প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, বিদেশের শ্রমবাজারে জনশক্তি পাঠানোর সরকারি প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘ। কিছু লোককে চাকরি দিতে আর দুর্নীতি করতে এমন প্রক্রিয়াগুলো রাখা হয়। প্রক্রিয়া সাধারণ করলে দুর্নীতি হবে না, অপচয়ও থাকে না।
বুধবার,(২ জুলাই ২০২৫) দুপুরে ‘জাপানে নতুন শ্রমবাজার কর্মী প্রেরণের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এ কথা বলেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ সেমিনারের আয়োজন করে।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘সরকারি কাজে ১০-১২টি স্বাক্ষর লাগে। কোনো দরকারই নেই। খামাখা মানুষকে সিগনেচার দেয়ার জন্য চাকরি দেয়া হয়েছে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমি একদম অনেস্টলি বলি, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫ জন ফুল টাইম শিক্ষক ছিলাম। আমি আপনাদের নিশ্চিত করে বলি, ২০ জন দিয়েও
কাজ করা সম্ভব ছিল। অন্যদের এমনিই চাকরি দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ বিএনপির কত বেশি শিক্ষক নিয়োগ করা যায়, সেই চিন্তা থেকে।’
সরকারি বিভিন্ন অফিসে যত লোক আছেন, তাদের অর্ধেকই কাজ না করে বসে থাকেন বলেও মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।
জাপানে জনশক্তি পাঠাতে দরকারে দেশে কোনো দাপ্তরিক প্রক্রিয়া রাখবেন না ঘোষণা দিয়ে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে লোক পাঠানোর ক্ষেত্রে অনেক দুর্বলতা ছিল। দেশটি তথ্যপ্রযুক্তির দেশ, সবকিছু রেকর্ড রয়েছে। সেখানে পাঠাতে এই দেশ থেকে এত যাচাই-বাছাইয়ের কী আছে? কথা দিচ্ছি, জাপানের ক্ষেত্রেও সবার মতামত ও পরামর্শ নিয়ে যত সাধারণ করা যায়, সেই চেষ্টা করা হবে।’
ভাষা ও পেশাগত দক্ষতা না থাকায় চাহিদা অনুযায়ী জাপানে লোক পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যেতে কোনো দক্ষতা লাগে না, এমনকি ভাষাও জানা লাগে না। জাপানে যেতে ভাষাগত ও কাজের দক্ষতা দুটিই লাগে। তাই মধ্যপ্রাচ্যে মানুষ বেশি যান, জাপানে পাঠানো যায় না।
শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, ‘চিন্তা করছি, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) দিকে যাব। জাপানের উদ্যোক্তারা আসবেন, তাদের সুযোগ তৈরি করে দেয়া হবে। তারাই এ দেশে এসে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দিয়ে জনশক্তি নিয়ে যাবেন। এ ছাড়া দেশের বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য কিছু প্রতিষ্ঠানকে দক্ষ জনবল তৈরির কাজে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা চলছে।’
প্রশাসন নিয়ে দুঃখের কথা জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘অনেক বড় সংস্কার প্রয়োজন। হয়তো এতে ৫ থেকে ১০ বছর লাগবে। দেশে যে রাজনৈতিক সরকার আছে, তারা এ দায়িত্ব অনুভব করে কিনা, জানা নেই। আমাদের পক্ষে শুরু করে দেয়া সম্ভব, শেষ করা সম্ভব নয়। এটা একটা অদ্ভুত প্রশাসনযন্ত্র। কোনো কিছু এগোতে চায় না। দুঃখ লাগে কাজ করতে গিয়ে।’
অনেক দেশে শ্রমিকদের অপকর্মের জন্য শ্রমবাজার নষ্ট কিংবা বন্ধ হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘শ্রমিকদের কিছু অপকর্ম, সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অনেক দেশে লোক পাঠানো বন্ধ হয়ে গেছে, বদনাম হচ্ছে। শুনেছি, অনেক দেশে নিয়মিত ঘোষণা দিয়ে সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ মারামারি করে। সৌদি আরবের একটি জায়গায় বাঙালি মস্তানরা গিয়ে অন্য বাঙালিদের টাকা ছিনতাই লুট করতে হামলা চালায়। প্রবাসী শ্রমিকদের এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে।’
