alt

জাতীয়

নিম্নচাপ: উপকূলে প্লাবন, সারাদেশে বৃষ্টি, দুর্ভোগ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে আজ দেশের প্রায় সব জায়গাতেই বৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে আজ ও আগামীকালও বৃষ্টি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।

নিম্নচাপটি উপকূল অতিক্রম করেছে। তবে এর মধ্যে নোয়াখালী ও ভোলাসহ উপকূলীয় এলাকাগুলোতে জলোচ্ছ্বাসের কারণে বিশেষ করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেক মানুষ পানিবন্দী।

আর দিনভর বৃষ্টির কারণে রাজধানী ঢাকা জলাবদ্ধতা ও যানজটে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। একটানা বৃষ্টিতে সারাদেশেই নানারকম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে মানুষকে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক সংবাদকে বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে থাকা গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম শেষ করেছে। এটি সাতক্ষীরা ও এর কাছাকাছি এলাকায় স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর বা উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে ধীরে ধীরে দুর্বল হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

উপকূলীয় এলাকায়

জলোচ্ছ্বাস, প্লাবন

নোয়াখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে নোয়াখালীতে মুষলধারে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে দ্বিতীয় দিনের মতো নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে সারাদেশের নৌ-চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে ‘চরম দুর্ভোগ’ দেখা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৯-০৫-২০২৫) সকাল থেকে স্থানীয় প্রশাসন সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং আবহাওয়ার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত হাতিয়ার সঙ্গে নৌপথে ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত জোয়ারের পানি ঢুকতে শুরু করেছে নিঝুম দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায়। এতে দুর্ভোগে পড়ে মানুষ ও জাতীয় উদ্যানের বনের হরিণ। এছাড়া হাতিয়ার চরইশ্বর, নলচিরা, ঢালচর, সুখচর, চরঘাসিয়াসহ বিভিন্ন চরের সড়ক ও বাড়িঘরে জোয়ারের পানি উঠতে শুরু করেছে। জোয়ারের অতিরিক্ত পানির ভয়ে উপকূলীয় এলাকার মানুষ ‘আতঙ্কিত’।

নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের বাসিন্দা ওমর ফারুক জানান, লঘুচাপের প্রভাবে নোয়াখালীতে ভোররাত হাতিয়াতে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। ঝড়ো বাতাস ও সাগর উত্তাল থাকায় হাতিয়ার সঙ্গে সারাদেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। নিঝুমদ্বীপের নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সৃষ্ট অস্বাভাবিক জোয়ারের নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের কয়েকটি প্রধান সড়ক প্লাবিত হয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে নিচু অঞ্চলের বাড়িগুলোতে। বেড়িবাঁধ না থাকায় সহজে জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হয় নিঝুমদ্বীপ। এতে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। জোয়ারের নতুন এলাকা প্লাবিত হলে এর সংখ্যা আরো বাড়বে।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকায় ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। হাতিয়াসহ জপলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

ভোলার চরফ্যাসন প্রতিনিধি জানান, চরফ্যাসনে বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৭-৮ ফুট উচ্চতা বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে মাছের ঘের-পুকুর ডুবে কয়েক লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে এবং গবাদিপশু পানিতে ভেসে গেছে। এছাড়া গত বুধবার রাতে ঝড়ো হাওয়ায় অনেক স্থানের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে চরফ্যাসন বেতুয়া মেঘনা পাড়ে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জোয়ারের পানি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অন্তত ৭-৮ ফুট বেড়েছে। এবং মেঘনা নদীতে উত্তাল ঢেউ রয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি ভয়াবহ বিরাজ করছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন মেঘনা পাড়ের বাসিন্দারা।

উপজেলার মাদ্রাজ, হাজারীগঞ্জ, জাহানপুর, ও চরমানিকা ইউনিয়নসহ বেশকিছু এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, লঘুচাপের প্রভাবে বেড়িবাঁধের বাইরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে মানুষের ঘরবাড়ি, মাছের ঘের, পুকুর তলিয়ে গেছে। বিকাল ৪ টা পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে জানান স্থানীয়রা।

এসব এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রের স্বল্পতা রয়েছে, যা আছে তাতে সবার স্থান সংকুলান হয় না বলে জানান এলাকাবাসী।

