এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে রবিবার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন -সংবাদ
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চলমান আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রবিবার,(২৯ জুন ২০২৫) রাত সাড়ে নয়টার দিকে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এর ফলে গত কয়েক দিন ধরে চলা আন্দোলন কর্মসূচি আপাতত শেষ হলো।
এনবিআরের চলমান
আন্দোলন রবিবার রাতে প্রত্যাহার করা হয়েছে
শাটডাউন কর্মসূচিতে রাজস্ব ব্যবস্থা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা দেখা দেয়
সরকার এনবিআরের চাকরি অত্যাবশ্যকীয় সেবা হিসেবে ঘোষণা করে কঠোর অবস্থান নেয়
ব্যবসায়ীরা দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানান
আন্দোলনের মূল কারণ এনবিআর বিলুপ্তি ও চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ এবং দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদলের নেতারা। ব্যবসায়ীদের পক্ষে বক্তব্য দেন বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ এবং এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, এপেক্স ফুটওয়্যারের এমডি ও মেট্রোপলিটন চেম্বারের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি মির্জা আশিক রানা প্রমুখ।
শাটডাউন কর্মসূচি ও এর প্রভাব
গতকাল শনিবার থেকে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করায় সারাদেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানিসহ রাজস্ব আদায়ের কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দেয়। ঢাকার এনবিআর ভবন থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দর, ঢাকা কাস্টমস হাউস, বেনাপোল, সোনামসজিদ, আখাউড়া, বুড়িমারীসহ সব স্থলবন্দরে শুল্ক-কর আদায় কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।
অন্যদিকে গত দেড় মাস ধরে এনবিআরের যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন করে আসছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পরিস্থিতিকে চরমে নিয়ে যায়।
শনিবার এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে প্রবেশ ও বাহিরের সব পথ বন্ধ করে সেখানে সশস্ত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি দেখা যায়। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে সামনে চলতে থাকে শাটডাউন কর্মসূচি। আন্দোলনকারীদের হাতে দেখা যায় ‘দফা এক, দাবি এক, চেয়ারম্যানের পদত্যাগ’, ‘আব্দুর রহমান খানকে রেখে কোনো আলোচনা নয়’ ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড।
সরকারের প্রতিক্রিয়া ও অবস্থান
এই পরিস্থিতিতে সরকার কঠোর অবস্থান নেয়। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, ‘আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আর কোনো বৈঠক হবে না। এবার সরকার কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে।’ এরই পরিপ্রেক্ষিতে একটি সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়, এনবিআরের চাকরি অত্যাবশ্যকীয় সেবা হিসেবে বিবেচিত হবে এবং কাজে যোগ না দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারি বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “জাতীয় স্বার্থে আমদানি-রপ্তানি ও বৈদেশিক বাণিজ্য চলমান রাখার স্বার্থে কাস্টম হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট ও শুল্ক স্টেশনের সব শ্রেণির চাকরি অত্যাবশ্যকীয় সেবা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।”
ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ ও ক্ষয়ক্ষতি
দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা অবিলম্বে সংকট নিরসনের আহ্বান জানান। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, “পোশাক খাত থেকে প্রতিদিন ৬৫ মিলিয়ন ডলারের ট্রানজেকশন হয়। শাটডাউনের কারণে দিনে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।”
বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, “আমরা ব্যবসা করি এনবিআরের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তারা ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আমাদের জিম্মি করে ফেলেছে।”
আন্দোলনের পেছনের প্রেক্ষাপট
প্রায় দুই মাস ধরে এনবিআর বিভক্তির জেরে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত ১২ মে মধ্যরাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে একটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল সরকার। তবে আন্দোলনের মুখে ২৫ মে সরকার একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, এনবিআর বিলুপ্ত করা হচ্ছে না; বরং এটিকে স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত বিভাগ হিসেবে শক্তিশালী করা হবে। সেই সময় আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।
কিন্তু এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানের পদত্যাগ না হওয়ায় আন্দোলনকারীরা আবারও কর্মসূচি শুরু করেন এবং তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন। পরে সেনা ও পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় চেয়ারম্যান অফিসে ফিরে যান।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও প্রত্যাহার
আন্দোলনের চরম মুহূর্তে গতকাল (শনিবার) বিকেলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টার বৈঠকের কথা থাকলেও তা হয়নি। বরং পরে জানা যায়, সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, “আন্দোলন আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী। সবাইকে দ্রুত কর্মস্থলে ফিরতে হবে।”
এরপরই রাতে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ ও শীর্ষ ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদল যৌথভাবে এই ঘোষণা দেয়।
এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে রবিবার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন -সংবাদ
রোববার, ২৯ জুন ২০২৫
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চলমান আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রবিবার,(২৯ জুন ২০২৫) রাত সাড়ে নয়টার দিকে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এর ফলে গত কয়েক দিন ধরে চলা আন্দোলন কর্মসূচি আপাতত শেষ হলো।
এনবিআরের চলমান
আন্দোলন রবিবার রাতে প্রত্যাহার করা হয়েছে
শাটডাউন কর্মসূচিতে রাজস্ব ব্যবস্থা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা দেখা দেয়
সরকার এনবিআরের চাকরি অত্যাবশ্যকীয় সেবা হিসেবে ঘোষণা করে কঠোর অবস্থান নেয়
ব্যবসায়ীরা দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানান
আন্দোলনের মূল কারণ এনবিআর বিলুপ্তি ও চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ এবং দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদলের নেতারা। ব্যবসায়ীদের পক্ষে বক্তব্য দেন বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ এবং এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, এপেক্স ফুটওয়্যারের এমডি ও মেট্রোপলিটন চেম্বারের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি মির্জা আশিক রানা প্রমুখ।
শাটডাউন কর্মসূচি ও এর প্রভাব
গতকাল শনিবার থেকে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করায় সারাদেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানিসহ রাজস্ব আদায়ের কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দেয়। ঢাকার এনবিআর ভবন থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দর, ঢাকা কাস্টমস হাউস, বেনাপোল, সোনামসজিদ, আখাউড়া, বুড়িমারীসহ সব স্থলবন্দরে শুল্ক-কর আদায় কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।
অন্যদিকে গত দেড় মাস ধরে এনবিআরের যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন করে আসছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পরিস্থিতিকে চরমে নিয়ে যায়।
শনিবার এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে প্রবেশ ও বাহিরের সব পথ বন্ধ করে সেখানে সশস্ত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি দেখা যায়। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে সামনে চলতে থাকে শাটডাউন কর্মসূচি। আন্দোলনকারীদের হাতে দেখা যায় ‘দফা এক, দাবি এক, চেয়ারম্যানের পদত্যাগ’, ‘আব্দুর রহমান খানকে রেখে কোনো আলোচনা নয়’ ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড।
সরকারের প্রতিক্রিয়া ও অবস্থান
এই পরিস্থিতিতে সরকার কঠোর অবস্থান নেয়। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, ‘আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আর কোনো বৈঠক হবে না। এবার সরকার কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে।’ এরই পরিপ্রেক্ষিতে একটি সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়, এনবিআরের চাকরি অত্যাবশ্যকীয় সেবা হিসেবে বিবেচিত হবে এবং কাজে যোগ না দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারি বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “জাতীয় স্বার্থে আমদানি-রপ্তানি ও বৈদেশিক বাণিজ্য চলমান রাখার স্বার্থে কাস্টম হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট ও শুল্ক স্টেশনের সব শ্রেণির চাকরি অত্যাবশ্যকীয় সেবা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।”
ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ ও ক্ষয়ক্ষতি
দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা অবিলম্বে সংকট নিরসনের আহ্বান জানান। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, “পোশাক খাত থেকে প্রতিদিন ৬৫ মিলিয়ন ডলারের ট্রানজেকশন হয়। শাটডাউনের কারণে দিনে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।”
বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, “আমরা ব্যবসা করি এনবিআরের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তারা ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আমাদের জিম্মি করে ফেলেছে।”
আন্দোলনের পেছনের প্রেক্ষাপট
প্রায় দুই মাস ধরে এনবিআর বিভক্তির জেরে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত ১২ মে মধ্যরাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে একটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল সরকার। তবে আন্দোলনের মুখে ২৫ মে সরকার একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, এনবিআর বিলুপ্ত করা হচ্ছে না; বরং এটিকে স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত বিভাগ হিসেবে শক্তিশালী করা হবে। সেই সময় আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।
কিন্তু এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানের পদত্যাগ না হওয়ায় আন্দোলনকারীরা আবারও কর্মসূচি শুরু করেন এবং তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন। পরে সেনা ও পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় চেয়ারম্যান অফিসে ফিরে যান।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও প্রত্যাহার
আন্দোলনের চরম মুহূর্তে গতকাল (শনিবার) বিকেলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টার বৈঠকের কথা থাকলেও তা হয়নি। বরং পরে জানা যায়, সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, “আন্দোলন আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী। সবাইকে দ্রুত কর্মস্থলে ফিরতে হবে।”
এরপরই রাতে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ ও শীর্ষ ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদল যৌথভাবে এই ঘোষণা দেয়।