স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে সমস্যার বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ব্যাংক গ্যারান্টি পাওয়া যায় না। কিছু বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে প্রস্তাব দেব, যদি কোনো ব্যাংক রাজি হয়। এ ছাড়া প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক থেকেও শিক্ষার্থীদের জন্য ঋণ দেয়ার সুযোগ চালুর বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, বিভিন্ন সমস্যা ও পরিকল্পনা নিয়ে কী করা হচ্ছে, কী হয়েছে, পরিকল্পনায় কী আছে, কী করা হবে এগুলো বলা হয়। জনশক্তি রপ্তানিতে সমঝোতা চুক্তি আগেও অনেকবার হয়েছে। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের ভেতরেই অন্যভাবে কীভাবে কাজ করা যায়, তা ভাবতে হবে।
উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘প্রথম সমস্যা হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। এর আগে সরকারের দায়বদ্ধতার অভাব। কাজের ব্যর্থতার জন্য খুব একটা লজ্জাবোধ আমাদের হয় না। কাজ করে ব্যর্থ হলে কোনো পরিণতি দেখা যায় না।’
সেমিনারে ‘জাপানে কর্মী পাঠানোর সুযোগ, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ বিষয়ের ওপর আলোচনা করেন আইএলওর পলিসি অ্যাডভাইজর জিয়া হাসান। তিনি বলেন, করোনার পর থেকে নেপাল প্রতিবছর জাপানে জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি করছে। যেখানে এখন বাংলাদেশ থেকে বছরে ৪-৫ হাজার লোক যান, সেখানে নেপাল থেকে যাচ্ছেন ৫০ হাজারের বেশি। আগামী ৫ বছরে জাপানে ১৬টি বিশেষ কাজে দক্ষ, এমন সোয়া আট লাখ শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে।
সেমিনারে অন্যদের মধ্যে আইওএম বাংলাদেশ মিশনের প্রধান ল্যান্স বোনো, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জ্যেষ্ঠ সচিব নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়াসহ বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, বিদেশের শ্রমবাজারে জনশক্তি পাঠানোর সরকারি প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘ। কিছু লোককে চাকরি দিতে আর দুর্নীতি করতে এমন প্রক্রিয়াগুলো রাখা হয়। প্রক্রিয়া সাধারণ করলে দুর্নীতি হবে না, অপচয়ও থাকে না।
বুধবার,(২ জুলাই ২০২৫) দুপুরে ‘জাপানে নতুন শ্রমবাজার কর্মী প্রেরণের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এ কথা বলেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ সেমিনারের আয়োজন করে।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘সরকারি কাজে ১০-১২টি স্বাক্ষর লাগে। কোনো দরকারই নেই। খামাখা মানুষকে সিগনেচার দেয়ার জন্য চাকরি দেয়া হয়েছে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমি একদম অনেস্টলি বলি, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫ জন ফুল টাইম শিক্ষক ছিলাম। আমি আপনাদের নিশ্চিত করে বলি, ২০ জন দিয়েও
কাজ করা সম্ভব ছিল। অন্যদের এমনিই চাকরি দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ বিএনপির কত বেশি শিক্ষক নিয়োগ করা যায়, সেই চিন্তা থেকে।’
সরকারি বিভিন্ন অফিসে যত লোক আছেন, তাদের অর্ধেকই কাজ না করে বসে থাকেন বলেও মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।
জাপানে জনশক্তি পাঠাতে দরকারে দেশে কোনো দাপ্তরিক প্রক্রিয়া রাখবেন না ঘোষণা দিয়ে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে লোক পাঠানোর ক্ষেত্রে অনেক দুর্বলতা ছিল। দেশটি তথ্যপ্রযুক্তির দেশ, সবকিছু রেকর্ড রয়েছে। সেখানে পাঠাতে এই দেশ থেকে এত যাচাই-বাছাইয়ের কী আছে? কথা দিচ্ছি, জাপানের ক্ষেত্রেও সবার মতামত ও পরামর্শ নিয়ে যত সাধারণ করা যায়, সেই চেষ্টা করা হবে।’
