ঈদে টানা ছুটিতে বাড়ি ফিরছেন মানুষ, ছবিটি রোববার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে তোলা -সংবাদ
রংপুরের বিলাসবহুল বা ‘বিজনেস ক্লাস’ বাসের টিকেট কাটতে ঢাকার শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে গিয়েছিলেন জাহিদুর রহমান। কিন্তু, দাম শুনেই স্তম্ভিত। টিকেটের দাম চাওয়া হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকা, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৬৭ শতাংশ বেশি।
আমরা এক হাজার টাকার ভাড়া সর্বোচ্চ ১২-১৩শ’ টাকা করেছি : বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন
সারাবছর যে ভাড়ায় চলতো সেই ভাড়ায় ঈদের সময়ও চলতে হবে : বিআরটিএ চেয়ারম্যান
তিনি অন্যান্য পরিবহনের কাউন্টারও ঘুরে কম দামে টিকেট কেনার চেষ্টা করেন। কিন্ত কোথাও না পেয়ে বেশি দামেই টিকেট কিনতে হয় তাকে।
জাহিদুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘আগে পীরগঞ্জের (রংপুরের) বিজনেস ক্লাস টিকেটের দাম ছিল দেড় হাজার ( ১ হাজার ৫০০) টাকা। সেটা কখনও চৌদ্দশ’ (১ হাজার ৪০০) টাকাও পাওয়া যেত। কিন্তু ঈদের আগে সেটার দাম হয়েছে আড়াই হাজার (২ হাজার ৫০০) টাকা।’
ওই টিকেট কাটতেও তাকে ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি দুইটা টিকেট কেটেছি ৫ হাজার ৩শ’ টাকা দিয়ে। আমার অতিরিক্ত ৩শ’ টাকা কাউন্টারের ছেলেদের বকশিস দিতে হয়েছে।’
জুনের তিন তারিখ মঙ্গলবার অরিন ট্রাভেল্স করে ঢাকা থেকে গাইবান্ধা যাবেন আনোয়ার হোসেন। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আগে যে টিকেট ১ হাজার বা ৯০০ টাকায় কিনতাম সেই টিকেট কিনতে হলো ২ হাজার টাকায়।’
ভাড়া বাড়ার বিষয়টি গাবতলী ও কল্যানপুরের কাউন্টারের দায়িত্বরতদের কাছে ‘খুব স্বাভাবিক’। সেখানকার একজন কাউন্টার ম্যানেজার বলেন, ঈদের আগে লাক্সারি বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। আর নন-এসি বাসের ভাড়া আগের চেয়ে ৫০-১০০ টাকা বেড়েছে।
অনান্য বছরগুলোতে ঈদের সময় ঢাকা থেকে উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যেতে যাত্রীদের সাধারণ যাত্রার চেয়ে তিন-চার গুণ সময় বেশি লাগতো। কিন্ত সিরাজগঞ্জ-রংপুর চার লেন রাস্তার কাজ শেষ হওয়ায় গত ঈদে কোনো যানযট ছিল না। যাত্রীরা বলছেন, আগে যেখানে একটি বাস রংপুরে যেতে ‘১৮-৩৬ ঘণ্টা’ সময় লাগতো, এখন সেখানে ‘৬-৮ ঘণ্টা’ সময় লাগছে। এ কারণে পরিবহনগুলোর ট্রিপের হার বেড়েছে ‘কয়েকগুণ’ তার পরও কেন ঈদের সময় ভাড়া ‘দ্বিগুণ’ করা হলো, প্রশ্ন তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-গাইবান্ধা রুটে নন এসি বাসের ভাড়া ৭৫০ টাকা। এটা আগে ছিল ৭০০ টাকা। কিন্ত ঈদ উপলক্ষে ৭৫০ টাকা রাখা হচ্ছে। বাস সংশ্লিষ্টদের দাবি সারাবছর তারা ‘৫০ টাকা ছাড়ে’ টিকেট বিক্রি করেন।
গাবতলী টার্মিনালে গাইবান্ধাগামী অরিন ট্রাভেল্স এর কাউন্টার মাস্টার
জহির রায়হান সংবাদকে বলেন, ‘এসি গাড়ির ভাড়া ষোলশ’ (১ হাজার ৬০০) টাকা ও ২ হাজার টাকা। যেটা আমরা ১ হাজার ৬০০ টাকা নিচ্ছি সেটা নরমাল সময়ে ৯০০ টাকা ছিল আর যেটা ২ হাজার টাকা নিচ্ছি সেটা নরমাল সময়ে বারোশ’ (১,২০০) টাকা ভাড়া ছিল।’
ভাড়া বাড়ানোর কথা স্বীকার করেন অরিন ট্রাভেল্সের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) সেলিম। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘এসি বাসের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি বিআরটিএ ঠিক করে না। এটা মালিক সমিতি দেখে।’
