ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ডেঙ্গু কর্নারে শিশু রোগী -সংবাদ
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী বিবির বাগিচা এলাকার বাসিন্দা পারভেজ মুন্না। তার সাত বছরের শিশু ইউসুফ হামজা। গত আট দিন ধরে ডেঙ্গু আক্রান্ত। শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে তাকে ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
ডেঙ্গু কর্নারের উদ্বোধন। বেড ভাড়া, ওষুধসহ চিকিৎসা ব্যয় বহনে অনেক অভিভাবকই দিশেহারা
‘প্রতিদিন হাসপাতালের বেড ভাড়া ৭শ’ টাকা। ওষুধ খরচ, মশারি কেনার টাকা সবই দিতে হয় রোগীর পক্ষ থেকে’
ডেঙ্গুতে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৩ জন, এ নিয়ে চলতি বছর মোট মৃত্যু হয়েছে ৪৮ জনের
হাসপাতালে প্রতি দিন ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হয়। অন্যদিকে হাসপাতালের বেড ভাড়া দিনে ৭শ’ টাকা। শিশু হামজার মতো আরও ৬ থেকে ৭টি শিশু হাসপাতালের ডেঙ্গু কর্নারে চিকিৎসা নিচ্ছে।
হাসপাতালে জরুরি ও বহিঃবিভাগে সোমবার,(০৭ জুলাই ২০২৫) দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, অনেক শিশুর অভিভাবক শিশু নিয়ে লাইন ধরে ভিড় করছেন। আবার অনেকের জ্বর ও শরীর ব্যথা হলেও পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয়নি। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এইভাবে রাজধানীর আশপাশের এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ডেঙ্গু ও জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা হাসপাতালে ভিড় করছেন।
ভর্তিকৃত একজন শিশুর দাদি অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের ডেঙ্গু কর্নারে তেলাপোকার উপদ্রব রয়েছে। শিশুর জন্য খাওয়া কিনে বেডের কাছে রাখলে তেলাপোকা খায় সেই খাবার, এমনটাই অভিযোগ করেন রোগীর স্বজনরা।
ডেঙ্গু কর্নারে উপস্থিত ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে অস্বীকার করেন।
শিশু ইউসুফ হামজার দাদি সংবাদ প্রতিবেদককে বলেন, যাত্রবাড়ীর বিবির বাগিচায় তাদের বাসা। গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ। তার ছেলে ১২ হাজার টাকা বেতনে একটি কোম্পানিতে ছোটখাটো কাজ করে সংসার চালায়। নাতি হামজা মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। নাতি ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় তার চিকিৎসা নিয়ে তারা এখন বিপাকে আছেন। প্রতিদিন হাসপাতালের বেড ভাড়া ৭শ’ টাকা। ওষুধ খরচ, মশারি কেনার টাকা সবই দিতে হয়। বিবির বাগিচায় তার নাতির মতো আরও অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত। পুরো এলাকায় মশার উপদ্রব। গেল বছর একই এলাকায় অনেকেই আক্রান্ত হয়েছে।
এই বৃদ্ধা বলেন, একটু পত্রিকায় লিখেন। যদি কিছু উপকার হয়। টাকার অভাবে শিশুকে আইসিইউতে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
শিশুটির পিতা পারভেজ জানান, সহকর্মীদের কাছ থেকে ধার-কর্জ করে এখন চিকিৎসা খরচ চালানো হচ্ছে। এক শিশুর চিকিৎসা নিয়ে
পুরো পরিবার এখন বিপাকে আছেন।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৬ বছরের শিশু নোহা। তার বাবা নুর উদ্দিন জানান, জ্বর হওয়ার পর তার নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে। এলাকার চিকিৎসায় কোনো উন্নতি না হওয়ায় গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর থেকে সোমবার ঢাকা শিশু হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়েছে।
তিন বছরের শিশু হাতেম। মিরপুরে তাদের বাসা। গত ১১ দিন ধরে ভর্তি আছে এখানে। দেড় থেকে দুই হাজার টাকা দিনে ওষুধ খরচ।
জ্বরে আক্রান্ত ১১ মাসের শিশু আনার নাসেরকে গত ২ জুলাই ঢাকার সিদ্বেশ্বরী থেকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসে তার মা-বাবা। তার পিতা একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন।
এই রোগীদের মতোই শিশু হাসপাতালের ডেঙ্গু সেল ছাড়াও জরুরি ও বহিঃবিভাগে আক্রান্ত শিশুদের কোলে নিয়ে মা ও স্বজনরা অপেক্ষা করছেন। সেখানে শিশু রোগীদের প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে।
