আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রমাণ না মেলার ভিত্তিতে বন্ধ হয়ে যাওয়া পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলায় এক দশক পর ‘যথেষ্ট অনিয়ম ও প্রমাণ’ থাকার কথা বলেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলাটি গায়ের জোরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন। তিনি মামলাটি পুনরুজ্জীবনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন এবং জানান, নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার সংস্থার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরামর্শক নিয়োগ নিয়ে বিভ্রান্তি ঘিরে হওয়া এই মামলায় উপাদান সঠিক থাকা সত্ত্বেও আদালতে এফআরটি (ফাইনাল রিপোর্ট ট্রু) বা নিষ্পত্তি প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর দায়ের হওয়া মামলাটি আবার বিবেচনায় আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, “আমাদের মনে হয়েছে অনেকটা গায়ের জোরে মামলাটা বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই মামলা পুনরুজ্জীবিত করা প্রয়োজন, এজন্য আমরা নতুন করে তদন্ত শুরু করেছি।”
সরকারি বিধি অনুযায়ী পিপিএ-পিপিআর অনুসরণ করে কাজ করার কথা থাকলেও সঠিকভাবে তা অনুসরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। বলেন, “মূল্যায়ন কমিটি একাধিকবার উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্যে অথবা অপরাধ প্রবণতা থেকেই এটি করা হয়েছে।”
বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন প্রত্যাহারের পর নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পদ্মা সেতু ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয়।
বিশ্ব ব্যাংকের চাপে দুদকের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল জাহিদ ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর বনানী থানায় মামলা দায়ের করেন, যেখানে সাতজনকে আসামি করা হয়।
তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া মামলার প্রধান আসামি ছিলেন। তাকে গ্রেপ্তার ও চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও পরে জামিনে মুক্ত হয়ে চাকরিতে পুনর্বহাল হন। অভিযোগের পর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন।
তবে পরে তৎকালীন দুদক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
২২ মাস তদন্ত শেষে দুদক ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে বলা হয়, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতি বা ষড়যন্ত্রের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি’।
তবে বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেন, “একই জিনিস বারবার কেনা হয়েছে—এ ধরনের অনিয়ম হয়েছে। মূল্যায়ন সঠিকভাবে হয়নি, পিপিএ-পিপিআর এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের ম্যান্ডেটরি সাক্ষাৎ ও তথ্য সংগ্রহ ঠিকভাবে করা হয়নি। পূর্বের প্রতিবেদন ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ। এবার তদন্তকারী কর্মকর্তা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবেদন জমা দেবেন এবং মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হবে।”
আগের আসামিদের আবার ডাকা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যদি নতুন করে তদন্তে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।”
কমিশনের অনুমোদনে আগের এফআরটি দেওয়া হলেও তাতে কোনো ভ্রান্তি ছিল কি না, তা বিবেচনায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা যোগসাজশে ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্র করেন এবং এসএনসি লাভালিন ইন্টারন্যাশনালকে পরামর্শকের কার্যাদেশ পাইয়ে দিতে ভূমিকা রাখেন।
দুর্নীতির অভিযোগ প্রথম ওঠে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে, কানাডায় এসএনসি লাভালিনের দুই কর্মকর্তা ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর। বিশ্ব ব্যাংক এরপর নিজেদের তদন্ত শুরু করে এবং অর্থায়ন স্থগিত রাখে।
বিশ্ব ব্যাংকের দাবির পর ২০১২ সালের ২৯ জুন তারা চূড়ান্তভাবে ঋণচুক্তি বাতিল করে। পরবর্তীতে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়।
কানাডার আদালতে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার পর ২০১৭ সালে তিন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে এই মামলায় ২০১২ সালের ডিসেম্বরে মামলা হয় এবং তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের অক্টোবরে সকল আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
তবে এখন দুদক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে মামলাটি নতুন করে তদন্তের আওতায় আসছে।