চরফ্যাসন বেতুয়া মেঘনা পাড়ে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জোয়ারের পানি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অন্তত ৭-৮ ফুট বেড়েছে। এবং মেঘনা নদীতে উত্তাল ঢেউ রয়েছে। ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন মেঘনা পাড়ের বাসিন্দারা।

নিম্নচাপ: উপকূলে প্লাবন

(১ম পৃষ্ঠার পর)

উপজেলার চরমানিকা ইউনিয়ন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইব্রাহিম মোল্লা বলেন, ‘বুধবার রাতে ঝড়ো হাওয়ার প্রভাবে আমার বসতঘরের টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এতে আমার স্ত্রী-সন্তানরা বৃষ্টিতে ভিজে রাতযাপন করেছে।’

উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচর ইউনিয়নের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর মাতব্বর মুঠোফোনে বলেন, ‘আমাদের এখানে বেড়িবাঁধ নাই। চরবাসীর অবস্থা একেবারে নাজুক। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে পুরো ঢালচরটি। এ-ই চরে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নাই। যার কারণে আমরা আতঙ্কে রয়েছি।’

চরফ্যাসন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, ‘গত কয়েক দিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।’

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এতে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। আমরা চরফ্যাসন উপজেলার বিভিন্ন মৎস্যঘাটে গত বুধবার সকাল থেকে প্রচারণা চালিয়েছি। যাতে মৎস্যজীবীরা নিরাপদ স্থানে অবস্থান করেন।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি জানান, বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপের প্রভাবে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব অঞ্চলের মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনার জন্য সিপিপি ৪২০ জন সদস্য কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া উপজেলায় ১৬৯টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস, পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ও সিভিল ডিফেন্স, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও বিধ্বস্ত হওয়া এলাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সহয়তা দেয়ার কথা জানান ইউএনও।

বরগুনা’র বেতাগী প্রতিনিধি জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গত বুধবার সন্ধ্যার পর থেকেই ভারী বৃষ্টি কখনো মাঝারি বৃষ্টি, কখনো থেমে থেমে বৃষ্টি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি। পানির তোড়ে বরগুনার বেতাগী উপজেলার ছোট মোকামিয়া কিসমত করুণা এলাকায় বিষখালী নদীর দেড়শ’ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গত মঙ্গলবার রাত থেকে উপকূলীয় এলাকায় কখনো মাঝারি আবার কখনো ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সারাদিন ভারী বৃষ্টি হয়েছে। অতিজরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাইরে তেমন দেখা যায়নি।

বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার নিচু এলাকা তলিযে গেছে। ভেসে গেছে মাঠের উঠতি ফসল। ছোট মোকামিয়া, ঝিঙাবাড়িয়া, চরখালী, বটতলা, বদনীখালীসহ ১০টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে স্থানীয় কৃষক ও নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ।

মোকামিয়া ইউনিয়নের বটতলা গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান (৫৬) বলেন, দুপুরে বেড়িবাঁধ ভেঙে মাঠের মুগডাল, বাদাম ও বোরো ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে।

ছোট মোকামিয়া গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক সুশান্ত কুমার গাইন বলেন, ছোট মোকামিয়া এলাকার বিষখালী নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টির কারণে সবজি ও অন্যান্য কৃষিজ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: বশির গাজী বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শনে টিম পাঠানো হয়েছে। সেসব এলাকায় আর্থিক সহায়তা করা হবে।’

অমাবস্যা ও গভীর নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১ থেকে ৩ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

যানজট বৃষ্টিতে ঢাকায় দিনভর দুর্ভোগ

নিম্নচাপের কারণে সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির কারণে শহুরে জীবনে ভোগান্তি বাড়িয়েছে। সকাল থেকে টানা বৃষ্টির কারণে সড়কে যেমন গাড়ির চাপ বেড়েছে, তেমনই যানবাহন চলাচলে ধীরগতি রয়েছে। এতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যান বন্ধ হয়ে যায়। মোহাম্মদপুর এলাকায় যানজটে আটকে পড়া আলতাব হোসেন বলেন, ‘এক জায়গায় দুই ঘণ্টা আছি। বৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তি আরও বাড়বে।’

