গতকাল ঢাকার হোসনে দালানে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম -সংবাদ
ঢাকার পুলিশ কমিশনারের ‘দেশে কোনো জঙ্গি নাই’ বক্তব্যের তিন দিন বাদে জঙ্গি প্রশ্নে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বললেন, অপরাধ অপরাধই, এটাকে কোনো ‘লেবাস’ দিয়ে ‘কালারিং করার’ প্রয়োজন নাই। আশুরা উপলক্ষে নেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে বৃহস্পতিবার(৩-৭-২০২৫) ঢাকার হোসাইনী দালানে সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
যারা ককটেল বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত বা যারা
চেষ্টা করতেছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে
এক দশক আগে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় এই হোসাইনী দালানে জঙ্গি হামলা হয়েছিল। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল বলেন, ‘অপরাধ, ভাই অপরাধই। এইটা জঙ্গি, এইটা-ওইটা নিয়ে ইয়ে করার দরকার নাই। একটা বোমা মারবে, মানুষ মরবে- এইটা অপরাধ।
২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর গভীর রাতে আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় হোসাইনী দালানে বোমা হামলা হয়। এতে দুইজন নিহত ও শতাধিক লোক আহত হন। পরে ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত দুটি বোমা (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস- আইইডি) উদ্ধার করা হয়।
মামলার নথি অনুযায়ী, হোসাইনী দালানে হামলায় জেএমবির ১৩ জঙ্গি জড়িত ছিল। এদের মধ্যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযানের সময় তিনজন কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান। গ্রেপ্তারদের মধ্যে দুইজনকে আইনজীবীরা ‘নাবালক’ দাবি করায় জন্মসনদ পরীক্ষা করে আদালত সিদ্ধান্ত দেয়, তারা শিশু। পরে তাদের বিরুদ্ধে আলাদাভাবে বিচার চলে শিশু আদালতে।
২০২২ সালের মার্চে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে জেএমবির দুই সদস্যকে ১০ ও ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয় এবং ৬ আসামিকে খালাস দেয়। সেখানে এখন নিরাপত্তা শঙ্কা রয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে নজরুল ইসলাম বলেন,‘আমরা এখন পর্যন্ত আশঙ্কা পাইনি, তবে আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। বোথ কভার্ড অ্যান্ড ওভার্ড।’
হোসাইনী দালানে হামলার পরের বছরই ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার গুলশান-২ এ হোলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায় বাংলাদেশেরই ৫ তরুণ। গুলি চালিয়ে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে তারা হত্যা করে।
সেই রাতেই এর দায় স্বীকার করে আন্তর্জাতিক উগ্রবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট-আইএস। তবে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা তা নাকচ করে সে সময় বলেন, বাংলাদেশি জঙ্গিদের একটি সংগঠিত ধারাই এই হামলা চালিয়েছে, যার নাম দেয়া হয় ‘নব্য জেএমবি’। হোলি আর্টিজেন হামলার পর গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সাতজনের ফাঁসির রায় দেয়। পরে ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ে ওই সাতজনের সাজা পাল্টে আমৃত্যু
কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসায় ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গত সোমবার বলেন, ‘জঙ্গি নাই, এখন ঠেকাতে হবে ছিনতাই। জঙ্গি থাকলে না জঙ্গি নিয়ে ভাববো। আওয়ামী লীগের সময় জঙ্গি নাটক সাজিয়ে ছেলেপেলেদের মারছে, কিসের জঙ্গি?’ সম্প্রতি বিভিন্নস্থানে ককটেল বিস্ফোরণের বিষয়টি নজরে আনলে অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা জানেন, রাজনৈতিক একটা প্রেক্ষাপট চেইঞ্জ হইছে। বিচার শুরু হইছে, অনেক ধরনের অনেকেরই মনের মধ্যে ক্ষোভ আছে। দুই-চারটা ঘটনা ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। ‘কিন্তু পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় আছে, আমাদের পর্যাপ্ত ডিপ্লোয়মেন্ট আছে। যারা এই কাজগুলার সঙ্গে জড়িত বা যারা চেষ্টা করতেছে- তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব। আমরা চেষ্টা করতেছি, আপনারাও আমাদেরকে সহায়তা করবেন।’
আশুরা উপলক্ষে নিরাপত্তা প্রস্তুতি
