alt

জাতীয়

সংস্কার ছাড়া হাজার বছরেও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না : শুনানিতে হাবিবুল আউয়াল

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

মৌলিক সংস্কার ছাড়া ‘এক হাজার বছরেও’ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। রাষ্ট্রদ্রোহসহ বিভিন্ন অভিযোগে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে বৃহস্পতিবার,(২৬ জুন ২০২৫) দুপুরে রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে তিনি এ কথা বলেন।

এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার হাবিবুল আউয়ালের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। বেলা ১২টা ৫০ মিনিটে তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের হাজতখানায় আনা হয়। শুনানির জন্য দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে তাকে এজলাসে তোলা হয়। রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ঢাকার মহানগর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী।

তিনি বলেন, ‘এই আসামি ২০২২ সাল থেকে ২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার আমলে ২৪ সালের ৭ জানুয়ারি

এদেশে কলঙ্কজনক নির্বাচন হয়। সেই ডামি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও ২-১টি দল ছাড়া আর কেউ অংশ নেয়নি। নির্বাচন করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ক্ষমতায় বসাতে।

‘সেই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক বড় বড় দল অংশ নেয়নি। পূর্বেই জেনেছিল নির্বাচন হবে ডামি, লোক দেখানো, প্রহসনের নির্বাচন। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিকগুলোর সঙ্গে তিনি বসেন। তবে তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দেননি।’ ওমর ফারুক ফারুকী শুনানিতে বলতে থাকেন, ‘এরপর তিনি (হাবিবুল আউয়াল) বলেছিলেন, কেউ নির্বাচনে না আসলে আমি কী বসে থাকবো? ইসি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। অথচ জনগণের ভোটাধিকারের হরণ করার দাম্ভিকতাপূর্ণ বক্তব্য দেন।

‘৫ আগস্টের পর বুঝতে পেরে আত্মগোপনে চলে যান। মগবাজারের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যায় করেছিলেন, এজন্য গা ঢাকা দেন।’ পিপি ফারুকী বলেন, ‘এ ব্যক্তি কীভাবে সবার সামনে মিথ্যাচার করেছে। নির্বাচনের দিন বলে, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে, স্বতঃফূর্তভাবে জনগণ ভোট দিচ্ছে’। জনগণের সঙ্গে কত বড় প্রতারণা করেছে। নির্বাচনের দিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ২৭ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানায়। এর এক ঘণ্টা পর এসে জানায়, ভোট পড়েছে ৪০ শতাংশ।

‘অথচ কেন্দ্র মানুষ নাই, কুকুর বসা। পরে সাংবাদিকদের এসে জানান, এক ঘণ্টার জন্য ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। নির্বাচন হচ্ছে, অথচ তিনি নিদ্রায় ছিলেন। কত বড় দায়িত্বজ্ঞানহীন- একটা কুলাঙ্গার আজকের এ প্রতারক হাবিবুল আউয়াল। সরকারের সঙ্গে আতাঁত করে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন করে দিয়ে হাসিনাকে ক্ষমতা দিয়ে দেবে।’ এ সময় তাকে শুনানি শেষ করতে বলেন বিচারক।

পরে মামলায় ধারার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ওমর ফারুক ফারুকী। হাবিবুল আউয়ালের পক্ষে তার আইনজীবী এমিল হাসান রোমেল রিমান্ড আবেদন বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।

তিনি বলেন, ‘বয়স ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে। অনেক অসুস্থ, বিভিন্ন রোগে জরজরিত। ফ্যাসিস্ট দমাতে গিয়ে যেন আবার ফ্যাসিস্ট না হয়ে যায়।’ এরপর আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন আসামি হাবিবুল আউয়াল।

তিনি বলেন, ‘প্রসিকিউশনের বক্তব্যের সঙ্গে আমিও একমত। নির্বাচনটি ডামি ও প্রহসনের নির্বাচন ছিল।’ এ সময় তাকে থামিয়ে বিচারক বলেন, ‘প্রত্যেক জেলায় নির্বাচনী ইনকোয়ারি কমিটি করা হয়, যেখানে একজন যুগ্ম জেলা জজ পদমর্যাদার একজন দায়িত্বে থাকেন। আগে যার ভাতা ছিল ২২ হাজার টাকা, সেটা আপনি ৫ লাখে উন্নীত করেছেন। এতে কী জনগণের টাকা অপচয় হয়নি?’

