা হয় ঘাস চাষ। এসব দেখাশোনা করতে খামারে সারাবছর বেতনভুক্ত ১০ শ্রমিক কাজ করেন।
শামিম শিকদারের খামারে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে সবুজের সমারোহ। দুই পুকুরের মাঝখানে গরু রাখার দু’টি শেড ও একটি দোতলা দালান। দু’টি শেডে বিদেশি জাতের গাভী ও বাছুর এবং দালানের ১ম ও ২য় তলায় ষাঁড় রাখা হয়েছে। কোরবানিতে বিক্রর জন্য রাখা হয়েছে আকর্ষণীয় ষাঁড়।
শামিম শিকদার জানান, আমি ঢাকাতে একটি বেসকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম। চাকরি করা আমার ভালো লাগেনি। গ্রামে আমার পিতা গরু পালন করতো। আমার পিতা অল্পস্বল্প গরু পালন করেন। তার ওই গরু পালনে কোনো লস হয় না। আমি ভাবলাম গ্রামে গিয়ে আমি একটি বড় গরুর খামাড় তৈরি করবো। যাতে আমারও আয় হবে এবং বেকার কিছু যুবকের কর্মসংস্থান করতে পারব। আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০১২ সালে গ্রামে চলে আসি। আমি ওই সালেই ২০টি গরু নিয়ে এক একর জমির ওপরে প্রথম একটি ঘরে খামার তৈরি করি। এরপরে ধীরে ধীরে আরও দুটি ঘর ও একটি দোতলা দালান তৈরি করি। ওই দালানের ১ম ও ২য় তলায় গরু পালন করি। বর্তমানে আমার খামারে গাভী ও ষাঁড় মিলে ২৮০টি গরু আছে। এক একর জমির ওপরে খামার ও গরুর খাবারে জন্য চার একর জমিতে ঘাস চাষ করি। আমার ইচ্ছা এই খামারটিতে সংখ্যায় এক হাজার গরু পালন করা।
তিনি বলেন, ‘খামারে কমবেশি দুই কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। ১০জন স্থায়ী কর্মচারী কাজ করছে। খরচ বাদে বছরে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। এসি রুমে বসে চাকরি করে যে শান্তি পাইনি এখন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে খামার করে তার চেয়ে শতগুণ বেশি তৃপ্তি পাচ্ছি। আমার ইচ্ছে খামারে কমপক্ষে ৫০ জন মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কাজ করছি। খামারের আয়ের টাকায় স্ত্রী, দুই সন্তানকে নিয়ে সুখে আছি। আমার খামার থেকে প্রতিদিন ৩শ’ লিটার দুধ পাই। আমি এই দুধ বাজারজাত করতে পারছি না। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের মাধ্যমে যদি এলাকায় আড়ং বা মিল্কভিটা থাকতো তাহলে নির্বিঘ্নে আমার দুধ বিক্রি করে লাভবান হতাম। তাৎক্ষণিক বিক্রি বা ফ্রিজিং এর অভাবে এখন উৎপাদিত বেশির ভাগ দুধ নষ্ট হচ্ছে। আমার খামারে ষাট হাজার থেকে শুরু করে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত মূল্যের গরু আছে।
রাইয়ান ডেইরি অ্যান্ড ফ্যাটেনিং ফার্মের ম্যানেজার রাকিবুল ইসলাম রনি বলেন, আমাদের এখানে ১০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমাদের সেই ১০টি পরিবার এই ফার্মের কারণে ভালো আছি সুখে আছি। দেশে এমন আরও প্রতিষ্ঠান হলে বেকারত্ব দূর হতো। বর্তমানে দেশের বাইরে থেকে আর গরু না এলে খামারিরা লাভবান হবে এবং দেশে খামারের সংখ্যা বাড়বে।
