alt

জাতীয়

সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সংকট

বাকী বিল্লাহ : রোববার, ১৫ জুন ২০২৫

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের (আইসিইউ) বিশেষজ্ঞ ডা. একেএম আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) চিকিৎসার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে চিন্তা করলে আইসিইউ দরকার আছে। তাই এখনই দেশের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্পেশালাইজড হাসপাতাল, জেলা ও বিভাগীয় হাসপাতালের আইসিইউর সিটগুলো পুনরায় সচল করা দরকার।

৬শ’ হাসপাতালে সিট আছে ১ হাজার, দরকার হতে পারে কয়েক হাজার

সরকারিতে সিট ভাড়া খরচ দিনে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা

প্রাইভেটে সিট ভাড়া দিনে ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা

মুমূর্ষু রোগী বাঁচাতে আগেই প্রস্তুতি

রাখা দরকার:

ডা. আখতারুজ্জামান

কারণ করোনা রোগী বেশি আক্রান্ত ও শ্বাসকষ্ট হলে আইসিইউ দরকার পড়তে পারে। দরকার হবে অক্সিজেনেরও। তবে এইবার অক্সিজেন সংকট হবে না বলে তিনি আশাবাদী।

আইসিইউ পরিচালনার জন্য এখনই অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের জনবল বৃদ্ধি করা দরকার। ভেন্টিলেটারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি প্রস্তুতি নিয়ে রাখা ভালো। আইসিইউর পাশাপাশি সিসিইউ ও এসডিইউ যেসব হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে আছে তাদের এখনই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে বলে এই বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেন। রোগী বাড়তে শুরু করলে আইসিইউর চাহিদা বাড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, সারা দেশে ৬শ’র বেশি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইনস্টিটিউট, জেলা হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। এসব হাসপাতালে প্রতিদিন মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসার জন্য আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন ইউনিট) সিটের দরকার। কিন্তু সিট পাওয়া যেন সোনার হরিণ।

প্রতিদিন থাকে সিট সংকট। সিরিয়াল পেতেও কষ্টকর। কার আগে কে রোগীর জন্য সিট নিবে তার জন্য সিরিয়াল দিয়ে অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় কাজ হয় না। চেষ্টা করতে করতে রোগী অন্য হাসপাতালে মারাও যায়। আবার হাসপাতালে ভর্তিকৃত অপারেশনের রোগীর জন্য আইসিইউ রাখতে হয়। যার কারণে সংকট থেকেই যায়।

আবার দেশের জেলা ও উপজেলা থেকে রোগী ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে সরকারি হাসপাতালে দিনের পর দিন চেষ্টা করেও সিট পাওয়া কষ্টকর। কোনো উপায় না পেয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।

প্রাইভেট হাসপাতালে কিছুদিন রোগী রাখলে ও বেশি টাকা খরচ করার পর অর্থকষ্টে আবার সরকারি হাসপাতালে তদবির করতে হয়। আবার অনেকেই বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েও (সাবেক পিজি হাসপাতাল) আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে রোগীকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করে।

দেশে করোনা মহামারি থেকে এখন পর্যন্ত হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সংকট চলছে। এছাড়াও অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞের অভাব রয়েছে। হাসপাতালগুলোতে অপারেশন ও আইসিইউ চালানোর জন্য দরকার কমপক্ষে ১০ হাজার শিক্ষক ও চিকিৎসকের। আছে প্রায় ২ হাজার ১শ’ জন।

অ্যানেসথেসিয়া সংকটের কারণে নিয়মিত রুটিন অপারেশন করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। পদ আছে বিশেষজ্ঞ নেই। যার কারণে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে আইসিইউ ও অ্যানেসথেসিয়ার কার্যক্রম। অনেক হাসপাতালে যন্ত্রপাতি থাকলেও বিশেষজ্ঞের অভাব রয়েছে। নষ্ট ও পুরনো ভেন্টিলেটর আছে।

অ্যানেসথেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর ডাক্তার একেএম আক্তারুজ্জামান জানান, সারা দেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে আইসিইউ ও অ্যানেসথেসিয়া শিক্ষকের সংকট চলছে।

অনেক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অ্যানেসথেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের পদ আছে। কিন্তু শূন্য পড়ে আছে। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশের অনেক হাসপাতালে এখনও পর্যাপ্ত অ্যানেসথেসিয়া শিক্ষক ও আইসিইউ সংকট রয়েছে।

