alt

জাতীয়

ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল অপ্রশস্ত সড়কে আড়াই বছরে নিহত ৩৮

৬ লেনে দ্রুত উন্নতীকরণের দাবি

প্রতিনিধি, নড়াইল : শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

পদ্মা ও মধুমতি সেতু চালুর পর ঢাকা-নড়াইল-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনের চাপ আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। তবে ‘ভাঙ্গা এক্সপ্রেস ওয়ে’ থেকে নড়াইল-যশোর-বেনাপোল সড়ক দুই লেনের (সরু সড়ক) হওয়ায় যানবাহনগুলো চলাচলে প্রতিনিয়ত বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে যে কোনো মওসুমে একটু বৃষ্টি হলে সড়কের পাশে জায়গা না থাকায় যাত্রীবাহী বাসসহ অন্য যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। পদ্মা ও মধুমতি সেতু চালুর পর গত আড়াই বছরে নড়াইল-যশোর ৫২ কিলোমিটার সড়কে দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত ও ৯৭ জন আহত হয়েছেন।

সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-মাওয়া-নড়াইল-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কের কালনা এলাকায় ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর দেশের প্রথম ছয় লেনের ‘মধুমতি সেতু’ উদ্বোধন করা হয়। এরপর থেকেই ঢাকা, যশোর, বেনাপোল, কলকাতা, সাতক্ষীরা, খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রাম. বরিশাল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য যাহবাহন নড়াইল সড়ক হয়ে

প্রতিনিয়ত চলাচল করছে মধুমতি ও পদ্মা সেতু দিয়ে। তবে ‘ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেস ওয়ে’র ভাঙ্গা থেকে নড়াইল-যশোর-বেনাপোল সড়ক দুই লেনের হওয়ায় সরু রাস্তায় যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই সড়কটি ৬ লেনে দ্রুত উন্নতীকরণের দাবি সবার।

ঢাকাগামী বাস চালক সোহেল, আরমান, সাইফুলসহ অনেকে জানান, তারা যখন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যান, অথবা ঢাকা থেকে ছেড়ে আসেন; তখন ভাঙ্গা-নড়াইল-যশোর-বেনাপোল সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন। এই ১৩০ কিলোমিটার সরু সড়কের দুইপাশে তেমন জায়গা না থাকায় প্রায়ই বাস, ট্রাক উল্টে যাচ্ছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন সাইড দিতে গিয়ে সড়কের পাশে উল্টে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

বাসযাত্রী শাহিন হোসাইন, নয়ন শেখ, সাবিনা খাতুন, রিয়া ইসলামসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ বলেন, আমাদের দাবি ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত ছয়লেনের মহাসড়ক দ্রুত নির্মাণ করা হোক। আশা করছি জনস্বার্থে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে।

এদিকে নড়াইলের তুলারামপুর হাইওয়ে থানার ওসি শেখ সেকেন্দার আলী বলেন, পদ্মা ও মধুমতি সেতু চালুর পর ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের (২০২৫) মে পর্যন্ত গত আড়াই বছরে নড়াইল-যশোর সড়কে ৬৭টি দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত এবং ৯৭ জন আহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনারোধে চালক, যাত্রীসহ সবার মাঝে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে নিয়মিত কাজ করছে হাইওয়ে পুলিশ।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা- মাওয়া-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কের ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত প্রায় ১৩০ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেন তথা ‘এক্সপ্রেস ওয়ে’ নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। তার আগে মধুমতি সেতুর নড়াইল প্রান্ত থেকে যশোর পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার সড়ক ২৪ ফুট থেকে দুইপাশে আরও ১২ ফুট (ছয় ফুট করে) প্রশস্তকরণের

উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন অর্থবছরে কাজটি শুরু হবে বলে আশা করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

নাভারন-সাতক্ষীরা সড়ক: যেন

মৃত্যু ফাঁদ!