স্থানীয় মেজবাহ শিকদার, মিঠু শিকদার, কালাম মোল্লা, মো. সাইফুল মোল্লা, সানি হাওলাদার জানান, খামার করে শামিম শিকদার শুধু নিজের ভাগ্যই বদল করেননি, অন্য যুবকদেরও পরামর্শ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। অনেকেই শামিমের পরামর্শে খামার করে এখন সুখে সংসার চালাচ্ছেন। সমন্বিত খামার করে এলাকার যুবকদের চোখ খুলে দিয়েছেন শামিম। আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ সরকার বলেন, বর্তমানে গরুর বাজারে বিদেশি কোনো গরু নেই। দেশের খামারিদের গরু বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে। দেশে নতুন নতুন খামার সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিয়ে থাকি। মানুষকে খাওয়াবেন, মানুষ বেঈমানি করবে। কিন্তু পশুপাখি কখনও বেঈমানি করে না। তার ফিডব্যাক শামিম নিজে পেয়েছেন। তিনি সমন্বিত খামার গড়ে সফল হয়েছেন। তাকে দেখে অনেকেই খামার গড়তে উৎসাহিত হচ্ছেন। দুধ বিক্রির বিষয়ে আমি আড়ং, মিল্কভিটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এবং খামারিদের সমন্বয়ে একটি ব্যবস্থা নেবো।
খামার করে স্বাবলম্বী শামিম শিকদার -সংবাদ
বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বাসাইল গ্রামের মো. সেকেন্দার আলী শিকদারের ছেলে শামিম শিকদার। চাকরি তার ভালো লাগেনি, সে গ্রামে গিয়ে গরুর খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছে এবং এটাতেই সে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। চাকরি করা কালীন সময়ে সে দেখেছে তার বাবাকে গরুর খামার করতে তখন সে সিদ্ধান্ত নেয় খামার করার। সেটাও ১৩ বছর আগের কথা। সে সময় তিনি ২০টি গাভী ও ষাঁড় কিনে খামার শুরু করেন। সেই খামারে এখন গরুর সংখ্যা ২৮০টি। এর সঙ্গে রয়েছে পুকুরে মাছ চাষ। সমন্বিত সেই খামার থেকে খরচ বাদে এখন তার মাসে আয় প্রায় ৪ লাখ টাকা। তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক বেকার যুবক খামার করে স্বাবলম্বী হচ্ছে।
শামিম বাড়ির একর জমিতে গড়ে তুলেছেন সমন্বিত খামার। খামারের নাম দিয়েছেন বাসাইল রাইয়ান ডেইরি অ্যান্ড ফ্যাটেনিং ফার্ম। তার খামারে দেশি-বিদেশি জাতের ৫০টি গাভী, ২৩০টি ষাঁড় এবং এক একরের দু’টি পুকুরে মাছের খামার রয়েছে। ৪ একর জমিতে গরুর খাবারে জন্য করা হয় ঘাস চাষ। এসব দেখাশোনা করতে খামারে সারাবছর বেতনভুক্ত ১০ শ্রমিক কাজ করেন।
শামিম শিকদারের খামারে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে সবুজের সমারোহ। দুই পুকুরের মাঝখানে গরু রাখার দু’টি শেড ও একটি দোতলা দালান। দু’টি শেডে বিদেশি জাতের গাভী ও বাছুর এবং দালানের ১ম ও ২য় তলায় ষাঁড় রাখা হয়েছে। কোরবানিতে বিক্রর জন্য রাখা হয়েছে আকর্ষণীয় ষাঁড়।
শামিম শিকদার জানান, আমি ঢাকাতে একটি বেসকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম। চাকরি করা আমার ভালো লাগেনি। গ্রামে আমার পিতা গরু পালন করতো। আমার পিতা অল্পস্বল্প গরু পালন করেন। তার ওই গরু পালনে কোনো লস হয় না। আমি ভাবলাম গ্রামে গিয়ে আমি একটি বড় গরুর খামাড় তৈরি করবো। যাতে আমারও আয় হবে এবং বেকার কিছু যুবকের কর্মসংস্থান করতে পারব। আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০১২ সালে গ্রামে চলে আসি। আমি ওই সালেই ২০টি গরু নিয়ে এক একর জমির ওপরে প্রথম একটি ঘরে খামার তৈরি করি। এরপরে ধীরে ধীরে আরও দুটি ঘর ও একটি দোতলা দালান তৈরি করি। ওই দালানের ১ম ও ২য় তলায় গরু পালন করি। বর্তমানে আমার খামারে গাভী ও ষাঁড় মিলে ২৮০টি গরু আছে। এক একর জমির ওপরে খামার ও গরুর খাবারে জন্য চার একর জমিতে ঘাস চাষ করি। আমার ইচ্ছা এই খামারটিতে সংখ্যায় এক হাজার গরু পালন করা।
