শনিবার,(২৮ জুন ২০২৫) সকাল থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চলছে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি। বন্ধ রয়েছে এনবিআরের সব সেবা। চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল, ঢাকা কাস্টম হাউসসহ দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে কার্যক্রম বন্ধ। এছাড়াও বন্ধ রয়েছে আমদানি-রপ্তানিতে সব ধরনের শুল্কায়ন কার্যক্রমও। এই কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি আজও চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শনিবার দুপুরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ এই ঘোষণা দেয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ কোনোমতেই কাম্য নয়
আন্দোলনকারীরা বলছেন, এনবিআর চেয়ারম্যান পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর
শনিবার বন্ধ ছিল এনবিআর, বন্দর, কাস্টম হাউসসহ আমদানি-রপ্তানিতে সব ধরনের শুল্কায়ন কার্যক্রম
শনিবার সকালে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে কমপ্লিট শাটডাউন ও ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি শুরু করেন আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে সকাল থেকে এনবিআরের ঢাকা কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কর্মকর্তারা রাজধানীর এনবিআর ভবনের সামনে সমবেত হন। এদিকে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেন ব্যবসায়ীরা। তারা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার দ্রুত সমাধান করার আহ্বান জানান।
ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার বলেন, ‘ব্যবসায়ী সমাজ বলেছে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ কোনোমতেই কাম্য নয় এবং তাতে কোনো সফলতা আসবে না। আমরা পরিতাপের সঙ্গে বলছি যে, কী কারণে পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর একজন আমলার অপসারণ ব্যবসায়ী সমাজ কাম্য নয় বলছে সেটি তাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে খোলাসা করে বলেননি। কিন্তু আমরা ব্যবসায়ী সমাজসহ পুরো দেশবাসীর কাছে এরই মধ্যে আগের প্রেস বিজ্ঞপ্তি এবং আজকের (শনিবার) প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে খোলাসা করেছি যে, রাজস্ব ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ, প্রকৃত, টেকসই ও বাস্তব সম্মত সংস্কারের স্বার্থে কেন ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানকে অপসারণ করতে হবে।’
কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ ঘোষিত ২৮ জুন থেকে ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন যথারীতি চলবে। অর্থাৎ আজ ২৯ জুনও কমপ্লিট শাটডাউন যথারীতি চলবে। তবে, আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই কমপ্লিট শাটডাউনের আওতামুক্ত থাকবে। এছাড়া, ২৯ জুন এনবিআর অভিমুখে ‘শান্তিপূর্ণ মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচিও পালন করা হবে।’
সংগঠনটির মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকা বলেন, ‘আগামী মঙ্গলবার আমাদের আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছে। আলোচনার সদিচ্ছা থাকলে শনিবারের এই কর্মসূচির মধ্যেই ডাকা যেত। মঙ্গলবার অনেক লম্বা সময়। তাদের আলোচনার আদৌ কতটা ইচ্ছা আছে আমরা জানি না। যে কোনো মুহূর্তে আমাদের ডাকলে আমরা নিশ্চয়ই আলোচনায় যাব। কিন্তু আলোচনায় যাব কী নিয়ে? আমরা যৌক্তিক রাজস্ব সংস্কারের দাবি নিয়ে যাব।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান এই দাবির প্রথম প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের মধ্য দিয়ে এই প্রতিবন্ধকতা দূর হবে।’
ব্যবসায়ীরা এনবিআরের কাছে জিম্মি এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জিম্মি হওয়ার কথা।’
অন্যদিকে অতিরিক্ত কর কমিশনার ও সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মির্জা আশিক রানা বলেন, ‘বিগত তিন দিন ধরে এখানে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এখানে জলকামান রাখা হয়েছে। সরকারি একজন আমলা (এনবিআর চেয়ারম্যান) সকাল ৬টায় সশস্ত্র বাহিনীর নিরাপত্তায় এনবিআর ভবনে কেন আসতে হবে? বাংলাদেশের কোনো সচিব সকাল বেলা সশ্রস্ত্র পাহারায় তার দপ্তরে প্রবেশ করে? আর তার কর্মচারীরা বাইরে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভেজে।’ এ সময় তিনি এনবিআর ভবন অবরুদ্ধ করা এবং ভবনে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ তোলেন।
এর আগে শনিবার সকাল থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) কাজ হয়নি। চলেছে শাটডাউন কর্মসূচি। ভবনের ভেতরে কেউ ঢুকতে পারেননি। বের হতেও পারেননি কেউ। এ কারণে এনবিআরের সব সেবা বন্ধ ছিল। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল, ঢাকা কাস্টম হাউসসহ দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এতে আমদানি-রপ্তানিতে বন্ধ ছিল সব ধরনের শুল্কায়ন কার্যক্রম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল নয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কাজ হচ্ছে না। সব টেবিল-চেয়ার ফাঁকা পড়ে আছে। প্রায় সব কর্মকর্তা-কর্মচারী লাগাতার শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছেন। এনবিআরের সামনের রাস্তায় কয়েকশ’ কর্মকর্তা-কর্মচারী অবস্থান করছেন। নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতিও দেখা যাচ্ছে। তারা কাউকে এনবিআরের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না, বের হতেও দিচ্ছেন। এনবিআরের তিনটি ফটকে তালা ঝুলছে।
