alt

জাতীয়

১০ বছরে ফল উৎপাদন বেড়েছে ৫০ শতাংশ, তবুও কমেছে আমদানি

সংবাদ ডেস্ক : শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

দেশে বিগত ১০ বছরে ফল উৎপাদন প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট ফল উৎপাদন ছিল প্রায় এক কোটি মেট্রিক টন। সেটি বেড়ে বর্তমানে এক কোটি ৫০ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে মানুষের ফল খাওয়ার হারও বেড়েছে। দেশে ফলের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। গত দুই দশক ধরেই ফল উৎপাদনে টেকসই ও ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। ছোট দেশ, জমি কম। তবুও বিশ্বের শীর্ষ ১০ গ্রীষ্মম-লীয় ফল উৎপাদনকারী দেশের অন্যতম বাংলাদেশ। ১০ বছর আগে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ দিনে গড়ে ৩৫-৪০ গ্রাম করে ফল খেত, এখন এ হার ৮৬ গ্রাম।

১০ বছর আগে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ দিনে গড়ে ৩৫-৪০ গ্রাম করে ফল খেত, এখন এ হার ৮৬ গ্রাম

পাহাড়ি অঞ্চলে ৭৫০ লাখ হেক্টর ও উপকূলে ১৮ লাখ হেক্টর জমি পতিত জমিকে ফল চাষের আওতায় নিয়ে আসতে হবে

বর্তমান বারোমাসি ‘আঠাবিহীন’ কাঁঠালের বিদেশে রপ্তানির সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বাৎসরিক ১১ দশমিক ৫ শতাংশ হারে ফলের উৎপাদন বাড়ছে। বিশেষ করে আম ও পেয়ারার উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ, পেঁপের আড়াইগুণ, লিচুর ৫০ শতাংশ, মাল্টার ১৫-২০ শতাংশ ও কমলার উৎপাদন ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশের মানুষের ফল বেশি খাওয়ারও তথ্য দিচ্ছে। বিবিএসের খানা জরিপে দেখা গেছে, ২০২২ সালে দেশের একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে ৯৫ দশমিক ৪ গ্রাম ফল খেয়েছেন। ২০১০ সালে এই গড় ছিল ৪৪ দশমিক ৭ গ্রাম।

বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বিগত কয়েক বছরে দেশি বিদেশি ফল উৎপাদনও ব্যাপক হারে বেড়েছে। বিশেষ করে ড্রাগন চাষে বড় সাফল্য এসেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে ড্রাগন উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৭৭ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার ৮১৩ টনে। ড্রাগনের পাশাপাশি অ্যাভোক্যাডো, আরবি খেজুর, রাম্বুটান, পার্সিমন চাষও বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে একটি সময়েই শুধু ফল পাওয়া যেত। এখন প্রায় সারাবছরই ফল পাওয়া যায়। উৎপাদন বাড়ায় দেশে ফল আমদানির হারও কমেছে।

রাজধানীর খামারবাড়ির মৃত্তিকা সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের (তৃতীয় সংশোধনী) জাতীয় কর্মশালায় এসব তথ্য উঠে আসে।

গতকাল বৃহস্পতিবার হওয়া অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আব্দুল হালিম। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে আমের উৎপাদন ছিল ২০ লাখ ২৩ হাজার টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তথ্যানুযায়ী তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৮ হাজার টনে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, একটা সময় বিদেশ থেকে আম আমদানি হতো। অথচ গত কয়েক বছর ধরে উল্টো বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩৮টি দেশে আম রপ্তানি হচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ হাজার ৩২১ টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ হাজার ১০০ টন, তার আগের বছর ১ হাজার ৭৫৭ টন আম রপ্তানি হয়েছে। চলতি বছর নতুন করে যুক্ত হয়েছে চীন। প্রায় ৫ হাজার টন আম রপ্তানির লক্ষ্য রয়েছে এ বছর।