খোদ রাজধানীর অনেক হাসপাতালে তার জানামতে শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। অনেকেই এই বিভাগে আসতে চান না। প্রণোদনা দিয়ে হলেও বিশেষজ্ঞ রাখা দরকার। না হলে সংকট আরও বাড়বে। অপারেশন করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। ক্রিটিক্যাল রোগী বাঁচাতে বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের দরকার।

তার মতে, প্রফেসরের পদ আছে ২৭টি। শিক্ষক আছে ৭ জন। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ থেকে ৫ জন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ জন। অন্যান্য হাসপাতালে সিনিয়রের পদ শূন্য। শিক্ষক না থাকলে অ্যাকাডেমিক সাইট চালানো কষ্টকর। এরপর আইসিইউতে মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা তদারকি করতে হয়। সেখানে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) সমস্যা হয়।

মিটফোর্ড হাসপাতাল, সোহ্রাওয়ার্দী হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, নিউরোসায়েন্স হাসপাতালসহ অনেক সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ও অ্যানেসথেসিয়ার জনবলের অভাব রয়েছে।

এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, সারা দেশে বিশেষজ্ঞ দরকার কমপেক্ষ ৬ থেকে ৭ হাজার। আছে ২ হাজারের কিছু বেশি। এভাবে সারা দেশে অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞের সংকট রয়েছে। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া দরকার বলে এই বিশেষজ্ঞ জানান।

আইসিইউর সিট বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ সুপার স্পেশাল হাসপাতালে ১শ’ আইসিইউ বেড বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫টি সিট চালু করা হয়েছে। অন্যগুলো প্রক্রিয়াধীন।

আর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইসিইউ সিট আছে ৩২টি। ক্রিটিক্যাল রোগীদের রাখার জন্য উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ইউনিট (এসডিইউ) আছে ১৪টি। এভাবে সারা দেশে সরকারি হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও জেলা এবং উপজেলা হাসপাতাল মিলে আইসিইউ সিট এক হাজার হবে। প্রাইভেটে ২ থেকে আড়াই হাজার। আইসি ইউর চাহিদা বেশি। সংকটের কারণে সবাইকে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

শাহবাগ বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) আইসিসিউতে মুমূর্ষু রোগী ভর্তি করতে সিরিয়াল দিতে হয়। আবার অনেকেই তদবিরও করে। এরপর সিরিয়াল পাওয়া কষ্টকর। অনেকেই ভর্তির আগে মারা যান।

আইসিইউ বিভাগ থেকে জানা গেছে, ভার্সিটির কেবিন ব্লকে ও সি ব্লকে আইসিইউ সিট আছে। অনেক সময় ভর্তির জন্য সিরিয়াল থাকে। সিট কখনও খালি থাকে। আবার কখনও খালি থাকে না।

হাসপাতালের অপারেশনের রোগীর জন্য সিট রাখতে হয়। আবার বাইরের রোগীও ভর্তি করতে হয়। কেবিন ব্লকে ২১টি সিট আছে। সি ব্লকে ১১টি। এসডিতে আছে ১১টি। তবে শিক্ষকরা বলছেন সিট সংখ্যা আরও বেশি।

আবার অনেকেই প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করার পর টাকা শেষ হয়ে গেলে বাংলাদেশ মেডিকেলে ভর্তির চেষ্টা করেন। কোনোমতে, তদবির করে ভর্তি করতে পারলে তারা স্বস্তি ফিরে পায়। কারণ সরকারিতে খরচ দিনে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা। তবে কখনও ওষুধ খরচ বেশি লাগতে পারে। আর প্রাইভেটে হাসপাতাল বুঝে খরচও বেশি হয়। যা মধ্যবিত্ত বা গরিব পরিবারের চালানো কষ্টকর বলে মন্তব্য করেন।

উল্লেখ্য, করোনা মহামারির সময় দেশে আইসিইউ পাওয়া কষ্টকর ছিল। আইসিইউর অভাবে অনেক ক্রিটিক্যাল রোগী মারাও গেছেন। আবার বিশেষজ্ঞ না থাকায় ক্রিটিক্যাল রোগী আইসিইউতে ভর্তি কঠিন ছিল। ওই সময় হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলোতে আইসিইউ সিট বাড়ানো ও জনবল বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরপর তা ঝিমিয়ে পড়েছে। এখনও অনেক নতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ ও অ্যানেসথেসিয়া সংকট বিরাজ করছে। এখনই উদ্যোগ নিলে মুমূর্ষু রোগীরা উপকৃত হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেন।