সড়কটি যেন আর সড়ক নয়, এক ভয়ঙ্কর মৃত্যু ফাঁদ। নাভারন-সাতক্ষীরা মহাসড়কের বাগআঁচড়া সাতমাইল বাজার থেকে বেলতলা আমবাজার পর্যন্ত অংশজুড়ে যেন ভয়াল বিভীষিকা। খানা-খন্দে পরিপূর্ণ এ সড়কে প্রতিদিনই কেড়ে নিচ্ছে জনজীবনের স্বাভাবিকতা। ভোগান্তির যেন শেষ নেই। জলাবদ্ধতা, কর্দমাক্ত গর্ত, যানজট ও

দুর্ঘটনা এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। তবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বলছে, বাজার এলাকায় জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হচ্ছে অপরিকল্পিত দোকান ও ভবন নির্মাণ। ড্রেনেজ লাইন না থাকায় বাজার ও আশপাশের বাসাবাড়ির পানি সরাসরি রাস্তার ওপর এসে পড়ে, এতে সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়। অনেক জায়গায় সড়কের চেয়ে দোকান বা মার্কেটের প্ল্যাটফর্ম উঁচু হওয়ায় বৃষ্টির পানি রাস্তাতেই জমে থাকে। অথচ এসব স্থানে পানি নিষ্কাশনের কোনো পরিকল্পনাই রাখা হয়নি।

আগামী মাসে বাজার কমিটি ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠানো হবে, যাতে ভবিষ্যতে দোকানপাট ও ঘরবাড়ি নির্মাণে সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়। জনগণের সহযোগিতা ছাড়া শুধু সড়ক বিভাগ একা এ সমস্যার সমাধান করতে পারবে না বলে তারা মতপ্রকাশ করেন।

সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বাগআঁচড়া বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। জিরো পয়েন্ট মোড়ে বড় বড় গর্তের কারণে বাজারে আসা মানুষজন পড়ছেন বিড়ম্বনায়। বর্ষায় এই গর্তগুলোতে জমে থাকা পানি ও কাদামাটি রাস্তার চেহারাই পাল্টে দিয়েছে। দেখলে মনে হয় যেন শহরের বুকে গজিয়ে ওঠা বিশাল পুকুর!

মাত্র দু’দিনের বৃষ্টিতেই হাঁটু সমান পানি! স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কের এ করুণ দশায় একটি মাঝারি বৃষ্টি হলেই পুরো রাস্তজুড়ে হাঁটু সমান পানি জমে যায়। বিশেষ করে সাতমাইল থেকে বেলতলা পর্যন্ত বাজার এলাকায় কোথাও কোথাও পথচারীরা ঠিক করে বুঝতেও পারেন না, তারা হাঁটছেন গর্তে না সমতলে। দোকানপাটে যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে, কেউ কেউ কাঁধে করে শিশু বা বই-খাতা বাঁচিয়ে রাস্তা পার হন। জলাবদ্ধতায় মোটরসাইকেল, রিকশা ও ভ্যান প্রায়শই বিকল হয়ে পড়ে থাকে, সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট।

বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই মনে হয় নদী বয়ে যাচ্ছে। মানুষ পড়ছে, পণ্য নষ্ট হচ্ছে, আমাদের জীবনই যেন থেমে যায়।

বাজারে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় রাস্তার কার্পেটিং উঠে গিয়ে জেগে উঠেছে গভীর গর্ত। যশোর ও সাতক্ষীরা জেলার লাখো মানুষ চলাচলের একমাত্র ভরসা এ মহাসড়কটি এখন যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। স্কুল-কলেজগামী হাজারো শিক্ষার্থী, রোগী ও সাধারণ মানুষ নিত্য ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

বাগআঁচড়া ডা. আফিল উদ্দিন কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী তিশা খাতুন বলেন, প্রতিদিন প্রায় ২ কি.মি. পথ হেঁটে কলেজে যাই। আগে যেখানে ২০ মিনিটে পৌঁছাতাম, এখন সেখানে লাগে এক ঘণ্টা। ক্লাসে মনোযোগ দিতে

পারি না। বিশেষ করে পরীক্ষার সময়ে সঠিক সময়ে পৌঁছানো দুঃস্বপ্নের মতো। প্রশাসনের কাছে আমাদের আবেদন এ সড়কের দিকে একটু নজর দিন।

একই কথা বললেন স্থানীয় ভ্যানচালক আয়ুব আলী মুন্সি। তিনি বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যাত্রী বহন করি। গর্তে পড়ে ভ্যান উল্টে প্রতিদিনই কেউ না কেউ আহত হচ্ছে। অথচ সড়ক বিভাগের কেউ নেই দেখার।