সব পক্ষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে রাজস্ব খাতের সংস্কার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে শনিবার ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি শুরু করেছেন আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সকাল থেকে এনবিআরের ঢাকা কার্যালয়ের কর্মকর্তাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কর্মকর্তারা রাজধানীর এনবিআর ভবনের সামনে সমবেত হয়েছেন।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলন চলছে। এনবিআর হলো দেশের প্রধান রাজস্ব আদায়কারী সংস্থা। জুন মাসে অর্থবছরের শেষ সময়। এই সময় রাজস্ব আদায়ে বেশ গতি থাকে। সেজন্য আজ দেশের সব শুল্ক-কর কার্যালয় খোলা রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আন্দোলনের কারণে শনিবার সব কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এনবিআরের মূল ফটক বন্ধ করে দিয়ে ভেতরে অবস্থান নিয়েছে বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা। এনবিআর ভবনের আশপাশে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে শনিবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষস্থানীয় ১৩টি সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নেতারা এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
তারা বলছেন, তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবি সমর্থন করেন না। এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ কোনোভাবে কাম্য নয়। একই সঙ্গে তারা একটি দক্ষ ও হয়রানিমুক্ত এনবিআর প্রতিষ্ঠার জন্য সংস্থাটির সংস্কারের পক্ষে জোরালো সমর্থনের কথা তুলে ধরেন।
ব্যবসায়ী নেতারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে সরকারের প্রতি দাবি জানান। তারা বলেন, ‘এই আন্দোলনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়াল ঠেকে গেছে।’ দ্রুত সরকারের তরফ থেকে আলোচনার উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তারা।
চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় অচলাবস্থা: কাস্টমসে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তাদের লাগাতার ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এতে দেশের প্রধান বাণিজ্যিক বন্দর চরম অচলাবস্থার মধ্যে পড়েছে। ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন; এর প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরেও।
এই কর্মসূচির প্রথম দিনে শনিবার সকাল ছয়টা থেকে শুরু হওয়ার পর বন্দর থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। আমদানি-রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়নও বন্ধ রয়েছে।
জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কার্যক্রম চালু থাকলেও শুধু পূর্বে অনুমোদিত জাহাজগুলোই এর আওতায় রয়েছে। নতুন কোনো জাহাজের নিবন্ধন না থাকলে জেটিতে ভেড়ানোর সুযোগ থাকছে না। ফলে কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে পুরো বন্দর কার্যত অচল হয়ে পড়বে।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির শুল্কায়ন থেকে খালাস পর্যন্ত সব কার্যক্রমই কাস্টমসের অনুমোদনসাপেক্ষ। ফলে কাস্টমস বন্ধ থাকলে, বন্দরও অচল হয়ে পড়ে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক শিপিং কোম্পানি মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানির হেড অব অপারেশনস অ্যান্ড লজিস্টিকস আজমীর হোসেন চৌধুরী জানান, পূর্ব অনুমোদিত জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কার্যক্রম চলছে। তবে শুল্কায়ন না হলে রপ্তানি করা সম্ভব নয়।
শনিবার থেকে রাজস্ব খাতে কাঠামোগত সংস্কার ও এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ সারাদেশে লাগাতার ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি চালু করেছে। এর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে, যেখান দিয়ে দেশের সিংহভাগ আমদানি-রপ্তানি হয়।
শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম বলেন, ‘এই কর্মসূচি আমদানি-রপ্তানিতে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করবে। কারণ, কাস্টমসের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পুরো বন্দর কার্যত অচল হয়ে পড়বে।’
পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই কর্মসূচি আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কার্যক্রমের আওতামুক্ত থাকবে এবং ‘শান্তিপূর্ণ মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচিও পালিত হচ্ছে। দাবি বাস্তবায়নের প্রয়োজনে তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত এবং তার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
পরিষদ জানিয়েছে, এই আন্দোলন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এবং দেশের স্বার্থে যৌক্তিক দাবিতে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পালিত হচ্ছে।
