সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার বাসায় ঢুকে ‘মব’ তৈরি এবং তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই ‘মব’-এর ঘটনায় বিএনপি বলেছে, তাদের দলের নেতাকর্মী কেউ জড়িত থাকলে তারা ব্যবস্থা নেবে। ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ যদি এতে জড়িত থাকে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে, বলেছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়
বিএনপির কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে: সালাউদ্দিন আহমদ
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলেও ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
জনগণের ভোট ছাড়া নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে গতকাল রোববার বিএনপির দায়ের করা মামলায় আসামি হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মাথায় সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের বাসা থেকে আটক করে কথিত জনতা। অভিযোগ রয়েছে, তাদের কয়েকজন নিজেদের বিএনপির একটি সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী হিসেবে পরিচয় দেয়।
সন্ধ্যার দিকে নূরুল হুদাকে হেফাজতে নেয় উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।
আটকের সময় কথিত জনতা নূরুল হুদার ওপর চড়াও হয়। তারা বাসায় ঢুকে সাবেক সিইসিকে অপদস্থ করে। ওই সময় কথিত জনতার মধ্যে থাকা কেউ কেউ ফেইসবুকে লাইভও করেন। এমন একটি লাইভে দেখা যায়, নূরুল হুদার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন এক ব্যক্তি। তার গেঞ্জির কলার ধরে রেখে বক্তব্য দিতে দেখা যায় ওই ব্যক্তিকে। এ সময় ওই ব্যক্তির পাশে পুলিশের পোশাক পরা একজনকে দেখা যায়।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের বিবৃতি
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ঢাকার উত্তরায় এ ঘটনার পর রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গ্রেপ্তারের সময় সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও অভিযুক্তকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে। তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা বেআইনি, আইনের শাসনের পরিপন্থী ও ফৌজদারি অপরাধ।’ ‘মব’ সৃষ্টি করে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী সবাইকে চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। সাবেক সিইসি নূরুল হুদাকে একটি সুনির্দিষ্ট মামলায় রাজধানীর উত্তরা থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে বিবৃতিতে তুলে ধরা হয়।
বিএনপির অবস্থান
‘মব’ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে বিএনপির স্পষ্ট অবস্থান জানিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ সোমবার,(২৩ জুন ২০২৫) সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে ঘিরে ঘটে যাওয়া ‘মব’-এ বিএনপির কোনো নেতাকর্মী জড়িত থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএনপির কর্মী যুক্ত থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা, যার দায় বিএনপির ওপর চাপানোর সুযোগ নেই। বিএনপি ‘মব’ সমর্থন করে না। দলের কেউ জড়িত থাকলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নুরুল হুদার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তার গ্রেপ্তার ও বিচার প্রক্রিয়া যেন যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয় সেটাই আমরা প্রত্যাশা করি। তবে তার ওপর যেভাবে অবমাননাকর আচরণ করা হয়েছে, বিএনপি তা সমর্থন করে না।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার মহিদুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় তাকে (নূরুল হুদা) গ্রেপ্তার দেখিয়ে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকেই পরে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।’
গ্রহণযোগ্য নয়
‘মব জাস্টিস’ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।
‘মব’ তৈরি করে সাবেক সিইসি নূরুল হুদাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা প্রসঙ্গে সোমবার সকালে গাজীপুরে একটি হর্টিকালচার সেন্টার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘তার (নূরুল হুদা) সঙ্গে যেটা হয়েছে, মানে গলায় এটা-সেটা (জুতার মালা) পরিয়ে দেয়া হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এমন কোনো কিছু থাকলে আমাদের জানাবেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রপার অ্যাকশন নেবে।’
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই ওনার (সাবেক সিইসি নূরুল হুদা) ওপর হামলা করা হয়েছে। এটার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত করে দেখব কারা জড়িত। এর সঙ্গে যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ জড়িত থাকেন, তবে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
নূরুল হুদাকে ঘিরে ‘মব’ তৈরির ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ,
বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং সরকার এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ঘটনার নিন্দা জানানো হয়েছে। বিবৃতি দিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও একই কথা বলেছেন।
*পুলিশ যাওয়ার আগেই মব*
উত্তরা পশ্চিম থানার একজন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ যাওয়ার আগেই ‘মব’ তাকে যথেষ্ট হেনস্তা করে ফ্ল্যাট থেকে নামিয়ে আনে। তাকে ডিম ছুড়ে মারা হয়েছিল। তারই ভবন থেকে দুটো জুতা নিয়ে রশির সঙ্গে বেঁধে গলায় ঝুলিয়ে দেয় ওই ব্যক্তিরা।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তাকে ধরে থাকা লোকটি জুতার মালা থেকে একটি জুতা নিয়ে তাকে মারধর করছেন। পরে পুলিশ জুতার মালাটি খুলে নিয়ে সাবেক সিইসিকে হেফাজতে নেয়।
*চিহ্নিত করে ব্যবস্থা*