ডেঙ্গু কর্নারে কর্মরত একজন চিকিৎসক জানান, ‘আমরা শিশুদের রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা দিচ্ছি। এর বাইরে কোনো কথা বলতে তিনি অস্বীকার করেন।’
ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা সম্পর্কে টিবি হাসপাতালের ডা. আয়শা আক্তার তার কার্যালয়ে সংবাদকে জানান, শিশুর অভিভাবকরা বাসায় থাকেন। তাদের প্রথম খেয়াল রাখতে হবে শিশু জ্বরে আক্রান্ত কিনা, তাদের খিট খিটে মেজাজ হচ্ছে কিনা, শিশুর ডায়রিয়ার লক্ষণ আছে কিনা এসব লক্ষণ থাকলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. আয়শা আক্তার আরও বলেন, ডেঙ্গু হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। বাচ্চারা খেলাধুলা করে। তাদের ঠাণ্ডা বা নিউমোনিয়া না হয় তার জন্য অভিভাবকদের সব সময় শিশুর যত্ন নিতে হবে। শিশুর শরীর ঘামলে তার ঘাম মুছে দিতে হবে। শিশুদের যন্ত্র ও পরিমাণমতো খাবার দিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য:
গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৪৯২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ২ জন বরিশাল বিভাগে ও একজন খুলনা বিভাগের।
গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে ৪৫ জনই শিশু।
চলতি মাসের গত ৭ দিনে আক্রান্ত ২ হাজার ৪৬৭ জন। ৭ দিনে মারা গেছেন ৬ জন। এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে সোমবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ১২ হাজার ৭৬৩ জন। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৪৮ জন।
হাসপাতালের তথ্যমতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে ৬৫ জন। শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ১২ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ২৩ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৯ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২২ জন ও সোহ্রাওয়ার্দী হাসপাতালে ৪৯ জন। এইভাবে সারাদেশে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি আছে ১৩০৬ জন।
ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ডেঙ্গু কর্নারে শিশু রোগী -সংবাদ
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী বিবির বাগিচা এলাকার বাসিন্দা পারভেজ মুন্না। তার সাত বছরের শিশু ইউসুফ হামজা। গত আট দিন ধরে ডেঙ্গু আক্রান্ত। শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে তাকে ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
ডেঙ্গু কর্নারের উদ্বোধন। বেড ভাড়া, ওষুধসহ চিকিৎসা ব্যয় বহনে অনেক অভিভাবকই দিশেহারা
‘প্রতিদিন হাসপাতালের বেড ভাড়া ৭শ’ টাকা। ওষুধ খরচ, মশারি কেনার টাকা সবই দিতে হয় রোগীর পক্ষ থেকে’
ডেঙ্গুতে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৩ জন, এ নিয়ে চলতি বছর মোট মৃত্যু হয়েছে ৪৮ জনের
হাসপাতালে প্রতি দিন ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হয়। অন্যদিকে হাসপাতালের বেড ভাড়া দিনে ৭শ’ টাকা। শিশু হামজার মতো আরও ৬ থেকে ৭টি শিশু হাসপাতালের ডেঙ্গু কর্নারে চিকিৎসা নিচ্ছে।
হাসপাতালে জরুরি ও বহিঃবিভাগে সোমবার,(০৭ জুলাই ২০২৫) দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, অনেক শিশুর অভিভাবক শিশু নিয়ে লাইন ধরে ভিড় করছেন। আবার অনেকের জ্বর ও শরীর ব্যথা হলেও পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয়নি। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এইভাবে রাজধানীর আশপাশের এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ডেঙ্গু ও জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা হাসপাতালে ভিড় করছেন।
ভর্তিকৃত একজন শিশুর দাদি অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের ডেঙ্গু কর্নারে তেলাপোকার উপদ্রব রয়েছে। শিশুর জন্য খাওয়া কিনে বেডের কাছে রাখলে তেলাপোকা খায় সেই খাবার, এমনটাই অভিযোগ করেন রোগীর স্বজনরা।
ডেঙ্গু কর্নারে উপস্থিত ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে অস্বীকার করেন।