ঈদের বাসের ভাড়া ‘দ্বিগুণ’ হয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবীর সংবাদকে বলেন, ‘এতো বাড়ছে এটা তো আমার জানা নেই। এটা নিয়ে আমরা মিটিং করলাম। আমরা এক হাজার টাকার ভাড়া সর্বোচ্চ ১২-১৩শ’ টাকা করেছি। সেটাও শুধু র্নথ বেঙ্গলের। অন্য কোনো রুটে এক টাকাও বাড়বে না। এর আগের ঈদেও ওই রুটের বাস মালিকরা অনেক টাকা বাড়িয়েছিল এটা নিয়ে আমরা অনেক কথা শুনেছি।’
তার নিজের বাসের ভাড়া বাড়াননি দাবি করে তিনি কিছুটা আক্ষেপ করে বলেন, ‘শোনেন আমার নিজের গাড়ি চলে ঢাকা-বরিশালে আমি একটি টাকাও বাড়াইনি। আপনি খবর নিবেন ঈদ-কোরবানিতে আমার বাস একদম খালি আসে তবুও আমি একটি টাকাও বাড়াইনি।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল আলম সংবাদকে বলেন, ‘ডাবল ভাড়া নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। গাবতলিরটা বাস-ট্রাক মালিক সমিতি কট্রোল করে। তবে আমি তাদের সঙ্গে কথা বলবো।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ-এর চেয়ারম্যান মো. ইয়াসিন সংবাদকে বলেন, ‘আমরা তো প্রত্যোকটা কাউন্টারে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়েছি। আমার ম্যাজিস্ট্রেট ওখানে নিয়মিত কাজ করবে। আমরা মূলত টার্মিনাল ভিত্তিক কাজ করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসি গাড়িতে বিআরটিএ নির্ধারণ করে দেয় না ঠিক আছে। কিন্তু, ঈদের সময় তারা ভাড়া বাড়তে পারবে না। তারা সারাবছর যে ভাড়ায় চলতো সেই ভাড়ায় ঈদের সময়ও চলতে হবে।’
তিনি গাবতলিতে তৎক্ষণাত ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানোর কথাও বলেন।
ঈদে টানা ছুটিতে বাড়ি ফিরছেন মানুষ, ছবিটি রোববার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে তোলা -সংবাদ
রোববার, ০১ জুন ২০২৫
রংপুরের বিলাসবহুল বা ‘বিজনেস ক্লাস’ বাসের টিকেট কাটতে ঢাকার শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে গিয়েছিলেন জাহিদুর রহমান। কিন্তু, দাম শুনেই স্তম্ভিত। টিকেটের দাম চাওয়া হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকা, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৬৭ শতাংশ বেশি।
আমরা এক হাজার টাকার ভাড়া সর্বোচ্চ ১২-১৩শ’ টাকা করেছি : বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন
সারাবছর যে ভাড়ায় চলতো সেই ভাড়ায় ঈদের সময়ও চলতে হবে : বিআরটিএ চেয়ারম্যান
তিনি অন্যান্য পরিবহনের কাউন্টারও ঘুরে কম দামে টিকেট কেনার চেষ্টা করেন। কিন্ত কোথাও না পেয়ে বেশি দামেই টিকেট কিনতে হয় তাকে।
জাহিদুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘আগে পীরগঞ্জের (রংপুরের) বিজনেস ক্লাস টিকেটের দাম ছিল দেড় হাজার ( ১ হাজার ৫০০) টাকা। সেটা কখনও চৌদ্দশ’ (১ হাজার ৪০০) টাকাও পাওয়া যেত। কিন্তু ঈদের আগে সেটার দাম হয়েছে আড়াই হাজার (২ হাজার ৫০০) টাকা।’
ওই টিকেট কাটতেও তাকে ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি দুইটা টিকেট কেটেছি ৫ হাজার ৩শ’ টাকা দিয়ে। আমার অতিরিক্ত ৩শ’ টাকা কাউন্টারের ছেলেদের বকশিস দিতে হয়েছে।’
জুনের তিন তারিখ মঙ্গলবার অরিন ট্রাভেল্স করে ঢাকা থেকে গাইবান্ধা যাবেন আনোয়ার হোসেন। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আগে যে টিকেট ১ হাজার বা ৯০০ টাকায় কিনতাম সেই টিকেট কিনতে হলো ২ হাজার টাকায়।’