সেখানে বলা হয়, দেশে পেয়ারা উৎপাদনও বেড়েছে। ১০ বছর আগে উৎপাদন ছিল ৪ লাখ ১৩ হাজার টন; সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫৩ হাজার টনে। আগে শুধু বর্ষা মৌসুমে পেয়ারা পাওয়া যেত। এখন প্রায় সারাবছরই পাওয়া যায়। দেশে উৎপাদিত পেয়ারার ৭০ শতাংশই থাই জাতের পেয়ারা। এক সময় অতিথিদের পাতে আপেল জাতীয় ফলই শুধু দেখা হতো। এখন আপেলের পরিবর্তে দেখা মেলে বলসুন্দরী কুল বরই। ১০ বছরে কুল বরই উৎপাদন ১ লাখ ৬১ হাজার টন থেকে ১ লাখ ৭৬ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। ফলে আপেল আমদানি কমেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যখন প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭০০ টন আপেল আমদানি হয়েছে, বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৭০ টনে। দেশে ক্রমাগত অন্যান্য ফল আমদানিও কমে যাচ্ছে।

সম্প্রতি দেশে সাড়া ফেলেছে বারোমাসি আঠাবিহীন কাঁঠাল চাষ। বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেশে ১ লাখ বারোমাসি কাঁঠাল চারা রোপণ করা হয়েছে। বর্তমান এই কাঁঠাল বিদেশে রপ্তানির সুযোগও সৃষ্টি করেছে।

প্রকল্পের সহযোগিতায় চাষাবাদ করছেন খাগড়াছড়ির নাড়িয়ারচরের চাষি কবিতা চাকমা। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ৩ হাজার এমডি টু জাতের আনারস চাষ করেছেন। একটা আনারস ২ কেজি ৮০০ গ্রামের ওজন হয়েছিল। দাম ভালো পেয়েছেন, প্রতিটি আনারস ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের সাবেক পরিচালক ড. মেহেদী মাসুদ বলেন, দেশে ফলের কোনো গবেষক নেই। অথচ চাষিরা নিজেরা চাষ করে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমরা অফিসাররা তাদের কাছে শিখছি। তিনি বলেন, মাটিতে চারা করলে বিদেশে রপ্তানি করা যায় না। করতে হবে কোকোপিটে। আমরা ম্যানেজমেন্ট করতে পারছি না।

আব্দুল হালিম বলেন, ‘দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে ৭৫০ লাখ হেক্টর ও উপকূলে ১৮ লাখ হেক্টর জমি পতিত পড়ে আছে। এসব জমিকে ফল চাষের আওতায় নিয়ে আসাই ছিল আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৪টি হর্টিকালচার সেন্টার করার লক্ষ্য নিয়ে ৯টি করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২৮ হাজার ৫০০ নারীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারা উদ্যোক্তা, স্বাবলম্বী হচ্ছে। তাছাড়া এখন পর্যন্ত ৯ হাজার বাণিজ্যিক ফল বাগান তৈরি করা হয়েছে। দেশের হর্টিকালচার সেন্টারগুলোতে আগে যেখানে দেড় কোটি চারা হতো সেখানে বর্তমানে তা বেড়ে ৫ কোটি চারা উৎপাদন হচ্ছে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘এ প্রকল্পটি বন্ধ করা যাবে না। এটি চালিয়ে যেতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রপ্তানির জন্য

প্রযুক্তি বাড়ানোর কথা বলছি অথচ অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা দেখছি না।’ কৃষি সচিব বলেন, ‘এ প্রকল্পটি বন্ধ করা যাবে না। এটি চালিয়ে যেতে হবে।’

বাংলাদেশে আম্রপালি আমের জনক ডিএইর সাবেক মহা-পরিচালক এম এনামুল হক বলেন, ‘আমি ফল ও লেবু জাতীয় ফসল উৎপাদনে বেশি আগ্রহী ছিলাম। সে দৃষ্টিকোণ থেকেই আম্রপালি এনে দেশে আবাদের ব্যবস্থা করেছি।’