সকালে ভোগান্তি নিয়ে কর্মজীবী মানুষ অফিসে পৌঁছালেও অফিস শেষে ফেরার পথে ভোগান্তি বেড়েছে দিগুণ। বিকেল ৪টার পর নামে মুষলধারে বৃষ্টি। এতে অলিগলিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে গাড়ির গতি প্রায় থেমে যায়। আসাদ গেট, বিজয়সরণি, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, সায়েন্সল্যাব, নিউ মার্কেট, শাহবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট দেখা যায়। যানজটে আটকে রিকশা, সিএনজি না পেয়ে অনেককে বৃষ্টিতে ভিজে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে।

বৃষ্টির মধ্যেই জরুরি কাজে ধানমন্ডি থেকে পল্টনের উদ্দেশে রওনা হন তারেকুজ্জামান। সায়েন্সল্যাবে এসে তাকে বহন করা বাসটি যানজটে আটকে যায়। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে উপায় না পেয়ে দিগুণ ভাড়ায় রিকশা নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন। তিনি বলেন, জরুরি কাজের জন্য বৃষ্টি থাকা সত্ত্বেও বের হতে হয়েছে। যেভাবে গাড়ি চলছে অনেক সময় লাগবে। এ জন্য অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিকশা নিলাম।

বেসরকারি চাকরিজীবী সাগর আলী বলেন, ‘যতই বৃষ্টি হোক যাদের অফিস আছে, তাদের ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। সকালে বৃষ্টি হলেও কোনোভাবে অফিসে আসতে পেরেছি।’

অনেক জায়গায় বৃষ্টির পানিতে সড়ক ডুবে থাকতে দেখা গেছে। মূল সড়ক ও বিভিন্ন অলিগলিতে পানি জমে থাকায় সড়কে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, টিটিপাড়া, গোপীবাগ, টিকাটুলী, নারিন্দা, স্বামীবাগ, গেন্ডারিয়া ও দয়াগঞ্জসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতায় বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে।

ডিএসসিসির এই প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা আসন্ন কোরবানি ঈদকে উপলক্ষ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিরসনে চারটি বিশেষ টিম তৈরি করেছি। যেটি জলাবদ্ধতা নিরসনেও কাজ করবে। আর নিউ মার্কেটের যে জলাবদ্ধতা তা নিচু জায়গার কারণে হয়েছে। সেটা নিয়ে আমাদের বড় প্রকল্প রয়েছে। এ বছর নানা কারণে তা হয়নি। আগামী বছর বর্ষার আগেই আমরা এ নিয়ে পরিকল্পনা করবো।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। পদ্মা নদী উত্তাল থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয়।

আজ ও আগামীকালও বৃষ্টি হবে

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে এটি সাতক্ষীরা ও এর কাছাকাছি এলাকায় স্থল গভীর নিম্নচাপ হিসেবে ছিল। এর প্রভাবে আজ ও আগামীকাল সারাদেশে থেমে থেমে কোথাও ভারি ও কোথাও হালকা বৃষ্টি হবে।

‘আমাদের গভীর নিম্নচাপটি উপকূল অতিক্রম করেছে। এর প্রভাবে রাতে (বৃহস্পতিবার রাত) কালকে (আজ) এবং পরশু (আগামীকাল) থেমে থেমে বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি কোথাও হালকা আবার কোথাও ভারি হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিম্ন চাপটি ক্রমস দুর্বল হয়ে পড়ছে। সাগরে এখনও তিন নম্বর সংকেত বলবদ রয়েছে।’

বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের অন্তত ১৪ জেলায় আজ ১ থেকে ৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

আবহাওয়ার বার্তায় বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ভারী বৃষ্টিতে ৬ জেলায় বন্যার শঙ্কা

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র দেশের ছয় জেলায় বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে। তারা বলেছে, আজ ও আগামীকালের মধ্যে এসব এলাকার নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে একই নদীর আশপাশের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

বৃহস্পতিবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, ‘ছয় জেলা হচ্ছে ফেনী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ এবং নেত্রকোনা। ভারী বৃষ্টিতে সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। আজ ও আগামীকাল (৩০-৩১ মে) অনেক নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।’