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
শনিবার,(২৮ জুন ২০২৫) সকাল থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চলছে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি। বন্ধ রয়েছে এনবিআরের সব সেবা। চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল, ঢাকা কাস্টম হাউসসহ দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে কার্যক্রম বন্ধ। এছাড়াও বন্ধ রয়েছে আমদানি-রপ্তানিতে সব ধরনের শুল্কায়ন কার্যক্রমও। এই কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি আজও চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শনিবার দুপুরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ এই ঘোষণা দেয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ কোনোমতেই কাম্য নয়
আন্দোলনকারীরা বলছেন, এনবিআর চেয়ারম্যান পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর
শনিবার বন্ধ ছিল এনবিআর, বন্দর, কাস্টম হাউসসহ আমদানি-রপ্তানিতে সব ধরনের শুল্কায়ন কার্যক্রম
শনিবার সকালে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে কমপ্লিট শাটডাউন ও ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি শুরু করেন আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে সকাল থেকে এনবিআরের ঢাকা কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কর্মকর্তারা রাজধানীর এনবিআর ভবনের সামনে সমবেত হন। এদিকে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেন ব্যবসায়ীরা। তারা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার দ্রুত সমাধান করার আহ্বান জানান।
ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার বলেন, ‘ব্যবসায়ী সমাজ বলেছে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ কোনোমতেই কাম্য নয় এবং তাতে কোনো সফলতা আসবে না। আমরা পরিতাপের সঙ্গে বলছি যে, কী কারণে পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর একজন আমলার অপসারণ ব্যবসায়ী সমাজ কাম্য নয় বলছে সেটি তাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে খোলাসা করে বলেননি। কিন্তু আমরা ব্যবসায়ী সমাজসহ পুরো দেশবাসীর কাছে এরই মধ্যে আগের প্রেস বিজ্ঞপ্তি এবং আজকের (শনিবার) প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে খোলাসা করেছি যে, রাজস্ব ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ, প্রকৃত, টেকসই ও বাস্তব সম্মত সংস্কারের স্বার্থে কেন ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানকে অপসারণ করতে হবে।’
কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ ঘোষিত ২৮ জুন থেকে ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন যথারীতি চলবে। অর্থাৎ আজ ২৯ জুনও কমপ্লিট শাটডাউন যথারীতি চলবে। তবে, আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই কমপ্লিট শাটডাউনের আওতামুক্ত থাকবে। এছাড়া, ২৯ জুন এনবিআর অভিমুখে ‘শান্তিপূর্ণ মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচিও পালন করা হবে।’
সংগঠনটির মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকা বলেন, ‘আগামী মঙ্গলবার আমাদের আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছে। আলোচনার সদিচ্ছা থাকলে শনিবারের এই কর্মসূচির মধ্যেই ডাকা যেত। মঙ্গলবার অনেক লম্বা সময়। তাদের আলোচনার আদৌ কতটা ইচ্ছা আছে আমরা জানি না। যে কোনো মুহূর্তে আমাদের ডাকলে আমরা নিশ্চয়ই আলোচনায় যাব। কিন্তু আলোচনায় যাব কী নিয়ে? আমরা যৌক্তিক রাজস্ব সংস্কারের দাবি নিয়ে যাব।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান এই দাবির প্রথম প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের মধ্য দিয়ে এই প্রতিবন্ধকতা দূর হবে।’
ব্যবসায়ীরা এনবিআরের কাছে জিম্মি এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জিম্মি হওয়ার কথা।’
অন্যদিকে অতিরিক্ত কর কমিশনার ও সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মির্জা আশিক রানা বলেন, ‘বিগত তিন দিন ধরে এখানে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এখানে জলকামান রাখা হয়েছে। সরকারি একজন আমলা (এনবিআর চেয়ারম্যান) সকাল ৬টায় সশস্ত্র বাহিনীর নিরাপত্তায় এনবিআর ভবনে কেন আসতে হবে? বাংলাদেশের কোনো সচিব সকাল বেলা সশ্রস্ত্র পাহারায় তার দপ্তরে প্রবেশ করে? আর তার কর্মচারীরা বাইরে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভেজে।’ এ সময় তিনি এনবিআর ভবন অবরুদ্ধ করা এবং ভবনে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ তোলেন।
এর আগে শনিবার সকাল থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) কাজ হয়নি। চলেছে শাটডাউন কর্মসূচি। ভবনের ভেতরে কেউ ঢুকতে পারেননি। বের হতেও পারেননি কেউ। এ কারণে এনবিআরের সব সেবা বন্ধ ছিল। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল, ঢাকা কাস্টম হাউসসহ দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এতে আমদানি-রপ্তানিতে বন্ধ ছিল সব ধরনের শুল্কায়ন কার্যক্রম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল নয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কাজ হচ্ছে না। সব টেবিল-চেয়ার ফাঁকা পড়ে আছে। প্রায় সব কর্মকর্তা-কর্মচারী লাগাতার শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছেন। এনবিআরের সামনের রাস্তায় কয়েকশ’ কর্মকর্তা-কর্মচারী অবস্থান করছেন। নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতিও দেখা যাচ্ছে। তারা কাউকে এনবিআরের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না, বের হতেও দিচ্ছেন। এনবিআরের তিনটি ফটকে তালা ঝুলছে।