ছবি

দুর্নীতি মামলা: শেখ হাসিনার পরিবারের ৭ সদস্যের বিচার শুরু

ছবি

গাজীপুরে একটি আসন বাড়ছে, বাগেরহাটে কমছে একটি: নির্বাচন কমিশন

আ’লীগ আমলের তিন সংসদ নির্বাচন পর্যালোচনায় গঠিত কমিটিকে কমিশনে রূপান্তর

ছবি

বিমান শারজাহ থেকে ফিরলো ৬ ঘণ্টা দেরিতে

ছবি

ইসলামী ব্যাংকের ‘অর্থ আত্মসাৎ’: নাবিল গ্রুপের আমিনুলের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

স্বাদে-গন্ধে তুলনাহীন শ্রীমঙ্গলের সুমিষ্ট আনারস, সংরক্ষণের ব্যবস্থা জরুরি

ছবি

আসিফের মৃত্যু: সেনা-পুলিশসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলার তদন্তে পিবিআই

ছবি

খালেদা জিয়া সুস্থ, নির্বাচনে অংশ নেবেন: আবদুল আউয়াল মিন্টু

‘মারধর-নির্যাতন’, অনুপস্থিত: ঊর্ধ্বতন ৫ পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত

ছবি

মুরাদনগরে বিএনপি-আসিফ ও এনসিপি সংঘর্ষ, আহত ৩০

ছবি

রাজধানীতে মাসে গড়ে ২০ হত্যা ও ৫ ডাকাতি: ডিএমপি

ছবি

‘বৈষম্যবিরোধী’ নেতার চাঁদাবাজি: পীরগঞ্জের সাবেক এমপির কাছ থেকে চেক লিখে নেন রিয়াদ

ছবি

সংসদীয় ৩৯ আসনের সীমানায় পরিবর্তন, দাবি-আপত্তি ১০ আগস্টের মধ্যে

ছবি

বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ শুল্ক কমাবে যুক্তরাষ্ট্র, আশা সরকারের

ছবি

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক ৭ দিনের রিমান্ডে

ছবি

৫ আগস্ট ঘিরে শঙ্কা! স্বরাষ্ট্র কর্মকর্তাদের বিপরীতমুখী বক্তব্য

ছবি

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত মোবারকও আপিলে খালাস

ছবি

জুলাই সনদ ইস্যুতে সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার, জানালেন আলী রীয়াজ

ছবি

পুঁজিবাজারে আজীবন ‘অবাঞ্ছিত’ সালমান, শায়ান ও শিবলী

ছবি

জেলা জজ ও সচিবদের মর্যাদা নির্ধারণ নিয়ে রিভিউয়ের রায় অপেক্ষায়

ছবি

রাষ্ট্রের মূলনীতি থেকে নারী প্রতিনিধিত্ব : ঐকমত্যে পৌঁছাতে দ্বিতীয় দফার বৈঠকে কমিশন

ছবি

আবু সাঈদ হত্যা: অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ, আদেশ ৬ অগাস্ট

ছবি

গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় আটক রাজ্জাকের বাসা থেকে ২ কোটি টাকার চেক উদ্ধার: ডিএমপি

ছবি

‘পলাতক’ যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় চাকরিচ্যুত, ফেইসবুকে নিজেকে বললেন ‘ভাগ্যবান’

ছবি

১০টির বেশি সিম থাকলে এসএমএস-বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ধাপে ধাপে বন্ধ করবে বিটিআরসি

ছবি

রংপুরে হিন্দুদের ঘরবাড়িতে হামলার ঘটনায় পাঁচজন গ্রেপ্তার: পুলিশ

ছবি

তিন নির্বাচন পর্যালোচনায় গঠিত কমিটিকে ‘কমিশনে’ রূপান্তর

ছবি

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক ৭ দিনের রিমান্ডে

ছবি

যুদ্ধাপরাধ: মৃত্যুদণ্ড পাওয়া মোবারক আপিলে খালাস

ছবি

নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জাতীয় ঐকমত্যের প্রত্যাশা

ছবি

আবু সাঈদ হত্যা মামলা: অভিযোগ গঠনের অবশিষ্ট শুনানি বুধবার

ছবি

জুলাইয়ের মধ্যে ‘যেভাবেই হোক’ সনদ চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন: আলী রীয়াজ

ছবি

জাতীয় সরকার গঠন এবং নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়: চীনের রাষ্ট্রদূত

ছবি

রংপুরে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা: পুলিশ ও প্রশাসনের অবস্থান জানালো প্রেস উইং

ছবি

জুলাই সনদের খসড়া প্রকাশ: দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার

জন্মশতবর্ষের আয়োজনে মঈদুল হাসান, তাজউদ্দীন আহমদ দেশের স্বাধীনতার প্রধান পুরুষ

tab

জাতীয়

সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সংকট

বাকী বিল্লাহ

রোববার, ১৫ জুন ২০২৫

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের (আইসিইউ) বিশেষজ্ঞ ডা. একেএম আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) চিকিৎসার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে চিন্তা করলে আইসিইউ দরকার আছে। তাই এখনই দেশের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্পেশালাইজড হাসপাতাল, জেলা ও বিভাগীয় হাসপাতালের আইসিইউর সিটগুলো পুনরায় সচল করা দরকার।

৬শ’ হাসপাতালে সিট আছে ১ হাজার, দরকার হতে পারে কয়েক হাজার

সরকারিতে সিট ভাড়া খরচ দিনে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা

প্রাইভেটে সিট ভাড়া দিনে ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা

মুমূর্ষু রোগী বাঁচাতে আগেই প্রস্তুতি

রাখা দরকার:

ডা. আখতারুজ্জামান

কারণ করোনা রোগী বেশি আক্রান্ত ও শ্বাসকষ্ট হলে আইসিইউ দরকার পড়তে পারে। দরকার হবে অক্সিজেনেরও। তবে এইবার অক্সিজেন সংকট হবে না বলে তিনি আশাবাদী।

আইসিইউ পরিচালনার জন্য এখনই অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের জনবল বৃদ্ধি করা দরকার। ভেন্টিলেটারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি প্রস্তুতি নিয়ে রাখা ভালো। আইসিইউর পাশাপাশি সিসিইউ ও এসডিইউ যেসব হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে আছে তাদের এখনই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে বলে এই বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেন। রোগী বাড়তে শুরু করলে আইসিইউর চাহিদা বাড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, সারা দেশে ৬শ’র বেশি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইনস্টিটিউট, জেলা হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। এসব হাসপাতালে প্রতিদিন মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসার জন্য আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন ইউনিট) সিটের দরকার। কিন্তু সিট পাওয়া যেন সোনার হরিণ।

প্রতিদিন থাকে সিট সংকট। সিরিয়াল পেতেও কষ্টকর। কার আগে কে রোগীর জন্য সিট নিবে তার জন্য সিরিয়াল দিয়ে অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় কাজ হয় না। চেষ্টা করতে করতে রোগী অন্য হাসপাতালে মারাও যায়। আবার হাসপাতালে ভর্তিকৃত অপারেশনের রোগীর জন্য আইসিইউ রাখতে হয়। যার কারণে সংকট থেকেই যায়।

আবার দেশের জেলা ও উপজেলা থেকে রোগী ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে সরকারি হাসপাতালে দিনের পর দিন চেষ্টা করেও সিট পাওয়া কষ্টকর। কোনো উপায় না পেয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।

প্রাইভেট হাসপাতালে কিছুদিন রোগী রাখলে ও বেশি টাকা খরচ করার পর অর্থকষ্টে আবার সরকারি হাসপাতালে তদবির করতে হয়। আবার অনেকেই বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েও (সাবেক পিজি হাসপাতাল) আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে রোগীকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করে।

দেশে করোনা মহামারি থেকে এখন পর্যন্ত হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সংকট চলছে। এছাড়াও অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞের অভাব রয়েছে। হাসপাতালগুলোতে অপারেশন ও আইসিইউ চালানোর জন্য দরকার কমপক্ষে ১০ হাজার শিক্ষক ও চিকিৎসকের। আছে প্রায় ২ হাজার ১শ’ জন।

অ্যানেসথেসিয়া সংকটের কারণে নিয়মিত রুটিন অপারেশন করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। পদ আছে বিশেষজ্ঞ নেই। যার কারণে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে আইসিইউ ও অ্যানেসথেসিয়ার কার্যক্রম। অনেক হাসপাতালে যন্ত্রপাতি থাকলেও বিশেষজ্ঞের অভাব রয়েছে। নষ্ট ও পুরনো ভেন্টিলেটর আছে।

অ্যানেসথেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর ডাক্তার একেএম আক্তারুজ্জামান জানান, সারা দেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে আইসিইউ ও অ্যানেসথেসিয়া শিক্ষকের সংকট চলছে।

অনেক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অ্যানেসথেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের পদ আছে। কিন্তু শূন্য পড়ে আছে। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশের অনেক হাসপাতালে এখনও পর্যাপ্ত অ্যানেসথেসিয়া শিক্ষক ও আইসিইউ সংকট রয়েছে।