এতে এসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে তিনি জানান।

এ দিকে, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী দু’দিন চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী ও ফেনী নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এই সময় মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। ফলে ফেনী জেলার মুহুরী নদীর আশপাশের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। পরবর্তী একদিন এসব নদীর পানি কমতে পারে।

ছবি

নিম্নচাপের প্রভাবে বিদ্যুৎ বিপর্যয়, পাঁচ হাজারের বেশি মোবাইল টাওয়ার বন্ধ

ছবি

নিম্নচাপ: ঢাকায় মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত

ছবি

নিম্নচাপের প্রভাবে রাজধানীসহ পাঁচ বিভাগে দিনভর বৃষ্টির সম্ভাবনা

ছবি

সব দল নয়, একটি নির্দিষ্ট দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইছে: প্রধান উপদেষ্টা

আরও ৬৮টি সরকারি কলেজের নাম পরিবর্তন

ছবি

আমের বাম্পার ফলন রোয়াংছড়ির মিশ্র বাগানে

লৌহজংয়ের তালতলা-ডহরী খালে চাঁদাবাজি

মেজর সিনহা হত্যা: হাইকোর্টের রায় সোমবার

জুলাই আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলায় জবির সাবেক অধ্যাপক আনোয়ারা কারাগারে

‘বিশেষ কারণে’ হজযাত্রী পরিবহন একদিন সময় বাড়িয়েছে মন্ত্রণালয়

ছবি

বাংলাদেশ থেকে এক লাখ শ্রমিক নেবে জাপান

ছবি

সীমান্ত দিয়ে আরও ৪৩ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারত

জুলাইযোদ্ধা-কর্মচারী সংঘর্ষ: চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে বৃহস্পতিবারও চালু হয়নি সেবা

চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলে ‘ইতিবাচক’ খবরের অপেক্ষায় সচিবালয়ের কর্মচারীরা

গণতন্ত্র পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে: খালেদা জিয়া

ইশরাকের শপথের সিদ্ধান্ত নেবে ইসি: আপিল বিভাগ

ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন করা সম্ভব : তারেক রহমান

ছবি

বৃষ্টি উপেক্ষা করে নগর ভবনে ইশরাক সমর্থকদের বিক্ষোভ

ছবি

ছয় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির ঝুঁকি, বাড়ছে একাধিক নদীর পানি

ছবি

ঈদুল আজহায় পুলিশের ‘নিরাপত্তা পরামর্শ’

বিশেষ বিসিএসে আবেদন ১ জুন থেকে, নিয়োগ পাবেন চিকিৎসক ও ডেন্টাল সার্জন

ছবি

সচিবালয়ে কর্মবিরতির পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

ছবি

বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ শ্রমিক নেবে জাপান

ছবি

জুলাইযোদ্ধা-কর্মচারী সংঘর্ষ: দ্বিতীয় দিনেও চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে বন্ধ চিকিৎসাসেবা

ছবি

পারস্পরিক বৈশ্বিক আস্থা হুমকির মুখে: নিক্কেই ফোরামে অধ্যাপক ইউনূস

ছবি

নয়টি অঞ্চলে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আভাস, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সংকেত

সচিবালয়ে এক ঘণ্টার কর্মবিরতি

ছবি

সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে সারা দিনে ঝরতে পারে বৃষ্টি

প্রতিবাদে চট্টগ্রামে সংঘর্ষ, আহত ৩

নতুন মামলায় গ্রেপ্তার আমু, ইনু ও মেননসহ ১১ জন

বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ: শিগগিরই ‘কঠোর’ কর্মসূচির পরিকল্পনা ২৫ ক্যাডারের

ছবি

গরুর খামার করে স্বাবলম্বী আগৈলঝাড়ার শামিম

আরও ১৩৭ জনকে ঠেলে পাঠালো ভারত

ছবি

সুব্রত বাইন ৮, মোল্লা মাসুদসহ তিনজন ৬ দিনের রিমান্ডে

ছবি

‘জুলাই বিপ্লবীদের’ ধন্যবাদ দিলেন ‘মুক্ত-স্বাধীন’ আজহার

ছবি

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

tab

জাতীয়

নিম্নচাপ: উপকূলে প্লাবন, সারাদেশে বৃষ্টি, দুর্ভোগ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে আজ দেশের প্রায় সব জায়গাতেই বৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে আজ ও আগামীকালও বৃষ্টি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।