ভাড়া বাড়ার বিষয়টি গাবতলী ও কল্যানপুরের কাউন্টারের দায়িত্বরতদের কাছে ‘খুব স্বাভাবিক’। সেখানকার একজন কাউন্টার ম্যানেজার বলেন, ঈদের আগে লাক্সারি বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। আর নন-এসি বাসের ভাড়া আগের চেয়ে ৫০-১০০ টাকা বেড়েছে।
অনান্য বছরগুলোতে ঈদের সময় ঢাকা থেকে উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যেতে যাত্রীদের সাধারণ যাত্রার চেয়ে তিন-চার গুণ সময় বেশি লাগতো। কিন্ত সিরাজগঞ্জ-রংপুর চার লেন রাস্তার কাজ শেষ হওয়ায় গত ঈদে কোনো যানযট ছিল না। যাত্রীরা বলছেন, আগে যেখানে একটি বাস রংপুরে যেতে ‘১৮-৩৬ ঘণ্টা’ সময় লাগতো, এখন সেখানে ‘৬-৮ ঘণ্টা’ সময় লাগছে। এ কারণে পরিবহনগুলোর ট্রিপের হার বেড়েছে ‘কয়েকগুণ’ তার পরও কেন ঈদের সময় ভাড়া ‘দ্বিগুণ’ করা হলো, প্রশ্ন তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-গাইবান্ধা রুটে নন এসি বাসের ভাড়া ৭৫০ টাকা। এটা আগে ছিল ৭০০ টাকা। কিন্ত ঈদ উপলক্ষে ৭৫০ টাকা রাখা হচ্ছে। বাস সংশ্লিষ্টদের দাবি সারাবছর তারা ‘৫০ টাকা ছাড়ে’ টিকেট বিক্রি করেন।
গাবতলী টার্মিনালে গাইবান্ধাগামী অরিন ট্রাভেল্স এর কাউন্টার মাস্টার
জহির রায়হান সংবাদকে বলেন, ‘এসি গাড়ির ভাড়া ষোলশ’ (১ হাজার ৬০০) টাকা ও ২ হাজার টাকা। যেটা আমরা ১ হাজার ৬০০ টাকা নিচ্ছি সেটা নরমাল সময়ে ৯০০ টাকা ছিল আর যেটা ২ হাজার টাকা নিচ্ছি সেটা নরমাল সময়ে বারোশ’ (১,২০০) টাকা ভাড়া ছিল।’
ভাড়া বাড়ানোর কথা স্বীকার করেন অরিন ট্রাভেল্সের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) সেলিম। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘এসি বাসের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি বিআরটিএ ঠিক করে না। এটা মালিক সমিতি দেখে।’
ঈদের বাসের ভাড়া ‘দ্বিগুণ’ হয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবীর সংবাদকে বলেন, ‘এতো বাড়ছে এটা তো আমার জানা নেই। এটা নিয়ে আমরা মিটিং করলাম। আমরা এক হাজার টাকার ভাড়া সর্বোচ্চ ১২-১৩শ’ টাকা করেছি। সেটাও শুধু র্নথ বেঙ্গলের। অন্য কোনো রুটে এক টাকাও বাড়বে না। এর আগের ঈদেও ওই রুটের বাস মালিকরা অনেক টাকা বাড়িয়েছিল এটা নিয়ে আমরা অনেক কথা শুনেছি।’
তার নিজের বাসের ভাড়া বাড়াননি দাবি করে তিনি কিছুটা আক্ষেপ করে বলেন, ‘শোনেন আমার নিজের গাড়ি চলে ঢাকা-বরিশালে আমি একটি টাকাও বাড়াইনি। আপনি খবর নিবেন ঈদ-কোরবানিতে আমার বাস একদম খালি আসে তবুও আমি একটি টাকাও বাড়াইনি।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল আলম সংবাদকে বলেন, ‘ডাবল ভাড়া নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। গাবতলিরটা বাস-ট্রাক মালিক সমিতি কট্রোল করে। তবে আমি তাদের সঙ্গে কথা বলবো।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ-এর চেয়ারম্যান মো. ইয়াসিন সংবাদকে বলেন, ‘আমরা তো প্রত্যোকটা কাউন্টারে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়েছি। আমার ম্যাজিস্ট্রেট ওখানে নিয়মিত কাজ করবে। আমরা মূলত টার্মিনাল ভিত্তিক কাজ করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসি গাড়িতে বিআরটিএ নির্ধারণ করে দেয় না ঠিক আছে। কিন্তু, ঈদের সময় তারা ভাড়া বাড়তে পারবে না। তারা সারাবছর যে ভাড়ায় চলতো সেই ভাড়ায় ঈদের সময়ও চলতে হবে।’
তিনি গাবতলিতে তৎক্ষণাত ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানোর কথাও বলেন।