মালয়েশিয়া ‘জঙ্গিবাদে জড়িত’ থাকার অভিযোগে ৩৫ প্রবাসীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায়। ঢাকার মহানগর হাকিম মাহবুবুর রহমান গত রোববার মামলার এজাহার গ্রহণ করে আগামী ১১ আগস্ট প্রতিবেদন জমা দেয়ার দিন ঠিক করে দিয়েছেন। অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের ইনটেলিজেন্স শাখার পুলিশ পরিদর্শক মো. আব্দুল বাতেন গত ৫ জুলাই বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
আসামিরা হলেন মো. নজরুল ইসলাম সোহাগ, মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম, জাহেদ আহমেদ, পারভেজ মাহমুদ পাবেল, শরীফ উদ্দিন, রহমান মোহাম্মদ হাবিবুর, সালেহ আহমেদ, মো. আব্দুস সহিদ মিয়া, মো. মতিন, ফয়সাল আলম, রায়হান আহমেদ, মো. রাজ, মো. মনসুরুল হক, ইমন মহিদুজ্জামান, আকরাম মো. ওয়াসিম, শেখ সালাম, মোহাম্মদ রাজ মাহমুদ মন্ডল, আশরাফুল ইসলাম, মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দিন, মাহফুজ, রবিউল হাসান, মোহাম্মদ সোহেল রানা, মো. আফসার ভূইয়া, হোসাইন সাহেদ, মো. আশিকুর বিশ্বাস, মো. শাওন শেখ, ইয়াসিন আলী, মোহাম্মদ পারভেজ মোশারফ, মহিউদ্দিন, সাব্বির হোসাইন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. শাকিল মিয়া, আসাদুজ্জামান হোসাইন এবং মো. সোহাগ রানা।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে,‘আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয় এবং সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। তারা মালয়েশিয়ার আইপি ঠিকানা ব্যবহার করে বাংলাদেশি কতিপয় নাগরিকদের পরিচালিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ এবং প্রচারণা চালিয়ে আসছিল।
পরে গত ২৮ এপ্রিল থেকে ২১ জুন পর্যন্ত মালয়েশিয়ান পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। আসামিরা সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য হয়ে স্বেচ্ছায় দেয়া অনুদানের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করেন। সংগৃহীত অর্থ ই-ওয়ালেট এবং আন্তর্জাতিক অর্থ স্থানান্তর পরিষেবার মাধ্যমে অন্যান্য দেশে পাঠায়। সংগঠনটির সদস্য হিসেবে বছরে ৫০০ রিঙ্গিত চাঁদা দেয়া হতো।’
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার আসামিদের মালয়েশিয়ান পুলিশ পর্যায়ক্রমে নিজ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ‘গোয়েন্দা তথ্য বলছে, আসামিরা পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে এসে সন্ত্রাসবাদে জড়িত হয়ে উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে দেশের অখণ্ডতা, সংহতি, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জননিরাপত্তা, জনসাধারণের কোন অংশে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করে যে কোনো সময় বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলার সম্ভবনা রয়েছে।’
এদিকে মালয়েশিয়ার পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে পরিচালিত ধারাবাহিক অভিযানে ওই ৩৬ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়, তারা মূলত কারখানা, নির্মাণ ও সেবা খাতে কর্মরত ছিলেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে খালিদ ইসমাইল বলেন, মালয়েশিয়া পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কাউন্টার টেররিজম ডিভিশন অর্থ সংগ্রহের প্রমাণ পেয়েছে।
মালয়েশিয়ার পুলিশ প্রধানের বক্তব্য এবং এবং আইএসের জন্য’ অর্থ জোগানের বিষয়ে প্রশ্নের জবাব স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ এদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সেখানকার পুলিশ প্রধান কী বলেছে আমাদের জানা নেই। সরকারি লেভেলে আমাদের কোনো মেসেজ নেই।’
মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা: ‘ফেঁসে গেছি’, আদালতে বললেন প্রবাসীরা
‘জঙ্গিবাদে জড়িত’ থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার মালয়েশিয়া