ভাষা ও পেশাগত দক্ষতা না থাকায় চাহিদা অনুযায়ী জাপানে লোক পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যেতে কোনো দক্ষতা লাগে না, এমনকি ভাষাও জানা লাগে না। জাপানে যেতে ভাষাগত ও কাজের দক্ষতা দুটিই লাগে। তাই মধ্যপ্রাচ্যে মানুষ বেশি যান, জাপানে পাঠানো যায় না।
শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, ‘চিন্তা করছি, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) দিকে যাব। জাপানের উদ্যোক্তারা আসবেন, তাদের সুযোগ তৈরি করে দেয়া হবে। তারাই এ দেশে এসে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দিয়ে জনশক্তি নিয়ে যাবেন। এ ছাড়া দেশের বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য কিছু প্রতিষ্ঠানকে দক্ষ জনবল তৈরির কাজে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা চলছে।’
প্রশাসন নিয়ে দুঃখের কথা জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘অনেক বড় সংস্কার প্রয়োজন। হয়তো এতে ৫ থেকে ১০ বছর লাগবে। দেশে যে রাজনৈতিক সরকার আছে, তারা এ দায়িত্ব অনুভব করে কিনা, জানা নেই। আমাদের পক্ষে শুরু করে দেয়া সম্ভব, শেষ করা সম্ভব নয়। এটা একটা অদ্ভুত প্রশাসনযন্ত্র। কোনো কিছু এগোতে চায় না। দুঃখ লাগে কাজ করতে গিয়ে।’
অনেক দেশে শ্রমিকদের অপকর্মের জন্য শ্রমবাজার নষ্ট কিংবা বন্ধ হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘শ্রমিকদের কিছু অপকর্ম, সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অনেক দেশে লোক পাঠানো বন্ধ হয়ে গেছে, বদনাম হচ্ছে। শুনেছি, অনেক দেশে নিয়মিত ঘোষণা দিয়ে সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ মারামারি করে। সৌদি আরবের একটি জায়গায় বাঙালি মস্তানরা গিয়ে অন্য বাঙালিদের টাকা ছিনতাই লুট করতে হামলা চালায়। প্রবাসী শ্রমিকদের এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে।’
স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে সমস্যার বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ব্যাংক গ্যারান্টি পাওয়া যায় না। কিছু বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে প্রস্তাব দেব, যদি কোনো ব্যাংক রাজি হয়। এ ছাড়া প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক থেকেও শিক্ষার্থীদের জন্য ঋণ দেয়ার সুযোগ চালুর বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, বিভিন্ন সমস্যা ও পরিকল্পনা নিয়ে কী করা হচ্ছে, কী হয়েছে, পরিকল্পনায় কী আছে, কী করা হবে এগুলো বলা হয়। জনশক্তি রপ্তানিতে সমঝোতা চুক্তি আগেও অনেকবার হয়েছে। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের ভেতরেই অন্যভাবে কীভাবে কাজ করা যায়, তা ভাবতে হবে।
উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘প্রথম সমস্যা হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। এর আগে সরকারের দায়বদ্ধতার অভাব। কাজের ব্যর্থতার জন্য খুব একটা লজ্জাবোধ আমাদের হয় না। কাজ করে ব্যর্থ হলে কোনো পরিণতি দেখা যায় না।’
সেমিনারে ‘জাপানে কর্মী পাঠানোর সুযোগ, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ বিষয়ের ওপর আলোচনা করেন আইএলওর পলিসি অ্যাডভাইজর জিয়া হাসান। তিনি বলেন, করোনার পর থেকে নেপাল প্রতিবছর জাপানে জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি করছে। যেখানে এখন বাংলাদেশ থেকে বছরে ৪-৫ হাজার লোক যান, সেখানে নেপাল থেকে যাচ্ছেন ৫০ হাজারের বেশি। আগামী ৫ বছরে জাপানে ১৬টি বিশেষ কাজে দক্ষ, এমন সোয়া আট লাখ শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে।
সেমিনারে অন্যদের মধ্যে আইওএম বাংলাদেশ মিশনের প্রধান ল্যান্স বোনো, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জ্যেষ্ঠ সচিব নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়াসহ বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।