সব পক্ষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে রাজস্ব খাতের সংস্কার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে শনিবার ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি শুরু করেছেন আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সকাল থেকে এনবিআরের ঢাকা কার্যালয়ের কর্মকর্তাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কর্মকর্তারা রাজধানীর এনবিআর ভবনের সামনে সমবেত হয়েছেন।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলন চলছে। এনবিআর হলো দেশের প্রধান রাজস্ব আদায়কারী সংস্থা। জুন মাসে অর্থবছরের শেষ সময়। এই সময় রাজস্ব আদায়ে বেশ গতি থাকে। সেজন্য আজ দেশের সব শুল্ক-কর কার্যালয় খোলা রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আন্দোলনের কারণে শনিবার সব কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এনবিআরের মূল ফটক বন্ধ করে দিয়ে ভেতরে অবস্থান নিয়েছে বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা। এনবিআর ভবনের আশপাশে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে শনিবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষস্থানীয় ১৩টি সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নেতারা এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
তারা বলছেন, তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবি সমর্থন করেন না। এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ কোনোভাবে কাম্য নয়। একই সঙ্গে তারা একটি দক্ষ ও হয়রানিমুক্ত এনবিআর প্রতিষ্ঠার জন্য সংস্থাটির সংস্কারের পক্ষে জোরালো সমর্থনের কথা তুলে ধরেন।
ব্যবসায়ী নেতারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে সরকারের প্রতি দাবি জানান। তারা বলেন, ‘এই আন্দোলনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়াল ঠেকে গেছে।’ দ্রুত সরকারের তরফ থেকে আলোচনার উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তারা।
চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় অচলাবস্থা: কাস্টমসে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তাদের লাগাতার ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এতে দেশের প্রধান বাণিজ্যিক বন্দর চরম অচলাবস্থার মধ্যে পড়েছে। ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন; এর প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরেও।
এই কর্মসূচির প্রথম দিনে শনিবার সকাল ছয়টা থেকে শুরু হওয়ার পর বন্দর থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। আমদানি-রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়নও বন্ধ রয়েছে।
জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কার্যক্রম চালু থাকলেও শুধু পূর্বে অনুমোদিত জাহাজগুলোই এর আওতায় রয়েছে। নতুন কোনো জাহাজের নিবন্ধন না থাকলে জেটিতে ভেড়ানোর সুযোগ থাকছে না। ফলে কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে পুরো বন্দর কার্যত অচল হয়ে পড়বে।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির শুল্কায়ন থেকে খালাস পর্যন্ত সব কার্যক্রমই কাস্টমসের অনুমোদনসাপেক্ষ। ফলে কাস্টমস বন্ধ থাকলে, বন্দরও অচল হয়ে পড়ে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক শিপিং কোম্পানি মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানির হেড অব অপারেশনস অ্যান্ড লজিস্টিকস আজমীর হোসেন চৌধুরী জানান, পূর্ব অনুমোদিত জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কার্যক্রম চলছে। তবে শুল্কায়ন না হলে রপ্তানি করা সম্ভব নয়।
শনিবার থেকে রাজস্ব খাতে কাঠামোগত সংস্কার ও এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ সারাদেশে লাগাতার ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি চালু করেছে। এর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে, যেখান দিয়ে দেশের সিংহভাগ আমদানি-রপ্তানি হয়।
শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম বলেন, ‘এই কর্মসূচি আমদানি-রপ্তানিতে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করবে। কারণ, কাস্টমসের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পুরো বন্দর কার্যত অচল হয়ে পড়বে।’
পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই কর্মসূচি আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কার্যক্রমের আওতামুক্ত থাকবে এবং ‘শান্তিপূর্ণ মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচিও পালিত হচ্ছে। দাবি বাস্তবায়নের প্রয়োজনে তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত এবং তার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
পরিষদ জানিয়েছে, এই আন্দোলন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এবং দেশের স্বার্থে যৌক্তিক দাবিতে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পালিত হচ্ছে।