ইসরায়েলি হামলায় প্রতিদিনই জ্বলছে গাজা, প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ
গত ২৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত শুধু খাবারের জন্য লাইনে অপেক্ষারত অবস্থায় গাজায় ৬০০-র বেশি প্যালেস্টাইনি নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন ৪,০০০-এরও বেশি মানুষ। এই সহায়তাপ্রত্যাশী প্যালেস্টাইনির অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে।
এই সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রগুলো পরিচালনা করছে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন, একটি ইসরায়েলি ও মার্কিন সহায়তাপ্রাপ্ত সংগঠন।
প্রথম আট দিনেই, এই ফাউন্ডেশনের ত্রাণ বিতরণ সাইটগুলোতে ১০০ জনের বেশি প্যালেস্টাইনি ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন। আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন এখন কার্যত উপত্যকার একমাত্র খাদ্য উৎস, কারণ ইসরায়েল অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ত্রাণ প্রবেশে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে।
স্থানীয় সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলেন, ‘অনেকেই এখন এই কেন্দ্রগুলোতে যেতে ভয় পাচ্ছেন, কারণ সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি চালানো হচ্ছে। কিন্তু খাবারের জন্য না গেলে, শিশুদের ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে হয়।’
সহায়তা কেন্দ্রগুলোর বাস্তব চিত্র
পূর্বে জাতিসংঘের নেতৃত্বে গাজাজুড়ে প্রায় ৪০০টি সহায়তা বিতরণ কেন্দ্র চালু ছিল। এখন গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন কেবল চারটি ‘মেগা-সাইট’ পরিচালনা করছে তিনটি দক্ষিণ গাজায় এবং একটি মধ্য গাজায়।
উত্তর গাজায় কোনো সহায়তা কেন্দ্র নেই, যেখানে পরিস্থিতি সবচেয়ে বিপর্যস্ত।
এই কেন্দ্রগুলো অনিয়মিতভাবে খোলা হয় কখনও এক ঘণ্টা, কখনও মাত্র কয়েক মিনিটেই সরবরাহ শেষ হয়ে যায়। প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণরূপে ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, যা প্রায়শই ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা ও সংঘর্ষ তৈরি করে।
সহায়তা কেন্দ্রে পৌঁছানো কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?
এই সহায়তা কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছাতে প্যালেস্টাইনিদের সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্র পেরিয়ে হাঁটতে হয়, মাঝে মধ্যে বায়োমেট্রিক চেকপয়েন্ট পার করতে হয় এবং সেখান থেকে ভারী খাবার বহন করে ফিরতে হয়।
এই ব্যবস্থায় বয়স্ক, আহত এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা প্রায়শই বাদ পড়ে যান, যেহেতু তারা এই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা করতে পারেন না।
খাদ্য সহায়তার প্রকৃতি ও ঘাটতি
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি প্রতিদিন প্রতি মানুষের জন্য ২,১০০ ক্যালোরি খাদ্যের পরামর্শ দেয়। কিন্তু ইসরায়েলের অনুমোদিত সহায়তা প্যাকেটে থাকে মাত্র ১,৬০০ ক্যালোরি।
গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন কিছুটা বেশি প্রায় ১,৭৫০ ক্যালোরি সরবরাহ করলেও তা পুষ্টির দিক থেকে অপর্যাপ্ত এবং তাতে কোনো পানি, ওষুধ, জ্বালানি বা কম্বল থাকে না।
একটি সাধারণ খাদ্য প্যাকেটে থাকে: ৪ কেজি ময়দা, কয়েক প্যাকেট পাস্তা, ২টি ক্যান ফাভা বিন, ১ প্যাকেট চা, কিছু বিস্কুট।
কিছু প্যাকেটে মসুর ডাল বা স্যুপের গুঁড়ো থাকে, কিন্তু সেগুলোর
পরিমাণও খুব কম।
সহায়তা নিতে গিয়ে গুলি: ইচ্ছাকৃত?
ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজ জানিয়েছে, কিছু সেনাসদস্যের বরাতে প্রকাশ করা হয় যে, প্যালেস্টাইনিদের বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনীয় প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
একজন সেনা বলেন, ‘আমরা ট্যাংক থেকে মেশিনগান চালিয়েছি, গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছি।’ আরেকজন জানান, ‘আমরা যে এলাকায় মোতায়েন ছিলাম, সেখানে প্রতিদিন ১ থেকে ৫ জন পর্যন্ত বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হচ্ছিলেন।’
তিনি একে সরাসরি ‘হত্যার ক্ষেত্র’ বলে বর্ণনা করেন।
গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের উত্থান
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর আগে, গাজায় প্রতিদিন ৫০০-র বেশি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করত। যুদ্ধ শুরু হলে, এই সংখ্যা ৮০’র নিচে নেমে আসে এবং পরবর্তীতে তিন মাসেরও বেশি সময় ত্রাণ প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ছিল।
এই পরিস্থিতিতে, ২৭ মে থেকে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন জাতিসংঘের পরিবর্তে ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নেয়। এটি ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের অংশ হিসেবে বিবেচিত এবং ‘ইসরায়েলি মস্তিষ্কপ্রসূত’ প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে।
সংস্থাটি দাবি করেছে যে, তারা ১০০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে, তবে এর আর্থিক উৎস এখনও পরিষ্কার নয়।
বৃহত্তর প্রেক্ষাপট ও হতাহতের পরিসংখ্যান
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৫৬,৬৪৭ জন প্যালেস্টাইনি নিহত এবং ১,৩৪,১০৫ জন আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১,১৩৯ জন নিহত হন এবং ২০০ জনেরও বেশি ব্যক্তি অপহরণ হন।