মহররম মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় আগামী রোববার অক্টোবর বাংলাদেশে আশুরা পালিত হবে। এ উপলক্ষে ডিএমপির নেয়া নিরাপত্তা প্রস্তুতির বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বলেন, ‘২৭ জুন থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে শিয়া এবং অনেক সুন্নী সম্প্রদায়ও এই শোক দিবস পালন করবেন। এছাড়া অন্যান্য ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায় পবিত্র আশুরা উদ্যাপন করছেন বা করবেন।
‘আশুরাকে কেন্দ্র করে ডিএমপি প্রতিবছর একটি সুসংহত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এ বছরও যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে পবিত্র আশুরার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বা হবে।’ আশুরাকে কেন্দ্র করে মহররমের ১ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত ঢাকার হোসাইনী দালানের ইমামবাড়া, বড়কাটরা, মোহাম্মদপুর বিহারিক্যাম্প, সিয়ামসজিদ, বিবিকা রওজা, মিরপুর পল্লবী বিহারিক্যাম্পসহ অন্যান্য স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
পুলিশ কর্মকর্তা সরওয়ার বলেন, ‘ইমামবাড়ার আশপাশের এলাকায় চেকপোস্টের তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উঁচু ভবনের ছাদে সাদা পোশাকে এবং ইউনিফর্মে পুলিশ উপস্থিত থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারিসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা পালন করছে।’ ইমামবাড়ায় অনুষ্ঠান শুরুর আগে ডিএমপির সিটিটিসির ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ ইমামবাড়া সিসি ক্যামেরা দ্বারা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ এবং এর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাইবার পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে মনিটরিং করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
‘সব অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশপথে আর্চওয়ে গেইট স্থাপন, হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগত সবাইকেই তল্লাশির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে হবে। ‘নারীদের তল্লাশির জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক নারী পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে, গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের স্থির এবং ভিডিওচিত্র ধারণের ব্যবস্থা থাকবে। ইউনিফর্ম পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।’
তাজিয়া মিছিলের মাঝপথে প্রবেশ নয়, ধাতব ও দাহ্য পদার্থ নিষিদ্ধ
ঢাকায় বৃহস্পতিবার তিনটি, আজ ১১টি, আগামীকাল ১৭টি এবং আগামী রোববার ১৯টিসহ মোট ৫০টি তাজিয়া বা শোক মিছিল অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান অতিরিক্ত কমিশনার সরওয়ার। তিনি বলেন, ‘যেসব রাস্তায় তাজিয়া বা শোকমিছিল অনুষ্ঠিত হবে সেসব রাস্তায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশি ফোর্স মোতায়েন থাকবে।’
মিছিল আয়োজনকারী এবং অংশগ্রহণকারীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাজিয়া মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা যেন কোনো প্রকার ধাতব পদার্থ, দাহ্য পদার্থ, ছুরি, চাকু, তরবারি, লাঠি, বল্লাম, ব্যাগ বা বিভিন্ন সুটকেস, ছাতা বা সন্দেহজনক প্যাকেট নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে বা মিছিলে না আসেন। এই মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা যেন আতশবাজি বা পটকা ব্যবহার না করেন।’
অতিরিক্ত কমিশনার সরওয়ার বলেন, ‘পাঞ্জা মেলানোর সময় অনেক সময় ভীতি সঞ্চার হয়, যেন এটি না হয়।’ তিনি বলেন, ‘মিছিলে সুশৃঙ্খলভাবে সবাই যেন অংশগ্রহণ করে এবং মিছিল শেষে সুশৃঙ্খলভাবে যার যার গন্তব্যে চলে যাওয়ার আহ্বান জানাই। মিছিল চলাকালে নিশানের উচ্চতা বেশি হওয়ার কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে, রাস্তায় অনেক তার থাকে খেয়াল রাখতে হবে। যারা মিছিলে অংশগ্রহণ করবে, তারা যেন মিছিল শুরুর পূর্বেই অংশগ্রহণ করে এবং মাঝপথে অংশগ্রহণ যাতে না করে।’
নিষিদ্ধ সংগঠন বা অন্যান্য সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি চলমান এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা সরওয়ার বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে গুজব বা অপপ্রচার বন্ধে আমাদের দক্ষ টিম সাইবার মনিটরিং করছে এবং অব্যাহত রাখবে। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে আমাদের আইনপ্রয়োগকারী অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে এবং সেবা সংস্থাসমূহ ফায়ার ব্রিগেড বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করে ব্যবস্থা থাকবে।’