বাগআঁচড়া বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান জানান, বাজারের মূল স্থানে গর্তে জমে থাকা পানিতে গাড়িগুলো একে অন্যকে ওভারটেক করতে গিয়ে যানজট তৈরি করছে। হঠাৎ বৃষ্টি হলে রীতিমতো পানিতে ডুবে যায় পথচারীরা। বহু মোটরসাইকেল উল্টে আহত হয়েছে। ভারী ট্রাকগুলো বিকল হয়ে দীর্ঘ সময় পড়ে থাকে বাজারের মাঝখানে।

স্থানীয় যুবক জয়নাল আবেদীন বলেন, সড়ক নির্মাণে ব্যবহৃত নি¤œমানের উপকরণ এবং সংস্কারের দীর্ঘসূত্রতা এ দুরবস্থার প্রধান কারণ। মাঝে মাঝে লোক দেখানো মেরামত করা হলেও, তা এক বর্ষাতেই ধুয়ে-মুছে যায়। প্রতিবছর সাংবাদিকরা আসে, ছবি তোলে, নিউজ হয়। পরে সড়ক বিভাগ লোক দেখানো মেরামত করে দুই-এক বস্তা বালি দিয়ে গর্ত ঢেকে চলে যায়। কিছুদিনের মধ্যেই সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়।

এ বিষয়ে যশোর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহবুব হায়দার খান বলেন, নাভারন-সাতক্ষীরা মহাসড়কের সংস্কার কাজের দরপত্র (টেন্ডার) ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং ঠিকাদারও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী জুলাই মাসেই কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করছি।

তিনি বলেন, প্রতিটি সড়কে লম্বালম্বিভাবে ড্রেন নির্মাণ সম্ভব নয়, এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। আবার বিটুমিনের (রাস্তা নির্মাণে ব্যবহৃত উপাদান) বড় দুর্বলতা হলো পানি। টানা দুই-তিন দিন বৃষ্টিতে ভিজে থাকলে বিটুমিন দ্রুত ক্ষয়ে যায়। তাই সড়ক টেকসই করতে হলে শুধু মেরামত নয়, জনগণকেও ড্রেনেজ ও পানি নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে।

ছবি

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে আরও ৫ লাখ পরিবার যুক্ত, শুরু অগাস্টে

ছবি

বাংলা একাডেমি সংস্কার কমিটি থেকে সরে দাঁড়ালেন ব্রাত্য রাইসু

ছবি

শর্ত পূরণের ব্যর্থতায় মালয়েশিয়া থেকে ৯৬ বাংলাদেশি ফেরত

ছবি

জাতীয় ঐকমত্যে ব্যর্থতা হলে দায় সবার: আলী রীয়াজ

ছবি

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

‘সংস্কার উদ্যোগের প্রশংসা’ করলেন বিশ্ব ব্যাংক ভাইস প্রেসিডেন্ট

ছবি

ভারী বৃষ্টির সম্ভবনা, নদী ও সমুদ্র বন্দরে সতর্ক সংকেত জারি

ছবি

মধ্যরাতের আকাশে ‘ড্রোন শো’তে ‘জুলাই স্মৃতি’

ছবি

গণঅভ্যুত্থানের ঐক্য সমুন্নত রাখার তাগিদ শোকসভায়

ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার ভিত মজবুত করার আহ্বান ঢাবি উপাচার্যের

ক্যাম্পের নিরাপত্তা ও সহায়তা সংকট নিয়ে গুরুত্বারোপ

ছবি

উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সংক্রমণ প্রতিরোধে গবেষণা

১৫ জুলাই ২০২৪, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলা, রণক্ষেত্র ঢাবি

জাপার ‘বিভক্ত’ নেতারা এক মঞ্চে, ঐক্যের ডাক

উড়োজাহাজে ব্যবহৃত জ্বালানির দাম বাড়লো

ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেলে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ

ঢাকার মোহাম্মদপুর-আদাবরের আলোচিত সন্ত্রাসী ‘আয়েশা গ্রুপ’-এর প্রধান গ্রেপ্তার: র‌্যাব

