গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সামনে ‘চারটি মৌলিক চ্যালেঞ্জ’ দেখছেন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ।
এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে না পারলে আগের মত দেশ অস্থিতিশীলতার কবলে পড়তে পারে বলে নিজের শঙ্কার কথা তুলে ধরেন তিনি।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ মিলনায়তনে আয়োজিত রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ক সম্মেলনে আলী রীয়াজ এ শঙ্কা প্রকাশ করেন।
‘দ্য স্টেট রিফর্মস অ্যান্ড ইলেকশন ডিসকোর্স ইন ট্রানজিশনাল ডেমোক্রেসিস: ফ্রম মাস আপরাইজিং টু ইলেকশন অ্যান্ড স্টেট বিল্ডিং’ শীর্ষক সম্মেলন সোমবারও চলবে।
‘স্বৈরাচারের’ পতনের পর বাংলাদেশ যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি তা চিহ্নিত করে সম্মেলনের প্রধান বক্তা আলী রীয়াজ বলেন, “শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার, দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসান এবং বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর মতো চারটি মৌলিক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে না পারলে বাংলাদেশ আগের মতো অস্থিতিশীলতার কবলে পড়তে পারে।”
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, “শুধুমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর নির্ভর করে গণতন্ত্রকে পুনঃস্থাপন করা যায় না। রাজনৈতিক দলগুলোকেই এগিয়ে আসতে হবে এবং তাদের দায়িত্ব বুঝতে হবে।”
তিনি বলেন, “মধ্যপ্রাচ্য আর উত্তর আফ্রিকার মতো না হয়ে বাংলাদেশকে এখনই সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। আগের মতো স্বৈরশাসনে ফেরার পথ বন্ধ করা এবং দীর্ঘমেয়াদী শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রূপান্তর ঘটানোর দায়িত্ব কেবল অস্থায়ী সরকার নয়, দেশের সব রাজনৈতিক দলের।”
নির্বাচন নিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, “যেসব দেশ শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পালাবদল করতে পেরেছে তারা তুলনামূলকভাবে ভালোভাবে গণতন্ত্রে ফিরতে পেরেছে। মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার অনেক দেশ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করতে না পারায় অস্থিতিশীলতার শিকার হয়েছে।”
রাষ্ট্র সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরে সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গ ঐকমত্যে পৌঁছতে গঠিত কমিশনের সহসভাপতি বলেন, “রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আগের শাসন ব্যবস্থার প্রতিধ্বনি হিসেবে থাকলে অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি থেকে যায়। ব্যবসা আগের মত চালানোর সংস্কৃতি আর গ্রহণযোগ্য নয়। সাংবিধানিক এবং আইনগত সংস্কারের মাধ্যমে এমন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে, যা আগের স্বৈরশাসনের পুনরাবৃত্তির পথ রোধ করবে।”
আওয়ামী লীগের আমলে জবাবদিহিতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের হয়েছে মত দিয়ে তিনি এসব ঘটনা বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
আলী রীয়াজ বলেন, “যারা আগের শাসনে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা না গেলে আগের ধারা আরেকভাবে ফিরে আসতে পারে।”
ছায়া সংস্কার কমিশন, ছায়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক ও নীতি বিজ্ঞান গবেষণা ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজক।
সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান বলেন, “জুলাই-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আমরা এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে এসময় সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজন দূর করে আমাদের একযোগে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।”
শিক্ষক, গবেষক ও পেশাজীবীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার ও নেটওয়ার্ক বৃদ্ধিতে এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম আমানুল্লাহ ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক নাছিমা খাতুন বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন।
রোববার, ২২ জুন ২০২৫
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সামনে ‘চারটি মৌলিক চ্যালেঞ্জ’ দেখছেন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ।
এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে না পারলে আগের মত দেশ অস্থিতিশীলতার কবলে পড়তে পারে বলে নিজের শঙ্কার কথা তুলে ধরেন তিনি।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ মিলনায়তনে আয়োজিত রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ক সম্মেলনে আলী রীয়াজ এ শঙ্কা প্রকাশ করেন।
‘দ্য স্টেট রিফর্মস অ্যান্ড ইলেকশন ডিসকোর্স ইন ট্রানজিশনাল ডেমোক্রেসিস: ফ্রম মাস আপরাইজিং টু ইলেকশন অ্যান্ড স্টেট বিল্ডিং’ শীর্ষক সম্মেলন সোমবারও চলবে।
‘স্বৈরাচারের’ পতনের পর বাংলাদেশ যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি তা চিহ্নিত করে সম্মেলনের প্রধান বক্তা আলী রীয়াজ বলেন, “শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার, দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসান এবং বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর মতো চারটি মৌলিক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে না পারলে বাংলাদেশ আগের মতো অস্থিতিশীলতার কবলে পড়তে পারে।”
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, “শুধুমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর নির্ভর করে গণতন্ত্রকে পুনঃস্থাপন করা যায় না। রাজনৈতিক দলগুলোকেই এগিয়ে আসতে হবে এবং তাদের দায়িত্ব বুঝতে হবে।”
তিনি বলেন, “মধ্যপ্রাচ্য আর উত্তর আফ্রিকার মতো না হয়ে বাংলাদেশকে এখনই সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। আগের মতো স্বৈরশাসনে ফেরার পথ বন্ধ করা এবং দীর্ঘমেয়াদী শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রূপান্তর ঘটানোর দায়িত্ব কেবল অস্থায়ী সরকার নয়, দেশের সব রাজনৈতিক দলের।”
নির্বাচন নিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, “যেসব দেশ শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পালাবদল করতে পেরেছে তারা তুলনামূলকভাবে ভালোভাবে গণতন্ত্রে ফিরতে পেরেছে। মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার অনেক দেশ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করতে না পারায় অস্থিতিশীলতার শিকার হয়েছে।”
রাষ্ট্র সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরে সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গ ঐকমত্যে পৌঁছতে গঠিত কমিশনের সহসভাপতি বলেন, “রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আগের শাসন ব্যবস্থার প্রতিধ্বনি হিসেবে থাকলে অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি থেকে যায়। ব্যবসা আগের মত চালানোর সংস্কৃতি আর গ্রহণযোগ্য নয়। সাংবিধানিক এবং আইনগত সংস্কারের মাধ্যমে এমন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে, যা আগের স্বৈরশাসনের পুনরাবৃত্তির পথ রোধ করবে।”
আওয়ামী লীগের আমলে জবাবদিহিতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের হয়েছে মত দিয়ে তিনি এসব ঘটনা বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
আলী রীয়াজ বলেন, “যারা আগের শাসনে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা না গেলে আগের ধারা আরেকভাবে ফিরে আসতে পারে।”
ছায়া সংস্কার কমিশন, ছায়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক ও নীতি বিজ্ঞান গবেষণা ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজক।
সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান বলেন, “জুলাই-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আমরা এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে এসময় সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজন দূর করে আমাদের একযোগে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।”
শিক্ষক, গবেষক ও পেশাজীবীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার ও নেটওয়ার্ক বৃদ্ধিতে এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম আমানুল্লাহ ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক নাছিমা খাতুন বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন।