নির্বাসিত তিব্বতি নেতা চতুর্দশ দালাই লামা -ফাইল ছবি
তিব্বতি বৌদ্ধদের বিশ্বাস, জ্যেষ্ঠ ভিক্ষুরা মৃত্যুর পর আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার ধরে রাখতে নতুন শিশুর শরীরে পুনর্জন্ম নেন। বর্তমান দালাই লামা, যিনি ১৯৩৫ সালের ৬ জুলাই চীনের ছিংহাই প্রদেশে এক কৃষক পরিবারে লামো ধোন্দুপ নামে জন্মগ্রহণ করেন, সেই বিশ্বাসের প্রতীক। ত্রয়োদশ দালাই লামার মৃত্যুর পর এক অনুসন্ধানী দল তার পুনর্জন্ম হিসেবে ২ বছর বয়সী ধোন্দুপকে শনাক্ত করে।
চীনের দাবি, দালাই লামার উত্তরসূরি নির্ধারণে তাদের অনুমোদন আবশ্যক। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বুধবার,(২ জুলাই ২০২৫) বলেন, শতাব্দীপ্রাচীন রীতি অনুযায়ী নতুন দালাই লামাকে চীনের ভূখণ্ডেই নির্বাচন করতে হবে এবং সে প্রক্রিয়ায় চীনা সরকারের অনুমোদন অপরিহার্য।
এদিকে ভারতে নির্বাসিত তিব্বতি নেতা চতুর্দশ দালাই লামা সম্প্রতি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি পুনর্জন্ম নেবেন এবং তার প্রতিষ্ঠিত অলাভজনক সংস্থা গাদেন ফোদরাং ট্রাস্ট-ই কেবলমাত্র নতুন দালাই লামাকে নির্বাচনের অধিকার রাখে। তিনি বলেন, ‘পুরনো রীতি মেনে তারাই নতুন দালাই লামাকে খুঁজবে ও শনাক্ত করবে। এতে অন্য কারও হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই।’
গত রোববার ৯০ বছরে পা দিতে যাওয়া এই নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী ধর্মগুরুর এই বক্তব্য তার ভবিষ্যৎ নিয়ে দীর্ঘদিনের কৌতুহল দূর করেছে। ধর্মশালায় এক ভিডিও বক্তৃতায় তিনি জানান, তিনি কোথায় ও কার শরীরে পুনর্জন্ম নেবেন, তা নির্ধারিত হবে তিব্বতি বৌদ্ধ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই, ট্রাস্টের মাধ্যমে।
তিব্বতি বৌদ্ধদের এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন শতাধিক ভিক্ষু, অসংখ্য সাংবাদিক ও হলিউড অভিনেতা রিচার্ড গেয়ারের মতো দালাই লামার আন্তর্জাতিক অনুসারীরা। বক্তৃতায় তিনি আরও বলেন, তার উত্তরসূরি ছেলে কিংবা মেয়ে যেকোনো হতে পারে এবং তিব্বত ছাড়া অন্য দেশের নাগরিকও হতে পারেন।
চীন অবশ্য একমত নয়। তাদের মতে, তিব্বতের ধর্মীয় নেতা নির্বাচনের অধিকার কেবল বেইজিংয়ের রয়েছে। ১৭৯৩ সালে ছিং রাজবংশের সময় থেকে প্রচলিত ‘সোনার পাত্র প্রথা’ অনুযায়ী সম্ভাব্য কিছু নাম থেকে একজনকে বেছে নেয়ার রীতির দিকেই তারা ইঙ্গিত করে। চীনের দাবি, এই প্রক্রিয়া অবশ্যই জাতীয় আইনানুসারে হতে হবে এবং পুনর্জন্ম অবশ্যই চীনের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে ঘটতে হবে।
তিব্বতের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং দালাই লামার উত্তরসূরি নিয়ে ভারত, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র তিন দেশই কৌশলগতভাবে আগ্রহী। চীনের বিরুদ্ধে ১৯৫৯ সালের ব্যর্থ বিদ্রোহের পর দালাই লামা ভারতে পালিয়ে আসেন এবং বেইজিং তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী মনে করে। অতীতে তিনি বলেছিলেন, তার উত্তরসূরি চীনের বাইরে জন্ম নেবে এবং চীনা সরকারের মনোনীত কাউকে তিব্বতিদের প্রত্যাখ্যান করা উচিত। তবে পরে এক সময় তিনি বলেছিলেন, এমনও হতে পারে যে কোনো উত্তরসূরি নাও থাকেন।
গাদেন ফোদরাং ট্রাস্টের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সামদং রিনপোচে জানিয়েছেন, দালাই লামার শারীরিক অবস্থা ভালো এবং তিনি এখনও উত্তরসূরি বিষয়ে লিখিত কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।
ভারতে নির্বাসিত তিব্বতি সরকারের (সেন্ট্রাল তিব্বতিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) প্রধান পেনপাৎসেরিং জানিয়েছেন, চীন কোনো বাধা না দিলে এবং দালাই লামার স্বাস্থ্য ভালো থাকলে, তিনি তিব্বত সফরেও যেতে পারেন। তিনি
আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র নির্বাসিত তিব্বতিদের জন্য বরাদ্দ তহবিলের ওপর থেকে কিছু বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে এবং তিব্বতি প্রশাসন বিকল্প অর্থায়নের পথ খুঁজছে।
চীনের প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র বহুবার বলেছে, তারা তিব্বতিদের মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মার্কিন আইনপ্রণেতারাও বারবার চীনকে সতর্ক করেছেন যে, দালাই লামার উত্তরসূরি নির্বাচনে বেইজিংয়ের হস্তক্ষেপ তারা মেনে নেবে না।
নির্বাসিত তিব্বতি নেতা চতুর্দশ দালাই লামা -ফাইল ছবি