বরগুনা জেলা নির্বাচন অফিসে আগুন

৭ মাসে ১৮৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকির তথ্য উদ্ঘাটন

বাড্ডায় আনোয়ার হত্যা আসামি গ্রেপ্তার, পিস্তল উদ্ধার

সিলেটে গর্ভবতী স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা, সন্তানের মৃত্যু

ছবি

‘সরকার আসে সরকার যায়, ভবদহে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হয় না’

ছবি

মানিলন্ডারিং মামলা: বিএসবির কর্ণধার খায়রুল বাসার গ্রেপ্তার

ছবি

কলেজে ভর্তির সুযোগ চেয়ে ঢাকা বোর্ডে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

বরিশাল মহানগরীতে শক্ত হয়ে উঠছে ‘দখলবাজদের’ অবস্থান

শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে ফের আলোচনা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে জনগণকে ‘রুখে দাঁড়াতে’ বললেন আইন উপদেষ্টা

ছবি

আবারও ভাসছে বেনাপোল স্থলবন্দর, স্থায়ী সমাধানে লাগবে দুই বছর

ছবি

সাংবিধানিকভাবে সমতার মর্যাদায় নারীকে অধিষ্ঠিত করা প্রয়োজন: ঐকমত্য কমিশন

নারীরা কেন মুখ লুকিয়ে ফেললেন, তা বোঝার দরকার আছে: শারমীন মুরশিদ

চাঁনখারপুলে ৬ হত্যা: সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ

শুধু রাজনীতিই নয়, দেশের অর্থনীতিকেও গণতন্ত্রায়ন করতে হবে: আমীর খসরু

ড. ইউনূসকে ‘জাতীয় সংস্কারক’ ঘোষণার হাইকোর্ট রুল

মিটফোর্ডে নৃশংস হত্যাকাণ্ড: ৫ দিনের রিমান্ডে দুই ভাই

ছবি

নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত করার পরিকল্পনা হচ্ছে, অভিযোগ বিএনপির

ছবি

সরাসরি ভোটে নারী আসন ও উচ্চকক্ষ গঠন পদ্ধতি নিয়ে বিরোধ

tab

জাতীয়

ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল অপ্রশস্ত সড়কে আড়াই বছরে নিহত ৩৮

৬ লেনে দ্রুত উন্নতীকরণের দাবি

প্রতিনিধি, নড়াইল

শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

পদ্মা ও মধুমতি সেতু চালুর পর ঢাকা-নড়াইল-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনের চাপ আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। তবে ‘ভাঙ্গা এক্সপ্রেস ওয়ে’ থেকে নড়াইল-যশোর-বেনাপোল সড়ক দুই লেনের (সরু সড়ক) হওয়ায় যানবাহনগুলো চলাচলে প্রতিনিয়ত বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে যে কোনো মওসুমে একটু বৃষ্টি হলে সড়কের পাশে জায়গা না থাকায় যাত্রীবাহী বাসসহ অন্য যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। পদ্মা ও মধুমতি সেতু চালুর পর গত আড়াই বছরে নড়াইল-যশোর ৫২ কিলোমিটার সড়কে দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত ও ৯৭ জন আহত হয়েছেন।

সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-মাওয়া-নড়াইল-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কের কালনা এলাকায় ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর দেশের প্রথম ছয় লেনের ‘মধুমতি সেতু’ উদ্বোধন করা হয়। এরপর থেকেই ঢাকা, যশোর, বেনাপোল, কলকাতা, সাতক্ষীরা, খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রাম. বরিশাল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য যাহবাহন নড়াইল সড়ক হয়ে

প্রতিনিয়ত চলাচল করছে মধুমতি ও পদ্মা সেতু দিয়ে। তবে ‘ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেস ওয়ে’র ভাঙ্গা থেকে নড়াইল-যশোর-বেনাপোল সড়ক দুই লেনের হওয়ায় সরু রাস্তায় যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই সড়কটি ৬ লেনে দ্রুত উন্নতীকরণের দাবি সবার।

ঢাকাগামী বাস চালক সোহেল, আরমান, সাইফুলসহ অনেকে জানান, তারা যখন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যান, অথবা ঢাকা থেকে ছেড়ে আসেন; তখন ভাঙ্গা-নড়াইল-যশোর-বেনাপোল সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন। এই ১৩০ কিলোমিটার সরু সড়কের দুইপাশে তেমন জায়গা না থাকায় প্রায়ই বাস, ট্রাক উল্টে যাচ্ছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন সাইড দিতে গিয়ে সড়কের পাশে উল্টে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