শিশু ইউসুফ হামজার দাদি সংবাদ প্রতিবেদককে বলেন, যাত্রবাড়ীর বিবির বাগিচায় তাদের বাসা। গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ। তার ছেলে ১২ হাজার টাকা বেতনে একটি কোম্পানিতে ছোটখাটো কাজ করে সংসার চালায়। নাতি হামজা মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। নাতি ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় তার চিকিৎসা নিয়ে তারা এখন বিপাকে আছেন। প্রতিদিন হাসপাতালের বেড ভাড়া ৭শ’ টাকা। ওষুধ খরচ, মশারি কেনার টাকা সবই দিতে হয়। বিবির বাগিচায় তার নাতির মতো আরও অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত। পুরো এলাকায় মশার উপদ্রব। গেল বছর একই এলাকায় অনেকেই আক্রান্ত হয়েছে।
এই বৃদ্ধা বলেন, একটু পত্রিকায় লিখেন। যদি কিছু উপকার হয়। টাকার অভাবে শিশুকে আইসিইউতে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
শিশুটির পিতা পারভেজ জানান, সহকর্মীদের কাছ থেকে ধার-কর্জ করে এখন চিকিৎসা খরচ চালানো হচ্ছে। এক শিশুর চিকিৎসা নিয়ে
পুরো পরিবার এখন বিপাকে আছেন।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৬ বছরের শিশু নোহা। তার বাবা নুর উদ্দিন জানান, জ্বর হওয়ার পর তার নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে। এলাকার চিকিৎসায় কোনো উন্নতি না হওয়ায় গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর থেকে সোমবার ঢাকা শিশু হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়েছে।
তিন বছরের শিশু হাতেম। মিরপুরে তাদের বাসা। গত ১১ দিন ধরে ভর্তি আছে এখানে। দেড় থেকে দুই হাজার টাকা দিনে ওষুধ খরচ।
জ্বরে আক্রান্ত ১১ মাসের শিশু আনার নাসেরকে গত ২ জুলাই ঢাকার সিদ্বেশ্বরী থেকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসে তার মা-বাবা। তার পিতা একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন।
এই রোগীদের মতোই শিশু হাসপাতালের ডেঙ্গু সেল ছাড়াও জরুরি ও বহিঃবিভাগে আক্রান্ত শিশুদের কোলে নিয়ে মা ও স্বজনরা অপেক্ষা করছেন। সেখানে শিশু রোগীদের প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে।
ডেঙ্গু কর্নারে কর্মরত একজন চিকিৎসক জানান, ‘আমরা শিশুদের রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা দিচ্ছি। এর বাইরে কোনো কথা বলতে তিনি অস্বীকার করেন।’
ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা সম্পর্কে টিবি হাসপাতালের ডা. আয়শা আক্তার তার কার্যালয়ে সংবাদকে জানান, শিশুর অভিভাবকরা বাসায় থাকেন। তাদের প্রথম খেয়াল রাখতে হবে শিশু জ্বরে আক্রান্ত কিনা, তাদের খিট খিটে মেজাজ হচ্ছে কিনা, শিশুর ডায়রিয়ার লক্ষণ আছে কিনা এসব লক্ষণ থাকলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. আয়শা আক্তার আরও বলেন, ডেঙ্গু হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। বাচ্চারা খেলাধুলা করে। তাদের ঠাণ্ডা বা নিউমোনিয়া না হয় তার জন্য অভিভাবকদের সব সময় শিশুর যত্ন নিতে হবে। শিশুর শরীর ঘামলে তার ঘাম মুছে দিতে হবে। শিশুদের যন্ত্র ও পরিমাণমতো খাবার দিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য:
গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৪৯২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ২ জন বরিশাল বিভাগে ও একজন খুলনা বিভাগের।
গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে ৪৫ জনই শিশু।
চলতি মাসের গত ৭ দিনে আক্রান্ত ২ হাজার ৪৬৭ জন। ৭ দিনে মারা গেছেন ৬ জন। এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে সোমবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ১২ হাজার ৭৬৩ জন। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৪৮ জন।
হাসপাতালের তথ্যমতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে ৬৫ জন। শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ১২ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ২৩ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৯ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২২ জন ও সোহ্রাওয়ার্দী হাসপাতালে ৪৯ জন। এইভাবে সারাদেশে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি আছে ১৩০৬ জন।