নিম্নচাপটি উপকূল অতিক্রম করেছে। তবে এর মধ্যে নোয়াখালী ও ভোলাসহ উপকূলীয় এলাকাগুলোতে জলোচ্ছ্বাসের কারণে বিশেষ করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেক মানুষ পানিবন্দী।

আর দিনভর বৃষ্টির কারণে রাজধানী ঢাকা জলাবদ্ধতা ও যানজটে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। একটানা বৃষ্টিতে সারাদেশেই নানারকম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে মানুষকে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক সংবাদকে বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে থাকা গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম শেষ করেছে। এটি সাতক্ষীরা ও এর কাছাকাছি এলাকায় স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর বা উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে ধীরে ধীরে দুর্বল হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

উপকূলীয় এলাকায়

জলোচ্ছ্বাস, প্লাবন

নোয়াখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে নোয়াখালীতে মুষলধারে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে দ্বিতীয় দিনের মতো নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে সারাদেশের নৌ-চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে ‘চরম দুর্ভোগ’ দেখা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৯-০৫-২০২৫) সকাল থেকে স্থানীয় প্রশাসন সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং আবহাওয়ার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত হাতিয়ার সঙ্গে নৌপথে ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত জোয়ারের পানি ঢুকতে শুরু করেছে নিঝুম দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায়। এতে দুর্ভোগে পড়ে মানুষ ও জাতীয় উদ্যানের বনের হরিণ। এছাড়া হাতিয়ার চরইশ্বর, নলচিরা, ঢালচর, সুখচর, চরঘাসিয়াসহ বিভিন্ন চরের সড়ক ও বাড়িঘরে জোয়ারের পানি উঠতে শুরু করেছে। জোয়ারের অতিরিক্ত পানির ভয়ে উপকূলীয় এলাকার মানুষ ‘আতঙ্কিত’।

নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের বাসিন্দা ওমর ফারুক জানান, লঘুচাপের প্রভাবে নোয়াখালীতে ভোররাত হাতিয়াতে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। ঝড়ো বাতাস ও সাগর উত্তাল থাকায় হাতিয়ার সঙ্গে সারাদেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। নিঝুমদ্বীপের নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সৃষ্ট অস্বাভাবিক জোয়ারের নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের কয়েকটি প্রধান সড়ক প্লাবিত হয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে নিচু অঞ্চলের বাড়িগুলোতে। বেড়িবাঁধ না থাকায় সহজে জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হয় নিঝুমদ্বীপ। এতে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। জোয়ারের নতুন এলাকা প্লাবিত হলে এর সংখ্যা আরো বাড়বে।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকায় ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। হাতিয়াসহ জপলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

ভোলার চরফ্যাসন প্রতিনিধি জানান, চরফ্যাসনে বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৭-৮ ফুট উচ্চতা বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে মাছের ঘের-পুকুর ডুবে কয়েক লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে এবং গবাদিপশু পানিতে ভেসে গেছে। এছাড়া গত বুধবার রাতে ঝড়ো হাওয়ায় অনেক স্থানের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে চরফ্যাসন বেতুয়া মেঘনা পাড়ে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জোয়ারের পানি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অন্তত ৭-৮ ফুট বেড়েছে। এবং মেঘনা নদীতে উত্তাল ঢেউ রয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি ভয়াবহ বিরাজ করছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন মেঘনা পাড়ের বাসিন্দারা।

উপজেলার মাদ্রাজ, হাজারীগঞ্জ, জাহানপুর, ও চরমানিকা ইউনিয়নসহ বেশকিছু এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, লঘুচাপের প্রভাবে বেড়িবাঁধের বাইরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে মানুষের ঘরবাড়ি, মাছের ঘের, পুকুর তলিয়ে গেছে। বিকাল ৪ টা পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে জানান স্থানীয়রা।

এসব এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রের স্বল্পতা রয়েছে, যা আছে তাতে সবার স্থান সংকুলান হয় না বলে জানান এলাকাবাসী।