প্রবাসীরা রিমান্ড শুনানিতে নিজেদের ‘নির্দোষ’ দাবি করে বলেছেন, অন্যের অপকর্মে তারা ‘ফেঁসে গেছেন’। মঙ্গলবার,(০৮ জুলাই ২০২৫) বিমানবন্দর থানার মামলায় মালয়েশিয়ার চার প্রবাসীকে জিজ্ঞাবাদের জন্য ৪ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি নিয়ে এদিন ঢাকার মহানগর হাকিম মিনহাজুর রহমান এ আদেশ দেন।
রিমান্ডে যাওয়া চারজনের মধ্যে তিনজনকে গত শুক্রবার মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। তারা হলেন নজরুল ইসলাম সোহাগ, মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম, জাহেদ আহমেদ। এছাড়া মাহফুজকে গতকাল সোমবার কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে পুলিশ, তিনিও মালয়েশিায় থাকেন। দেশে এসেছেন কয়দিন আগে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক কে. এম. তারিকুল ইসলাম প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক তারিকুল ইসলাম শুনানিতে বলেন, ‘আসামিরা মালয়েশিয়ায় ছিল। পুলিশ জঙ্গি সন্দেহে ইমিগ্রেশনে হস্তান্তর করে। তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ায় সন্ত্রাসবিরোধ আইনে মামলা করা হয়েছে। সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল কিনা, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।’
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আজিজুল হক দিদার রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
আসামিদের পক্ষে এমদাদুল হক (বিজয়)সহ কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। এ সময় আদালত আসামিদের বক্তব্য শুনতে চান।
তখন জাহেদ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কোম্পানি থেকে ছয়জনকে চোখ বেঁধে একদিন সেখানকার থানায় রাখে। আমার হ্যান্ডফোন কোথায় জানতে চায়। পকেটে বললে, সেখান থেকে ফোন নিয়ে নেয়। পরে আবার রুমে নিয়ে যায়। সেখানে তল্লাশি করে, কিন্তু কিছু পায় না। দুইজন লোককে দেখিয়ে বলেন, এদের কারণে তোদের আটক করা হয়েছে। পরে চারজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে। বলে, তুই জঙ্গি হলে জেলে পাঠাব আর জঙ্গি না হলে দেশে পাঠাব।’
তিনি বলেন, ‘জঙ্গি হলে আমার সাজা হয়ে যেত। কুমিল্লা এবং কিশোরগঞ্জের দুইজনের সাজা হয়েছে। কোম্পানির নামে বিচার। আমরা সেখানে কাজ করেছি। এজন্য দেশে পাঠিয়ে দিছে। আমাকে দুই বছরের জন্য ব্ল্যাক লিস্ট করেছে। জঙ্গি হলে তো আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতো।’
মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম বলেন, ‘আমি চার মাস ওই কোম্পানিতে কাজ করেছি। অন্যদের কারণে আমি ফেঁসে গেছি। ৮ বছরে কোনোদিন পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করেনি। ‘মালয়েশিয়ায় যখন রেইড দেয়, হোস্টেল ঘেরাও করে রেইড দেয়। দুইজন জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় জড়িত। দুইজন বাংলাদেশি দোষী। আমাদের ১১ জনের বিরুদ্ধে কোনো দোষ-ত্রুটি পায়নি। ইমিগ্রেশনে বাধা দেয়নি। ট্রাভেল পাসে দেশে আসছি। নিজ খরচে টিকেট কেটে এসেছি। মালয়েশিয়ায় পুলিশ আমাদের জেলে নেয়নি, ক্যাম্পে রেখেছিল।’
মাহফুজ বলেন, গত ১৭ জুন কুয়ালালামপুর যান তিনি। ‘কোম্পানির হয়ে তিন দিন কাজ করি।’
আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে মামলাটি প্রমাণের ভিত্তিতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার নির্দেশ দেন। বিচারক বলেন, কারণ মালয়েশিয়া আমাদের কাছ থেকে ফলোআপ নিবে। বিষয়টা বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া সংশ্লিষ্ট। আর রিমান্ড তো ভয়ের কিছু না। হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে জিজ্ঞাসাবাদ হবে বলেও আশ্বস্ত করেন আদালত।
গত ৩ জুলাই সোহাগ, রেদোয়ানুল ও জাহেদকে মালয়েশিয়ান পুলিশ দেশে ফেরত পাঠায়। পরদিন শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এসে পৌঁছান তারা। এসময় পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট তাদের হেফাজতে নেন। বিমানবন্দর থানায় মামলা দায়েরের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫
মালয়েশিয়া ‘জঙ্গিবাদে জড়িত’ থাকার অভিযোগে ৩৫ প্রবাসীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায়। ঢাকার মহানগর হাকিম মাহবুবুর রহমান গত রোববার মামলার এজাহার গ্রহণ করে আগামী ১১ আগস্ট প্রতিবেদন জমা দেয়ার দিন ঠিক করে দিয়েছেন। অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের ইনটেলিজেন্স শাখার পুলিশ পরিদর্শক মো. আব্দুল বাতেন গত ৫ জুলাই বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
আসামিরা হলেন মো. নজরুল ইসলাম সোহাগ, মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম, জাহেদ আহমেদ, পারভেজ মাহমুদ পাবেল, শরীফ উদ্দিন, রহমান মোহাম্মদ হাবিবুর, সালেহ আহমেদ, মো. আব্দুস সহিদ মিয়া, মো. মতিন, ফয়সাল আলম, রায়হান আহমেদ, মো. রাজ, মো. মনসুরুল হক, ইমন মহিদুজ্জামান, আকরাম মো. ওয়াসিম, শেখ সালাম, মোহাম্মদ রাজ মাহমুদ মন্ডল, আশরাফুল ইসলাম, মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দিন, মাহফুজ, রবিউল হাসান, মোহাম্মদ সোহেল রানা, মো. আফসার ভূইয়া, হোসাইন সাহেদ, মো. আশিকুর বিশ্বাস, মো. শাওন শেখ, ইয়াসিন আলী, মোহাম্মদ পারভেজ মোশারফ, মহিউদ্দিন, সাব্বির হোসাইন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. শাকিল মিয়া, আসাদুজ্জামান হোসাইন এবং মো. সোহাগ রানা।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে,‘আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয় এবং সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। তারা মালয়েশিয়ার আইপি ঠিকানা ব্যবহার করে বাংলাদেশি কতিপয় নাগরিকদের পরিচালিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ এবং প্রচারণা চালিয়ে আসছিল।
পরে গত ২৮ এপ্রিল থেকে ২১ জুন পর্যন্ত মালয়েশিয়ান পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। আসামিরা সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য হয়ে স্বেচ্ছায় দেয়া অনুদানের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করেন। সংগৃহীত অর্থ ই-ওয়ালেট এবং আন্তর্জাতিক অর্থ স্থানান্তর পরিষেবার মাধ্যমে অন্যান্য দেশে পাঠায়। সংগঠনটির সদস্য হিসেবে বছরে ৫০০ রিঙ্গিত চাঁদা দেয়া হতো।’
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার আসামিদের মালয়েশিয়ান পুলিশ পর্যায়ক্রমে নিজ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ‘গোয়েন্দা তথ্য বলছে, আসামিরা পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে এসে সন্ত্রাসবাদে জড়িত হয়ে উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে দেশের অখণ্ডতা, সংহতি, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জননিরাপত্তা, জনসাধারণের কোন অংশে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করে যে কোনো সময় বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলার সম্ভবনা রয়েছে।’
এদিকে মালয়েশিয়ার পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে পরিচালিত ধারাবাহিক অভিযানে ওই ৩৬ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়, তারা মূলত কারখানা, নির্মাণ ও সেবা খাতে কর্মরত ছিলেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে খালিদ ইসমাইল বলেন, মালয়েশিয়া পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কাউন্টার টেররিজম ডিভিশন অর্থ সংগ্রহের প্রমাণ পেয়েছে।
মালয়েশিয়ার পুলিশ প্রধানের বক্তব্য এবং এবং আইএসের জন্য’ অর্থ জোগানের বিষয়ে প্রশ্নের জবাব স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ এদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সেখানকার পুলিশ প্রধান কী বলেছে আমাদের জানা নেই। সরকারি লেভেলে আমাদের কোনো মেসেজ নেই।’
মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা: ‘ফেঁসে গেছি’, আদালতে বললেন প্রবাসীরা
‘জঙ্গিবাদে জড়িত’ থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার মালয়েশিয়া