বাসযাত্রী শাহিন হোসাইন, নয়ন শেখ, সাবিনা খাতুন, রিয়া ইসলামসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ বলেন, আমাদের দাবি ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত ছয়লেনের মহাসড়ক দ্রুত নির্মাণ করা হোক। আশা করছি জনস্বার্থে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে।

এদিকে নড়াইলের তুলারামপুর হাইওয়ে থানার ওসি শেখ সেকেন্দার আলী বলেন, পদ্মা ও মধুমতি সেতু চালুর পর ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের (২০২৫) মে পর্যন্ত গত আড়াই বছরে নড়াইল-যশোর সড়কে ৬৭টি দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত এবং ৯৭ জন আহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনারোধে চালক, যাত্রীসহ সবার মাঝে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে নিয়মিত কাজ করছে হাইওয়ে পুলিশ।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা- মাওয়া-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কের ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত প্রায় ১৩০ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেন তথা ‘এক্সপ্রেস ওয়ে’ নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। তার আগে মধুমতি সেতুর নড়াইল প্রান্ত থেকে যশোর পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার সড়ক ২৪ ফুট থেকে দুইপাশে আরও ১২ ফুট (ছয় ফুট করে) প্রশস্তকরণের

উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন অর্থবছরে কাজটি শুরু হবে বলে আশা করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

নাভারন-সাতক্ষীরা সড়ক: যেন

মৃত্যু ফাঁদ!

সড়কটি যেন আর সড়ক নয়, এক ভয়ঙ্কর মৃত্যু ফাঁদ। নাভারন-সাতক্ষীরা মহাসড়কের বাগআঁচড়া সাতমাইল বাজার থেকে বেলতলা আমবাজার পর্যন্ত অংশজুড়ে যেন ভয়াল বিভীষিকা। খানা-খন্দে পরিপূর্ণ এ সড়কে প্রতিদিনই কেড়ে নিচ্ছে জনজীবনের স্বাভাবিকতা। ভোগান্তির যেন শেষ নেই। জলাবদ্ধতা, কর্দমাক্ত গর্ত, যানজট ও

দুর্ঘটনা এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। তবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বলছে, বাজার এলাকায় জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হচ্ছে অপরিকল্পিত দোকান ও ভবন নির্মাণ। ড্রেনেজ লাইন না থাকায় বাজার ও আশপাশের বাসাবাড়ির পানি সরাসরি রাস্তার ওপর এসে পড়ে, এতে সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়। অনেক জায়গায় সড়কের চেয়ে দোকান বা মার্কেটের প্ল্যাটফর্ম উঁচু হওয়ায় বৃষ্টির পানি রাস্তাতেই জমে থাকে। অথচ এসব স্থানে পানি নিষ্কাশনের কোনো পরিকল্পনাই রাখা হয়নি।

আগামী মাসে বাজার কমিটি ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠানো হবে, যাতে ভবিষ্যতে দোকানপাট ও ঘরবাড়ি নির্মাণে সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়। জনগণের সহযোগিতা ছাড়া শুধু সড়ক বিভাগ একা এ সমস্যার সমাধান করতে পারবে না বলে তারা মতপ্রকাশ করেন।

সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বাগআঁচড়া বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। জিরো পয়েন্ট মোড়ে বড় বড় গর্তের কারণে বাজারে আসা মানুষজন পড়ছেন বিড়ম্বনায়। বর্ষায় এই গর্তগুলোতে জমে থাকা পানি ও কাদামাটি রাস্তার চেহারাই পাল্টে দিয়েছে। দেখলে মনে হয় যেন শহরের বুকে গজিয়ে ওঠা বিশাল পুকুর!

