ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ট্রান্সফরমারসহ বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে -সংবাদ
কুমিল্লায় ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র কবলে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে ১৭ উপজেলার বৈদ্যুতিক লাইন। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কোথাও বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে গেছে, কোথাও হেলে পড়েছে।
জেলার ১৭ উপজেলায় খুঁটি ভেঙেছে ৮৪টি, ট্রান্সফরমার বিকল ৬২টি
আন্দোলনে যোগ
দিতে কর্মস্থল ছেড়ে ৩০ শতাংশ লাইনম্যান ঢাকায়
আবার কোথাও ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে তার ছিড়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে পুরো জেলা জুড়ে। ঘূর্ণিঝড়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় আড়াই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট চারটি সমিতি দাবি করছে। এ দিকে, ৬০ ঘণ্টায়ও শতভাগ বিদ্যুৎ লাইন মেরামত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি সমিতির ৩০ শতাংশ লাইনম্যান আন্দোলন করতে ঢাকায় রয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ সংযোগ মেরামতে হিমশিম খাচ্ছে সমিতি।
জানা যায়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং পল্লী বিদ্যুতের চারটি সমিতির অধীনে কুমিল্লা মহানগরসহ ১৭টি উপজেলা এবং পাশর্^বর্তী দু’টি জেলার আরও দু’টি উপজেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ করে আসছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো বাতাসে কুমিল্লা জেলার প্রায় সব উপজেলার বৈদ্যুতিক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে পুরো জেলা। প্রথম ২৪ ঘণ্টায় জেলার ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ লাইন চালু করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। ফলে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ দেখা দেয়। বিদ্যুতের অভাবে মোবাইল ফোনের চার্জ বন্ধ হয়ে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি- ১, ২, ৩ ও ৪ এর জেনারেল ম্যানেজারদের তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড়ে ৮৪টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে গেছে। ট্রান্সফরমার বিকল হয়েছে ৬২টি এবং প্রায় সাড়ে ৪শ’ স্থানে বিদ্যুতের তার ছিড়ে গেছে। এছাড়াও দুইশতাধিক স্থানে পোল হেলে যাওয়া, শতাধিক স্থানে ক্রস আর্ম ভেঙ্গে, দেড়শতাধিক স্থানে ইনসুলেটর ও তিনশতাধিক স্থানে মিটার ভেঙ্গে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে। প্রাথমিকভাবে অন্তত আড়াই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সমিতি।
জানা যায়, কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধীনে চারটি উপজেলায় ২৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে ১৯টি ট্রান্সফরমার বিকল হয় এবং ১৫৫ স্থানে বিদ্যুতের তার ছিড়ে যায়। সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় চান্দিনা উপজেলায়। শুধুমাত্র ওই উপজেলায় ৮টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে গেছে। কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর অধীনে ৬টি উপজেলায় ৭টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে এবং ১৩টি ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর ৬টি উপজেলায় সর্বোচ্চ ৪৩টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে এবং ১৮টি ট্রান্সফরমার বিকল হয়। ওই সমিতির অধীনে ১৮০টি স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪ এর অধীনে ৩টি উপজেলায় ৯টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে ১২টি ট্রান্সফরমার বিকল হয় এবং ১৭৬টি স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার শ্রীমন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সালাম জানান, ঘুর্ণিঝড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর গতকাল শনিবার রাত সাড়ে আটটায় এলাকায় বিদ্যুৎ এসেছে। টানা দুই দিন বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোনের চার্জ শেষ হয়ে সবার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফ্রিজে থাকা অনেক মালামাল নষ্ট হয়ে যায়।
একই উপজেলার সব্দলপুর গ্রামের বাসিন্দা সোহেল রানা জানান, গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। সন্ধ্যায় একটু উঁকি দিয়ে ঘণ্টাখানেক ছিল। তারপর সেই বিদ্যুৎ আসে গত শুক্রবার বিকেলে। ততক্ষণে আমার খামারের শতশত মুরগির ডিম নষ্ট হয়ে গেছে।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত লাইন নির্মাণ নিজেদের লাইনম্যান সঙ্কট থাকায় বহিরাগত লোকজন দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। প্রতিটি সমিতিতে ১-২শ’ লাইনম্যান নিয়োজিত। কিন্তু আন্দোলন করতে তারা ঢাকায় আছে ৩০ শতাংশ। এই বিপর্যয়ে লাইনম্যানের অনেকটা সঙ্কটে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মো. আবু রায়হান জানান, ঘূর্ণিঝড়ে বৈদ্যুতিক লাইন অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত শুক্রবার সকাল থেকেই আমাদের লোকজন কাজ করছে। বর্তমানে আমাদের সব লাইন চালু আছে। তবে গতকাল শনিবার বিকেলে বৃষ্টির সঙ্গে আবারও ঝড়ো বাতাসে বেশ কিছু জায়গায় সমস্যা হয়েছে। সে সব সমাধানের চেষ্টা করছি। আন্দোলন করতে লাইনম্যান ঢাকায় থাকার প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা বহিরাগত লোকজন দিয়ে কাজ চালিয়ে নিয়েছি। যাতে লাইনম্যানদের সঙ্কটে কাজ থেমে না থাকে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ট্রান্সফরমারসহ বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে -সংবাদ