গতকাল ঢাকার হোসনে দালানে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
ঢাকার পুলিশ কমিশনারের ‘দেশে কোনো জঙ্গি নাই’ বক্তব্যের তিন দিন বাদে জঙ্গি প্রশ্নে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বললেন, অপরাধ অপরাধই, এটাকে কোনো ‘লেবাস’ দিয়ে ‘কালারিং করার’ প্রয়োজন নাই। আশুরা উপলক্ষে নেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে বৃহস্পতিবার(৩-৭-২০২৫) ঢাকার হোসাইনী দালানে সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
যারা ককটেল বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত বা যারা
চেষ্টা করতেছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে
এক দশক আগে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় এই হোসাইনী দালানে জঙ্গি হামলা হয়েছিল। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল বলেন, ‘অপরাধ, ভাই অপরাধই। এইটা জঙ্গি, এইটা-ওইটা নিয়ে ইয়ে করার দরকার নাই। একটা বোমা মারবে, মানুষ মরবে- এইটা অপরাধ।
২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর গভীর রাতে আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় হোসাইনী দালানে বোমা হামলা হয়। এতে দুইজন নিহত ও শতাধিক লোক আহত হন। পরে ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত দুটি বোমা (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস- আইইডি) উদ্ধার করা হয়।
মামলার নথি অনুযায়ী, হোসাইনী দালানে হামলায় জেএমবির ১৩ জঙ্গি জড়িত ছিল। এদের মধ্যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযানের সময় তিনজন কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান। গ্রেপ্তারদের মধ্যে দুইজনকে আইনজীবীরা ‘নাবালক’ দাবি করায় জন্মসনদ পরীক্ষা করে আদালত সিদ্ধান্ত দেয়, তারা শিশু। পরে তাদের বিরুদ্ধে আলাদাভাবে বিচার চলে শিশু আদালতে।
২০২২ সালের মার্চে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে জেএমবির দুই সদস্যকে ১০ ও ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয় এবং ৬ আসামিকে খালাস দেয়। সেখানে এখন নিরাপত্তা শঙ্কা রয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে নজরুল ইসলাম বলেন,‘আমরা এখন পর্যন্ত আশঙ্কা পাইনি, তবে আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। বোথ কভার্ড অ্যান্ড ওভার্ড।’
হোসাইনী দালানে হামলার পরের বছরই ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার গুলশান-২ এ হোলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায় বাংলাদেশেরই ৫ তরুণ। গুলি চালিয়ে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে তারা হত্যা করে।
সেই রাতেই এর দায় স্বীকার করে আন্তর্জাতিক উগ্রবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট-আইএস। তবে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা তা নাকচ করে সে সময় বলেন, বাংলাদেশি জঙ্গিদের একটি সংগঠিত ধারাই এই হামলা চালিয়েছে, যার নাম দেয়া হয় ‘নব্য জেএমবি’। হোলি আর্টিজেন হামলার পর গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সাতজনের ফাঁসির রায় দেয়। পরে ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ে ওই সাতজনের সাজা পাল্টে আমৃত্যু
কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসায় ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গত সোমবার বলেন, ‘জঙ্গি নাই, এখন ঠেকাতে হবে ছিনতাই। জঙ্গি থাকলে না জঙ্গি নিয়ে ভাববো। আওয়ামী লীগের সময় জঙ্গি নাটক সাজিয়ে ছেলেপেলেদের মারছে, কিসের জঙ্গি?’ সম্প্রতি বিভিন্নস্থানে ককটেল বিস্ফোরণের বিষয়টি নজরে আনলে অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা জানেন, রাজনৈতিক একটা প্রেক্ষাপট চেইঞ্জ হইছে। বিচার শুরু হইছে, অনেক ধরনের অনেকেরই মনের মধ্যে ক্ষোভ আছে। দুই-চারটা ঘটনা ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। ‘কিন্তু পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় আছে, আমাদের পর্যাপ্ত ডিপ্লোয়মেন্ট আছে। যারা এই কাজগুলার সঙ্গে জড়িত বা যারা চেষ্টা করতেছে- তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব। আমরা চেষ্টা করতেছি, আপনারাও আমাদেরকে সহায়তা করবেন।’
আশুরা উপলক্ষে নিরাপত্তা প্রস্তুতি