বিষয়টি জানা নেই দাবি করে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘পাঁচ বছরের মুদ্রাস্ফীতি হিসেব করে হয়তো ভাতা বাড়ানো হয়েছিল।’ এরপর বিচারক জানতে চান, ‘এই যে ইনকোয়ারি কমিটি করা হয়েছিল, নির্বাচনের সময় কোথাও কী তারা সরেজমিনে গিয়েছিলেন?’ তখন আউয়াল বলেন, ‘একজন রিটার্নিং অফিসারের অধীনে ৪-৫টা সংসদীয় আসনের দায়িত্ব দেয়া হয়। তাকে সহযোগিতা করতে আরও ৪-৫ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার থাকেন।

‘একটা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার জন্য ২ ভাগ দায়িত্ব কমিশনের, বাকি ৯৮ ভাগ দায়িত্ব মাঠ পর্যায়ে কাজ করা অফিসারদের।’ নির্বাচনের আগে এমন অবস্থা জেনে আপনি পদত্যাগ করেননি না কেন? বিচারকের এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক সিইসি আউয়াল বলেন, ‘ওই অবস্থায় পদত্যাগ করা সম্ভব ছিল না। আমার এক বন্ধুও আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল পদত্যাগের কথা। আমি বলেছি, ‘তুমি যদি আগে বলতা- এমন ভয়ংকর নির্বাচন হবে, তাহলে আমি দায়িত্বই নিতাম না’।’

অতীতের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘বায়াত্তরের সংবিধান প্রণয়নের তিন মাসের মাথায় অনুষ্ঠিত তেয়াত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯৩টি আসন পায়। সেই নির্বাচনও সুষ্ঠু ছিল না। ক্ষমতার লোভ এমন যে- শেখ মুজিবও তা সামলাতে পারেননি। ‘ছিয়ানব্বই সালে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করে। পরবর্তীতে তারাই আবার দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সংবিধান সংশোধন করে।’

এ সময় পিপি ওমর ফারুক ফারুকী উত্তেজিত হয়ে আদালতকে বলেন, ‘তিনি নিজেকে জাস্টিফাই করছেন। তার এসব বক্তব্য দেয়ার সুযোগ নেই।’ এ সময় আউয়াল বলেন, ‘জাস্টিফাই না করতে দিলে রিভলবার দিয়ে গুলি করে মেরে ফেলেন।’ তখন উপস্থিত আইনজীবীরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে এজলাসে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়।

নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্ব তুলে ধরে আউয়াল বলেন, ‘মৌলিক সংস্কার ছাড়া আগামী এক হাজার বছরেও এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’ আধা ঘণ্টার শুনানি শেষে আদালত আসামি হাবিবুল আউয়ালের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেয়। মামলা হওয়ার তিন দিনের মাথায় গতকাল বুধবার ঢাকার মগবাজার থেকে কাজী হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার আগে গত রোববার মামলা হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আরেক সাবেক সিইসি এ কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করা হয়। নূরুল হুদাকে পরদিন চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছিল আদালত। তাকে আরও ১০ দিনের রিমান্ডে চেয়ে ইতোমধ্যে আবেদন করেছে পুলিশ।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং মামলা, গুম, খুন ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক সালাহ উদ্দিন খান গত ২২ জুন শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে সিইসি এ কে এম নূরুল হুদা ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের পাশাপাশি তাদের সময়ের নির্বাচন কমিশনারদের আসামি করা হয়। পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পুলিশের সাবেক মহা-পরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, এ কে এম শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজীর আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করা হয়েছে মামলায়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ওই তিন নির্বাচনে ‘গায়েবী মামলা, অপহরণ, গুম খুন ও নির্যাতনের’ ভয় দেখিয়ে, বিএনপি নেতাকর্মীদের ‘গণগ্রেপ্তার’ করে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়। ‘সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে থাকা সত্ত্বেও সংবিধান লঙ্ঘন, নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন, সরকারি কর্মচারী হয়েও অবৈধভাবে ভোটে হস্তক্ষেপ, ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটের কাজ সম্পূর্ণ করা ও জনগণের ভোট না পেলেও সংসদ সদস্য হিসেবে মিথ্যাভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

‘উক্ত ঘটনার সাক্ষী সব ভোট কেন্দ্র এলাকার ভোটাররা এবং ভোটারদের মধ্যে যারা ভোট প্রদান করতে বঞ্চিত হয়েছেন তারাসহ ভোট কেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যরা। এছাড়া ভোট কেন্দ্রে অনেক সৎ প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিংশ অফিসারসহ স্থানীয় লোকজনসহ আরো অন্যান্যরা ঘটনার সাক্ষী হবে। এছাড়া ব্যালট পেপারে যে সিল ও স্বাক্ষর রয়েছে, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃতভাবে তারা ভোট দিয়েছে কিনা সে বিষয়ে উল্লেখিত ঘটনার সঠিক রহস্য তদন্তে সত্য উদ্ঘাটিত হবে।’ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার গতকাল বুধবার মামলায় দণ্ডবিধির ১২০ (ক)/ ৪২০/৪০৬ ধারায় অভিযোগ যুক্ত করার আবেদন করেন। ঢাকার মহানগর হাকিম মো. মিনহাজুর রহমান শুনানি শেষে আবেদন মঞ্জুর করেন। ফলে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ যুক্ত হয়েছে এ মামলায়।

চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৯ হাজার ছাড়াল, জুনেই মৃত্যু ১৫ জনের

ছবি

আওয়ামী লীগ সরকারের তিন নির্বাচনের অনিয়ম তদন্তে কমিটি

ছবি

সাংবাদিকদের দ্রুত অ্যাক্রিডিটেশন দেওয়ার ঘোষণা প্রেস সচিবের

ছবি

নির্বাচন সামনে রেখে সিইসি-প্রধান উপদেষ্টার একান্ত বৈঠক

তরুণীকে ধর্ষণ: চা দোকানির যাবজ্জীবন

জুলাই অভ্যুত্থান স্মরণে ৩ দিবস ঘোষণা

‘অন্যায় তদবির’ না মানলেই ‘দালাল’ বানিয়ে দেয় : আইন উপদেষ্টা

সরকারি ভবনে সোলার প্যানেল স্থাপনের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

কুমিল্লায় মাতৃভাষা দিবসের রূপকারের ম্যুরাল ভাঙচুর, সমালোচনার ঝড়

ছবি

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থেকে এসআই সুকান্ত গ্রেপ্তার

ছবি

৪৩ দিন পর নগর ভবনে প্রশাসক, শুরু সব বিভাগের কার্যক্রম

ছবি

বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি: রিভিউ আবেদনের আদেশ রোববার

ছবি

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু, প্রথম দিন অনুপস্থিত ২০ হাজার

মহাপরিচালকের ‘ঘুষ দাবি’: অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক

ছবি

আবু সাইদ হত্যা মামলার চার্জশিট ‘প্রত্যাখ্যান’ বেরোবি শিক্ষার্থীদের

২৪ ঘণ্টায় আরও ১৯ জনের করোনা শনাক্ত

নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করে গণতান্ত্রিক কাঠামো শক্তিশালী করা যাবে না: সালাহউদ্দিন আহমদ

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করলেন সিইসি

সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা ভুল ছিল: প্রেস সচিব

ছবি

টানা চতুর্থ দিনের মতো কলমবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের

সাবেক তিন ইসির বিরুদ্ধে মামলায় যুক্ত হলো রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ

ছবি

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক শীতল নয়, ‘পুনর্বিন্যাসের’ পর্যায়ে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

১২ হাজার মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ, অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার বিচার সংস্কার

ছবি

সুষ্ঠু নির্বাচন এক হাজার বছরেও সম্ভব নয়: আদালতে হাবিবুল আউয়াল

ছবি

সরকারি সব ভবনে সোলার প্যানেল স্থাপনের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

‘তদবির’ না মানলেই ‘দালাল’ বানিয়ে দেয়: আইন উপদেষ্টা

ছবি

সচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কৃষিখাতে পদোন্নতি ও বদলি করা হবে: কৃষি সচিব

ছবি

২০২৪ সালে ‘ডামি নির্বাচন’ হয়েছে, আদালতে স্বীকার সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়ালের

ছবি

সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল ৩ দিনের রিমান্ডে

ছবি

তিন সাবেক নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান স্মরণে তিন দিবস ঘোষণা

শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী গনির স্থলে আমির

সাবেক এমপি বেনজীর আহমেদের ৫ ফ্ল্যাট-প্লট ও জমি জব্দ

শেরেবাংলা নগরে ছুরিকাঘাতে তরুণ খুন

‘আগামী বছরের ১ জুলাই চালু হবে পায়রা বন্দরের ফার্স্ট টার্মিনাল’

‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি ঘোষণা আন্দোলনকারীদের

tab

জাতীয়

সংস্কার ছাড়া হাজার বছরেও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না : শুনানিতে হাবিবুল আউয়াল

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

মৌলিক সংস্কার ছাড়া ‘এক হাজার বছরেও’ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। রাষ্ট্রদ্রোহসহ বিভিন্ন অভিযোগে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে বৃহস্পতিবার,(২৬ জুন ২০২৫) দুপুরে রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে তিনি এ কথা বলেন।

এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার হাবিবুল আউয়ালের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। বেলা ১২টা ৫০ মিনিটে তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের হাজতখানায় আনা হয়। শুনানির জন্য দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে তাকে এজলাসে তোলা হয়। রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ঢাকার মহানগর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী।

তিনি বলেন, ‘এই আসামি ২০২২ সাল থেকে ২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার আমলে ২৪ সালের ৭ জানুয়ারি

এদেশে কলঙ্কজনক নির্বাচন হয়। সেই ডামি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও ২-১টি দল ছাড়া আর কেউ অংশ নেয়নি। নির্বাচন করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ক্ষমতায় বসাতে।

‘সেই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক বড় বড় দল অংশ নেয়নি। পূর্বেই জেনেছিল নির্বাচন হবে ডামি, লোক দেখানো, প্রহসনের নির্বাচন। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিকগুলোর সঙ্গে তিনি বসেন। তবে তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দেননি।’ ওমর ফারুক ফারুকী শুনানিতে বলতে থাকেন, ‘এরপর তিনি (হাবিবুল আউয়াল) বলেছিলেন, কেউ নির্বাচনে না আসলে আমি কী বসে থাকবো? ইসি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। অথচ জনগণের ভোটাধিকারের হরণ করার দাম্ভিকতাপূর্ণ বক্তব্য দেন।

‘৫ আগস্টের পর বুঝতে পেরে আত্মগোপনে চলে যান। মগবাজারের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যায় করেছিলেন, এজন্য গা ঢাকা দেন।’ পিপি ফারুকী বলেন, ‘এ ব্যক্তি কীভাবে সবার সামনে মিথ্যাচার করেছে। নির্বাচনের দিন বলে, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে, স্বতঃফূর্তভাবে জনগণ ভোট দিচ্ছে’। জনগণের সঙ্গে কত বড় প্রতারণা করেছে। নির্বাচনের দিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ২৭ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানায়। এর এক ঘণ্টা পর এসে জানায়, ভোট পড়েছে ৪০ শতাংশ।

‘অথচ কেন্দ্র মানুষ নাই, কুকুর বসা। পরে সাংবাদিকদের এসে জানান, এক ঘণ্টার জন্য ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। নির্বাচন হচ্ছে, অথচ তিনি নিদ্রায় ছিলেন। কত বড় দায়িত্বজ্ঞানহীন- একটা কুলাঙ্গার আজকের এ প্রতারক হাবিবুল আউয়াল। সরকারের সঙ্গে আতাঁত করে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন করে দিয়ে হাসিনাকে ক্ষমতা দিয়ে দেবে।’ এ সময় তাকে শুনানি শেষ করতে বলেন বিচারক।

পরে মামলায় ধারার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ওমর ফারুক ফারুকী। হাবিবুল আউয়ালের পক্ষে তার আইনজীবী এমিল হাসান রোমেল রিমান্ড আবেদন বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।

তিনি বলেন, ‘বয়স ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে। অনেক অসুস্থ, বিভিন্ন রোগে জরজরিত। ফ্যাসিস্ট দমাতে গিয়ে যেন আবার ফ্যাসিস্ট না হয়ে যায়।’ এরপর আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন আসামি হাবিবুল আউয়াল।

তিনি বলেন, ‘প্রসিকিউশনের বক্তব্যের সঙ্গে আমিও একমত। নির্বাচনটি ডামি ও প্রহসনের নির্বাচন ছিল।’ এ সময় তাকে থামিয়ে বিচারক বলেন, ‘প্রত্যেক জেলায় নির্বাচনী ইনকোয়ারি কমিটি করা হয়, যেখানে একজন যুগ্ম জেলা জজ পদমর্যাদার একজন দায়িত্বে থাকেন। আগে যার ভাতা ছিল ২২ হাজার টাকা, সেটা আপনি ৫ লাখে উন্নীত করেছেন। এতে কী জনগণের টাকা অপচয় হয়নি?’

বিষয়টি জানা নেই দাবি করে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘পাঁচ বছরের মুদ্রাস্ফীতি হিসেব করে হয়তো ভাতা বাড়ানো হয়েছিল।’ এরপর বিচারক জানতে চান, ‘এই যে ইনকোয়ারি কমিটি করা হয়েছিল, নির্বাচনের সময় কোথাও কী তারা সরেজমিনে গিয়েছিলেন?’ তখন আউয়াল বলেন, ‘একজন রিটার্নিং অফিসারের অধীনে ৪-৫টা সংসদীয় আসনের দায়িত্ব দেয়া হয়। তাকে সহযোগিতা করতে আরও ৪-৫ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার থাকেন।