চরফ্যাসন বেতুয়া মেঘনা পাড়ে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জোয়ারের পানি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অন্তত ৭-৮ ফুট বেড়েছে। এবং মেঘনা নদীতে উত্তাল ঢেউ রয়েছে। ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন মেঘনা পাড়ের বাসিন্দারা।

নিম্নচাপ: উপকূলে প্লাবন

(১ম পৃষ্ঠার পর)

উপজেলার চরমানিকা ইউনিয়ন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইব্রাহিম মোল্লা বলেন, ‘বুধবার রাতে ঝড়ো হাওয়ার প্রভাবে আমার বসতঘরের টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এতে আমার স্ত্রী-সন্তানরা বৃষ্টিতে ভিজে রাতযাপন করেছে।’

উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচর ইউনিয়নের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর মাতব্বর মুঠোফোনে বলেন, ‘আমাদের এখানে বেড়িবাঁধ নাই। চরবাসীর অবস্থা একেবারে নাজুক। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে পুরো ঢালচরটি। এ-ই চরে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নাই। যার কারণে আমরা আতঙ্কে রয়েছি।’

চরফ্যাসন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, ‘গত কয়েক দিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।’

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এতে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। আমরা চরফ্যাসন উপজেলার বিভিন্ন মৎস্যঘাটে গত বুধবার সকাল থেকে প্রচারণা চালিয়েছি। যাতে মৎস্যজীবীরা নিরাপদ স্থানে অবস্থান করেন।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি জানান, বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপের প্রভাবে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব অঞ্চলের মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনার জন্য সিপিপি ৪২০ জন সদস্য কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া উপজেলায় ১৬৯টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস, পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ও সিভিল ডিফেন্স, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও বিধ্বস্ত হওয়া এলাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সহয়তা দেয়ার কথা জানান ইউএনও।

বরগুনা’র বেতাগী প্রতিনিধি জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গত বুধবার সন্ধ্যার পর থেকেই ভারী বৃষ্টি কখনো মাঝারি বৃষ্টি, কখনো থেমে থেমে বৃষ্টি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি। পানির তোড়ে বরগুনার বেতাগী উপজেলার ছোট মোকামিয়া কিসমত করুণা এলাকায় বিষখালী নদীর দেড়শ’ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গত মঙ্গলবার রাত থেকে উপকূলীয় এলাকায় কখনো মাঝারি আবার কখনো ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সারাদিন ভারী বৃষ্টি হয়েছে। অতিজরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাইরে তেমন দেখা যায়নি।

বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার নিচু এলাকা তলিযে গেছে। ভেসে গেছে মাঠের উঠতি ফসল। ছোট মোকামিয়া, ঝিঙাবাড়িয়া, চরখালী, বটতলা, বদনীখালীসহ ১০টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে স্থানীয় কৃষক ও নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ।

মোকামিয়া ইউনিয়নের বটতলা গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান (৫৬) বলেন, দুপুরে বেড়িবাঁধ ভেঙে মাঠের মুগডাল, বাদাম ও বোরো ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে।

ছোট মোকামিয়া গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক সুশান্ত কুমার গাইন বলেন, ছোট মোকামিয়া এলাকার বিষখালী নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টির কারণে সবজি ও অন্যান্য কৃষিজ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: বশির গাজী বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শনে টিম পাঠানো হয়েছে। সেসব এলাকায় আর্থিক সহায়তা করা হবে।’

অমাবস্যা ও গভীর নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১ থেকে ৩ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

যানজট বৃষ্টিতে ঢাকায় দিনভর দুর্ভোগ

নিম্নচাপের কারণে সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির কারণে শহুরে জীবনে ভোগান্তি বাড়িয়েছে। সকাল থেকে টানা বৃষ্টির কারণে সড়কে যেমন গাড়ির চাপ বেড়েছে, তেমনই যানবাহন চলাচলে ধীরগতি রয়েছে। এতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যান বন্ধ হয়ে যায়। মোহাম্মদপুর এলাকায় যানজটে আটকে পড়া আলতাব হোসেন বলেন, ‘এক জায়গায় দুই ঘণ্টা আছি। বৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তি আরও বাড়বে।’