প্রবাসীরা রিমান্ড শুনানিতে নিজেদের ‘নির্দোষ’ দাবি করে বলেছেন, অন্যের অপকর্মে তারা ‘ফেঁসে গেছেন’। মঙ্গলবার,(০৮ জুলাই ২০২৫) বিমানবন্দর থানার মামলায় মালয়েশিয়ার চার প্রবাসীকে জিজ্ঞাবাদের জন্য ৪ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি নিয়ে এদিন ঢাকার মহানগর হাকিম মিনহাজুর রহমান এ আদেশ দেন।
রিমান্ডে যাওয়া চারজনের মধ্যে তিনজনকে গত শুক্রবার মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। তারা হলেন নজরুল ইসলাম সোহাগ, মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম, জাহেদ আহমেদ। এছাড়া মাহফুজকে গতকাল সোমবার কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে পুলিশ, তিনিও মালয়েশিায় থাকেন। দেশে এসেছেন কয়দিন আগে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক কে. এম. তারিকুল ইসলাম প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক তারিকুল ইসলাম শুনানিতে বলেন, ‘আসামিরা মালয়েশিয়ায় ছিল। পুলিশ জঙ্গি সন্দেহে ইমিগ্রেশনে হস্তান্তর করে। তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ায় সন্ত্রাসবিরোধ আইনে মামলা করা হয়েছে। সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল কিনা, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।’
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আজিজুল হক দিদার রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
আসামিদের পক্ষে এমদাদুল হক (বিজয়)সহ কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। এ সময় আদালত আসামিদের বক্তব্য শুনতে চান।
তখন জাহেদ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কোম্পানি থেকে ছয়জনকে চোখ বেঁধে একদিন সেখানকার থানায় রাখে। আমার হ্যান্ডফোন কোথায় জানতে চায়। পকেটে বললে, সেখান থেকে ফোন নিয়ে নেয়। পরে আবার রুমে নিয়ে যায়। সেখানে তল্লাশি করে, কিন্তু কিছু পায় না। দুইজন লোককে দেখিয়ে বলেন, এদের কারণে তোদের আটক করা হয়েছে। পরে চারজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে। বলে, তুই জঙ্গি হলে জেলে পাঠাব আর জঙ্গি না হলে দেশে পাঠাব।’
তিনি বলেন, ‘জঙ্গি হলে আমার সাজা হয়ে যেত। কুমিল্লা এবং কিশোরগঞ্জের দুইজনের সাজা হয়েছে। কোম্পানির নামে বিচার। আমরা সেখানে কাজ করেছি। এজন্য দেশে পাঠিয়ে দিছে। আমাকে দুই বছরের জন্য ব্ল্যাক লিস্ট করেছে। জঙ্গি হলে তো আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতো।’
মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম বলেন, ‘আমি চার মাস ওই কোম্পানিতে কাজ করেছি। অন্যদের কারণে আমি ফেঁসে গেছি। ৮ বছরে কোনোদিন পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করেনি। ‘মালয়েশিয়ায় যখন রেইড দেয়, হোস্টেল ঘেরাও করে রেইড দেয়। দুইজন জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় জড়িত। দুইজন বাংলাদেশি দোষী। আমাদের ১১ জনের বিরুদ্ধে কোনো দোষ-ত্রুটি পায়নি। ইমিগ্রেশনে বাধা দেয়নি। ট্রাভেল পাসে দেশে আসছি। নিজ খরচে টিকেট কেটে এসেছি। মালয়েশিয়ায় পুলিশ আমাদের জেলে নেয়নি, ক্যাম্পে রেখেছিল।’
মাহফুজ বলেন, গত ১৭ জুন কুয়ালালামপুর যান তিনি। ‘কোম্পানির হয়ে তিন দিন কাজ করি।’
আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে মামলাটি প্রমাণের ভিত্তিতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার নির্দেশ দেন। বিচারক বলেন, কারণ মালয়েশিয়া আমাদের কাছ থেকে ফলোআপ নিবে। বিষয়টা বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া সংশ্লিষ্ট। আর রিমান্ড তো ভয়ের কিছু না। হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে জিজ্ঞাসাবাদ হবে বলেও আশ্বস্ত করেন আদালত।
গত ৩ জুলাই সোহাগ, রেদোয়ানুল ও জাহেদকে মালয়েশিয়ান পুলিশ দেশে ফেরত পাঠায়। পরদিন শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এসে পৌঁছান তারা। এসময় পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট তাদের হেফাজতে নেন। বিমানবন্দর থানায় মামলা দায়েরের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।