শনিবার রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ -সংবাদ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রধান শক্তি হয়ে ওঠার আকাক্সক্ষা বাস্তবে রূপ দিতে আগামী নির্বাচন ঘিরে ইসলামপন্থি দলগুলোর ঐক্যের সুর শোনা গেল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশে। সেই সমাবেশে ইসলামী রাষ্ট্র গঠনে ‘ঐক্যের ডাক’ দিয়েছেন দলটির আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
তিনি বলেন, ‘গণ-আকাক্সক্ষা তৈরি হয়েছে। আগামী নির্বাচনে ইসলামী দলগুলো হবে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। আমি শুরু থেকেই ইসলামপন্থি সব ভোট এক বাক্সে আনার কথা বলছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে শুধু ইসলামী দলই নয়, বরং অনেক দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল ‘এক বাক্স’ নীতিতে আসতে পারে। যদি কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলতে পারি, তবে বাংলাদেশে ইসলামপন্থিরাই হবে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব আমাদের হাতেই আসবে।’
নিজেদের মধ্যে ঐক্য ‘প্রতিষ্ঠা’ হয়েছে দাবি করে আগামী জাতীয় নির্বাচন জোটবদ্ধভাবে করার সম্ভাবনার কথা বলেছেন বিভিন্ন ইসলামপন্থি দলের নেতারা। সংস্কার, বিচার ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে শনিবার সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশ হয়, সেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের সমালোচনাও হয়েছে।
দলটির আমির (চরমোনাই পীর) বলেন, ‘সংস্কার না করে নির্বাচন আয়োজন করে দেশকে আবার আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যাবে না। রাষ্ট্রের মূলনীতিসহ সংসদের উভয় কক্ষের পিআর পদ্ধতিতে ঐকমত্য না হলে গণভোটের আয়োজন করতে হবে।’
সমাবেশের মূল পর্ব শুরু হয় শনিবার দুপুর ২টায়। তার আগে থেকে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশস্থলে। মূলপর্ব শুরু হওয়ার আগেই সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় ভরে যায়। এদিন সকাল ১০টায় কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় সমাবেশের প্রথম পর্ব। তাতে বক্তব্য দেন সারা দেশ থেকে আসা জেলা ও মহানগর পর্যায়ের নেতারা।
সমাবেশে অংশ নিতে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও পিকআপে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসেন। ব্যানার-ফেস্টুন ও দলীয় প্রতীক হাতপাখা নিয়ে মিছিল-স্লোগান দিতে থাকেন নেতাকর্মীরা।
মহাসমাবেশকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ধিত অংশ ও আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে একটি গৌরবময় মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
রেজাউল করীম বলে, ‘মৌলিক সংস্কার নিয়ে গড়িমসি বিশ্বাসঘাতকতা। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগী মনোভাব চাই, চোখ রাঙানি চাইনি।’ তিনি জুলাইয়ের খুনিদের জেলের বাইরে থাকাকে সরকারের ব্যর্থতা বলে অভিহিত করেন।
দলটি মহাসমাবেশ থেকে দেশে রাজনৈতিক সংস্কার, বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা ও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে ১৬ দফা দাবি উত্থাপন করেছে। দলটির মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান ‘মহাসমাবেশের ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেন।
ঘোষণাপত্রে উত্থাপিত ১৬ দফা
দাবিসমূহ হলো; সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতিরূপে পুনঃস্থাপন, সংসদের উভয়কক্ষে সংখ্যানুপাতিক পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, জুলাই সনদের ঘোষণা ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র বিনির্মাণে জাতীয় ঐকমত্য, ভবিষ্যৎ স্বৈরাচার ও দলীয় কর্তৃত্ববাদ রোধে মৌলিক রাষ্ট্র সংস্কার, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনে ফ্যাসিবাদী প্রভাবমুক্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, পতিত ফ্যাসিবাদের বিচার ও পলাতক অপরাধীদের ফিরিয়ে আনার কূটনৈতিক পদক্ষেপ, পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার ও দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও খুন-খারাবি রোধে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা, ভারতের সঙ্গে করা সব চুক্তি প্রকাশ ও দেশবিরোধী চুক্তির বাতিল, জাতীয় নির্বাচনের আগে সব পর্যায়ে স্থানীয় নির্বাচন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান প্রণয়ন, দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি ও সন্ত্রাসীদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিবেশ নিশ্চিত করা, ঘুষ-দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা বন্ধ এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ইসলাম ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী কর্মকাণ্ডে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ, জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে দুর্নীতিবাজ ও চাঁদাবাজদের প্রতিহত করা, রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ইসলামের আলোকিত আদর্শ বাস্তবায়নের আহ্বান।
সমাবেশে নেতারা বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায়, জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং ইসলামবিরোধী ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় এই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন সময়ের দাবি।