রোববার, ০১ জুন ২০২৫
কুমিল্লায় ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র কবলে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে ১৭ উপজেলার বৈদ্যুতিক লাইন। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কোথাও বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে গেছে, কোথাও হেলে পড়েছে।
জেলার ১৭ উপজেলায় খুঁটি ভেঙেছে ৮৪টি, ট্রান্সফরমার বিকল ৬২টি
আন্দোলনে যোগ
দিতে কর্মস্থল ছেড়ে ৩০ শতাংশ লাইনম্যান ঢাকায়
আবার কোথাও ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে তার ছিড়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে পুরো জেলা জুড়ে। ঘূর্ণিঝড়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় আড়াই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট চারটি সমিতি দাবি করছে। এ দিকে, ৬০ ঘণ্টায়ও শতভাগ বিদ্যুৎ লাইন মেরামত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি সমিতির ৩০ শতাংশ লাইনম্যান আন্দোলন করতে ঢাকায় রয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ সংযোগ মেরামতে হিমশিম খাচ্ছে সমিতি।
জানা যায়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং পল্লী বিদ্যুতের চারটি সমিতির অধীনে কুমিল্লা মহানগরসহ ১৭টি উপজেলা এবং পাশর্^বর্তী দু’টি জেলার আরও দু’টি উপজেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ করে আসছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো বাতাসে কুমিল্লা জেলার প্রায় সব উপজেলার বৈদ্যুতিক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে পুরো জেলা। প্রথম ২৪ ঘণ্টায় জেলার ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ লাইন চালু করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। ফলে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ দেখা দেয়। বিদ্যুতের অভাবে মোবাইল ফোনের চার্জ বন্ধ হয়ে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি- ১, ২, ৩ ও ৪ এর জেনারেল ম্যানেজারদের তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড়ে ৮৪টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে গেছে। ট্রান্সফরমার বিকল হয়েছে ৬২টি এবং প্রায় সাড়ে ৪শ’ স্থানে বিদ্যুতের তার ছিড়ে গেছে। এছাড়াও দুইশতাধিক স্থানে পোল হেলে যাওয়া, শতাধিক স্থানে ক্রস আর্ম ভেঙ্গে, দেড়শতাধিক স্থানে ইনসুলেটর ও তিনশতাধিক স্থানে মিটার ভেঙ্গে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে। প্রাথমিকভাবে অন্তত আড়াই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সমিতি।
জানা যায়, কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধীনে চারটি উপজেলায় ২৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে ১৯টি ট্রান্সফরমার বিকল হয় এবং ১৫৫ স্থানে বিদ্যুতের তার ছিড়ে যায়। সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় চান্দিনা উপজেলায়। শুধুমাত্র ওই উপজেলায় ৮টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে গেছে। কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর অধীনে ৬টি উপজেলায় ৭টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে এবং ১৩টি ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর ৬টি উপজেলায় সর্বোচ্চ ৪৩টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে এবং ১৮টি ট্রান্সফরমার বিকল হয়। ওই সমিতির অধীনে ১৮০টি স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪ এর অধীনে ৩টি উপজেলায় ৯টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে ১২টি ট্রান্সফরমার বিকল হয় এবং ১৭৬টি স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার শ্রীমন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সালাম জানান, ঘুর্ণিঝড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর গতকাল শনিবার রাত সাড়ে আটটায় এলাকায় বিদ্যুৎ এসেছে। টানা দুই দিন বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোনের চার্জ শেষ হয়ে সবার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফ্রিজে থাকা অনেক মালামাল নষ্ট হয়ে যায়।
একই উপজেলার সব্দলপুর গ্রামের বাসিন্দা সোহেল রানা জানান, গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। সন্ধ্যায় একটু উঁকি দিয়ে ঘণ্টাখানেক ছিল। তারপর সেই বিদ্যুৎ আসে গত শুক্রবার বিকেলে। ততক্ষণে আমার খামারের শতশত মুরগির ডিম নষ্ট হয়ে গেছে।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত লাইন নির্মাণ নিজেদের লাইনম্যান সঙ্কট থাকায় বহিরাগত লোকজন দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। প্রতিটি সমিতিতে ১-২শ’ লাইনম্যান নিয়োজিত। কিন্তু আন্দোলন করতে তারা ঢাকায় আছে ৩০ শতাংশ। এই বিপর্যয়ে লাইনম্যানের অনেকটা সঙ্কটে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মো. আবু রায়হান জানান, ঘূর্ণিঝড়ে বৈদ্যুতিক লাইন অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত শুক্রবার সকাল থেকেই আমাদের লোকজন কাজ করছে। বর্তমানে আমাদের সব লাইন চালু আছে। তবে গতকাল শনিবার বিকেলে বৃষ্টির সঙ্গে আবারও ঝড়ো বাতাসে বেশ কিছু জায়গায় সমস্যা হয়েছে। সে সব সমাধানের চেষ্টা করছি। আন্দোলন করতে লাইনম্যান ঢাকায় থাকার প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা বহিরাগত লোকজন দিয়ে কাজ চালিয়ে নিয়েছি। যাতে লাইনম্যানদের সঙ্কটে কাজ থেমে না থাকে।