alt

জাতীয়

২১ আগস্ট হামলা: রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানি ১ জুলাই

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : রোববার, ০১ জুন ২০২৫

গত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সব আসামির খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেছে আপিল বিভাগ। আপিলের ওপর শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করা হয়েছে। এছাড়া আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিলের জন্য উভয়পক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির বেঞ্চ রোববার,(১ জুন ২০২৫) এ আদেশ দেয়। আদেশের বিষয়টি জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক সুমন। তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেনি আপিল বিভাগ। তবে লিভ মঞ্জুর করে আপিল শুনানির দিন ধার্য করেছে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল জব্বার ভুইয়া। অন্যদিকে আসামি পক্ষে ছিলেন এসএম শাহজাহান, কায়সার কামাল ও শিশির মনির। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে দিয়েছেন। এই রায় বাতিলের মধ্য দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৪৯ জন খালাস পান। এই রায় বাতিল চেয়ে আপিল করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার ওই ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোড়ন তোলে। সে সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তখন বিরোধী দলীয় নেতা।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ওই হামলা চালানো হয়। হামলায় অংশ নেয় হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি) জঙ্গিরা। তারা সহযোগিতা নেয় বিদেশি জঙ্গিদের। আর এই ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল তখনকার চারদলীয় জোট সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ‘ইন্ধন’। হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড আনা হয় পাকিস্তান থেকে।

২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর দণ্ডবিধি ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা দুই মামলার রায় দেন ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয় সেই রায়ে।

এরপর আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি করে ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর রায় দেয় বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ। তাতে জজ আদালতের রায় বাতিল করে যারা আপিল করেছেন এবং যারা করেননি, সবাইকে এ মামলা থেকে খালাস দেয়া হয়।

আসামিদের সবাই খালাস পাওয়ায় অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। তাদের প্রশ্ন ছিল, গ্রেনেড হামলায় নিহত ২৪ জনের পরিবার কি তাহলে সুবিচার পাবে না? সেই প্রশ্নের উত্তর আসে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত ৭৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে।

সেখানে বলা হয়, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল দেশের ইতিহাসে ‘একটি জঘন্য ও মর্মান্তিক’ ঘটনা, যেখানে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা আইভী রহমানও ছিলেন। ‘নিহতদের আত্মার প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করতে এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক ও স্বাধীন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, যা এ পর্যন্ত এই মামলায় সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত রয়েছে।

‘এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এই মামলাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত, যাতে সঠিক এবং দক্ষ তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে পুনরায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যায়।’ আদালতের রায়ের এই পর্যবেক্ষণের আলোকে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এই আদেশের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়। এরপর চলতি বছর ১৯ মার্চ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেখানে হাইকোর্টের রায় বাতিল চাওয়া হয়।

জজ আদালতে কার কী সাজা হয়েছিল?

১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিম, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, পিন্টুর ভাই হরকাতুল জিহাদ নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মাদ, শেখ আব্দুস সালাম, কাশ্মিরী নাগরিক আব্দুল মাজেদ ভাট, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মুফতি হান্নানের ভাই মুহিবুল্লাহ মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাইদ ওরফে ডাক্তার জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলুবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মাইনুদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, মো. রফিকুল ইসলাম সবুজ, মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন।

১৯ জনের যাবজ্জীবন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, বিএনপির সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ, হরকাতুল জিহাদ নেতা আব্দুল হান্নান ওরফে সাব্বির, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা আব্দুর রউফ ওরফে পীর সাহেব, মো. খলিল, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, বাবু ওরফে রাতুল বাবু, শাহাদত উল্যাহ ওরফে জুয়েল, আরিফ হাসান সুমন, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন।