শনিবার রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ -সংবাদ
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রধান শক্তি হয়ে ওঠার আকাক্সক্ষা বাস্তবে রূপ দিতে আগামী নির্বাচন ঘিরে ইসলামপন্থি দলগুলোর ঐক্যের সুর শোনা গেল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশে। সেই সমাবেশে ইসলামী রাষ্ট্র গঠনে ‘ঐক্যের ডাক’ দিয়েছেন দলটির আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
তিনি বলেন, ‘গণ-আকাক্সক্ষা তৈরি হয়েছে। আগামী নির্বাচনে ইসলামী দলগুলো হবে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। আমি শুরু থেকেই ইসলামপন্থি সব ভোট এক বাক্সে আনার কথা বলছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে শুধু ইসলামী দলই নয়, বরং অনেক দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল ‘এক বাক্স’ নীতিতে আসতে পারে। যদি কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলতে পারি, তবে বাংলাদেশে ইসলামপন্থিরাই হবে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব আমাদের হাতেই আসবে।’
নিজেদের মধ্যে ঐক্য ‘প্রতিষ্ঠা’ হয়েছে দাবি করে আগামী জাতীয় নির্বাচন জোটবদ্ধভাবে করার সম্ভাবনার কথা বলেছেন বিভিন্ন ইসলামপন্থি দলের নেতারা। সংস্কার, বিচার ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে শনিবার সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশ হয়, সেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের সমালোচনাও হয়েছে।
দলটির আমির (চরমোনাই পীর) বলেন, ‘সংস্কার না করে নির্বাচন আয়োজন করে দেশকে আবার আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যাবে না। রাষ্ট্রের মূলনীতিসহ সংসদের উভয় কক্ষের পিআর পদ্ধতিতে ঐকমত্য না হলে গণভোটের আয়োজন করতে হবে।’
সমাবেশের মূল পর্ব শুরু হয় শনিবার দুপুর ২টায়। তার আগে থেকে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশস্থলে। মূলপর্ব শুরু হওয়ার আগেই সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় ভরে যায়। এদিন সকাল ১০টায় কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় সমাবেশের প্রথম পর্ব। তাতে বক্তব্য দেন সারা দেশ থেকে আসা জেলা ও মহানগর পর্যায়ের নেতারা।
সমাবেশে অংশ নিতে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও পিকআপে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসেন। ব্যানার-ফেস্টুন ও দলীয় প্রতীক হাতপাখা নিয়ে মিছিল-স্লোগান দিতে থাকেন নেতাকর্মীরা।
মহাসমাবেশকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ধিত অংশ ও আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে একটি গৌরবময় মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
রেজাউল করীম বলে, ‘মৌলিক সংস্কার নিয়ে গড়িমসি বিশ্বাসঘাতকতা। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগী মনোভাব চাই, চোখ রাঙানি চাইনি।’ তিনি জুলাইয়ের খুনিদের জেলের বাইরে থাকাকে সরকারের ব্যর্থতা বলে অভিহিত করেন।
দলটি মহাসমাবেশ থেকে দেশে রাজনৈতিক সংস্কার, বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা ও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে ১৬ দফা দাবি উত্থাপন করেছে। দলটির মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান ‘মহাসমাবেশের ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেন।
ঘোষণাপত্রে উত্থাপিত ১৬ দফা
দাবিসমূহ হলো; সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতিরূপে পুনঃস্থাপন, সংসদের উভয়কক্ষে সংখ্যানুপাতিক পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, জুলাই সনদের ঘোষণা ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র বিনির্মাণে জাতীয় ঐকমত্য, ভবিষ্যৎ স্বৈরাচার ও দলীয় কর্তৃত্ববাদ রোধে মৌলিক রাষ্ট্র সংস্কার, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনে ফ্যাসিবাদী প্রভাবমুক্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, পতিত ফ্যাসিবাদের বিচার ও পলাতক অপরাধীদের ফিরিয়ে আনার কূটনৈতিক পদক্ষেপ, পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার ও দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও খুন-খারাবি রোধে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা, ভারতের সঙ্গে করা সব চুক্তি প্রকাশ ও দেশবিরোধী চুক্তির বাতিল, জাতীয় নির্বাচনের আগে সব পর্যায়ে স্থানীয় নির্বাচন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান প্রণয়ন, দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি ও সন্ত্রাসীদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিবেশ নিশ্চিত করা, ঘুষ-দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা বন্ধ এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ইসলাম ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী কর্মকাণ্ডে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ, জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে দুর্নীতিবাজ ও চাঁদাবাজদের প্রতিহত করা, রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ইসলামের আলোকিত আদর্শ বাস্তবায়নের আহ্বান।
সমাবেশে নেতারা বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায়, জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং ইসলামবিরোধী ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় এই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন সময়ের দাবি।