৬ ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক,ওসি অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ
চট্টগ্রামের পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মহাসড়ক অবরোধের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। বুধবার,(২ জুলাই ২০২৫) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পটিয়া বাইপাস এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। টানা ৬ ঘণ্টা অবরোধ চলার পর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তা তুলে নেয়া হলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে সকাল ১০টা ৪০ মিনিট থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত প্রথম দফায় পটিয়া থানার সামনে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। পরে মিছিল নিয়ে তারা পটিয়া সদরের কাগজীপাড়া এলাকায় অবস্থান নেন। এতে উভয় প্রান্তে প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়েন দূরপাল্লার যাত্রীরা। আটকে পড়ে অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন যানবাহন।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে পটিয়ায় পুলিশের সঙ্গে দুই দফা সংঘর্ষের প্রতিবাদে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় পটিয়া থানা ঘেরাও করেন আন্দোলনকারীরা। সেখান থেকেই মহাসড়ক অবরোধ শুরু হয়।
দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সরজমিনে দেখা যায়, ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা পটিয়া মডেল মসজিদসংলগ্ন মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন। তারা পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর এবং এসআই আসাদুজ্জামানের অপসারণ দাবিতে স্লোগান দেন।
অবরোধের কারণে পটিয়া বাইপাস মোড় থেকে ইন্দ্রপুল, কাজীরপাড়া পর্যন্ত সড়ক অচল হয়ে পড়ে। তবে পরীক্ষার্থী ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
দুপুরে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানুর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্লাবণ কুমার বিশ্বাস, সেনাবাহিনী ও চট্টগ্রাম জেলা ডিআইজির প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
অবরোধে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। আজগর নামে এক বাসচালক বলেন, ‘দুই ঘণ্টা ধরে গাড়ি আটকে আছে। বাসে ৩৫-৪০ জন যাত্রী আছে। চট্টগ্রাম পৌঁছানো নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।’
পটিয়া সুচক্রদণ্ডী এলাকার মো. রমজান আলী বলেন, ‘চিকিৎসার
জন্য চট্টগ্রাম যাচ্ছিলাম, কিন্তু দুপুর ২টার অ্যাপয়েন্টমেন্ট মিস হয়ে যাবে। বাধ্য হয়ে হেঁটে রওনা দিয়েছি।’
আবদুর রহমান স্কুলের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া ও পটিয়া আদর্শ স্কুলের মেহেদী বলেন, ‘গাড়ি না থাকায় দেড় কিলোমিটার হেঁটে আমজুরহাটে বাড়ি ফিরছি। খুব কষ্ট হচ্ছে।’
পটিয়ায় সংঘর্ষের পটভূমি:
গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা ও সাড়ে ১২টার দিকে পটিয়া থানা ও থানার সামনে দুই দফা লাঠিচার্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্তত ২৩ জন আহত হন। আহতরা পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। গুরুতর আহতদের মধ্যে রিদওয়ান সিদ্দিকীসহ ৪ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহতদের মধ্যে রয়েছেন: আশরাফুল ইসলাম তৌকির (২১), মো. নাদিম (২১), মো. আয়াস (১৬), মো. আকিল (১৮), মো. ইরফান উদ্দিন (১৮), তাসরিয়ান হাসান (১৮), মো. রায়হান উদ্দিন (২০), সাইফুল ইসলাম (১৭), জাহেদুল করিম শাহী (১৮), মুনতাসির আহমদ (১৭) ও সাইফুল ইসলাম (১৮)।
পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. নওশাদ তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন।
সংঘর্ষের সূত্রপাত: জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা ‘জুলাই দিবস’ পালন উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বালন করেন। অনুষ্ঠান শেষে থানার মোড়ে গিয়ে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগ নেতা দীপংকর তালুকদারকে দেখে ঘিরে ফেলেন এবং থানার মাঠে নিয়ে গিয়ে স্লোগান দেন। রাত ৯টার দিকে তাকে পুলিশে সোপর্দ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে লাঠিচার্জ হয়।
পরে রাতে আন্দোলনকারীরা ফের থানার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে গেলে পুলিশ ও স্পেশাল ফোর্স এসে তাদের লাঠিপেটা ও ধাওয়া করে। এতে আরও ১১ জন আহত হন।
পুলিশের অবস্থান: পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর বলেন, ‘ছাত্রদের ওপর কোনো লাঠিপেটা করা হয়নি। তারা থানায় এসে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ও স্লোগান দিলে তাদের ধাওয়া দেয়া হয়। দৌড়ে পালাতে গিয়ে কেউ পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। ছাত্ররা থানার দরজাও ভাঙচুর করেছে।’
লাঠিচার্জের শিকার আশরাফুল ইসলাম তৌকির বলেন: ‘ছাত্রলীগ নেতা দীপংকরকে ধরে থানায় সোপর্দ করলেও পুলিশ আমাদের ওপর অতর্কিতে লাঠিচার্জ করে।’
৬ ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক,ওসি অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
চট্টগ্রামের পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মহাসড়ক অবরোধের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। বুধবার,(২ জুলাই ২০২৫) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পটিয়া বাইপাস এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। টানা ৬ ঘণ্টা অবরোধ চলার পর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তা তুলে নেয়া হলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে সকাল ১০টা ৪০ মিনিট থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত প্রথম দফায় পটিয়া থানার সামনে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। পরে মিছিল নিয়ে তারা পটিয়া সদরের কাগজীপাড়া এলাকায় অবস্থান নেন। এতে উভয় প্রান্তে প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়েন দূরপাল্লার যাত্রীরা। আটকে পড়ে অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন যানবাহন।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে পটিয়ায় পুলিশের সঙ্গে দুই দফা সংঘর্ষের প্রতিবাদে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় পটিয়া থানা ঘেরাও করেন আন্দোলনকারীরা। সেখান থেকেই মহাসড়ক অবরোধ শুরু হয়।
দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সরজমিনে দেখা যায়, ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা পটিয়া মডেল মসজিদসংলগ্ন মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন। তারা পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর এবং এসআই আসাদুজ্জামানের অপসারণ দাবিতে স্লোগান দেন।
অবরোধের কারণে পটিয়া বাইপাস মোড় থেকে ইন্দ্রপুল, কাজীরপাড়া পর্যন্ত সড়ক অচল হয়ে পড়ে। তবে পরীক্ষার্থী ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
দুপুরে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানুর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্লাবণ কুমার বিশ্বাস, সেনাবাহিনী ও চট্টগ্রাম জেলা ডিআইজির প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
অবরোধে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। আজগর নামে এক বাসচালক বলেন, ‘দুই ঘণ্টা ধরে গাড়ি আটকে আছে। বাসে ৩৫-৪০ জন যাত্রী আছে। চট্টগ্রাম পৌঁছানো নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।’
পটিয়া সুচক্রদণ্ডী এলাকার মো. রমজান আলী বলেন, ‘চিকিৎসার
জন্য চট্টগ্রাম যাচ্ছিলাম, কিন্তু দুপুর ২টার অ্যাপয়েন্টমেন্ট মিস হয়ে যাবে। বাধ্য হয়ে হেঁটে রওনা দিয়েছি।’
আবদুর রহমান স্কুলের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া ও পটিয়া আদর্শ স্কুলের মেহেদী বলেন, ‘গাড়ি না থাকায় দেড় কিলোমিটার হেঁটে আমজুরহাটে বাড়ি ফিরছি। খুব কষ্ট হচ্ছে।’
পটিয়ায় সংঘর্ষের পটভূমি:
গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা ও সাড়ে ১২টার দিকে পটিয়া থানা ও থানার সামনে দুই দফা লাঠিচার্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্তত ২৩ জন আহত হন। আহতরা পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। গুরুতর আহতদের মধ্যে রিদওয়ান সিদ্দিকীসহ ৪ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহতদের মধ্যে রয়েছেন: আশরাফুল ইসলাম তৌকির (২১), মো. নাদিম (২১), মো. আয়াস (১৬), মো. আকিল (১৮), মো. ইরফান উদ্দিন (১৮), তাসরিয়ান হাসান (১৮), মো. রায়হান উদ্দিন (২০), সাইফুল ইসলাম (১৭), জাহেদুল করিম শাহী (১৮), মুনতাসির আহমদ (১৭) ও সাইফুল ইসলাম (১৮)।
পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. নওশাদ তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন।
সংঘর্ষের সূত্রপাত: জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা ‘জুলাই দিবস’ পালন উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বালন করেন। অনুষ্ঠান শেষে থানার মোড়ে গিয়ে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগ নেতা দীপংকর তালুকদারকে দেখে ঘিরে ফেলেন এবং থানার মাঠে নিয়ে গিয়ে স্লোগান দেন। রাত ৯টার দিকে তাকে পুলিশে সোপর্দ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে লাঠিচার্জ হয়।
পরে রাতে আন্দোলনকারীরা ফের থানার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে গেলে পুলিশ ও স্পেশাল ফোর্স এসে তাদের লাঠিপেটা ও ধাওয়া করে। এতে আরও ১১ জন আহত হন।
পুলিশের অবস্থান: পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর বলেন, ‘ছাত্রদের ওপর কোনো লাঠিপেটা করা হয়নি। তারা থানায় এসে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ও স্লোগান দিলে তাদের ধাওয়া দেয়া হয়। দৌড়ে পালাতে গিয়ে কেউ পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। ছাত্ররা থানার দরজাও ভাঙচুর করেছে।’
লাঠিচার্জের শিকার আশরাফুল ইসলাম তৌকির বলেন: ‘ছাত্রলীগ নেতা দীপংকরকে ধরে থানায় সোপর্দ করলেও পুলিশ আমাদের ওপর অতর্কিতে লাঠিচার্জ করে।’