সকালে ভোগান্তি নিয়ে কর্মজীবী মানুষ অফিসে পৌঁছালেও অফিস শেষে ফেরার পথে ভোগান্তি বেড়েছে দিগুণ। বিকেল ৪টার পর নামে মুষলধারে বৃষ্টি। এতে অলিগলিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে গাড়ির গতি প্রায় থেমে যায়। আসাদ গেট, বিজয়সরণি, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, সায়েন্সল্যাব, নিউ মার্কেট, শাহবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট দেখা যায়। যানজটে আটকে রিকশা, সিএনজি না পেয়ে অনেককে বৃষ্টিতে ভিজে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে।

বৃষ্টির মধ্যেই জরুরি কাজে ধানমন্ডি থেকে পল্টনের উদ্দেশে রওনা হন তারেকুজ্জামান। সায়েন্সল্যাবে এসে তাকে বহন করা বাসটি যানজটে আটকে যায়। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে উপায় না পেয়ে দিগুণ ভাড়ায় রিকশা নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন। তিনি বলেন, জরুরি কাজের জন্য বৃষ্টি থাকা সত্ত্বেও বের হতে হয়েছে। যেভাবে গাড়ি চলছে অনেক সময় লাগবে। এ জন্য অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিকশা নিলাম।

বেসরকারি চাকরিজীবী সাগর আলী বলেন, ‘যতই বৃষ্টি হোক যাদের অফিস আছে, তাদের ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। সকালে বৃষ্টি হলেও কোনোভাবে অফিসে আসতে পেরেছি।’

অনেক জায়গায় বৃষ্টির পানিতে সড়ক ডুবে থাকতে দেখা গেছে। মূল সড়ক ও বিভিন্ন অলিগলিতে পানি জমে থাকায় সড়কে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, টিটিপাড়া, গোপীবাগ, টিকাটুলী, নারিন্দা, স্বামীবাগ, গেন্ডারিয়া ও দয়াগঞ্জসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতায় বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে।

ডিএসসিসির এই প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা আসন্ন কোরবানি ঈদকে উপলক্ষ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিরসনে চারটি বিশেষ টিম তৈরি করেছি। যেটি জলাবদ্ধতা নিরসনেও কাজ করবে। আর নিউ মার্কেটের যে জলাবদ্ধতা তা নিচু জায়গার কারণে হয়েছে। সেটা নিয়ে আমাদের বড় প্রকল্প রয়েছে। এ বছর নানা কারণে তা হয়নি। আগামী বছর বর্ষার আগেই আমরা এ নিয়ে পরিকল্পনা করবো।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। পদ্মা নদী উত্তাল থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয়।

আজ ও আগামীকালও বৃষ্টি হবে

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে এটি সাতক্ষীরা ও এর কাছাকাছি এলাকায় স্থল গভীর নিম্নচাপ হিসেবে ছিল। এর প্রভাবে আজ ও আগামীকাল সারাদেশে থেমে থেমে কোথাও ভারি ও কোথাও হালকা বৃষ্টি হবে।

‘আমাদের গভীর নিম্নচাপটি উপকূল অতিক্রম করেছে। এর প্রভাবে রাতে (বৃহস্পতিবার রাত) কালকে (আজ) এবং পরশু (আগামীকাল) থেমে থেমে বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি কোথাও হালকা আবার কোথাও ভারি হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিম্ন চাপটি ক্রমস দুর্বল হয়ে পড়ছে। সাগরে এখনও তিন নম্বর সংকেত বলবদ রয়েছে।’

বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের অন্তত ১৪ জেলায় আজ ১ থেকে ৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

আবহাওয়ার বার্তায় বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ভারী বৃষ্টিতে ৬ জেলায় বন্যার শঙ্কা

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র দেশের ছয় জেলায় বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে। তারা বলেছে, আজ ও আগামীকালের মধ্যে এসব এলাকার নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে একই নদীর আশপাশের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

বৃহস্পতিবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, ‘ছয় জেলা হচ্ছে ফেনী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ এবং নেত্রকোনা। ভারী বৃষ্টিতে সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। আজ ও আগামীকাল (৩০-৩১ মে) অনেক নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।’

এতে এসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে তিনি জানান।

এ দিকে, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী দু’দিন চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী ও ফেনী নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এই সময় মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। ফলে ফেনী জেলার মুহুরী নদীর আশপাশের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। পরবর্তী একদিন এসব নদীর পানি কমতে পারে।

back to top