তিনি বলেন, ‘খামারে কমবেশি দুই কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। ১০জন স্থায়ী কর্মচারী কাজ করছে। খরচ বাদে বছরে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। এসি রুমে বসে চাকরি করে যে শান্তি পাইনি এখন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে খামার করে তার চেয়ে শতগুণ বেশি তৃপ্তি পাচ্ছি। আমার ইচ্ছে খামারে কমপক্ষে ৫০ জন মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কাজ করছি। খামারের আয়ের টাকায় স্ত্রী, দুই সন্তানকে নিয়ে সুখে আছি। আমার খামার থেকে প্রতিদিন ৩শ’ লিটার দুধ পাই। আমি এই দুধ বাজারজাত করতে পারছি না। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের মাধ্যমে যদি এলাকায় আড়ং বা মিল্কভিটা থাকতো তাহলে নির্বিঘ্নে আমার দুধ বিক্রি করে লাভবান হতাম। তাৎক্ষণিক বিক্রি বা ফ্রিজিং এর অভাবে এখন উৎপাদিত বেশির ভাগ দুধ নষ্ট হচ্ছে। আমার খামারে ষাট হাজার থেকে শুরু করে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত মূল্যের গরু আছে।
রাইয়ান ডেইরি অ্যান্ড ফ্যাটেনিং ফার্মের ম্যানেজার রাকিবুল ইসলাম রনি বলেন, আমাদের এখানে ১০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমাদের সেই ১০টি পরিবার এই ফার্মের কারণে ভালো আছি সুখে আছি। দেশে এমন আরও প্রতিষ্ঠান হলে বেকারত্ব দূর হতো। বর্তমানে দেশের বাইরে থেকে আর গরু না এলে খামারিরা লাভবান হবে এবং দেশে খামারের সংখ্যা বাড়বে।
স্থানীয় মেজবাহ শিকদার, মিঠু শিকদার, কালাম মোল্লা, মো. সাইফুল মোল্লা, সানি হাওলাদার জানান, খামার করে শামিম শিকদার শুধু নিজের ভাগ্যই বদল করেননি, অন্য যুবকদেরও পরামর্শ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। অনেকেই শামিমের পরামর্শে খামার করে এখন সুখে সংসার চালাচ্ছেন। সমন্বিত খামার করে এলাকার যুবকদের চোখ খুলে দিয়েছেন শামিম। আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ সরকার বলেন, বর্তমানে গরুর বাজারে বিদেশি কোনো গরু নেই। দেশের খামারিদের গরু বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে। দেশে নতুন নতুন খামার সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিয়ে থাকি। মানুষকে খাওয়াবেন, মানুষ বেঈমানি করবে। কিন্তু পশুপাখি কখনও বেঈমানি করে না। তার ফিডব্যাক শামিম নিজে পেয়েছেন। তিনি সমন্বিত খামার গড়ে সফল হয়েছেন। তাকে দেখে অনেকেই খামার গড়তে উৎসাহিত হচ্ছেন। দুধ বিক্রির বিষয়ে আমি আড়ং, মিল্কভিটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এবং খামারিদের সমন্বয়ে একটি ব্যবস্থা নেবো।