সংশ্লিষ্টরা বলেন, মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে উৎপাদন বৃদ্ধিসহ নিরাপদ ফল নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি নিরাপদ ফল সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ক্ষতি ও অপচয় কমাতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। মানুষ এখন নিজের স্বাস্থ্যের কথা ভাবছে, ফল উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি খাওয়ার দিকে ঝুঁকছে।

ওয়াক্ফ মামলা শুনানির জন্য হাইকোর্টে পৃথক বেঞ্চ গঠন

ছবি

বর্ণিল রথযাত্রায় ভক্তের ঢল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি

মিরপুরে ‘নিয়ন্ত্রণহীন’ বাস সড়কদ্বীপে, দাঁড়িয়ে থাকা পথচারীর মৃত্যু

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করবে সরকার, ব্যক্তি করার ঘটনা ‘বিরল’: নূরুল হুদার আইনজীবী

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুদকের আরও দুই মামলা

সিলেট সীমান্ত দিয়ে ১৪ রোহিঙ্গাসহ ৩১ জনকে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ

সাবেক গভর্নর আতিউরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক

সামাজিক ব্যবসা পুরো বিশ্বকে বদলে দিতে পারে: প্রধান উপদেষ্টা

বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে না দেয়ার দাবিতে রোডমার্চ শুরু

জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে মালয়েশিয়ায় ৩৬ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

চালের পর এবার বাড়লো মুরগি ও সবজির দাম

প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসির বৈঠকের বিষয়গুলো স্পষ্ট করার দাবি বিএনপির

‘অনুকূল পরিবেশে’ বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী ভারত: জয়সোয়াল

ছবি

পারমাণবিক স্থাপনায় মারাত্মক ক্ষতি কথা স্বীকার করলো ইরান

ছবি

সাবেক সিইসি নূরুল হুদা আরো চার দিনের রিমান্ডে

চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৯ হাজার ছাড়াল, জুনেই মৃত্যু ১৫ জনের

ছবি

আওয়ামী লীগ সরকারের তিন নির্বাচনের অনিয়ম তদন্তে কমিটি

ছবি

সাংবাদিকদের দ্রুত অ্যাক্রিডিটেশন দেওয়ার ঘোষণা প্রেস সচিবের

ছবি

নির্বাচন সামনে রেখে সিইসি-প্রধান উপদেষ্টার একান্ত বৈঠক

তরুণীকে ধর্ষণ: চা দোকানির যাবজ্জীবন

জুলাই অভ্যুত্থান স্মরণে ৩ দিবস ঘোষণা

‘অন্যায় তদবির’ না মানলেই ‘দালাল’ বানিয়ে দেয় : আইন উপদেষ্টা

সরকারি ভবনে সোলার প্যানেল স্থাপনের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

কুমিল্লায় মাতৃভাষা দিবসের রূপকারের ম্যুরাল ভাঙচুর, সমালোচনার ঝড়

ছবি

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থেকে এসআই সুকান্ত গ্রেপ্তার

ছবি

৪৩ দিন পর নগর ভবনে প্রশাসক, শুরু সব বিভাগের কার্যক্রম

ছবি

বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি: রিভিউ আবেদনের আদেশ রোববার

ছবি

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু, প্রথম দিন অনুপস্থিত ২০ হাজার

মহাপরিচালকের ‘ঘুষ দাবি’: অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক

ছবি

আবু সাইদ হত্যা মামলার চার্জশিট ‘প্রত্যাখ্যান’ বেরোবি শিক্ষার্থীদের

২৪ ঘণ্টায় আরও ১৯ জনের করোনা শনাক্ত

নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করে গণতান্ত্রিক কাঠামো শক্তিশালী করা যাবে না: সালাহউদ্দিন আহমদ

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করলেন সিইসি

সংস্কার ছাড়া হাজার বছরেও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না : শুনানিতে হাবিবুল আউয়াল

সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা ভুল ছিল: প্রেস সচিব

ছবি

টানা চতুর্থ দিনের মতো কলমবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের

tab

জাতীয়

১০ বছরে ফল উৎপাদন বেড়েছে ৫০ শতাংশ, তবুও কমেছে আমদানি

সংবাদ ডেস্ক

শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

দেশে বিগত ১০ বছরে ফল উৎপাদন প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট ফল উৎপাদন ছিল প্রায় এক কোটি মেট্রিক টন। সেটি বেড়ে বর্তমানে এক কোটি ৫০ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে মানুষের ফল খাওয়ার হারও বেড়েছে। দেশে ফলের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। গত দুই দশক ধরেই ফল উৎপাদনে টেকসই ও ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। ছোট দেশ, জমি কম। তবুও বিশ্বের শীর্ষ ১০ গ্রীষ্মম-লীয় ফল উৎপাদনকারী দেশের অন্যতম বাংলাদেশ। ১০ বছর আগে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ দিনে গড়ে ৩৫-৪০ গ্রাম করে ফল খেত, এখন এ হার ৮৬ গ্রাম।

১০ বছর আগে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ দিনে গড়ে ৩৫-৪০ গ্রাম করে ফল খেত, এখন এ হার ৮৬ গ্রাম

পাহাড়ি অঞ্চলে ৭৫০ লাখ হেক্টর ও উপকূলে ১৮ লাখ হেক্টর জমি পতিত জমিকে ফল চাষের আওতায় নিয়ে আসতে হবে

বর্তমান বারোমাসি ‘আঠাবিহীন’ কাঁঠালের বিদেশে রপ্তানির সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বাৎসরিক ১১ দশমিক ৫ শতাংশ হারে ফলের উৎপাদন বাড়ছে। বিশেষ করে আম ও পেয়ারার উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ, পেঁপের আড়াইগুণ, লিচুর ৫০ শতাংশ, মাল্টার ১৫-২০ শতাংশ ও কমলার উৎপাদন ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশের মানুষের ফল বেশি খাওয়ারও তথ্য দিচ্ছে। বিবিএসের খানা জরিপে দেখা গেছে, ২০২২ সালে দেশের একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে ৯৫ দশমিক ৪ গ্রাম ফল খেয়েছেন। ২০১০ সালে এই গড় ছিল ৪৪ দশমিক ৭ গ্রাম।

বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বিগত কয়েক বছরে দেশি বিদেশি ফল উৎপাদনও ব্যাপক হারে বেড়েছে। বিশেষ করে ড্রাগন চাষে বড় সাফল্য এসেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে ড্রাগন উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৭৭ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার ৮১৩ টনে। ড্রাগনের পাশাপাশি অ্যাভোক্যাডো, আরবি খেজুর, রাম্বুটান, পার্সিমন চাষও বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে একটি সময়েই শুধু ফল পাওয়া যেত। এখন প্রায় সারাবছরই ফল পাওয়া যায়। উৎপাদন বাড়ায় দেশে ফল আমদানির হারও কমেছে।

রাজধানীর খামারবাড়ির মৃত্তিকা সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের (তৃতীয় সংশোধনী) জাতীয় কর্মশালায় এসব তথ্য উঠে আসে।

গতকাল বৃহস্পতিবার হওয়া অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আব্দুল হালিম। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে আমের উৎপাদন ছিল ২০ লাখ ২৩ হাজার টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তথ্যানুযায়ী তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৮ হাজার টনে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, একটা সময় বিদেশ থেকে আম আমদানি হতো। অথচ গত কয়েক বছর ধরে উল্টো বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩৮টি দেশে আম রপ্তানি হচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ হাজার ৩২১ টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ হাজার ১০০ টন, তার আগের বছর ১ হাজার ৭৫৭ টন আম রপ্তানি হয়েছে। চলতি বছর নতুন করে যুক্ত হয়েছে চীন। প্রায় ৫ হাজার টন আম রপ্তানির লক্ষ্য রয়েছে এ বছর।