বিষয়টি নজরে আসার পর গতকাল রোববার রাতে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার অনুরোধ করে অন্তর্বর্তী সরকার বিবৃতিতে বলেছে, ‘সরকার দেশের সব নাগরিকের প্রতি আবারও আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে। অভিযুক্ত সব ব্যক্তির বিচার দেশের আইন মেনে হবে এবং বিচারাধীন বিষয় ও ব্যক্তির ব্যাপারে আদালত সিদ্ধান্ত দেবে।’
এতে ‘মব’ নিয়ে আবারও সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, ‘মব’ সৃষ্টি করে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী সবাইকে চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সব নাগরিককে সহনশীল ভূমিকা পালনের অনুরোধও করা হয়েছে বিবৃতিতে।
*মামলা*
সাবেক সচিব নূরুল হুদা ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সিইসি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন দেশের দ্বাদশ সিইসি। তার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের অধীনে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় পর্যায়ের সব ভোট হয়। এই কমিশনের মেয়াদ শেষ হয় ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি।
এদিকে গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় সাবেক সিইসি নূরুল হুদাসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএনপি।
এ মামলার আসামির তালিকায় দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করা তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারদের পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ১৯ জনের নাম রয়েছে।
বিএনপির করা এই মামলায় সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে ৪ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। ঢাকার মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান সোমবার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই (উপ-পরিদর্শক) শামসুজ্জোহা অবশ্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছিলেন।
*মব জাস্টিস কী*
মানবাধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের মতে, ‘মব জাস্টিস’ হলো অপরাধে জড়িত থাকার সন্দেহে বা অভিযোগ করে কোনো ব্যক্তিকে অবমাননা, মারধর, হত্যা বা সম্পদ ধ্বংসের মাধ্যমে সাজা দেয়া বা প্রতিশোধ নেয়া। এসব ঘটনায় উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিরা দলবদ্ধ হয়ে আইন হাতে তুলে নিয়ে কারও ওপর আক্রমণ বা কাউকে হেনস্তা করে থাকে।
গত বছর ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা (আওয়ামী লীগ) সরকারের পতন হলে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ‘মব জাস্টিস’ ব্যাপক পরিচিতি পেতে থাকে। একের পর এক দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঘটনায় বারবার গণমাধ্যমের শিরোনাম হতে থাকে ‘মব’।
অন্তর্বর্তী সরকারের অধিকাংশ উপদেষ্টা বিভিন্ন সময় ‘মব’-এর বিরুদ্ধে বক্তব্য, বিবৃতি দিয়েছেন। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ‘মব’ তৈরি এখনও বন্ধ হয়নি।
সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার বাসায় ঢুকে ‘মব’ তৈরি এবং তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই ‘মব’-এর ঘটনায় বিএনপি বলেছে, তাদের দলের নেতাকর্মী কেউ জড়িত থাকলে তারা ব্যবস্থা নেবে। ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ যদি এতে জড়িত থাকে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে, বলেছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়
বিএনপির কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে: সালাউদ্দিন আহমদ
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলেও ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
জনগণের ভোট ছাড়া নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে গতকাল রোববার বিএনপির দায়ের করা মামলায় আসামি হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মাথায় সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের বাসা থেকে আটক করে কথিত জনতা। অভিযোগ রয়েছে, তাদের কয়েকজন নিজেদের বিএনপির একটি সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী হিসেবে পরিচয় দেয়।
সন্ধ্যার দিকে নূরুল হুদাকে হেফাজতে নেয় উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।
আটকের সময় কথিত জনতা নূরুল হুদার ওপর চড়াও হয়। তারা বাসায় ঢুকে সাবেক সিইসিকে অপদস্থ করে। ওই সময় কথিত জনতার মধ্যে থাকা কেউ কেউ ফেইসবুকে লাইভও করেন। এমন একটি লাইভে দেখা যায়, নূরুল হুদার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন এক ব্যক্তি। তার গেঞ্জির কলার ধরে রেখে বক্তব্য দিতে দেখা যায় ওই ব্যক্তিকে। এ সময় ওই ব্যক্তির পাশে পুলিশের পোশাক পরা একজনকে দেখা যায়।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের বিবৃতি
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ঢাকার উত্তরায় এ ঘটনার পর রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গ্রেপ্তারের সময় সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও অভিযুক্তকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে। তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা বেআইনি, আইনের শাসনের পরিপন্থী ও ফৌজদারি অপরাধ।’ ‘মব’ সৃষ্টি করে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী সবাইকে চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। সাবেক সিইসি নূরুল হুদাকে একটি সুনির্দিষ্ট মামলায় রাজধানীর উত্তরা থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে বিবৃতিতে তুলে ধরা হয়।
বিএনপির অবস্থান