ইসরায়েলি হামলায় প্রতিদিনই জ্বলছে গাজা, প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
গত ২৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত শুধু খাবারের জন্য লাইনে অপেক্ষারত অবস্থায় গাজায় ৬০০-র বেশি প্যালেস্টাইনি নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন ৪,০০০-এরও বেশি মানুষ। এই সহায়তাপ্রত্যাশী প্যালেস্টাইনির অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে।
এই সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রগুলো পরিচালনা করছে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন, একটি ইসরায়েলি ও মার্কিন সহায়তাপ্রাপ্ত সংগঠন।
প্রথম আট দিনেই, এই ফাউন্ডেশনের ত্রাণ বিতরণ সাইটগুলোতে ১০০ জনের বেশি প্যালেস্টাইনি ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন। আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন এখন কার্যত উপত্যকার একমাত্র খাদ্য উৎস, কারণ ইসরায়েল অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ত্রাণ প্রবেশে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে।
স্থানীয় সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলেন, ‘অনেকেই এখন এই কেন্দ্রগুলোতে যেতে ভয় পাচ্ছেন, কারণ সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি চালানো হচ্ছে। কিন্তু খাবারের জন্য না গেলে, শিশুদের ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে হয়।’
সহায়তা কেন্দ্রগুলোর বাস্তব চিত্র
পূর্বে জাতিসংঘের নেতৃত্বে গাজাজুড়ে প্রায় ৪০০টি সহায়তা বিতরণ কেন্দ্র চালু ছিল। এখন গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন কেবল চারটি ‘মেগা-সাইট’ পরিচালনা করছে তিনটি দক্ষিণ গাজায় এবং একটি মধ্য গাজায়।
উত্তর গাজায় কোনো সহায়তা কেন্দ্র নেই, যেখানে পরিস্থিতি সবচেয়ে বিপর্যস্ত।
এই কেন্দ্রগুলো অনিয়মিতভাবে খোলা হয় কখনও এক ঘণ্টা, কখনও মাত্র কয়েক মিনিটেই সরবরাহ শেষ হয়ে যায়। প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণরূপে ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, যা প্রায়শই ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা ও সংঘর্ষ তৈরি করে।
সহায়তা কেন্দ্রে পৌঁছানো কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?
এই সহায়তা কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছাতে প্যালেস্টাইনিদের সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্র পেরিয়ে হাঁটতে হয়, মাঝে মধ্যে বায়োমেট্রিক চেকপয়েন্ট পার করতে হয় এবং সেখান থেকে ভারী খাবার বহন করে ফিরতে হয়।
এই ব্যবস্থায় বয়স্ক, আহত এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা প্রায়শই বাদ পড়ে যান, যেহেতু তারা এই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা করতে পারেন না।
খাদ্য সহায়তার প্রকৃতি ও ঘাটতি
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি প্রতিদিন প্রতি মানুষের জন্য ২,১০০ ক্যালোরি খাদ্যের পরামর্শ দেয়। কিন্তু ইসরায়েলের অনুমোদিত সহায়তা প্যাকেটে থাকে মাত্র ১,৬০০ ক্যালোরি।
গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন কিছুটা বেশি প্রায় ১,৭৫০ ক্যালোরি সরবরাহ করলেও তা পুষ্টির দিক থেকে অপর্যাপ্ত এবং তাতে কোনো পানি, ওষুধ, জ্বালানি বা কম্বল থাকে না।
একটি সাধারণ খাদ্য প্যাকেটে থাকে: ৪ কেজি ময়দা, কয়েক প্যাকেট পাস্তা, ২টি ক্যান ফাভা বিন, ১ প্যাকেট চা, কিছু বিস্কুট।
কিছু প্যাকেটে মসুর ডাল বা স্যুপের গুঁড়ো থাকে, কিন্তু সেগুলোর
পরিমাণও খুব কম।
সহায়তা নিতে গিয়ে গুলি: ইচ্ছাকৃত?
ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজ জানিয়েছে, কিছু সেনাসদস্যের বরাতে প্রকাশ করা হয় যে, প্যালেস্টাইনিদের বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনীয় প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
একজন সেনা বলেন, ‘আমরা ট্যাংক থেকে মেশিনগান চালিয়েছি, গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছি।’ আরেকজন জানান, ‘আমরা যে এলাকায় মোতায়েন ছিলাম, সেখানে প্রতিদিন ১ থেকে ৫ জন পর্যন্ত বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হচ্ছিলেন।’
তিনি একে সরাসরি ‘হত্যার ক্ষেত্র’ বলে বর্ণনা করেন।
গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের উত্থান
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর আগে, গাজায় প্রতিদিন ৫০০-র বেশি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করত। যুদ্ধ শুরু হলে, এই সংখ্যা ৮০’র নিচে নেমে আসে এবং পরবর্তীতে তিন মাসেরও বেশি সময় ত্রাণ প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ছিল।
এই পরিস্থিতিতে, ২৭ মে থেকে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন জাতিসংঘের পরিবর্তে ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নেয়। এটি ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের অংশ হিসেবে বিবেচিত এবং ‘ইসরায়েলি মস্তিষ্কপ্রসূত’ প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে।
সংস্থাটি দাবি করেছে যে, তারা ১০০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে, তবে এর আর্থিক উৎস এখনও পরিষ্কার নয়।
বৃহত্তর প্রেক্ষাপট ও হতাহতের পরিসংখ্যান
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৫৬,৬৪৭ জন প্যালেস্টাইনি নিহত এবং ১,৩৪,১০৫ জন আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১,১৩৯ জন নিহত হন এবং ২০০ জনেরও বেশি ব্যক্তি অপহরণ হন।