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
তিব্বতি বৌদ্ধদের বিশ্বাস, জ্যেষ্ঠ ভিক্ষুরা মৃত্যুর পর আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার ধরে রাখতে নতুন শিশুর শরীরে পুনর্জন্ম নেন। বর্তমান দালাই লামা, যিনি ১৯৩৫ সালের ৬ জুলাই চীনের ছিংহাই প্রদেশে এক কৃষক পরিবারে লামো ধোন্দুপ নামে জন্মগ্রহণ করেন, সেই বিশ্বাসের প্রতীক। ত্রয়োদশ দালাই লামার মৃত্যুর পর এক অনুসন্ধানী দল তার পুনর্জন্ম হিসেবে ২ বছর বয়সী ধোন্দুপকে শনাক্ত করে।
চীনের দাবি, দালাই লামার উত্তরসূরি নির্ধারণে তাদের অনুমোদন আবশ্যক। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বুধবার,(২ জুলাই ২০২৫) বলেন, শতাব্দীপ্রাচীন রীতি অনুযায়ী নতুন দালাই লামাকে চীনের ভূখণ্ডেই নির্বাচন করতে হবে এবং সে প্রক্রিয়ায় চীনা সরকারের অনুমোদন অপরিহার্য।
এদিকে ভারতে নির্বাসিত তিব্বতি নেতা চতুর্দশ দালাই লামা সম্প্রতি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি পুনর্জন্ম নেবেন এবং তার প্রতিষ্ঠিত অলাভজনক সংস্থা গাদেন ফোদরাং ট্রাস্ট-ই কেবলমাত্র নতুন দালাই লামাকে নির্বাচনের অধিকার রাখে। তিনি বলেন, ‘পুরনো রীতি মেনে তারাই নতুন দালাই লামাকে খুঁজবে ও শনাক্ত করবে। এতে অন্য কারও হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই।’
গত রোববার ৯০ বছরে পা দিতে যাওয়া এই নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী ধর্মগুরুর এই বক্তব্য তার ভবিষ্যৎ নিয়ে দীর্ঘদিনের কৌতুহল দূর করেছে। ধর্মশালায় এক ভিডিও বক্তৃতায় তিনি জানান, তিনি কোথায় ও কার শরীরে পুনর্জন্ম নেবেন, তা নির্ধারিত হবে তিব্বতি বৌদ্ধ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই, ট্রাস্টের মাধ্যমে।
তিব্বতি বৌদ্ধদের এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন শতাধিক ভিক্ষু, অসংখ্য সাংবাদিক ও হলিউড অভিনেতা রিচার্ড গেয়ারের মতো দালাই লামার আন্তর্জাতিক অনুসারীরা। বক্তৃতায় তিনি আরও বলেন, তার উত্তরসূরি ছেলে কিংবা মেয়ে যেকোনো হতে পারে এবং তিব্বত ছাড়া অন্য দেশের নাগরিকও হতে পারেন।
চীন অবশ্য একমত নয়। তাদের মতে, তিব্বতের ধর্মীয় নেতা নির্বাচনের অধিকার কেবল বেইজিংয়ের রয়েছে। ১৭৯৩ সালে ছিং রাজবংশের সময় থেকে প্রচলিত ‘সোনার পাত্র প্রথা’ অনুযায়ী সম্ভাব্য কিছু নাম থেকে একজনকে বেছে নেয়ার রীতির দিকেই তারা ইঙ্গিত করে। চীনের দাবি, এই প্রক্রিয়া অবশ্যই জাতীয় আইনানুসারে হতে হবে এবং পুনর্জন্ম অবশ্যই চীনের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে ঘটতে হবে।
তিব্বতের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং দালাই লামার উত্তরসূরি নিয়ে ভারত, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র তিন দেশই কৌশলগতভাবে আগ্রহী। চীনের বিরুদ্ধে ১৯৫৯ সালের ব্যর্থ বিদ্রোহের পর দালাই লামা ভারতে পালিয়ে আসেন এবং বেইজিং তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী মনে করে। অতীতে তিনি বলেছিলেন, তার উত্তরসূরি চীনের বাইরে জন্ম নেবে এবং চীনা সরকারের মনোনীত কাউকে তিব্বতিদের প্রত্যাখ্যান করা উচিত। তবে পরে এক সময় তিনি বলেছিলেন, এমনও হতে পারে যে কোনো উত্তরসূরি নাও থাকেন।
গাদেন ফোদরাং ট্রাস্টের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সামদং রিনপোচে জানিয়েছেন, দালাই লামার শারীরিক অবস্থা ভালো এবং তিনি এখনও উত্তরসূরি বিষয়ে লিখিত কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।
ভারতে নির্বাসিত তিব্বতি সরকারের (সেন্ট্রাল তিব্বতিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) প্রধান পেনপাৎসেরিং জানিয়েছেন, চীন কোনো বাধা না দিলে এবং দালাই লামার স্বাস্থ্য ভালো থাকলে, তিনি তিব্বত সফরেও যেতে পারেন। তিনি
আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র নির্বাসিত তিব্বতিদের জন্য বরাদ্দ তহবিলের ওপর থেকে কিছু বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে এবং তিব্বতি প্রশাসন বিকল্প অর্থায়নের পথ খুঁজছে।
চীনের প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র বহুবার বলেছে, তারা তিব্বতিদের মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মার্কিন আইনপ্রণেতারাও বারবার চীনকে সতর্ক করেছেন যে, দালাই লামার উত্তরসূরি নির্বাচনে বেইজিংয়ের হস্তক্ষেপ তারা মেনে নেবে না।