‘একটা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার জন্য ২ ভাগ দায়িত্ব কমিশনের, বাকি ৯৮ ভাগ দায়িত্ব মাঠ পর্যায়ে কাজ করা অফিসারদের।’ নির্বাচনের আগে এমন অবস্থা জেনে আপনি পদত্যাগ করেননি না কেন? বিচারকের এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক সিইসি আউয়াল বলেন, ‘ওই অবস্থায় পদত্যাগ করা সম্ভব ছিল না। আমার এক বন্ধুও আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল পদত্যাগের কথা। আমি বলেছি, ‘তুমি যদি আগে বলতা- এমন ভয়ংকর নির্বাচন হবে, তাহলে আমি দায়িত্বই নিতাম না’।’

অতীতের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘বায়াত্তরের সংবিধান প্রণয়নের তিন মাসের মাথায় অনুষ্ঠিত তেয়াত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯৩টি আসন পায়। সেই নির্বাচনও সুষ্ঠু ছিল না। ক্ষমতার লোভ এমন যে- শেখ মুজিবও তা সামলাতে পারেননি। ‘ছিয়ানব্বই সালে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করে। পরবর্তীতে তারাই আবার দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সংবিধান সংশোধন করে।’

এ সময় পিপি ওমর ফারুক ফারুকী উত্তেজিত হয়ে আদালতকে বলেন, ‘তিনি নিজেকে জাস্টিফাই করছেন। তার এসব বক্তব্য দেয়ার সুযোগ নেই।’ এ সময় আউয়াল বলেন, ‘জাস্টিফাই না করতে দিলে রিভলবার দিয়ে গুলি করে মেরে ফেলেন।’ তখন উপস্থিত আইনজীবীরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে এজলাসে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়।

নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্ব তুলে ধরে আউয়াল বলেন, ‘মৌলিক সংস্কার ছাড়া আগামী এক হাজার বছরেও এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’ আধা ঘণ্টার শুনানি শেষে আদালত আসামি হাবিবুল আউয়ালের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেয়। মামলা হওয়ার তিন দিনের মাথায় গতকাল বুধবার ঢাকার মগবাজার থেকে কাজী হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার আগে গত রোববার মামলা হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আরেক সাবেক সিইসি এ কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করা হয়। নূরুল হুদাকে পরদিন চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছিল আদালত। তাকে আরও ১০ দিনের রিমান্ডে চেয়ে ইতোমধ্যে আবেদন করেছে পুলিশ।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং মামলা, গুম, খুন ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক সালাহ উদ্দিন খান গত ২২ জুন শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে সিইসি এ কে এম নূরুল হুদা ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের পাশাপাশি তাদের সময়ের নির্বাচন কমিশনারদের আসামি করা হয়। পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পুলিশের সাবেক মহা-পরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, এ কে এম শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজীর আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করা হয়েছে মামলায়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ওই তিন নির্বাচনে ‘গায়েবী মামলা, অপহরণ, গুম খুন ও নির্যাতনের’ ভয় দেখিয়ে, বিএনপি নেতাকর্মীদের ‘গণগ্রেপ্তার’ করে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়। ‘সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে থাকা সত্ত্বেও সংবিধান লঙ্ঘন, নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন, সরকারি কর্মচারী হয়েও অবৈধভাবে ভোটে হস্তক্ষেপ, ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটের কাজ সম্পূর্ণ করা ও জনগণের ভোট না পেলেও সংসদ সদস্য হিসেবে মিথ্যাভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

‘উক্ত ঘটনার সাক্ষী সব ভোট কেন্দ্র এলাকার ভোটাররা এবং ভোটারদের মধ্যে যারা ভোট প্রদান করতে বঞ্চিত হয়েছেন তারাসহ ভোট কেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যরা। এছাড়া ভোট কেন্দ্রে অনেক সৎ প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিংশ অফিসারসহ স্থানীয় লোকজনসহ আরো অন্যান্যরা ঘটনার সাক্ষী হবে। এছাড়া ব্যালট পেপারে যে সিল ও স্বাক্ষর রয়েছে, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃতভাবে তারা ভোট দিয়েছে কিনা সে বিষয়ে উল্লেখিত ঘটনার সঠিক রহস্য তদন্তে সত্য উদ্ঘাটিত হবে।’ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার গতকাল বুধবার মামলায় দণ্ডবিধির ১২০ (ক)/ ৪২০/৪০৬ ধারায় অভিযোগ যুক্ত করার আবেদন করেন। ঢাকার মহানগর হাকিম মো. মিনহাজুর রহমান শুনানি শেষে আবেদন মঞ্জুর করেন। ফলে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ যুক্ত হয়েছে এ মামলায়।

back to top