১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, মামলার প্রথম দিকের তদন্ত কর্মকর্তা বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান ও এএসপি আব্দুর রশীদর ৩ বছরের জেল। সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা ও আইজিপি শহিদুল হক, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সাইফুল ইসলাম ডিউক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক এটিএম আমিন আহমদ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদারের ২ বছরের কারাদণ্ড। পুলিশের সাবেক উপ কমিশনার (পূর্ব) মো. ওবায়দুর রহমান এবং উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাইদ হাসানের ২ বছরের কারাদণ্ড।

ছবি

হোস্টেল না ছেড়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ঢাকা মেডিকেল শিক্ষার্থীদের

চোর চিনে ফেলায় বৃদ্ধাকে গলা কেটে হত্যা, গ্রেপ্তার ২

খুলনায় আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদকসহ বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার

জুলাই যোদ্ধাকে নির্যাতন, সিলেটে এসআই বরখাস্ত

বরগুনায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা মেয়েসহ তিনজন নিহত

ছবি

মাশরুম প্রকল্প এখন কৃষকের ‘গলার কাঁটা’

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক আশার আলো: ফখরুল

বিয়ের বয়স কমিয়ে ভয়ঙ্কর উদাহরণ তৈরি করা হয়েছিল: উপদেষ্টা শারমীন

ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল অপ্রশস্ত সড়কে আড়াই বছরে নিহত ৩৮

ছবি

নোয়াখালীতে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়, খোলা আকাশের নিচে অনেকে

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে ইউনূসের বক্তব্যকে ‘স্বৈরতন্ত্রের ভাষা’ বললেন আনু মুহাম্মদ

ছবি

ডেঙ্গু: ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত আরও ৩৫২ জন, মৃত্যু ১

ঢাকা মেডিকেল কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ, হোস্টেল ছাড়ার নির্দেশ

পলাশে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ছাত্রদল কর্মীর মৃত্যু

ইসিতে নিবন্ধন: শেষ দিনে আবেদন ‘জমা দেবে’ এনসিপি

ছবি

ইসরাইলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান পররাষ্ট্র উপদেষ্টার

চীন-বাংলাদেশ-পাকিস্তান নতুন ত্রিপক্ষীয় জোট হচ্ছে

সরকারের সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: সিইসি

উপাচার্য নিয়োগে তালিকা দিয়েছে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল

ছবি

হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক পদ্ধতি ব্যবহার করবো: বিবিসিকে ইউনূস

সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৭৮২

‘সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সহাবস্থানে দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি’

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের ‘সদিচ্ছা’ নেই: আদিবাসী ফোরাম

সমুদ্রসীমার পরিপূর্ণ হাইড্রোগ্রাফিক তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

কারা ফটকে নোবেলের বিয়ে, কনে ধর্ষণ মামলার বাদী

ছবি

ট্রাঙ্কের তালা খুলে এইচএসসির প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টা, দুইটি প্রশ্ন ছেঁড়া

৫ দিন বন্ধ ছিল ঘর, দরজা ভেঙে মিললো নারীর অর্ধগলিত মরদেহ

প্রকাশ্যে চলন্ত গাড়ির যন্ত্রাংশ চুরি, ভাইরাল ভিডিও দেখে গ্রেপ্তার ১

ছবি

পাহাড়ি ঢলে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর দু’টি স্থানে বাঁধ ভেঙে নিম্নঞ্চল প্লাবিত

ট্রেনে কাটা পড়ে দুই জেলায় ৫ জনের মৃত্যু

ছবি

ছুটির দিনেও সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভ

রোহিঙ্গা সংকট আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে : জাতিসংঘে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

শাবি শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ-ভিডিও ধারণের অভিযোগে মামলা, গ্রেপ্তার ২

নারীর ওপর সহিংসতার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মায়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখার আহ্বান তারেকের

tab

জাতীয়

২১ আগস্ট হামলা: রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানি ১ জুলাই