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রমাণ না মেলার ভিত্তিতে বন্ধ হয়ে যাওয়া পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলায় এক দশক পর ‘যথেষ্ট অনিয়ম ও প্রমাণ’ থাকার কথা বলেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলাটি গায়ের জোরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন। তিনি মামলাটি পুনরুজ্জীবনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন এবং জানান, নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার সংস্থার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরামর্শক নিয়োগ নিয়ে বিভ্রান্তি ঘিরে হওয়া এই মামলায় উপাদান সঠিক থাকা সত্ত্বেও আদালতে এফআরটি (ফাইনাল রিপোর্ট ট্রু) বা নিষ্পত্তি প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর দায়ের হওয়া মামলাটি আবার বিবেচনায় আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, “আমাদের মনে হয়েছে অনেকটা গায়ের জোরে মামলাটা বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই মামলা পুনরুজ্জীবিত করা প্রয়োজন, এজন্য আমরা নতুন করে তদন্ত শুরু করেছি।”
সরকারি বিধি অনুযায়ী পিপিএ-পিপিআর অনুসরণ করে কাজ করার কথা থাকলেও সঠিকভাবে তা অনুসরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। বলেন, “মূল্যায়ন কমিটি একাধিকবার উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্যে অথবা অপরাধ প্রবণতা থেকেই এটি করা হয়েছে।”
বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন প্রত্যাহারের পর নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পদ্মা সেতু ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয়।
বিশ্ব ব্যাংকের চাপে দুদকের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল জাহিদ ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর বনানী থানায় মামলা দায়ের করেন, যেখানে সাতজনকে আসামি করা হয়।
তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া মামলার প্রধান আসামি ছিলেন। তাকে গ্রেপ্তার ও চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও পরে জামিনে মুক্ত হয়ে চাকরিতে পুনর্বহাল হন। অভিযোগের পর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন।
তবে পরে তৎকালীন দুদক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
২২ মাস তদন্ত শেষে দুদক ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে বলা হয়, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতি বা ষড়যন্ত্রের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি’।
তবে বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেন, “একই জিনিস বারবার কেনা হয়েছে—এ ধরনের অনিয়ম হয়েছে। মূল্যায়ন সঠিকভাবে হয়নি, পিপিএ-পিপিআর এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের ম্যান্ডেটরি সাক্ষাৎ ও তথ্য সংগ্রহ ঠিকভাবে করা হয়নি। পূর্বের প্রতিবেদন ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ। এবার তদন্তকারী কর্মকর্তা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবেদন জমা দেবেন এবং মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হবে।”
আগের আসামিদের আবার ডাকা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যদি নতুন করে তদন্তে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।”
কমিশনের অনুমোদনে আগের এফআরটি দেওয়া হলেও তাতে কোনো ভ্রান্তি ছিল কি না, তা বিবেচনায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা যোগসাজশে ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্র করেন এবং এসএনসি লাভালিন ইন্টারন্যাশনালকে পরামর্শকের কার্যাদেশ পাইয়ে দিতে ভূমিকা রাখেন।
দুর্নীতির অভিযোগ প্রথম ওঠে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে, কানাডায় এসএনসি লাভালিনের দুই কর্মকর্তা ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর। বিশ্ব ব্যাংক এরপর নিজেদের তদন্ত শুরু করে এবং অর্থায়ন স্থগিত রাখে।
বিশ্ব ব্যাংকের দাবির পর ২০১২ সালের ২৯ জুন তারা চূড়ান্তভাবে ঋণচুক্তি বাতিল করে। পরবর্তীতে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়।
কানাডার আদালতে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার পর ২০১৭ সালে তিন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে এই মামলায় ২০১২ সালের ডিসেম্বরে মামলা হয় এবং তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের অক্টোবরে সকল আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
তবে এখন দুদক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে মামলাটি নতুন করে তদন্তের আওতায় আসছে।