মহররম মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় আগামী রোববার অক্টোবর বাংলাদেশে আশুরা পালিত হবে। এ উপলক্ষে ডিএমপির নেয়া নিরাপত্তা প্রস্তুতির বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বলেন, ‘২৭ জুন থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে শিয়া এবং অনেক সুন্নী সম্প্রদায়ও এই শোক দিবস পালন করবেন। এছাড়া অন্যান্য ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায় পবিত্র আশুরা উদ্যাপন করছেন বা করবেন।
‘আশুরাকে কেন্দ্র করে ডিএমপি প্রতিবছর একটি সুসংহত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এ বছরও যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে পবিত্র আশুরার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বা হবে।’ আশুরাকে কেন্দ্র করে মহররমের ১ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত ঢাকার হোসাইনী দালানের ইমামবাড়া, বড়কাটরা, মোহাম্মদপুর বিহারিক্যাম্প, সিয়ামসজিদ, বিবিকা রওজা, মিরপুর পল্লবী বিহারিক্যাম্পসহ অন্যান্য স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
পুলিশ কর্মকর্তা সরওয়ার বলেন, ‘ইমামবাড়ার আশপাশের এলাকায় চেকপোস্টের তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উঁচু ভবনের ছাদে সাদা পোশাকে এবং ইউনিফর্মে পুলিশ উপস্থিত থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারিসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা পালন করছে।’ ইমামবাড়ায় অনুষ্ঠান শুরুর আগে ডিএমপির সিটিটিসির ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ ইমামবাড়া সিসি ক্যামেরা দ্বারা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ এবং এর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাইবার পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে মনিটরিং করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
‘সব অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশপথে আর্চওয়ে গেইট স্থাপন, হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগত সবাইকেই তল্লাশির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে হবে। ‘নারীদের তল্লাশির জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক নারী পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে, গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের স্থির এবং ভিডিওচিত্র ধারণের ব্যবস্থা থাকবে। ইউনিফর্ম পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।’
তাজিয়া মিছিলের মাঝপথে প্রবেশ নয়, ধাতব ও দাহ্য পদার্থ নিষিদ্ধ
ঢাকায় বৃহস্পতিবার তিনটি, আজ ১১টি, আগামীকাল ১৭টি এবং আগামী রোববার ১৯টিসহ মোট ৫০টি তাজিয়া বা শোক মিছিল অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান অতিরিক্ত কমিশনার সরওয়ার। তিনি বলেন, ‘যেসব রাস্তায় তাজিয়া বা শোকমিছিল অনুষ্ঠিত হবে সেসব রাস্তায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশি ফোর্স মোতায়েন থাকবে।’
মিছিল আয়োজনকারী এবং অংশগ্রহণকারীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাজিয়া মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা যেন কোনো প্রকার ধাতব পদার্থ, দাহ্য পদার্থ, ছুরি, চাকু, তরবারি, লাঠি, বল্লাম, ব্যাগ বা বিভিন্ন সুটকেস, ছাতা বা সন্দেহজনক প্যাকেট নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে বা মিছিলে না আসেন। এই মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা যেন আতশবাজি বা পটকা ব্যবহার না করেন।’
অতিরিক্ত কমিশনার সরওয়ার বলেন, ‘পাঞ্জা মেলানোর সময় অনেক সময় ভীতি সঞ্চার হয়, যেন এটি না হয়।’ তিনি বলেন, ‘মিছিলে সুশৃঙ্খলভাবে সবাই যেন অংশগ্রহণ করে এবং মিছিল শেষে সুশৃঙ্খলভাবে যার যার গন্তব্যে চলে যাওয়ার আহ্বান জানাই। মিছিল চলাকালে নিশানের উচ্চতা বেশি হওয়ার কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে, রাস্তায় অনেক তার থাকে খেয়াল রাখতে হবে। যারা মিছিলে অংশগ্রহণ করবে, তারা যেন মিছিল শুরুর পূর্বেই অংশগ্রহণ করে এবং মাঝপথে অংশগ্রহণ যাতে না করে।’
নিষিদ্ধ সংগঠন বা অন্যান্য সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি চলমান এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা সরওয়ার বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে গুজব বা অপপ্রচার বন্ধে আমাদের দক্ষ টিম সাইবার মনিটরিং করছে এবং অব্যাহত রাখবে। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে আমাদের আইনপ্রয়োগকারী অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে এবং সেবা সংস্থাসমূহ ফায়ার ব্রিগেড বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করে ব্যবস্থা থাকবে।’