মাত্র দু’দিনের বৃষ্টিতেই হাঁটু সমান পানি! স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কের এ করুণ দশায় একটি মাঝারি বৃষ্টি হলেই পুরো রাস্তজুড়ে হাঁটু সমান পানি জমে যায়। বিশেষ করে সাতমাইল থেকে বেলতলা পর্যন্ত বাজার এলাকায় কোথাও কোথাও পথচারীরা ঠিক করে বুঝতেও পারেন না, তারা হাঁটছেন গর্তে না সমতলে। দোকানপাটে যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে, কেউ কেউ কাঁধে করে শিশু বা বই-খাতা বাঁচিয়ে রাস্তা পার হন। জলাবদ্ধতায় মোটরসাইকেল, রিকশা ও ভ্যান প্রায়শই বিকল হয়ে পড়ে থাকে, সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট।

বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই মনে হয় নদী বয়ে যাচ্ছে। মানুষ পড়ছে, পণ্য নষ্ট হচ্ছে, আমাদের জীবনই যেন থেমে যায়।

বাজারে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় রাস্তার কার্পেটিং উঠে গিয়ে জেগে উঠেছে গভীর গর্ত। যশোর ও সাতক্ষীরা জেলার লাখো মানুষ চলাচলের একমাত্র ভরসা এ মহাসড়কটি এখন যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। স্কুল-কলেজগামী হাজারো শিক্ষার্থী, রোগী ও সাধারণ মানুষ নিত্য ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

বাগআঁচড়া ডা. আফিল উদ্দিন কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী তিশা খাতুন বলেন, প্রতিদিন প্রায় ২ কি.মি. পথ হেঁটে কলেজে যাই। আগে যেখানে ২০ মিনিটে পৌঁছাতাম, এখন সেখানে লাগে এক ঘণ্টা। ক্লাসে মনোযোগ দিতে

পারি না। বিশেষ করে পরীক্ষার সময়ে সঠিক সময়ে পৌঁছানো দুঃস্বপ্নের মতো। প্রশাসনের কাছে আমাদের আবেদন এ সড়কের দিকে একটু নজর দিন।

একই কথা বললেন স্থানীয় ভ্যানচালক আয়ুব আলী মুন্সি। তিনি বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যাত্রী বহন করি। গর্তে পড়ে ভ্যান উল্টে প্রতিদিনই কেউ না কেউ আহত হচ্ছে। অথচ সড়ক বিভাগের কেউ নেই দেখার।

বাগআঁচড়া বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান জানান, বাজারের মূল স্থানে গর্তে জমে থাকা পানিতে গাড়িগুলো একে অন্যকে ওভারটেক করতে গিয়ে যানজট তৈরি করছে। হঠাৎ বৃষ্টি হলে রীতিমতো পানিতে ডুবে যায় পথচারীরা। বহু মোটরসাইকেল উল্টে আহত হয়েছে। ভারী ট্রাকগুলো বিকল হয়ে দীর্ঘ সময় পড়ে থাকে বাজারের মাঝখানে।

স্থানীয় যুবক জয়নাল আবেদীন বলেন, সড়ক নির্মাণে ব্যবহৃত নি¤œমানের উপকরণ এবং সংস্কারের দীর্ঘসূত্রতা এ দুরবস্থার প্রধান কারণ। মাঝে মাঝে লোক দেখানো মেরামত করা হলেও, তা এক বর্ষাতেই ধুয়ে-মুছে যায়। প্রতিবছর সাংবাদিকরা আসে, ছবি তোলে, নিউজ হয়। পরে সড়ক বিভাগ লোক দেখানো মেরামত করে দুই-এক বস্তা বালি দিয়ে গর্ত ঢেকে চলে যায়। কিছুদিনের মধ্যেই সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়।

এ বিষয়ে যশোর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহবুব হায়দার খান বলেন, নাভারন-সাতক্ষীরা মহাসড়কের সংস্কার কাজের দরপত্র (টেন্ডার) ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং ঠিকাদারও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী জুলাই মাসেই কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করছি।

তিনি বলেন, প্রতিটি সড়কে লম্বালম্বিভাবে ড্রেন নির্মাণ সম্ভব নয়, এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। আবার বিটুমিনের (রাস্তা নির্মাণে ব্যবহৃত উপাদান) বড় দুর্বলতা হলো পানি। টানা দুই-তিন দিন বৃষ্টিতে ভিজে থাকলে বিটুমিন দ্রুত ক্ষয়ে যায়। তাই সড়ক টেকসই করতে হলে শুধু মেরামত নয়, জনগণকেও ড্রেনেজ ও পানি নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে।

back to top