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

রোববার, ০১ জুন ২০২৫

গত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সব আসামির খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেছে আপিল বিভাগ। আপিলের ওপর শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করা হয়েছে। এছাড়া আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিলের জন্য উভয়পক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির বেঞ্চ রোববার,(১ জুন ২০২৫) এ আদেশ দেয়। আদেশের বিষয়টি জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক সুমন। তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেনি আপিল বিভাগ। তবে লিভ মঞ্জুর করে আপিল শুনানির দিন ধার্য করেছে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল জব্বার ভুইয়া। অন্যদিকে আসামি পক্ষে ছিলেন এসএম শাহজাহান, কায়সার কামাল ও শিশির মনির। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে দিয়েছেন। এই রায় বাতিলের মধ্য দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৪৯ জন খালাস পান। এই রায় বাতিল চেয়ে আপিল করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার ওই ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোড়ন তোলে। সে সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তখন বিরোধী দলীয় নেতা।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ওই হামলা চালানো হয়। হামলায় অংশ নেয় হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি) জঙ্গিরা। তারা সহযোগিতা নেয় বিদেশি জঙ্গিদের। আর এই ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল তখনকার চারদলীয় জোট সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ‘ইন্ধন’। হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড আনা হয় পাকিস্তান থেকে।

২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর দণ্ডবিধি ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা দুই মামলার রায় দেন ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয় সেই রায়ে।

এরপর আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি করে ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর রায় দেয় বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ। তাতে জজ আদালতের রায় বাতিল করে যারা আপিল করেছেন এবং যারা করেননি, সবাইকে এ মামলা থেকে খালাস দেয়া হয়।

আসামিদের সবাই খালাস পাওয়ায় অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। তাদের প্রশ্ন ছিল, গ্রেনেড হামলায় নিহত ২৪ জনের পরিবার কি তাহলে সুবিচার পাবে না? সেই প্রশ্নের উত্তর আসে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত ৭৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে।

সেখানে বলা হয়, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল দেশের ইতিহাসে ‘একটি জঘন্য ও মর্মান্তিক’ ঘটনা, যেখানে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা আইভী রহমানও ছিলেন। ‘নিহতদের আত্মার প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করতে এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক ও স্বাধীন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, যা এ পর্যন্ত এই মামলায় সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত রয়েছে।

‘এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এই মামলাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত, যাতে সঠিক এবং দক্ষ তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে পুনরায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যায়।’ আদালতের রায়ের এই পর্যবেক্ষণের আলোকে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এই আদেশের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়। এরপর চলতি বছর ১৯ মার্চ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেখানে হাইকোর্টের রায় বাতিল চাওয়া হয়।

জজ আদালতে কার কী সাজা হয়েছিল?

১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিম, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, পিন্টুর ভাই হরকাতুল জিহাদ নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মাদ, শেখ আব্দুস সালাম, কাশ্মিরী নাগরিক আব্দুল মাজেদ ভাট, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মুফতি হান্নানের ভাই মুহিবুল্লাহ মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাইদ ওরফে ডাক্তার জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলুবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মাইনুদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, মো. রফিকুল ইসলাম সবুজ, মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন।

১৯ জনের যাবজ্জীবন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, বিএনপির সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ, হরকাতুল জিহাদ নেতা আব্দুল হান্নান ওরফে সাব্বির, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা আব্দুর রউফ ওরফে পীর সাহেব, মো. খলিল, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, বাবু ওরফে রাতুল বাবু, শাহাদত উল্যাহ ওরফে জুয়েল, আরিফ হাসান সুমন, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন।

১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, মামলার প্রথম দিকের তদন্ত কর্মকর্তা বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান ও এএসপি আব্দুর রশীদর ৩ বছরের জেল। সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা ও আইজিপি শহিদুল হক, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সাইফুল ইসলাম ডিউক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক এটিএম আমিন আহমদ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদারের ২ বছরের কারাদণ্ড। পুলিশের সাবেক উপ কমিশনার (পূর্ব) মো. ওবায়দুর রহমান এবং উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাইদ হাসানের ২ বছরের কারাদণ্ড।

back to top