খোদ রাজধানীর অনেক হাসপাতালে তার জানামতে শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। অনেকেই এই বিভাগে আসতে চান না। প্রণোদনা দিয়ে হলেও বিশেষজ্ঞ রাখা দরকার। না হলে সংকট আরও বাড়বে। অপারেশন করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। ক্রিটিক্যাল রোগী বাঁচাতে বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের দরকার।

তার মতে, প্রফেসরের পদ আছে ২৭টি। শিক্ষক আছে ৭ জন। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ থেকে ৫ জন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ জন। অন্যান্য হাসপাতালে সিনিয়রের পদ শূন্য। শিক্ষক না থাকলে অ্যাকাডেমিক সাইট চালানো কষ্টকর। এরপর আইসিইউতে মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা তদারকি করতে হয়। সেখানে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) সমস্যা হয়।

মিটফোর্ড হাসপাতাল, সোহ্রাওয়ার্দী হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, নিউরোসায়েন্স হাসপাতালসহ অনেক সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ও অ্যানেসথেসিয়ার জনবলের অভাব রয়েছে।

এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, সারা দেশে বিশেষজ্ঞ দরকার কমপেক্ষ ৬ থেকে ৭ হাজার। আছে ২ হাজারের কিছু বেশি। এভাবে সারা দেশে অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞের সংকট রয়েছে। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া দরকার বলে এই বিশেষজ্ঞ জানান।

আইসিইউর সিট বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ সুপার স্পেশাল হাসপাতালে ১শ’ আইসিইউ বেড বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫টি সিট চালু করা হয়েছে। অন্যগুলো প্রক্রিয়াধীন।

আর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইসিইউ সিট আছে ৩২টি। ক্রিটিক্যাল রোগীদের রাখার জন্য উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ইউনিট (এসডিইউ) আছে ১৪টি। এভাবে সারা দেশে সরকারি হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও জেলা এবং উপজেলা হাসপাতাল মিলে আইসিইউ সিট এক হাজার হবে। প্রাইভেটে ২ থেকে আড়াই হাজার। আইসি ইউর চাহিদা বেশি। সংকটের কারণে সবাইকে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

শাহবাগ বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) আইসিসিউতে মুমূর্ষু রোগী ভর্তি করতে সিরিয়াল দিতে হয়। আবার অনেকেই তদবিরও করে। এরপর সিরিয়াল পাওয়া কষ্টকর। অনেকেই ভর্তির আগে মারা যান।

আইসিইউ বিভাগ থেকে জানা গেছে, ভার্সিটির কেবিন ব্লকে ও সি ব্লকে আইসিইউ সিট আছে। অনেক সময় ভর্তির জন্য সিরিয়াল থাকে। সিট কখনও খালি থাকে। আবার কখনও খালি থাকে না।

হাসপাতালের অপারেশনের রোগীর জন্য সিট রাখতে হয়। আবার বাইরের রোগীও ভর্তি করতে হয়। কেবিন ব্লকে ২১টি সিট আছে। সি ব্লকে ১১টি। এসডিতে আছে ১১টি। তবে শিক্ষকরা বলছেন সিট সংখ্যা আরও বেশি।

আবার অনেকেই প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করার পর টাকা শেষ হয়ে গেলে বাংলাদেশ মেডিকেলে ভর্তির চেষ্টা করেন। কোনোমতে, তদবির করে ভর্তি করতে পারলে তারা স্বস্তি ফিরে পায়। কারণ সরকারিতে খরচ দিনে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা। তবে কখনও ওষুধ খরচ বেশি লাগতে পারে। আর প্রাইভেটে হাসপাতাল বুঝে খরচও বেশি হয়। যা মধ্যবিত্ত বা গরিব পরিবারের চালানো কষ্টকর বলে মন্তব্য করেন।

উল্লেখ্য, করোনা মহামারির সময় দেশে আইসিইউ পাওয়া কষ্টকর ছিল। আইসিইউর অভাবে অনেক ক্রিটিক্যাল রোগী মারাও গেছেন। আবার বিশেষজ্ঞ না থাকায় ক্রিটিক্যাল রোগী আইসিইউতে ভর্তি কঠিন ছিল। ওই সময় হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলোতে আইসিইউ সিট বাড়ানো ও জনবল বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরপর তা ঝিমিয়ে পড়েছে। এখনও অনেক নতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ ও অ্যানেসথেসিয়া সংকট বিরাজ করছে। এখনই উদ্যোগ নিলে মুমূর্ষু রোগীরা উপকৃত হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেন।

back to top