‘মব’ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে বিএনপির স্পষ্ট অবস্থান জানিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ সোমবার,(২৩ জুন ২০২৫) সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে ঘিরে ঘটে যাওয়া ‘মব’-এ বিএনপির কোনো নেতাকর্মী জড়িত থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএনপির কর্মী যুক্ত থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা, যার দায় বিএনপির ওপর চাপানোর সুযোগ নেই। বিএনপি ‘মব’ সমর্থন করে না। দলের কেউ জড়িত থাকলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নুরুল হুদার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তার গ্রেপ্তার ও বিচার প্রক্রিয়া যেন যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয় সেটাই আমরা প্রত্যাশা করি। তবে তার ওপর যেভাবে অবমাননাকর আচরণ করা হয়েছে, বিএনপি তা সমর্থন করে না।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার মহিদুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় তাকে (নূরুল হুদা) গ্রেপ্তার দেখিয়ে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকেই পরে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।’
গ্রহণযোগ্য নয়
‘মব জাস্টিস’ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।
‘মব’ তৈরি করে সাবেক সিইসি নূরুল হুদাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা প্রসঙ্গে সোমবার সকালে গাজীপুরে একটি হর্টিকালচার সেন্টার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘তার (নূরুল হুদা) সঙ্গে যেটা হয়েছে, মানে গলায় এটা-সেটা (জুতার মালা) পরিয়ে দেয়া হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এমন কোনো কিছু থাকলে আমাদের জানাবেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রপার অ্যাকশন নেবে।’
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই ওনার (সাবেক সিইসি নূরুল হুদা) ওপর হামলা করা হয়েছে। এটার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত করে দেখব কারা জড়িত। এর সঙ্গে যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ জড়িত থাকেন, তবে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
নূরুল হুদাকে ঘিরে ‘মব’ তৈরির ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ,
বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং সরকার এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ঘটনার নিন্দা জানানো হয়েছে। বিবৃতি দিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও একই কথা বলেছেন।
*পুলিশ যাওয়ার আগেই মব*
উত্তরা পশ্চিম থানার একজন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ যাওয়ার আগেই ‘মব’ তাকে যথেষ্ট হেনস্তা করে ফ্ল্যাট থেকে নামিয়ে আনে। তাকে ডিম ছুড়ে মারা হয়েছিল। তারই ভবন থেকে দুটো জুতা নিয়ে রশির সঙ্গে বেঁধে গলায় ঝুলিয়ে দেয় ওই ব্যক্তিরা।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তাকে ধরে থাকা লোকটি জুতার মালা থেকে একটি জুতা নিয়ে তাকে মারধর করছেন। পরে পুলিশ জুতার মালাটি খুলে নিয়ে সাবেক সিইসিকে হেফাজতে নেয়।
*চিহ্নিত করে ব্যবস্থা*
বিষয়টি নজরে আসার পর গতকাল রোববার রাতে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার অনুরোধ করে অন্তর্বর্তী সরকার বিবৃতিতে বলেছে, ‘সরকার দেশের সব নাগরিকের প্রতি আবারও আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে। অভিযুক্ত সব ব্যক্তির বিচার দেশের আইন মেনে হবে এবং বিচারাধীন বিষয় ও ব্যক্তির ব্যাপারে আদালত সিদ্ধান্ত দেবে।’
এতে ‘মব’ নিয়ে আবারও সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, ‘মব’ সৃষ্টি করে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী সবাইকে চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সব নাগরিককে সহনশীল ভূমিকা পালনের অনুরোধও করা হয়েছে বিবৃতিতে।
*মামলা*
সাবেক সচিব নূরুল হুদা ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সিইসি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন দেশের দ্বাদশ সিইসি। তার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের অধীনে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় পর্যায়ের সব ভোট হয়। এই কমিশনের মেয়াদ শেষ হয় ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি।
এদিকে গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় সাবেক সিইসি নূরুল হুদাসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএনপি।
এ মামলার আসামির তালিকায় দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করা তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারদের পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ১৯ জনের নাম রয়েছে।
বিএনপির করা এই মামলায় সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে ৪ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। ঢাকার মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান সোমবার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই (উপ-পরিদর্শক) শামসুজ্জোহা অবশ্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছিলেন।
*মব জাস্টিস কী*
মানবাধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের মতে, ‘মব জাস্টিস’ হলো অপরাধে জড়িত থাকার সন্দেহে বা অভিযোগ করে কোনো ব্যক্তিকে অবমাননা, মারধর, হত্যা বা সম্পদ ধ্বংসের মাধ্যমে সাজা দেয়া বা প্রতিশোধ নেয়া। এসব ঘটনায় উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিরা দলবদ্ধ হয়ে আইন হাতে তুলে নিয়ে কারও ওপর আক্রমণ বা কাউকে হেনস্তা করে থাকে।
গত বছর ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা (আওয়ামী লীগ) সরকারের পতন হলে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ‘মব জাস্টিস’ ব্যাপক পরিচিতি পেতে থাকে। একের পর এক দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঘটনায় বারবার গণমাধ্যমের শিরোনাম হতে থাকে ‘মব’।
অন্তর্বর্তী সরকারের অধিকাংশ উপদেষ্টা বিভিন্ন সময় ‘মব’-এর বিরুদ্ধে বক্তব্য, বিবৃতি দিয়েছেন। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ‘মব’ তৈরি এখনও বন্ধ হয়নি।