সেখানে বলা হয়, দেশে পেয়ারা উৎপাদনও বেড়েছে। ১০ বছর আগে উৎপাদন ছিল ৪ লাখ ১৩ হাজার টন; সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫৩ হাজার টনে। আগে শুধু বর্ষা মৌসুমে পেয়ারা পাওয়া যেত। এখন প্রায় সারাবছরই পাওয়া যায়। দেশে উৎপাদিত পেয়ারার ৭০ শতাংশই থাই জাতের পেয়ারা। এক সময় অতিথিদের পাতে আপেল জাতীয় ফলই শুধু দেখা হতো। এখন আপেলের পরিবর্তে দেখা মেলে বলসুন্দরী কুল বরই। ১০ বছরে কুল বরই উৎপাদন ১ লাখ ৬১ হাজার টন থেকে ১ লাখ ৭৬ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। ফলে আপেল আমদানি কমেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যখন প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭০০ টন আপেল আমদানি হয়েছে, বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৭০ টনে। দেশে ক্রমাগত অন্যান্য ফল আমদানিও কমে যাচ্ছে।

সম্প্রতি দেশে সাড়া ফেলেছে বারোমাসি আঠাবিহীন কাঁঠাল চাষ। বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেশে ১ লাখ বারোমাসি কাঁঠাল চারা রোপণ করা হয়েছে। বর্তমান এই কাঁঠাল বিদেশে রপ্তানির সুযোগও সৃষ্টি করেছে।

প্রকল্পের সহযোগিতায় চাষাবাদ করছেন খাগড়াছড়ির নাড়িয়ারচরের চাষি কবিতা চাকমা। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ৩ হাজার এমডি টু জাতের আনারস চাষ করেছেন। একটা আনারস ২ কেজি ৮০০ গ্রামের ওজন হয়েছিল। দাম ভালো পেয়েছেন, প্রতিটি আনারস ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের সাবেক পরিচালক ড. মেহেদী মাসুদ বলেন, দেশে ফলের কোনো গবেষক নেই। অথচ চাষিরা নিজেরা চাষ করে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমরা অফিসাররা তাদের কাছে শিখছি। তিনি বলেন, মাটিতে চারা করলে বিদেশে রপ্তানি করা যায় না। করতে হবে কোকোপিটে। আমরা ম্যানেজমেন্ট করতে পারছি না।

আব্দুল হালিম বলেন, ‘দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে ৭৫০ লাখ হেক্টর ও উপকূলে ১৮ লাখ হেক্টর জমি পতিত পড়ে আছে। এসব জমিকে ফল চাষের আওতায় নিয়ে আসাই ছিল আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৪টি হর্টিকালচার সেন্টার করার লক্ষ্য নিয়ে ৯টি করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২৮ হাজার ৫০০ নারীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারা উদ্যোক্তা, স্বাবলম্বী হচ্ছে। তাছাড়া এখন পর্যন্ত ৯ হাজার বাণিজ্যিক ফল বাগান তৈরি করা হয়েছে। দেশের হর্টিকালচার সেন্টারগুলোতে আগে যেখানে দেড় কোটি চারা হতো সেখানে বর্তমানে তা বেড়ে ৫ কোটি চারা উৎপাদন হচ্ছে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘এ প্রকল্পটি বন্ধ করা যাবে না। এটি চালিয়ে যেতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রপ্তানির জন্য

প্রযুক্তি বাড়ানোর কথা বলছি অথচ অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা দেখছি না।’ কৃষি সচিব বলেন, ‘এ প্রকল্পটি বন্ধ করা যাবে না। এটি চালিয়ে যেতে হবে।’

বাংলাদেশে আম্রপালি আমের জনক ডিএইর সাবেক মহা-পরিচালক এম এনামুল হক বলেন, ‘আমি ফল ও লেবু জাতীয় ফসল উৎপাদনে বেশি আগ্রহী ছিলাম। সে দৃষ্টিকোণ থেকেই আম্রপালি এনে দেশে আবাদের ব্যবস্থা করেছি।’

সংশ্লিষ্টরা বলেন, মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে উৎপাদন বৃদ্ধিসহ নিরাপদ ফল নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি নিরাপদ ফল সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ক্ষতি ও অপচয় কমাতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। মানুষ এখন নিজের স্বাস্থ্যের কথা ভাবছে, ফল উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি খাওয়ার দিকে ঝুঁকছে।

back to top